Sunday, January 27, 2019

রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া




(১১)

  • রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া , প্রচার করা (الْبَلاَغُ)

কথাটি কোরানে এত বার এসেছে যে , এটি প্রবাদ বাক্যে পরিনত হয়েছে। তারপরেও বাণীটিকে উপেক্ষা করে , আল্লাহর বাণী পৌছিয়ে দেওয়া বা প্রচার করার বাইরে রসূলের অন্যান্য কাল্পনিক ভূমিকার খোঁজে আমরা কোরান বহির্ভূত তথাকতিথ সহীহ গ্রন্থ সমূহ আকড়ে ধরে আছি। বর্তমানের মুসলমান দাবীদারদের মেনে নিতে কষ্ট হয় , রসূল শুধুমাত্রই দূত ছিলেন। সরল বাংলায় বললে , ডাকপিয়ন ছিলেন , যার একমাত্র দায়িত্ব ছিল আল্লাহর বাণী তথা সম্পুর্ণ কোরান যথাযথ ভাবে , কোন সংযোজন বিযোজন ছাড়াই মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেওয়া।

"রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া।" :৯৯
"...আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। " :২০
" ... কিন্তু যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, আমার রসূলের একমাত্র দায়িত্ব প্রকাশ্য প্রচার করা। " :৯২

আল্লাহর বার্তা পৌছিয়ে দেয়ার অর্থ হলো মানুষকে জানানো , কোরানের ভিতরে কি আছে। হতে পারে এটা সাবধান বাণী , ভাল সংবাদ , পথনির্দেশ , জ্ঞানের কথা ; "হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। ৩৩:৪৫-৪৬সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা  , সতর্ককারী আহবায়করুপে নবীর এই বর্ণনা কোরানের বাণী মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেয়ার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার উপায়ের কোরানের সুসংবাদগুলো যখন জানালেন তখন হলেন সুসংবাদ দাতাকোরান থেকে জাহান্নামে যাওয়ার কারন বর্ণনা সম্বলিত আয়াতগুলো জানিয়ে সতর্ক করলেন তখন হলেন সতর্ককারী , মানুষকে কোরানের বাণী শুনিয়ে আল্লাহর দিকে আহবান করে হলেন আহবায়ক। আর পুরো কোরান মানুষের কাছে পৌছিয়ে হয়ে গেলেন মানুষের বিপক্ষে সাক্ষী।

সাক্ষী হয় দুই প্রকারের - পক্ষের সাক্ষী বিপক্ষের সাক্ষী। দুর্ভাগ্যবশত রসূল মানুষের বিপক্ষে সাক্ষী দেবেন, পক্ষে নয়। কোরানে সাক্ষী নিয়ে যত আয়াত আছে সবজায়গায় রসূলকে বিপক্ষের সাক্ষী হিসাবে দেখানো হয়েছে। 

"আমি তোমাদের কাছে একজন রসূলকে তোমাদের বিপক্ষে (عَلَيْكُمْ) সাক্ষী করে প্রেরণ করেছি, যেমন প্রেরণ করেছিলাম ফেরাউনের কাছে একজন রসূল। ৭৩:১৫"
"আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে সাক্ষী এবং আপনাকে আনব তাদের বিপক্ষে সাক্ষীরুপে। :৪১"
"সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ। ১৬:৮৯"

শুধু কাফেরদের বিপক্ষেই সাক্ষী দেবেন তা কিন্তু নয় , নিজের উম্মতের বিপক্ষেও সাক্ষী দেবেন। এটা এই কারনে যে  সম্পুর্ন কোরান , যেটা আমাদের দুই হাতের মাঝে বিদ্যমান , আমাদের কাছে পৌছানোর পরেও আমরা অস্পষ্টতার অযুহাতে সেই কোরান পরিত্যাগ করে মানুষের সংকলিত সহীহ গ্রন্থগুলো আকড়ে ধরে আল্লাহর ধর্মকেই আমূল বদলে ফেলেছি। আজ মুসলমান দাবীদাররা ইসলামের নামে কলেমা , নামাজ , রোজা , হজ্ব , যাকাত  আরো অনেক কিছু যা পালন করে তার কিছুই কোরানে নেই। কলেমা , নামাজ , রোজা , হজ্ব , যাকাত এই নাম গুলি কোরান থেকে নেয়া কিন্তু পদ্ধতি কোরানিক নয়।

"রসূল বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় (ক্বওম) এই কোরআনকে প্রলাপ সাব্যস্ত করেছে। ২৫:৩০"

রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেয়া, কাঊকে গাইড করা বা সুপথে আনা তার ক্ষমতার বাইরে।

"যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনাকে আমি তাদের রক্ষক করে পাঠাইনি। আপনার কর্তব্য কেবল প্রচার করা। ৪২:৪৮"
"আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তাআলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন। ২৮:৫৬"
"এটা উপদেশ। অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক। ৭৩:১৯"




No comments:

Post a Comment