Tuesday, October 30, 2012

আমার নামাজ

(প্রথমেই আমি সকলকে সতর্ক করে দিতে চাই যে , নামাজ সম্পর্কে আমার এই বক্তব্য, সম্পুর্নরুপে আমার নিজস্ব।)

আমি এমন কোন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি নই যে আমি কিভাবে নামাজ পড়ি সেটা অন্যদের জানা আবশ্যক বা অন্যদের জন্য অনুকরনীয়। আমি মনে করি কে কিভাবে নামাজ পড়বে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরন করবে ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে , সেটা যার যার নিজস্ব বিষয়।

আমি প্রচলিত নিয়মেই কোরানের আলোকে কিছু সংশোধনীসহ দৈনিক ৫ বার ফরজ নামাজ পড়ি। কোন সুন্নত নামাজ পড়ি না। ফরজ নামাজের প্রচলিত নিয়ম বা রাকাত সংখ্যা তো কোরানে নেই। তাহলে কোরান বহির্ভূত পদ্ধতিতে নামাজ পড়ে আমি দ্বিচারিতা বা ভন্ডামি করছি কিনা? না , করছি না। কারন-

১) কোরানে যেহেতু নামাজ পড়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা রাকাত সংখ্যার উল্লেখ নেই , সেহেতু আমি মনে করি আল্লাহ আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন যার যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে নামাজ পড়ার। নামাজের মধ্যে শিস না দিলে ও তালি না বাজালেই হলো (৮:৩৫)।

২) কোরান অনুযায়ী নামাজের যে ৩ অঙ্গভঙ্গির কথা বলা হয়েছে – দাড়ানো , রূকু ও সিজদা , এর সবগুলোই আমরা প্রচলিত নামাজের সময় করে থাকি। সুতরাং প্রচলিত নিয়মে নামাজ পড়ে আমি কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু করছি না।

৩) আমি নামাজ শিখেছি বাপ মার নামাজ পড়া দেখে ও নামাজের খুটি নাটি জেনেছি সম্ভবত আমাদের বাড়িতে যে মৌলভি সাহেব লজিং থাকতেন , তার কাছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক এভাবেই নামাজ পড়া শেখে। এটাকেই বলে ‘বিল মারুফ’ বা সমাজে প্রচলিত , অনুমোদিত ও গৃহীত কোন নিয়ম। ভিন্ন ভিন্ন সমাজের জন্য ‘বিল মারুফ’ সাধারনত ভিন্ন হয়ে থাকে। কোরানে বহু বার বিল মারুফ অনুযায়ী বিচার করতে বা মেনে চলতে বলা হয়েছে।

৪) একটা বিষয় লক্ষনীয় , কোরানে না থাকলেও সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে ফরজ নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই , আর নামাজ পড়ার ধরনের মধ্যেও যে পার্থক্য , তা খুবই সামান্য। এর থেকে কি এটাই প্রতীয়মান হয়না যে , আল্লাহ নামাজকে মানুষের পালনের মাধ্যমে সংরক্ষন করছেন বা সংরক্ষন করবেন কেয়ামত পর্যন্ত। যে কারনে কোরানে নামাজ কত রাকাত , বা সঠিক ভাবে নামাজ কি ভাবে পড়তে হবে , তা লেখেন নি। খেয়াল করুন ফরজ নামাজে কোন বিভক্তি নেই। ইচ্ছা করলেই কেউ ফরজ নামাজের সংখ্যা বা রাকাত সংখ্যা পরিবর্তন করতে পারেনা বা যদি করেও কেউ মানবে না। ৪:১০২ আয়াত থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে , নামাজে রাকাতের সংখ্যা দুই বা ততোধিক। একারনে ফরজ নামাজে প্রচলিত রাকাত সংখ্যা কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বিধায় আমি প্রচলিত রাকাত সংখ্যা অনুযায়ী নামাজ পড়ে থাকি।

সংশোধনিসমূহ-

১) আমি নামাজের শুরুতে কোন নিয়ত করি না। আল্লাহ প্রতিটি বান্দার মনের খবর জানেন। একারনে ঘটা করে নিয়ত করাকে আমার কাছে বাহুল্য মনে হয়।

২) আমি সাধারনত বাড়িতে একাকি নামাজ পড়ি। ১০৭ সূরাতে লোক দেখানো নামাজ পড়তে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শুধু জুম্মার নামাজ মসজিদে পড়ি এবং কখনো কার্যোপলক্ষে বাড়ির বাইরে থাকলে মসজিদে ওয়াক্তের নামাজ জামাতের সাথে পড়ি।

৩) বাড়িতে পুরো নামাজই ২ , ৩ বা ৪ রাকাত যখন যেটা প্রযোজ্য , মধ্যম স্বরে পড়ি। এমনকি রুকু ও সিজদার সময় তাসবীহ এবং বৈঠকের সময় শাহাদা ও কোরান থেকে দোয়া মধ্যম স্বরে পড়ি।

৪) ১ম ২ রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে ‘قُلْ ‘ শব্দটি বাদ দিয়ে সূরা ফালাক্ক ও সূরা নাস পড়ি।

৫) বৈঠকে আত্তাহিয়াতু ও দরূদ পড়ি না। বদলে ৩:১৮ আয়াত শাহাদা হিসাবে এবং কোরান থেকে বিভিন্ন দোয়া পড়ি।

পরিশেষে এটাই বলব , আমার নামাজ সময়ের সাথে আমার জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ও পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কোরান থেকে নামাজ

৬:১১৪-১১৫. তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
 
আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

নামাজ ফারসি শব্দ। কোরানে বর্ণীত আকিমুস সালাতের অর্থ ব্যাপক হলেও আমরা সাধারনত সালাত বলতে নামাজ পড়াকেই বুঝে থাকি।কোরানে ৬৭ বার সালাতের উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরে ও সালাতের খুটিনাটির খোঁজে যারা কোরান ছাড়া অন্য গ্রন্থের স্মরনাপন্ন হয় , তারা কোরানে বর্নীত সেই ইহুদিদের কথাই মনে করিয়ে দেয় , যাদেরকে গরু জবাই করতে বলা হয়েছিল। যে কোন একটি গরু জবাই দিলেই যখন সহজে কাজ সমাধা হয়ে যেত , সেখানে খুটিনাটি জানতে চেয়ে তারা গরু খোঁজার কাজটি কঠিন করে তুলেছিল।
২:৬৭-৭০ যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আঃ) বললেন, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশ্লেষণ করা হয়। মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল।

তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যে, তার রঙ কিরূপ হবে? মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে।

তারা বলল, আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন-তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ? কেননা, গরু আমাদের কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা অবশ্যই পথপ্রাপ্ত হব। মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জল সেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়-হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত।

একে একে কোরান থেকে নিম্ন লিখিত বিষয় নিয়ে লিখব -
১) সালাতের প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য
২) সালাতের ইতিহাস
৩) সালাত পূর্ব করনীয়
৪) সালাতে অঙ্গবিন্যাস
৫) সালাতে কি বলতে হবে?
৬) দৈনিক সালাতের সংখ্যা
৭) কয় রাকাত?
৮) জুমা বারের সালাত
৯) আমার সালাত

১) সালাতের প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য
আল্লাহকে স্মরন করার জন্যই সালাত।
২০:১৪ আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।
২৯:৪৫ আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।
এই আয়াত থেকে আমরা আরো জানতে পারি – আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। সালাত আল্লাহকে স্মরন করার একটা উপায় মাত্র। সালাত ছাড়াও আল্লাহকে স্মরন করা যায় এবং সকলসময় সেটাই করতে বলা হয়েছে কোরানে।
৪:১০৩ অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন সালাত ঠিক করে পড়। নিশ্চয় সালাত মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
সালাত পরকালের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগ
৩৫:২৯ যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।
সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে।
২:৪৫ ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর সালাতের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।
২:১৫৩ হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

২) সালাতের ইতিহাস

সালাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। কোরান থেকে যেটা জানা যায় ইব্রাহিম নবীর সময় থেকে শুরু করে পরবর্তি সকল নবী রসূলের আমলে সালাত প্রচলিত ছিল। সময়ের সাথে সাথে মানুষ সঠিক সালাত ভুলে গিয়েছিল বা বিকৃত করে ফেলেছিল।
সালাত ১৪০০ বছর আগের নুতন কোন আবিস্কার নয়। কোরান থেকেই জানতে পারি , রসূল মুহাম্মদের সমসাময়িক কাফের মুশরিকরা ও সালাত পালন করত। তবে তাদের প্রধান উপাস্য আল্লাহর সাথে সাথে অন্যান্য শরীক আলাত , মানাত ও উজ্জার উপাসনা ও করত। তাদের বিশ্বাস ছিল এই শরীকরা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তি করবে , তাদের জন্য সুপারিশ করবে। রসূলকে দিয়ে আল্লাহ সালাতকে শরীকমুক্ত করে শুধুমাত্র আল্লাহ বন্দনা ও আল্লাহর স্মরনে সঠিক সালাত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

শয়তান তো আর হাত গুটিয়ে বসে নেই। তাই তো দেখতে পাই আজকের মুসলমানেরা সালাতে আল্লাহর সাথে সাথে অন্যান্য শরিকদের স্মরন করে , তাদের জন্য প্রার্থনা করে। না করলে নাকি সালাতই হবে না। এদের বিশ্বাস এই শরীকরা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তি করবে , আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। শরীকদের গ্রন্থ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব অনুসরনের কথা বল্লে , গালাগালির নহর বয়ে যায় , শারীরিক নিগ্রহের ধামকি দেয় , কন্ঠরোধের হুমকিই শুধু দেয় না বাস্তবেই কন্ঠরোধ করে।

ইব্রাহিমের সালাত।
২:১২৫ যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সালাতের ( مُصَلًّى) জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।
মূসা ও হারুনের সালাত
১০:৮৭ আর আমি নির্দেশ পাঠালাম মূসা এবং তার ভাইয়ের প্রতি যে, তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান নির্ধারণ কর। আর তোমাদের ঘরগুলো বানাবে কেবলামুখী করে এবং সালাত কায়েম কর আর যারা ঈমানদার তাদেরকে সুসংবাদ দান কর।
ঈসার সালাত
১৯:৩১ আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।
শুয়েবের সালাত।
১১:৮৭ তারা বলল-হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনার সালাত কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা যাদের উপাসনা করত? অথবা আমাদের ধন-সম্পদে ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা ছেড়ে দেব? আপনি তো একজন খাস মহৎ ব্যক্তি ও সৎপথের পথিক।
জাকারিয়ার সালাত।
৩:৩৯ যখন তিনি কামরার ভেতরে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।
বণী ইস্রাইলের সালাত।
২:৪৩ আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং সালাতে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।

লুকমানের সালাত।
৩১:১৭ হে বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।
রসূলের সমসাময়িক কাফেরদের সালাত।
৮:৩৫ আর কা’বার নিকট তাদের সালাত শিস দেয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। অতএব, এবার নিজেদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।
আল্লাহর নিকটবর্তি হওয়ার আশায় শরীকদের জন্য উপাসনা।
৩৯:৩ জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
৩) সালাত পূর্ব করনীয়
৪:১০৩ …….. নিশ্চয় সালাত বিশ্বাসীদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
আল্লাহর স্মরন সর্বশ্রেষ্ঠ। বাস্তবে আমরা জীবণ ও জীবিকার অন্বেষনে এমনই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি যে আল্লাহকে সকল সময় স্মরন করার কথা ভুলেই যাই। সকল কাজ কাম বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সালাত ফরজ হওয়ায় আল্লাহকে স্মরনের কাজটি বিশ্বাসীদের জন্য সহজ হয়ে গিয়েছে।
সালাত একটি আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় আচার। সালাতের পূর্বে ও সালাত চলাকালিন কিছু শর্ত পালন আবশ্যকীয়। এই শর্ত মানসিক ও শারিরীক উভয় প্রকারের।
সচেতন মন
যেহেতু বিশ্বাসীরা সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে আল্লাহকে স্মরন করে ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে , সে কারনে সালাতে কি বলছে সেটা বোঝা আবশ্যকীয় করা হয়েছে। একারনে আমরা দেখতে পাই নেশাগ্রস্থ অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তি হতে নিষেধ করা হয়েছে।
৪:৪৩ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, ………
বিনয়ী বিনীত
২৩:১-২ মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্র।
লোক দেখানো সালাত
১০৭:৪-৬ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর (না বুঝে পড়ে); যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে।
পরিধেয় বস্ত্র
৭:৩১ হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও,………
জুতা
২০:১২ আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
ওজু – গোসল – তায়াম্মুম
৫:৬ হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
৪:৪৩ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।
কিবলা
২:১৪২ এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।
২:১৪৪ নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।
২:১৭৭ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
সালাতে অঙ্গবিন্যাস
কোরানে সালাত ব্যাপক অর্থে ব্যাবহৃত হলেও এই পোস্টে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক সালাত যেটাকে আমরা নামাজ বলে জানি , সেটার ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকব।

আনুষ্ঠানিক সালাতের উদাহরন আমরা দেখতে পাই ৪:১০২ আয়াতে। কোরানের আয়াতগুলো থেকে আমরা সালাতে ৩ টি পজিশান বা শারীরিক অবস্থানের কথা জানতে পারি। দাড়ানো , রুকু ও সেজদা।
৪:১০২ নং আয়াত থেকে এটা পরিস্কার , সালাত শুরু হবে দাড়ানোর মাধ্যমে এবং শেষ হবে সেজদার মধ্য দিয়ে।

দাড়ানো
২:২৩৮ সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত
আদবের সাথে দাঁড়াও।

রুকু
২:৪৩ আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং সালাতে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। ( যেটাকে আমরা রুকু বলে জানি وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ)
৯:১১২ তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।

সেজদা
৪:১০২ যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক, যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে। যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই এবং সাথে নিয়ে নাও তোমাদের আত্নরক্ষার অস্ত্র। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

সালাতে কি বলতে হবে?

সালাতে আমরা যেটাই বলিনা কেন , সেটা বুঝে বলতে হবে এবং মধ্যম স্বরে বলতে হবে। মনে মনে ও না বা চেচিয়ে পাড়া মাথায় করাও না। এটাই কোরানিক নির্দেশ। ১৭:১১০ আয়াত যেহেতু সালাত সংক্রান্ত , সেহেতু ১৭:১১১ আয়াতেও সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর স্মরন করি , তার সাহায্য প্রার্থনা করি , তার প্রশংসা করি সর্বপরি তার উপাসনা করি। সুরা ফাতেহার ৭ টি আয়াতের মাধ্যমে এগুলোর সবি করা সম্ভব। ধারনা করা হয় ১৫:৮৭ আয়াতে সুরা ফাতেহার কথাই বলা হয়েছে (আল্লাহই ভাল জানেন)। আল্লাহ কোরানে তার পবিত্রতা ঘোষনা করতে বলছেন , যেটা আমরা করে থাকি রুকু ও সেজদাতে।

সালাতে মধ্যম স্বর

১৭:১১০ বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।

তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বা আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করা

১৭:১১১ বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ন (وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا) বর্ণনা করতে থাকুন।

কোরান থেকে পাঠ করা

২৯:৪৫ আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন।

সূরা ফাতেহা
১৫:৮৭আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।

রুকু ও সেজদাতে তাসবীহ

৫৬:৭৪
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ
অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
৮৭:১
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন
৫০:৪০ রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও (السُّجُودِ)।

শাহাদা

৩:১৮ আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
 
দৈনিক সালাতের সংখ্যা
 
কোরানে পরিস্কারভাবে বলা নেই , দৈনিক কয়বার সালাতের জন্য দাড়ানো লাগবে। কেন কোরানে দৈনিক সালাতের সংখ্যার পরিস্কার উল্লেখ নেই , তার গূঢ় কারন আল্লাহই ভাল জানেন। যেহেতু কোরানে দৈনিক সালাতের সংখ্যার পরিস্কার উল্লেখ নেই , সেহেতু ধরে নেয়া যায় দৈনিক সালাতের সংখ্যা নির্ধারনের ভার আল্লাহ মুত্তাকিনদের বুঝের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।
একারনে আমরা দেখতে পাই , কেউ বলছেন কোরানে দৈনিক ৫ বার , কেউ বা দৈনিক ৩ বার , আবার কেউ বা দৈনিক ২ বার সালাতের কথা বলা হয়েছে বলে দাবি করছেন।
যারা দৈনিক ২বার সালাতের কথা বলেন তাদের যুক্তি হলো , কোরানে ২ টি সালাতের নাম খুজে পাওয়া যায় – ‘সালাতুল ফজর’ এবং ‘সালাতুল ঈশা’। যোহর , আছর ও মাগরিব নামে কোন সালাতের কথা কোরানে বলা নেই।
যারা দৈনিক ৩/৫ বার সালাতের কথা বলেন তাদের যুক্তি হলো , কোরানে ২:২৩৮
حَافِظُواْ عَلَى الصَّلَوَاتِ ‘সালাওয়াত’ সংরক্ষনের কথা বলা হয়েছে। ‘সালাওয়াত’ সালাতের বহুবচন অর্থাৎ তিন বা ততোধিক সালাত। এর সপক্ষে এরা আরো একটি সালাতের কথা বলেন , যার নাম ‘সালাতুল উস্তা’। ‘সালাতুল উস্তা’ অর্থ কেউ করেছেন মধ্যবর্তী সালাত , আর দৈনিক ২বার সালাতের সমর্থকরা করেছেন উত্তম সালাত , যেটা ফজর বা ঈশাকেই নির্দেশ করে।
দৈনিক ২বার সালাত
24:58 হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
11:114 আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
দৈনিক ৩ বার সালাত
2:238 সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।
দৈনিক ৫ বার সালাত
17:78 সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়।
(1) The Dawn Prayer (Fajr in Arabic) given in 11:114, 24:58
(2) The Noon Prayer (Zuher in Arabic) , given in 17:78
(3) The Afternoon Prayer (Asr in Arabic), given in 2:238
(4) The sunset Prayer (Maghrib in Arabic), given in 11:114
(5) The Night Prayer (Isha in Arabic), given in 24:58
কয় রাকাত?
কোরানে রাকাতের কথা বলা নেই। তবে যদি আমরা ৪:১০২ নং আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করি , তাহলে সালাতে ২ টি রাকাত আছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
৪:১০২ যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়।

Thursday, August 30, 2012

কোরানে নামাজ


হাদিস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কোরান অনুসরন করার কথা বল্লেই , অবধারিত ভাবেই যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো – হাদিস না থাকলে নামাজ কিভাবে পড়ব? কোরান থেকে দেখিয়ে দিন নামাজ কিভাবে পড়তে হবে?
মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের ৫% মুসলমান ও দৈনিক নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না এবং যারা পড়ে তাদের কয়জন নামাজে কি পড়ছে তা জানে , বলা দুরূহ। সাকুল্যে ১% মুসলমান কোরান বুঝে পড়ে কিনা সন্দেহ। (৫% ও ১% এর পরিসংখ্যানটি আনুমানিক।) তারপরেও নামাজ নিয়ে বিতর্কে এদের উৎসাহে কমতি নেই। কোরানে নামাজ কিভাবে পড়তে হবে তার খুটিনাটি বর্ণনা নেই এটা যেমন সত্য , তেমনি হাদিস থেকে নামাজ শিখতে গেলে বিভ্রান্তি যে আরো বাড়বে সেটা ও তেমন সত্য।

তাহলে নামাজ কিভাবে পড়তে হবে , সেটা বলতে আল্লাহ কি ভুলে গিয়েছেন? (নাউজুবিল্লাহ) নাকি আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে? কোরানে যে ‘সালাতের‘ কথা বলা হচ্ছে তার অর্থ কি নামাজ? নাকি এ দুটি ভিন্ন কোন বিষয়? অথবা নামাজ সালাতের একটি ক্ষুদ্রতর অংশ , এমন কি হতে পারে?

কোরানে সালাত নিয়ে কি বলেছে , সেটা জানার আগে চলুন হাদিস নামাজ নিয়ে আমাদের কি শেখাচ্ছে সেটা জেনে নেই-
ওজু

- হজরত আনাস বলেছেন: রসূল প্রতিবার নামাজের আগে ওজু করতেন। (বুখারি)
- হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন: রসূল কিছুক্ষন ঘুমালেন – মসজিদে গেলেন ও ওজু ছাড়া নামাজ পড়লেন। (বুখারি)
- রসূলের সাহাবারা ঘুম থেকে উঠে ওজু না করেই নামাজ পড়তেন। (মুসলিম)

ফরজ গোসল

- হজরত উসমান বলেছেন: যদি কেউ বীর্যপাতের আগেই পুরুষাঙ্গ বের করে নিয়ে আসে , তাহলে সে যেন পুরুষাঙ্গ ধৌত করে ও ওজু করে। (গোসল করা লাগবে না) (বুখারি)
- প্রবেশ করালেই ওজু করা বাধ্যতামূলক। (মুয়াত্তা)
- রসূল বলেছেন: যখন কেউ স্ত্রীলোকের পায়ের মাঝে বসে জোরে ঠেলে , বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল বাধ্যতামূলক। (মুসলিম)
- উব্বি বিন কাব রসূলকে জিজ্ঞাসা করলেন , ” যদি কেউ সহবাস করে কিন্তু বীর্যপাতের আগেই বের হয়ে আসে , তার কি গোসল করা লাগবে? তিনি উত্তর দিলেন , ” তার উচিৎ ওজু করে প্রার্থনা (pray) করা।

খাওয়ার পরে ওজু

- রসূল বলেছেন: আগুনে রান্না করা কোন কিছু খাওয়ার পরেই নুতন করে ওজু কর। (মুসলিম)
- ইবনে আব্বাস বলেছেন , ” রসূলুল্লাহ ছাগলের ঘাড়ের রোস্ট খাওয়ার পরে ওজু না করেই নামাজ পড়লেন। (মুসলিম)

তাকবীর

- হজরত বিলালকে আদেশ করা হয়েছিল আজানে দুই তাকবীর এবং ইকামাতে এক তাকবীর বলার জন্য। (মুসলিম)
- এখন মসজিদে ইকামতের সময় ও ২ তাকবীর বলা হয়। হয়তো বা ইকামতের সময় ২ তাকবীর বলার হাদিস ও আছে। হাদীস অনুসারীরা ভাল বলতে পারবেন।

নামাজে সুরা ও দোয়া পড়া-

- নামাজে সুরা ফাতিহার পরে আর কিছু পড়া লাগবে কি না , এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হুরাইরা বল্লেন , যে কোন সুরা পড়াই ভাল , কিন্তু শুধু মাত্র সুরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ঠ। (মুসলিম)
- ফিকহের সকল ইমামগনের মত হলো শধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়লে নামাজ হবে না।

- হজরত উমর “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” জোরে জোরে পড়তেন।(মুসলিম)
- ইমামগণ আমাদের “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” মনে মনে পড়তে বলেছেন।
- হজরত আনাস বলেছেন ,” আমি রসুলুল্লাহ , আবু বকর , উমর এবং উসমানের পিছনে নামাজ পড়েছি। তারা আল-ফাতিহা দিয়ে নামাজ শুরু করেছেন , “সুভানাকাল্লাহুম্মা—-” দিয়ে নয়। (মুসলিম)

- যখন মসজিদে নববিতে মিম্বার তৈরি হলো , রসূল এর উপরে উঠলেন , কিবলার দিকে ফিরলেন , তাকবীর দিলেন , লোকজন সারিবদ্ধ হলো। আবৃত্তির (recitation) পরে উনি হাটুর উপরে রূকুতে গেলেন , তারপর মিম্বার থেকে নেমে আসলেন , মাটিতে সিজদা দিলেন , তারপর আবার মিম্বারে উঠলেন। তিনি আবারো রূকুতে গেলেন এবং তারপরে মাটিতে নেমে এসে সিজদা দিলেন। (বুখারি) (এমনভাবে নামাজ পড়ার কথা আগে কখনো শুনিনি বা দেখিনি , আপনারা শুনেছেন?)

- রসুলুল্লাহ তার মেয়ে ‘জয়নাবে’র ছোট্ট মেয়ে ‘আমামা’কে তুলে নিয়ে (কোলে নাকি ঘাড়ে – জানি না) নামাজ পড়া শুরু করলেন। যখন সিজদায় গেলেন , তিনি তাকে মাটিতে নামিয়ে রাখলেন এবং যখন উঠলেন তাকে (‘আমামা’) আবার তুলে নিলেন। (বুখারি)

- যদি কেউ নামাজীর সামনে দিয়ে যায় , তাকে থামাও। যদি সে না থামে , তাকে হত্যা কর কারন সে শয়তান। (বুখারি)
-আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন , ” আমি একটি মেয়ে-গাধায় চড়ে মিনায় গেলাম। রসুলুল্লাহ নামাজ পড়াচ্ছিলেন। আমি কয়েকজন নামাজির সামনে দিয়ে যেয়ে গাধার পিঠ থেকে নামলাম ও নামাজে যোগ দিলাম। কেউ প্রতিবাদ করেনি।(বুখারি)
- হজরত সাদ বিন আবি ওয়াকাস নামাজের চলাকালীন সামনে দিয়ে যেতেন। (মুয়াত্তা)
- নামাজ চলাকালীন কেউ সামনে দিয়ে গেলে নামাজের ক্ষতি হয় না। (মুয়াত্তা)

- রসুলুল্লাহ বলেছেন , ” সামনে দিয়ে স্ত্রীলোক , গাধা বা কুকুর গেলে নামাজ ভেঙ্গে যায়। (মুসলিম)
- হজরত আয়েশা বলেছেন ,”তোমরা (হাদিস বর্ণনাকারীগণ) আমাদেরকে গাধা ও কুকুর বানিয়েছ। আল্লাহর কসম! রসুলুল্লাহ যখন নামাজ পড়তেন , তখন আমি তার সামনে কম্বলের উপরে শুয়ে থাকতাম।(মুসলিম)

- বুখারিতে ৪ টি হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে: রসূল রূকুতে যাওয়ার আগে ও আত্তাহিয়াতু পড়ে ওঠার সময় কান পর্যন্ত দুই হাত তুলতেন। (আমাদের দেশের মুসলমানেরা কেন হাত তোলে না? তাহলে কি তারা বুখারির হাদিস মানে না?)

-রসূলুল্লাহ কোন ওজর ছাড়াই বা ভ্রমন না করলেও যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তেন। (মুয়াত্তা , মুসলিম)

- মুয়াবিয়া বিন হাকাম রসূলের সাথে নামাজ পড়ছিলেন। এক নামাজী হাঁচি দিলেন এবং আমি প্রথামতো “ইয়ারহামাকাল্লাহ”বল্লাম। নামাজ শেষে রসূল বল্লেন ,”নামাজের ভিতরে মনুষ্য কথার অনুমতি নেই। (মুসলিম)
- একদা নামাজ পড়া অবস্থায় রসূলের সামনে শয়তান আসল এবং তিনি ৩ বার বল্লেন , “তোমার উপরে আল্লাহর অভিশাপ”। (মুসলিম) (হতে পারে , রসূলের কথা মনুষ্য কথা নয়)

- বৃষ্টির জন্য দো’য়া করার সময় ছাড়া আর কোন সময় রসূল হাত তুলতেন না। (বুখারি)
- যে কোন দো’য়া করার সময় তিনি হাত তুলতেন।(সুত্র এত বেশি যে উল্লেখ করলাম না)

- রসুলুল্লাহ জুতা পায়ে দিয়ে নামাজ পড়তেন। (বুখারি , মুসলিম, নিসায়ি)

- সাহাবারা তীরবিদ্ধ জায়গা থেকে রক্ত পড়তে থাকা অবস্থায় নামাজ পড়তেন। (বুখারি , মুসলিম , ইবনে মাজাহ ও আরো অনেকে)
- শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্ত বের হলে নামাজ ও ওজু দুটোই বাতিল হয়ে যায়। ( বুখারি , মুসলিম , ইবনে মাজাহ ও আরো অনেকে)

- হজরত আনাস বলেছেন , “রসূল পুরো নামাজ খুবি অল্প সময়ে পড়তেন। (মুসলিম)
- রসূল সেই ইমামদের বকতেন , যারা লম্বা সময় ধরে নামাজ পড়াতেন। (মুসলিম)
- হজরত আনাস বলেছেন ,” রসূল রুকুর পরে এত দীর্ঘ সময় স্থীর ভাবে দাড়িয়ে থাকতেন যে মনে হোত তিনি সামনে বাড়তে ভুলে গেছেন। সিজদার সময়ও একি অবস্থা হোত। (মুসলিম)
- আবু সায়িদ খাদরি বর্ণনা করেছেন: রসুলুল্লাহ এত দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়াতেন যে ধরা যাক দুপুরের নামাজ শুরু হলো। এক লোক বাকী কবরস্থানে হেটে গেল , বাড়িতে ফিরে এসে ওজু করে মসজিদে গিয়ে দেখতে পাবে তখনো তিনি প্রথম রাকাত পড়াচ্ছেন। (মুসলিম)

এছাড়াও বুখারি ও মুসলিমে নামাজের বিভিন্ন পয়েন্টে কোন দো’য়া পড়তে হবে , তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী অসংখ্য হাদিস পাওয়া যায়।

এই হলো হাদিস থেকে নামাজ শিক্ষা।

১) ঘুমের মধ্যে নাক ডাকলে , আপনার ওজু করা লাগবে না। দুঃখিত , ওজু করা লাগবে।
২) রান্না করা খাবার খেলে ওজু ভেঙ্গে যায় কিন্তু ছগলের রোষ্ট খেলে ওজু ভাঙ্গে না।
৩) রক্ত পড়লে নামাজ ও ওজু বাতিল হয় না। দুঃখিত , বাতিল হয়।
৪) বীর্যপাত না হলে গোসল লাগবে না। দুঃখিত , লাগবে।
৫) আপনি জোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে পারবেন। দুঃখিত , একত্রে পড়তে পারবেন না।
৬) দো’য়ার সময় হাত তুলুন। না না , দো’য়ার সময় হাত তুলবেন না।
৭) রুকুতে যাওয়ার আগে ঘাড় পর্যন্ত দুই হাত তুলুন। না না , হাত তুলবেন না।
৮) বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। আপনি এমনটি করতে পারেন না।(ফিকহ)
৯) নামাজের সময় ঈমাম সিড়ি বেয়ে ওঠা নামা করতে পারে। আদৌ নয়।(ফিকহ)
১০) নামাজে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ট। দুঃখিত , যথেষ্ট নয়।
১১) নামাজের শুরুতে ‘সুভানাকাল্লাহুম্মা’ পড়া যায়। না না , যায় না।
১২) নামাজের ভিতরে আপনি শয়তান বা অন্য কাউকে অভিশাপ দিতে পারেন। না না , কখনো না।
১৩) আত্তাহিয়াতুর পরে যে কোন দো’য়া পড়তে পারেন। না , শুধুমাত্র এইটা আর এইটা।
১৪) নামাজের সময় যেই সামনে দিয়ে যাবে , মানা করলে না শুনলে তাকে হত্যা কর। শুধুমাত্র হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও সাদ বিন আবি ওয়াকাসকে ছাড়া।
১৫) স্ত্রীলোক , গাধা ও কুকুর সামনে দিয়ে গেলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। তবে তোমার স্ত্রী নামাজের সময় তোমার সামনে জায়নামাজে শুয়ে থাকলেও নামাজ বাতিল হবে না।

সহীহ হাদীস অমান্য না করে আপনি কিভাবে নামাজ পড়বেন , সেটা আপনিই ঠিক করুন। আমার পক্ষে এই ধাঁধার সমাধান করা দুরূহ ব্যাপার।

পরের পর্বে কোরান নামাজ নিয়ে কি বলে , সেটা নিয়ে আমার ধারনা জানাব ইনশাল্লাহ।
.

Tuesday, August 21, 2012

মা মালাকাত আইমানুকুম

মা মালাকাত আইমানুকুম যার অর্থ করা হয়েছে যুদ্ধবন্দী যৌণদাসী। অমুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষীদের ইসলাম বিরোধী প্রপাগান্ডার একটি বড় হাতিয়ার হলো , কোরানে নাকি যুদ্ধবন্দী যৌণদাসী মুসলমানদের জন্য হালাল করা হয়েছে। অবশ্য ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এর জন্য দায়ী হলো মুসলমান খলিফাদের অনুগ্রহপুষ্ট রাজ দরবারের পারস্য ঈমামগণ (বুখারি , মুসলিম , তিরমিজি , শাফেঈ প্রমূখ) ও ইহুদী-নাসারা পারিষদবর্গ। খলিফারা ঈমামদের বিকৃত অনুবাদের মাধ্যমে নুতন নুতন রাজ্য জয় করতে সৈন্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধবন্দী যৌণদাসীর টোপ ব্যবহার করেছেন।

“মা মালাকাত আইমানুকুম” এর অর্থ যুদ্ধবন্দী যৌণদাসী ও নয় বা তোমার ডান হাতের অধীনস্ত ও নয়। এর প্রকৃত অর্থ হলো – “তারাই , যারা তোমার শপথ বা অঙ্গীকারের আওতাধীন”

“আইমানু” শব্দটি হলো “ইয়ামিন” শব্দের বহুবচন , যার অর্থ হলো – শপথ বা অঙ্গীকার , ইংরেজিতে OATH.
নিচে কোরান থেকে কিছু উদাহরন দেয়া হলো -

আর তোমাদের শপথের (আইমানুকুম) জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না…………[2:224]

যারা আল্লাহর নামে কৃত তাদের অঙ্গীকার (আইমানুহুম) এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে …[3:77]

তারা তাদের জোর শপথ (আইমানুহুম) নিয়ে আল্লাহর কসম খায় যে, যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে, তবে অবশ্যই তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে। …[6:109]

আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি শপথ (আল-আইমান) করার পর তা ভঙ্গ করো না, …[16:91]


এইরুপ আরো অনেক আয়াত আছে কোরানে , যেখানে ‘আইমানুকুমের’ অর্থ শপথ হলেই কেবল আয়াতের মানে অর্থবহ হয়।

মজার ব্যাপার হলো “মা মালাকাত আইমানুকুম” শুধুমাত্র নারীর জন্য প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। “মা মালাকাত আইমানুকুম” পুরুষ ও হতে পারে। এর প্রমাণ স্বরূপ নিচের আয়াতটি পড়ে দেখতে পারেন -

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাঁস (আইমানুহুন্না), যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, …[24:31]
তাহলে এই আয়াতের কি এটাই অর্থ করব যে , ঈমানদার নারীরা যৌণদাঁস রাখতে পারবে??

কোরানের “মা মালাকাত আইমানুকুম” কোন যৌণ দাঁস বা দাঁসী রাখার স্বীকৃতি দিচ্ছে না , যেমনটি অতীতের ঈমামগণ , তাফসীরকারগণ ও তাদের অন্ধ অনুসারী বর্তমানের অনুবাদকগণ অনুবাদ করেছেন। বরং সেই সকল অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হতভাগ্য পুরুষ ও নারীদের কথা বলেছে , যাদের ভরনপোষনের ভার নিতে ইমাণদার পুরুষ ও নারীরা শপথ করেছেন। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত এই হতভাগ্য পুরুষ ও নারী, এরা কারা?

এর উত্তর কোরানেই আছে। কোরান থেকেই আমরা জানতে পারি ইসলামের সুচনালগ্নে আত্মরক্ষার্থে বিভিন্ন যুদ্ধে বহুসংখ্যক পুরুষ শহিদ হন , ফলে তাদের পরিবার মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হয় বা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এছাড়াও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারনে বহু সংখ্যক পুরুষ ও নারী নিজবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ে। অনেক নারী ইসলাম গ্রহণ করার কারনে তাদের পৌত্তলিক স্বামী কতৃক বিতাড়িত হয় বা পৌত্তলিক স্বামীকে ছেড়ে এসে মুসলমানদের আশ্রয় গ্রহণ করে , ফলে তারাও মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হয় বা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। নিচের আয়াতটি পড়ুন-

মুমিনগণ, যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে, তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের দিয়ে দাও। তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ, তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। …[60:10]

যেমনটি দেখা যাচ্ছে এই সেই বিবাহিতা নারীরা , যাদেরকে মোহরানার বিনিময়ে বিবাহ করা হালাল করা হয়েছে , কোন যৌণ দাসীকে হালাল করার কথা কোরানে বলা হয় নি। আরো একটি আয়াতের কথা না বল্লেই নয় –

আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের শপথভুক্ত মুসলিম নারীকে(আইমানুকুম) বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের পরিবারের (أَهْلِهِنَّ) অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। অতঃপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোন অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। …[4:25]

এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে পরিবারের অনুমতি নিয়েই এবং মোহরানা দিয়েই কেবল কোন “মা মালাকাত আইমানুকুমের” সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। যারা “মা মালাকাত আইমানুকুমের” অর্থ যৌণদাসী করেছেন , তারা বোধহয় এই আয়াতের কথা ভুলে গিয়েছিলেন।

Wednesday, May 30, 2012

নাসেখ ও মানসূখ - একটি মিথ্যা প্রচারনা

নাসেখ মানসূখের এই কোরান বিরোধী মিথ্যা প্রথমে চালু হয় ৪০০ হিঃ বা ১০০০সনের শেষের দিকে তখনকার কিছু আলেম ওলামা কতৃক , যাদের অন্যতম আহমেদ বিন ইশাক আল দিনারি(মৃঃ ৩১৮ হিঃ), মোহাম্মদ বিন বাহার আল-আসবাহানি (মৃঃ ৩২২হিঃ) , হেবাতাল্লাহ বিন সালামাহ (মৃঃ ৪১০হিঃ) এবং মুহাম্মাদ মূসা আল-হাজমি (মৃঃ ৫৪৮ হিঃ)। তাদের দাবী , কোরানের কিছু আয়াত বাতিল বা প্রতিস্থাপিত হয়েছে কোরানের অন্য আয়াত দ্বারা। যে আয়াত অন্য আয়াতকে বাতিল করেছে , তাকে বলা হয় 'নাসেখ' এবং বাতিলকৃত আয়াত - 'মানসূখ'।

আসলেই কোরানের কোন আয়াত মানসূখ বা বাতিল হয়নি এবং কোরানের দুটি আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অমুসলিমরা ও কোরানস্কেপ্টিকরা এই আয়াতগুলি ব্যবহার করে দুটি আয়াতের ভিতরে বিরোধ দেখিয়ে এটা প্রমান করতে যে , কোরান পারফেক্ট নয় ।

যে দুটি আয়াতের উপর ভিত্তি করে আলেমরা নাসেখ মানসুখের দাবী করেন , চলুন সেই আয়াত দুটি বিশ্লেষন করা যাক -

প্রথম আয়াত ২:১০৬
"আমি কোন আয়াত(آيَةٍ) রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?"

আলেমদের দাবী এই আয়াত প্রমান করে যে কোরানের কিছু আয়াত অন্য আয়াত দিয়ে বাতিল করা হয়েছে। তারা 'আয়াত' এর শব্দগত মানে করেছে কোরানের আয়াত , যদিও কোরানে আমরা 'আয়াত' এর ৪ রকমের শব্দগত মানে পাই।

১) 'আয়াত' = অলৌকিক ঘটনা (miracle)
"১৭:১০১ আপনি বণী-ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুন, আমি মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য নিদর্শন( آيَاتٍ ) দান করেছি।"

২) 'আয়াত' = উদাহরন (example)
"২৫:৩৭ নূহের সম্প্রদায় যখন রসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জত করলাম এবং তাদেরকে মানবমন্ডলীর জন্যে নিদর্শন(آيَةً) করে দিলাম।"

৩) 'আয়াত' = চিহ্ন (sighn)
"১৯:১০ সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন(آيَةً) দিন। তিনি বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না।"

৪) 'আয়াত' = কোরানের আয়াত।
"৩৮:২৯ এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ(آيَاتِهِ) লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।"

এখন
২:১০৬ "আমি কোন আয়াত(آيَةٍ) রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?"

আয়াতটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে প্রতীয়মান হয় যে , এই আয়াতে 'আয়াত' এর মানে কোরানের আয়াত না হয়ে বাকি ৩ টি মানেই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারন - এই আয়াতেরি কয়েকটি শব্দের দিকে খেয়াল করুন -

১) "বিস্মৃত করিয়ে দিলে"- কোরানের আয়াত বিস্মৃত হয়ে যাওয়া কিভাবে সম্ভব? বেশিরভাগ হাফেজ ভুলে গেলেও কারো না কারো তো মনে থাকার কথা , তদুপরি কোরান একবার লেখা হয়ে গেলে তো আর ভোলা সম্ভব নয়। যদি মেনেও নেই আয়াতটি বাতিল হয়ে গেছে , তবুও সেটা কোরানেই লেখা থাকবে এবং সেটা ভুলে যাওয়া কখনৈ সম্ভব নয়। অলৌকিক ঘটনা বা চিহ্ন বা উদাহরন ভুলে যাওয়া সম্ভব।

২) "সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন" - একটি কোরানের আয়াত বাতিল করে তারি মতো সমপর্যায়ের আরেকটি আয়াত আনয়নের মধ্যে কোন যুক্তি আছে কি? আল্লাহ কি খেলা করছেন? (আল্লাহ মাফ করুন)। বরং মূসা বা অন্য রসূলের কাছে এমন কোন অলৌকিক ঘটনা বা চিহ্ন বা উদাহরন দেয়া হয়েছিল যা মানুষ ভুলে গেলে উত্তম বা সমপর্যায়ের অলৌকিক ঘটনা বা চিহ্ন বা উদাহরন আনয়ন বেশি অর্থবহ।

৩) আপনি যদি এই আয়াতের কন্টেক্সট দেখেন অর্থাৎ আগে পিছের আয়াত পড়েন , তাহলে বুঝবেন , ২:১০৬ নং আয়াতে 'আয়াত' এর মানে কোরানের আয়াত নয়। এখানে 'আয়াত' শব্দটি দিয়ে আল্লাহর কুদরতের কথা বলা হয়েছে যা অলৌকিক ঘটনা বা চিহ্ন বা উদাহরনের সমার্থক।

আল্লাহ মানুষকে বোঝানোর জন্য যখনি কোন (আয়াতের) অলৌকিক ঘটনা বা চিহ্ন বা উদাহরনের আনয়ন করেন , তখন তা পূর্ববর্তী আয়াতের সমান বা বৃহৎ হয়ে থাকে।
"৪৩:৪৬-৪৮ আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলী (بِآيَاتِنَا) দিয়ে ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর সে বলেছিল, আমি বিশ্ব পালনকর্তার রসূল। অতঃপর সে যখন তাদের কাছে আমার নিদর্শনাবলী (بِآيَاتِنَا) উপস্থাপন করল, তখন তারা হাস্যবিদ্রুপ করতে লাগল। আমি তাদেরকে যে নিদর্শনই (آيَةٍ) দেখাতাম, তাই হত পূর্ববর্তী নিদর্শন অপেক্ষা বৃহৎ এবং আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, যাতে তারা ফিরে আসে।"



২য় আয়াত ১৬:১০১
"এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।"

এখানে কোন আয়াতের প্রতিস্থাপনের কথা বলা হচ্ছে , তা বুঝতে হলে , এই আয়াতেরি শেষের অংশটি খেয়াল করুন - "তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।" এখানে এই 'তারা' টা কারা? যারা রসূলকে মনগড়া বা বানিয়ে কথা বলার দায়ে অভিযুক্ত করছে? এরা নিশ্চয় রসূলের অনুসারীরা না। এমন কথা মূসলমানেরা তাদের রসূলকে বলতে পারে না।

এরা হলো তারাই , যারা রসূলকে বিশ্বাস করে না এবং রসূলের কাছে নাযিলকৃত কোরানের আয়াত তাদের কাছে রক্ষিত আল্লাহর আয়াত থেকে ভিন্ন। ফলে তারা রসূলকে মনগড়া উক্তি করার দায়ে অভিযুক্ত করছে। বোঝা গেল এরা হলো আহলে কিতাবের অনুসারীরা (ইহুদী ও খৃষ্টানরা)। শুধু এই আয়াতের মাধ্যমেই নয় , অন্য আয়াতের মাধ্যমেও আল্লাহ জানিয়েছেন যে , কোরান অনুসারীদের জন্য পূর্বের রসূলগনের জন্য নাযিলকৃত কিছু কিছু আয়াত বা আইনের পরিবর্তন করেছেন। আল্লাহ কোরানে একটি আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করলেন কিনা তা ইহুদী ও খৃষ্টানদের যেমন জানার কথা নয় , তেমনি তাদের জন্য কোন মাথা ব্যাথার কারন হতে পারেনা বা তার জন্য ক্ষেপে যেয়ে রসূলকে মনগড়া উক্তি করার দায়ে অভিযুক্ত করতে পারেনা। সর্বশক্তিমান আল্লাহ "আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন" এই বাক্য দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে , এই আয়াতে কোরানের আয়াত প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয় নি । বরং আহলে কিতাবদের গ্রন্থে যে আয়াত আছে , তার স্থলে নুতন বা উত্তম আয়াত রসূলের কাছে নাযিলের কথা বলা হয়েছে।



Thursday, April 12, 2012

ধর্ম বনাম বিজ্ঞান (১)

প্রাচীন কালে ধর্ম ও বিজ্ঞান একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে পাশাপাশি বিকশিত হয়েছে , তবে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে এদের মাঝে দ্বন্দ্ব বাড়তে বাড়তে চরম ধর্ম বিরোধে রূপ নেয় অষ্টাদশ উণবিংশ শতাব্দিতে এসে। এই সময়ে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে অনেকেই অনুভব করতে থাকেন যে অতিপ্রাকৃত কোন শক্তিতে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। এর অন্যতম কারন হলো , এতদিন বিশ্বাস করা হতো অতিপ্রাকৃত কোন শক্তির অস্তিত্ব  ছাড়া এই মহাবিশ্বের  কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। এখন ধর্ম বিরোধীরা বলতে লাগলেন , যেহেতু বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে এখন অতিপ্রাকৃত কোন শক্তি বা 'গড' হাইপোথেসিস ছাড়াই এই মহাবিশ্বের সকল দিকের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব , সেকারনে অতিপ্রাকৃত কোন শক্তিতে বিশ্বাস বাহুল্য হয়ে পড়েছে। যেহেতু এই মহাবিশ্বের সকল প্রকৃয়া কিছু প্রাকৃতিক আইন মেনে পরিচালিত হয় , সেহেতু অতিপ্রাকৃত কোন শক্তি এই মহাবিশ্বকে পরিচালিত করছে  এমনটি ভাবা একমাত্র বদ্ধমনা সাধারন জ্ঞাণ বিবর্জিত মূর্খ আস্তিকদের পক্ষেই সম্ভব।  তাই কী?

 এই মহাবিশ্বে যা কিছুই ঘটে , তা ঘটে অতিপ্রাকৃত কোন শক্তির ইচ্ছা বা কারনে , এমনটাই প্রাচীন কাল থেকে আস্তিক মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দাবী করে , প্রতিটি ঘটনার পিছনে একটি কারন আছে। কারন ছাড়া কিছুই ঘটে না এবং এই কারন পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে জানা সম্ভব। এই যেমন নিউটন পর্যবেক্ষন করলেন , বিশাল এই মহাবিশ্বের সকল গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি নির্দিষ্ট এক আইন মেনে বিশ্ব পরিক্রমন করে চলেছে , যা থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হওয়ার উপায় নেই। এই আইনের নাম - মহাকর্ষ আইন।  ডারউইনের পর্যবেক্ষন বা গবেষনা থেকে জানা গেল - অতিপ্রাকৃত কোন শক্তি 'হও' বল্লেন আর  মানুষ সৃষ্টি হয়ে গেল এমনটা নয় , বরং ধাপে ধাপে জৈবিক আইন মেনে বিবর্তনের ভিতর দিয়ে নিম্ন প্রজাতি থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স বা মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই পর্যবেক্ষনের ও গবেষনার তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা অনুমান (inference)করে থাকেন যে , এই মহাবিশ্বের সকল ঘটনা এক কঠিন আইনে আবদ্ধ , যার অপর নাম - প্রাকৃতিক আইন ‘Law of Nature'।

জার্মান দার্শনিক কান্ট (Kant) তো ঘোষনাই দিলেন , " আমাকে কিছু পদার্থ (matter) দাও , আমি দেখিয়ে দেব কিভাবে পদার্থ থেকে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে।"  হেকেল (Haeckel) আরো এক ধাপ এগিয়ে বল্লেন - পানি , রাসায়নিক উপাদান ও সময় দেয়া হলে , তিনি মানুষ সৃষ্টি করতে পারবেন। নিৎসে (Nietsche) বিজয় ঘোষনা দিলেন , আল্লাহ মৃত।

মজার ব্যাপার হলো প্রাকৃতিক আইনের আবিষ্কর্তা এই নায়কেরা প্রায় সকলেই ছিলেন আস্তিক। নাস্তিকদের ধারনা অজ্ঞতা থেকেই মানুষ ধর্ম বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অতীতের মানুষ ঘটনার কারনগুলো জানতনা বলেই বিশ্বাস করত অতিপ্রাকৃত কোন শক্তিই সকল কিছুই ঘটিয়ে থাকে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষ যখন প্রকৃত কারন জানবে , তখন ধর্ম বিশ্বাস এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যেমনটি জুলিয়ান হাক্সলি তার বইয়ে লিখেছেন-

 "রংধনু আকাশে 'গডের' কোন নিদর্শন নয় , কারন পড়ন্ত বৃষ্টির কণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলেই আকাশে রংধনূ দেখা যায়। প্লেগকে আল্লাহর গজব হিসাবে দেখার কোন উপায় নেই , কারন প্লেগের কারন হলো Bacillus pestis নামের এক জীবাণু , যা ইদুরের মাধ্যমে ছড়ায়। সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ যেহেতু লক্ষ কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের অবস্থায় পৌছেছে , সেহেতু প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টিতে আল্লাহর হাত আছে বলাটা বাতুলতা মাত্র। হিস্টেরিয়া ও পাগলামি যদি মনের বৈকল্যের কারনে ঘটে থাকে , তাহলে কোনভাবেই একে ভুত বা শয়তানের আছর লেগেছে বলা যায় না।" মোদ্দা কথা হলো - ঘটনা যদি প্রাকৃতিক কারনে ঘটে থাকে , তাহলে এগুলো অতিপ্রাকৃত কোন শক্তির কারনে যে ঘটেনি তা নির্দ্বীধায় বলা যায়।

ধর্মবিরোধীদের এই যুক্তির স্বাভাবিক কিছু দুর্বলতা আছে। ধরুন রেল লাইনের উপর দিয়ে একটি রেল গাড়ি ছুটে চলেছে। গাড়ির চাকা কেন ঘুরছে? গাড়ির ইন্জিন ও এর যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষার পরে এই স্বীদ্ধান্তে উপনীত হব গাড়ির ইন্জিন ও এর যন্ত্রাংশের কারনেই গাড়ির চাকা ঘুরছে। এই উত্তর কি যথেষ্ঠ?  অবশ্যই না।  ইন্জিনিয়ার , যিনি রেল ইন্জিনের ডিজাইন করেছেন এবং রেলের চালকের ভূমিকা সম্পর্কে না জানলে উত্তর সম্পুর্ন হবে না। কারন রেল ইন্জিন নিজে নিজেই তো আর তৈরি হতে পারে না বা নিজে নিজেই চলা শুরু করতে পারেনা। রেল গাড়ির ইন্জিন ও এর যন্ত্রাংশ সর্বশেষ বাস্তবতা নয়। সর্বশেষ বাস্তবতা হলো মন , যা এই রেল গাড়ির ইন্জিন ও এর যন্ত্রাংশকে অস্তিত্বে এনেছে  এবং একে ইচ্ছামত পরিচালনা করছে। আসলে প্রকৃতি ব্যাখ্যা দেয় না , বরং প্রকৃতিকেই ব্যাখ্যা করার দরকার।

ডিমের শক্ত খোলশ ভেঙ্গে  কিভাবে নরম মাংসের  মুরগির ছানা বের হয়? অজ্ঞ মানুষ এর পিছনে আল্লাহর হাত আছে বলে বিশ্বাস করে। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যানে ধর্ম বিরোধীদের যুক্তি হলো আল্লাহর হাত নয় বরং ২১ দিনের মাথায় মুরগির ছানার ঠোটে একটি সাময়িক শক্ত শিং গজায় , যেটা দিয়ে ডিমের শক্ত খোলশ ভেঙ্গে মুরগির ছানা বের হয়। এই যুক্তি একটি ফ্যালাসী। কারন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে , ঠিক ঠিক ২১ দিনের মাথায় মুরগির ছানার ঠোটে একটি সাময়িক শক্ত শিং গজানোর পিছনে যে আল্লাহর হাত নেই , তা কিভাবে তারা নিশ্চিত হলেন?  আসলে বিজ্ঞানীরা ঘটনার কার্যকারনের শৃঙ্খলে একটি নুতন লিঙ্ক যোগ করেছেন মাত্র। একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা আরো বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। যেমনটি এর পরেই প্রশ্ন আসবে - শক্ত শিং গজায় কেন? ২১ দিনের বদলে ৩১ দিন পরেই বা না কেন? ইত্যাদি।

জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আমরা প্রকৃতিকে আরো ভাল ভাবে বুঝতে পারছি ঠিকই , তবে এই জ্ঞান  অতিপ্রাকৃত কোন শক্তির অনস্তিত্বের প্রমান নয়। আদিম মানুষ অজ্ঞানতার ফলে বিশ্বাস করত রংধনু আল্লাহর নিদর্শন , আজ  ও আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক আস্তিক বিশ্বাস করে রংধনু আল্লাহর নিদর্শন এবং  পড়ন্ত বৃষ্টির কণায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে সেটা তিনি করে থাকেন। আদিম মানুষ অজ্ঞানতার ফলে বিশ্বাস করত প্লেগ আল্লাহর গজব , আজ  ও আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক আস্তিক বিশ্বাস করে প্লেগ আল্লাহর গজব এবং সেটা তিনি Bacillus pestis ও ইদুর দিয়ে ঘটিয়ে থাকেন। তেমনিভাবে বিবর্তনের মাধ্যমেই মানুষ সহ সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ সৃষ্টি করতেই পারেন। এখানে বিজ্ঞানের সাথে তো ধর্মের কোন বিরোধ দেখি না।

ফলে আমরা  দেখি- বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষের সময়েও ধর্ম বিলীন হয়ে যায় নি , যেমনটি নিৎসে (Nietsche) বিজয় ঘোষনা দিয়েছিলেন বা কান্টের ঘোষনা মতো পদার্থ থেকে আরেকটি  মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে কেউ এখনো দেখাতে পারেনি বা হেকেলের দাবী মতো   পানি , রাসায়নিক উপাদান ও পর্যাপ্ত সময় দেয়া হলেও কেউ এখনো মানুষ সৃষ্টি করতে পারেনি।

Thursday, April 5, 2012

মূসা নবীর ফেরাউন কে ছিল? (৪)

Koptos – Coptos – Qobt – Qibt – Egypt এই নামেই ৫০০০ বছর ধরে দেশটি পরিচিত।

মিশর/Misr নামে কবে থেকে দেশটি পরিচিতি পেল?

খৃঃপূঃ ৪র্থ শতকে মহাবীর আলেক্জান্ডার সেই সময়কার সর্ববৃহৎ ও শক্তিমান গ্রীকসম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন , যার অধীনে ছিল পশ্চিম ভারত , ইরান , মেসোপটেমিয়া ও ইজিপ্ট। ফলে গ্রীক ভাষা , আজকের ইংরেজি ভাষার মতোই সেই সময়কার পৃথিবীতে সর্বব্যাপী ছিল। সেই সময়ে গ্রীক ম্যান্ডেট নিয়ে ইজিপ্টের শাসনকর্তা ছিলেন টলেমি ফিলোডেলফিস , যিনি টলেমি২ নামেই বিশ্বে বেশি পরিচিত।  

 
Alexander's Empire, during its zenith (4th Centiry B.C)

টলেমি২ কিছু ইহুদী ধর্মজাযককে নিয়োগ করেন বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টকে আরামিক থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করার জন্য। এরাই প্রথম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সর্ব প্রথম বাইবেলে বর্ণীত মিসরিমের অনুবাদ করেন ইজিপ্ট। সেই থেকেই গ্রীক বাইবেলের কল্যানে সারা পৃথিবীর খৃষ্টান ও ইহুদীরা ইজিপ্টকে মিশর/Misr নামেই চেনে। সাধারনত কোন দেশ বা জায়গার নাম অনুবাদ করার সময় অপরিবর্তিতই থাকে বা উচ্চারনের সুবিধার জন্য সামান্য কিছু পরিবর্তন হয় যার সাথে আদি নামের মিল থাকে। যেমন 'ঢাকা' ইংরেজিতে Decca , কলিকাতা-calcutta। কিন্তু দেখুন মিসরিমের/Misrim সাথে ইজিপ্টের /Egyptus কোনই মিল নেই। সম্পুর্ন ভিন্ন দুটি নাম।

আরামিক বাইবেলের যেখানেই মিসরিম/Misrim লেখা আছে , সেখানেই গ্রীক বাইবেলে অনুবাদ করা হয়েছে ইজিপ্ট /Egyptus । এখন দেখি আরামিক বাইবেল থেকে একটি আয়াত (Genesis 21:21):

וישׁב במדבר פארן ותקח־לו אמו אשׁה מארץ מצרים

আরামিক আরবির মতোই বাম থেকে ডানে লেখা হয়। আন্ডারলাইন করা শেষ শব্দটিই হলো মিসরিম।

প্রথম বর্ণ "מ" 'মেম'  উচ্চারিত হয় 'ম'
২য় বর্ণ "צ" 'ত্সেড'  উচ্চারিত হয় 'স'
৩য় বর্ণ "ר" 'রেশ'  উচ্চারিত হয় 'র'
৪র্থ বর্ণ "י" 'ইয়োড'  উচ্চারিত হয় 'ই'
৫ম বর্ "ם" এটাও 'মেম' বা 'ম' (শব্দের শেষে থাকলে এভাবে লেখা হয়)

একসাথে করলে পাই- 'মিসরিম' ( আদি আরবি কোরানে যেমন লেখা ছিল না , তেমনি আরবির মতোই আরামিক ভাষায় জের , জবর , পেশ লেখা হয় না)

এখন দেখুন এর অনুবাদ গ্রীক ভাষায় করা হয়েছে Αἰγύπτου.

প্রথম বর্ণ :  "A"  “আলফা”, উচ্চারিত হয়  “a”.
২য় বর্ণ: "ἰ" “আয়োটা”, উচ্চারিত হয়  “i”.
৩য় বর্ণ: "γ" “গামা”, উচ্চারিত হয়  “g”.
৪ট্থ বর্ণ: "ύ"   “উপসিলন”, উচ্চারিত হয়  “i”or “y”
৫ম বর্ণ: "π"   “পাই”, উচ্চারিত হয়  “p”.
৬ষ্ঠ বর্ণ: "τ”   “টাউ”, উচ্চারিত হয়  “t”.
৭ম বর্ণ: "ο"   “অমিক্রন”, উচ্চারিত হয়  “o”.

এখন একসাথে করলে পাই- A-i-g-i(y)-p-t-o (ইজিপ্টো).

ইজিপ্ট যদি মিশর না হবে , তাহলে বাইবেল বা কোরানে যে মিসরিম/مصر এর কথা বলা হয়েছে , সেটা তাহলে কোথায়? এর উত্তর ভবিষ্যতে দেয়ার ইচ্ছা রইল।

Tuesday, March 6, 2012

কোরান নিয়ে মুসলমানদের ভন্ডামি

(আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আহমদ মনসুরের লেখা থেকে.
মুসলমান বলতে আমি সরলিকরন করে সকল মুসলমান নয় , বরং বেশিরভাগ মুসলমানকেই বুঝাচ্ছি।)

মুসলমানদের চিন্তায় ও বিশ্বাসে লিখিত বা ছাপানো কোরান (মুস-হাফ) এবং কোরানের বাণীর মাঝে পার্থক্য আছে। তারা মুস-হাফকে পবিত্র জ্ঞানে সম্মান করে , এর সম্মান রক্ষার্থে জীবণ দিতে ও নিতে পিছপা হয় না , কিন্ত কোরাণের বাণীতে বিশ্বাস করে না। কিছু উদাহরন -

সকলেই জানেন যে , সালমান রুশদিকে 'সাটানিক ভার্সেস বা শয়তানের আয়াত' বইটি লেখার জন্য মৃত্যুদন্ডের ফতোয়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সালমান রুশদি শয়তানের আয়াত নিজের থেকে বানিয়ে লেখেন্নি , বরং তিনি এর মালমশলা নিয়েছেন মুসলমানদের ধর্মীয় স্কুল মাদ্রাসায় বহুল পঠিত আন-নাসাফির তাফসীর গ্রন্থের সুরা নাজমের (৫৩) ব্যাখ্যা থেকে। আন-নাসাফির তাফসীর গ্রন্থ আল আজহার হাই স্কুলের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। ছাত্রাবস্থায় আমার কাছে এই তাফসীর কোরানের প্রতি আক্রমন মনে হওয়ায় আমি এর জোরালো প্রতিবাদ করলে , শিক্ষক তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যূগ যূগ ধরে তাদের স্কলারদের লেখা কোরানের প্রতি এই যে আক্রমন তারা সযত্নে লালন করে আসছে ও ধর্মীয় স্কুল মাদ্রাসায় শিখিয়ে আসছে , তাতে তাদের বিকার হয় না , কিন্তু সালমান রুশদি সেটা নিয়ে লিখলেই তাদের বিকার হয় , তার কল্লা ফেলানোর জন্য ব্যতিব্যাস্ত হয়ে ওঠে। এটাকে ভন্ডামি না বল্লে আর কোনটাকে ভন্ডামি বলা যায় , আমার জানা নেই।

লিবিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি , তার অনেক বৈপ্লবিক (?) আইডিয়ার মতো , কোরান থেকে একটি শব্দ 'বলুন'/قُلْ বাদ দেয়ার প্রস্তাব দিলে , আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড শেখ আব্দিল-হালিম মাহমুদ তার স্বভাবগত শান্ত ভাবে ৩ বার উচ্চারন করলেন , 'কুফরুন' 'কুফরুন' 'কুফরুন'। তিনি কোরান থেকে একটি মাত্র শব্দ বাদ দেয়ার প্রস্তাবনায় ক্ষেপে গিয়েছিলেন , অথচ এই শেখকে আমি স্বকর্ণে বলতে শুনেছি , " 'ইহিয়া' (গাজ্জালির লেখা বই) কোরানের মতোই ভাল বা প্রায় কোরানের সমকক্ষ।" আমি তার এই স্পর্ধা দেখে 'থ' হয়ে গিয়েছিলাম , কারন ইহিয়া উলুম ইদ্দ্বীনে গাজ্জালি আল্লাহ ও রসূলকে নিয়ে এমনি মিথ্যা ও বানানো কথা লিখেছে , যা কফি আনানের মনে ও কখনো আসবে না। গ্রান্ড শেখের এই অবস্থান নুতন কিছু নয় , এটাই মুসলমানদের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। এরা লিখিত কোরানের তথা মুস- হাফের পবিত্রতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর , কোরানের বাণীর নয়। নইলে কোরান ছাড়া অন্যান্য স্কলারদের লেখা এবং রসূলের নামে প্রচলিত হাদীসকে এরা মানুষের কথা হিসাবে , দর্শন ও ইতিহাসের অংশ হিসাবে দেখত , ধর্মের অংশ ও কোরানের সমকক্ষ হিসাবে নয়। কোরানের মুস-হাফের জন্য এরা জীবণ দিচ্ছে ও নিচ্ছে , অন্যদিকে তাদের স্কলারদের লেখা , যা কিনা কোরানের বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে , তাকে এরা কোরানের সমতুল্য ভাবছে। এর থেকে ভন্ডামি আর কি হতে পারে?

জাকাজিক আজহার ইন্সটিটিউটের ছাত্র থাকাকালীন আমাকে প্রতিদিন এক পীরের মাজার কেন্দ্রিক মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া লাগত। প্রতিদিন ঐ মাজারে পীরের আশীর্বাদ নিতে বহু লোক আসত। ঐ মসজিদের প্রবেশপথে পাথরে খোদাই করে কোরানের একটি আয়াত লেখা ছিল - " নিশ্চয় মসজিদ (প্রার্থনা স্থল) আল্লাহর জন্য। তোমরা আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডেকোনা।" কোরানের আয়াতের কেমন উপেক্ষা!! আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডাকতে মানা করা হচ্ছে , আর এই মুসলমানরা পীরকে ডাকছে ইহজাগতিক লাভ ও পরকালের কামিয়াবীর আশায়। মানুষের মানসিক এই স্থবিরতা দেখে তখনি আমার হাসি পেত। বড় হয়ে কোরানের এই আয়াতের পূর্ণ মানে যখন আমার বুঝে আসল , বুঝলাম বলা হয়েছে সকল প্রার্থনা স্থলে , প্রার্থনার সময় এবং এমনকি প্রার্থনার জন্য ডাকার সময়েও আল্লাহর নামের সাথে আর কারো নামের উল্লেখ পর্যন্ত করা যাবে না। আজ আমরা কি দেখছি - প্রায় প্রতিটি মসজিদের ভিতরে মিম্বরের একপাশে আল্লাহর নাম এবং অন্যপাশে মুহম্মদের নাম খোদাই করা, খুৎবায় ইমামরা আল্লাহর বাণী ও আল্লাহর নামের চেয়ে মুহম্মদের নাম ও তথাকথিত হাদীসের বর্ণনায় বেশি করছেন , আজানে আল্লাহর সাথে সাথে মুহম্মদকেও ডেকে চলেছে। ব্যাপারটা কেমন দাড়ালো? মুহম্মদ তো আল্লাহর নাম নয়। অর্থাৎ কোরানের বাণীকে এরা ভ্রুক্ষেপ ও করছেনা। কোরানের মুস-হাফকে নিয়ে মুসলমানদের এত মাতামাতি , অন্যদিকে কোরানের বাণীকে নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই , এর থেকে বড় ভন্ডামি আর কি হতে পারে?

এমনি ভাবে মুসলমানদের কোরান নিয়ে ভন্ডামির অসংখ্য উদাহরন দেয়া সম্ভব। যার অন্যতম হলো কোরানে শাফায়াত নেই বলা সত্বেও মুসলমানদের মুহম্মদ কর্তৃক শাফায়াতে বিশ্বাস , মূর্তী পুজা পাথর পূজা নিষিদ্ধ করা হলেও হজরে আসওয়াদ নামক পাথরে চুমু খাওয়া , জমজমের পানিকে পবিত্র মনে করা। জমজম নিয়ে দুটো কথা না বল্লেই নয়। জমজম নামটির সাথে ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণীত জমজমুন গোষ্ঠীর নামের মিল লক্ষনীয়। মরুভূমির বাসিন্দা এই গোষ্ঠীর লোকেরা ঝর্নার পানি পুজা করত।

মুসলমানদের কোরান নিয়ে ভন্ডামি নিয়ে ভবিষ্যতে আরো লেখার ইচ্ছা রইল।

Monday, March 5, 2012

গাজ্জালী (১০৫৮-১১১১ খৃঃ) -একের ভিতর দুই

গাজ্জালী একাধারে মোল্লা ও সুফী হওয়ার সুবাদে তাকে একের ভিতর দুই টাইটেল দেয়াটা ভুল কিছু হবে না । মুসলিম জাহানে হুজ্জাতুল ইসলাম 'ইমাম' মুহাম্মদ আবু হামিদ গাজ্জালীর মতো মনীষি আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি 'দরসে নিজামী' র রুপকার এবং বিশেষ করে "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" ও 'কিমিয়ায়ে সাদাত' বই দুইটির লেখক হবার সুবাদে আজো মুসলমানরা তার নাম ভক্তিভরে স্মরন করে থাকে। আমাদের এক ইসলামি ওয়েব সাইটের উদ্ধৃতি-

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহ:) যখন "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" গ্রন্হটি লিখেছিলেন তখন এ প্রবাদ বাক্যটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল "পৃথিবীর সমস্ত বই যদি ধ্বংশ হয়ে যায় , একমাত্র "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে" ।


এখানে আমি প্রধানত দেখাতে চেষ্টা করব "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" বই থেকে কিছু জ্ঞানের অংশ। "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" বা 'জ্ঞানের পুনর্জাগরন' বইটি যত পড়া যাবে , ততই জ্ঞানের পুনর্জাগরন না হয়ে সাধারন জ্ঞানের(Common Sense) অপমৃত্যু ঘটবে বলেই মনে হয়। গাজ্জালী সেই সকল মোল্লা ও সুফীদের একজন , যারা কোরানকে পরিত্যাগ করে কোরান বহির্ভূত জ্ঞানকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার বই "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" বইথেকে এর উদাহরন দেয়ার আগে চলুন তার আর এক অমর কীর্তির ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা যাক , পাঠকদের বোঝার সুবিধার্তে।



দারসে নিজামী (রূপকার - ইমাম গাজ্জালী)



নিজামুল মুলক্‌ তুসী (১০১৮-১০৯২ খৃঃ) সুলযুক রাজা মালিক শাহ ও তার পরের রাজা আল্প আরসালান দুজনেরই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তুসী মুসলমানের ছদ্মবেশে একজন জোরোয়াস্ট্রিয়ান বা অগ্নিউপাসক ছিলেন।(Nihaayat-e-Tareekh-Abbasi, Sheikh al-Hafiz Yousuf Naishapuri). ‌তুসী ১০৬৭ খৃঃ বাগদাদে বিখ্যাত নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের প্রধান বিদ্যাপীঠ ছিল এবং এর আনেক শাখা বিশ্বের বহু জায়গায় ছড়িয়ে ছিল , যেমন খোরাসান , নিশাপুর , দামাস্কাস , বুখারা এবং আরো অনেক জায়গায়। বাগদাদের বিখ্যাত নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন ইসলাম বিকৃতকারীদের প্রধান 'ইমাম' মুহাম্মদ আবু হামিদ গাজ্জালী , যিনি টুসীর সাথে নিজামী সিলেবাসের প্রবক্তা। গাজ্জালী খুব কটূভাবে রসূল ও তার সাহাবাদের হেয় করেছেন। যেমন তিনি লিখছেন যে , ২য় খলিফা ওমর রোজা ভাঙ্গতেন ইফতারি অর্থাৎ খাদ্য খেয়ে বা পানীয় পান করে নয় , তিনি রোজা ভাঙ্গতেন ৩ জন দাসীর সাথে সঙ্গমের মাধ্যমে। এরকম আরো উজ্জল দৃষ্টান্ত তার "এহইয়াউল উলুমদ্দিন" বইথেকে দেয়ার ইচ্ছা রইল।



১০৬৭ সালে নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার থেকে হাজার বছর পেরিয়ে গেছে , কিন্তু আজো বিশ্বের প্রায় সকল মাদ্রাসায় এই দুই ইসলামের ক্রিমিনালের (গাজ্জালী ও টুসী) রুপকৃত সিলেবাস অনুসরন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব এখোনো হাজার বছর আগের অবস্থায় দাড়িয়ে হয়ে আছে , কোন অগ্রগতি নেই!! এই সিলেবাস স্টুপিডিটি ছাড়া আর কিছু নয় , এখানে কোরানের আয়াত সম্পর্কে চিন্তার কোন অবকাশ রাখা হয় নি। নির্বোধ বানিয়ে রাখাই এই সিলেবাসের উদ্দেশ্য।



নিজামুল মুলক্‌ তুসীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে হলে , একটি উদাহরনই যথেষ্ট - প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি দুই রাজাকেই উপদেশ দিয়েছিলেন , বহিশত্রুর আক্রমন থেকে রাজ্যকে রক্ষার জন্য কোন প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির দরকার নেই । কারন তার দাবী ছিল , তার ছাত্রদের তসবিহতে ওজীফা পাঠই সকল শত্রু খতম করা ও দুরে রাখার জন্য যথেষ্ট। ফলাফল নিশ্চয় জানেন। বিধর্মী হালাকু খান কতৃক বাগদাদ ধংস।


এমনকি আজকের জমানাতেও ১৬টি 'উলুম বা বিজ্ঞান' নামে যে অপবিজ্ঞান আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে নিজামীয়া সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো হয় , তা একটি ছাত্রের জীবন থেকে অমূল্য ৮টি বছর ধংস করে ফেলছে। মজার ব্যাপার হলো বেশির ভাগ মোল্লাকে যদি জি্জ্ঞাসা করা যায় , ৮টি বছর ধরে তারা যে 'দারসে নিজামিয়া' পড়লো , তার রূপকার কে , তারা বলতে পারবে না।

"তোমরা ঘুনাক্ষরেও কোরান বোঝার চেষ্টা করবে না , তাহলে পথভ্রষ্ট হবে। কোরান বুঝতে হলে ১৫ 'উলুম' বা জ্ঞান জানা প্রয়োজন।" - মাওলানা জাকারিয়া কান্ধালি , ফাজায়েল আমল।




কি সেই 'উলুম' যা না জানলে কোরান বোঝা যাবে না। আসুন গাজ্জালীর "এহইয়াউল উলুমদ্দিন"-ভলুম২ থেকে কিছু জ্ঞান আহরন করি।



" খাওয়া শেষ হলে কাপ প্লেট চেটে , পানি দিয়ে ধুয়ে , সেই পানি খেলে , একটি দাস মুক্ত করার সওয়াব পাওয়া যায়। যে কাপড় বিছিয়ে খাবার খাওয়া হয় , তার উপরে পড়ে থাকা খাবার খেলে জীবন সুন্দর হয় , সন্তানেরা সুস্থ থাকে এবং বেহেস্তের হুরীদের জন্য বিবাহের উপহার হয়।" কি সুন্দর অমূল্য উপহার!!



"আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু সেই , যে বেশি বেশি খায় ও বড় বড় লোকমা খাবার মুখে দেয়।"



"গরুর গোষ্ত রোগ , গরুর দুধ চিকিৎসা" কোরানে কেন যে গরুর গোষ্ত হারাম করা হয় নি?



"হজরত আলী বলেছেন -' যদি তোমরা লবন মুখে দিয়ে সকালের খাওয়া শুরু কর , তাহলে আল্লাহ তোমাদের ৭০টা রোগ বালাই দুর করে দেবেন। হালুয়া মিষ্টি খেলে হোলের বিচি ঝুলে যায়।" আমি আবার মিষ্টি পছন্দ করি। কি যে করি!!



" রোগ শোক মুক্ত সুস্থ জীবন লাভের সর্বোত্তম পন্থা হলো , অল্প বয়সী মেয়ে বিয়ে করা। কখনো কচি মেয়ে ছাড়া বিয়ে করো না।" সর্বরোগের মহৌষধ!!



"জ্ঞানী ব্যক্তিরা ডান পাশ ফিরে ঘুমায় , রাজা বাদশারা বাম পাশ ফিরে ঘুমায় আর শয়তান উপুঢ় হয়ে মুখ নিচের দিকে করে ঘুমায়।" এখন থেকে ডান পাশ ফিরে ঘুমানো প্রাকটিস করা লাগবে!!



" সকালের নাস্তা না খেয়ে গোসল করলে এবং গোসলের পরে নাস্তা করতে দেরি করলে মানুষ মরে যায়। আমি আশ্চর্য হব , যদি এর পরেও মানুষ বেচে থাকে।" এই জ্ঞান লাভের পরে বিজ্ঞানচর্চায় কেনো মুসলমানেরা পিছিয়ে পড়েছে , তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়।



"শাবি মাজ বিন জাবল প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায় বল্লেন ' আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও। আমি অবিবাহিত অবস্থায় আল্লাহর মুখাপেক্ষি হ'তে ঘৃনা বোধ করি'।"

ঐ হবু বিধবার জন্য করুনা ছাড়া আর কিই বা করতে পারি।



"রসূল বলেছেন যে ঘরের কোনায় পড়ে থাকা একটুকরো কম্বল ও বাজা (নিঃসন্তান) স্ত্রীর থেকে উত্তম।"



"একটা হাদীস আছে যে , কালো মহিলা যার সন্তান আছে , সে সুন্দরি সন্তানহীনা মহিলার থেকে উত্তম।" লক্ষ্য করেছেন কি , কালোকে কুশ্রির সমার্থক বলা হয়েছে।



গাজ্জালী আরো বলেছেন , " যখন কোন মানুষের পুরুষাঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকে , তখন তার মনের দুই তৃতিয়াংশ ও ধর্মের দুই তৃতিয়াংশ তাকে পরিত্যাগ করে।" কি অসাধারন জ্ঞান আমাদের হুজ্জাতুল ইসলাম 'ইমাম' মুহাম্মদ আবু হামিদ গাজ্জালী আমাদেরকে দান করেছেন!!



"জুনাইদ বাগদাদী বলেছেন ' আমাদের খাবার যেমন দরকার , তদ্রুপ সেক্স ও দরকার'।"



গাজ্জালী কতৃক রসূলকে অবমাননার উদাহরন-

"রসূল বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন। পথে তিনি এক মহিলাকে দেখে তৎক্ষনাত বাড়ি ফিরে গেলেন । বাড়ির ভিতরে যেয়েই তিনি স্ত্রী জয়নবের সাথে যৌনমিলন করলেন। তারপর তিনি বাইরে এসে বল্লেন ,' যখনি পথে কোন নারীর সাথে দেখা হয়, সে নারী শয়তানের ছদ্মবেশে আসে'। " গাজ্জালী বা অন্য কারো পক্ষে কি জানা সম্ভব , রসূল বাড়ির ভিতর ঢুকে কি করেছিলেন? নাকি রসূল কাচের ঘরে বাস করতেন , যে বাইরে থেকে সব কিছু দেখা যায়? আমাদের নবী ও তার অনুসারীদের কি প্রাইভেসী বা সামান্যতম চক্ষু লজ্জা বলতে কিছু ছিল না? আমাদের ঐতিহাসিকরা নবীকে এভাবেই বর্ননা করেছেন যে তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় নারীসঙ্গে কাটিয়েছেন। কিন্তু কোরানে কি পাই? রসূল রাতের দুই তৃতিয়াংশ প্রার্থনায় কাটাতেন।


আমাদের মোল্লাদের মাথায় যৌনচিন্তা ছাড়া আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। চলবে....।


গাজ্জালী থেকে যৌনজ্ঞান নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যায় , কিন্তু অনেকেরি আপত্তির কারনে আর লিখলাম না। এখন থেকে অনলাইন চেক করা যায় এমন তথ্যই শুধু দিব।



আমাদের এই ব্লগে অনেক অবিবাহিত ভাইরা আছেন , যারা বিবাহে ইচ্ছুক বা অনিচ্ছুক। চলুন গাজ্জালী থেকে বিবাহের উপকারিতা , অপকারিতা ও আদর্শ নারীর পরিচয় জানা যাক , যাদের বিয়ে করলে জীবনে সুখী হবেন।

সুত্র- http://www.banglakitab.com/IhyauUlumuddin/IhyauUlumuddin-ImamGhazzaliRA-Vol-2-Page-214-321.pdf



"বিবাহ করা আল্লাহর এবাদতের জন্য নির্জনবাস অপেক্ষা উত্তম।"



"আমাদের এযূগে বিবাহ না করাই শ্রেয়। আগেকার যূগে এর ফযীলত ছিল। তখন মহিলাদের বদাভ্যাস ছিল না।"



"যার যৌন সামর্থ্য আছে সে যেন বিয়ে করে। কারন , এতে দৃষ্টি বেশি নত থাকে এবং লজ্জাস্থানের অধিক হেফাযত হয়। আর যে বিবাহ করতে না পারে , সে যেন রোজা রাখে। কারন রোজা তার জন্য খাসী হওয়ার সামিল।"



"দুটি বস্তু মানুষের ধর্ম বিনষ্ট করে - লজ্জাস্থান ও পেট।"



"ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের পত্নি অর্থাৎ আব্দুল্লাহ জননী যেদিন ইন্তেকাল করেন , তার পরের দিন তিনি ২য় বিবাহ করে নেন এবং বলেন : আমার মনে হয় যেন রাতে আমি অবিবাহিত।"



"হযরত আলী অন্য সাহাবীগনের তুলনায় অধিক সংসারত্যাগী ছিলেন। অথচ তার চার জন পত্নী ছিলেন।"



"রসূলে করীম বলেন : ২ শত বছর পরে মানুষের মধ্যে সেই উত্তম হবে যে সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কম রাখবে। তার না থাকবে স্ত্রী , না বাচ্চা।"



"পুরুষত্বহীন ব্যাক্তির জন্যেও বিবাহ করা মোস্তাহাব।"



"বিবাহের উপকারিতা হচ্ছে চিত্তবিনোদন এবং এর দ্বারা এবাদতে শক্তি সঞ্চয়।"



"বিবাহের কারনে সৃষ্ট ১ম বিপদ হালাল রুজি রোজগারে অক্ষম হওয়া। সে হারাম দ্বারা পরিবার পরিজনদের খাওয়াতে বাধ্য হবে। ফলে নিজে ও ধ্বংস হবে এবং অন্যকেও ধ্বংস করবে। যে অবিবাহিত , সে এই বিপদ থেকে মুক্ত।"



"২য় বিপদ - স্ত্রী পুত্র-পরিজন প্রজাতুল্য। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রজাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।"



"৩য় বিপদ - স্ত্রী পুত্র-পরিজন মানুষকে আল্লাহর স্মরন থেকে বিরত রাখে এবং দুনিয়াদারীর দিকে ঝুকিয়ে দেয়।"



কেমন কনে?



"কনে সতী ও দ্বীনদার হওয়া উচিৎ। এটা মূলগুন। কনে যদি নিচ জাত , অসতী ও কম দ্বীনদার হয় , তবে বরের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না।"



"৬ প্রকার নারীকে বিবাহ করো না- আন্নানা , মান্নানা , হান্নানা , হাদ্দাকা , বারবাকা ও শাদ্দাকা। এরা হলো , যে সর্বদা কাতরায় ও রোগিনী , সর্বদা বলে এই করেছি সেই করেছি , পূর্বের স্বামী ও সন্তানদের প্রতি আসক্তি , সবকিছুর উপরে লোভ পোষন করে ও পেতে চায় , সারাদিন সাজসজ্জা ও প্রসাধনে মেতে থাকে ও যে খুব বকবক করে।" নারীর এই সকলগুন বিয়ের আগে কিভাবে জানা সম্ভব , সে ব্যাপারে তিনি কোন জ্ঞানদান করেন নি!!



"রুপলাবন্য অন্যতম গুন। এগুনটি এজন্য কাম্য যে , এরফলে স্বামী যিনা থেকে মুক্ত থাকে। স্ত্রী কুশ্রী হলে মানুষ স্বভাবতই অতৃপ্ত থাকে। যার মুখমন্ডল সুশ্রী , তার চরিত্র ও ভাল হয়। এটাই সাধারন নিয়ম।"



গাজ্জালীর স্বপ্নকন্যা - "সুন্দরী , চরিত্রবতী , কালকেশী আনতনয়না , গৌরবর্না ও স্বামীনিবেদিতা স্ত্রী কেউ পেয়ে গেলে সে যেন বেহেশ্তের হুর পেয়ে যায়।"



"৪র্থ গুন মোহরানা কম হওয়া"



"৫ম গুন বন্ধ্যা না হওয়া।" বিয়ের আগে জানার কোন উপায় আছে কি?



"৬ষ্ঠ গুন কুমারী হওয়া।"



"৭ম গুন অভিজাত বংশের দ্বীনদার ও সৎ পরিবারের কনে হওয়া।"



"৮ম গুন নিকটাত্মীয় না হওয়া। এটা কামস্পৃহা হ্রাস করে।"



"রসুলুল্লাহ বলেছেন : কনেকে বিবাহ দেয়ার মানে তাকে বাঁদী করা। অতএব নিজের কন্যাকে কোথায় দিচ্ছ তা দেখে নাও।"



বিবাহিতদের জন্য কিছু উপদেশ-



"স্ত্রীর সাথে সদাচরন করা এবং দয়াপরবশ হয়ে তাদের নিপীড়ন সহ্য করা।"



"পীড়ন সহ্য করা সত্বেও স্ত্রীদের সাথে হাসিতামাশা ও আনন্দ করবে।"



"হযরত হাসান বসরী বলেন : যে ব্যাক্তি স্ত্রৈণ অর্থাৎ স্ত্রী যা চায় তাই করে , আল্লাহ তায়ালা তাকে উপুড় করে দোযখে ফেলে দিবেন। হযরত ওমর বলেন : স্ত্রীদের মর্জির বিপরীত কাজ কর, এতে বরকত হয়। স্ত্রীদের সাথে পরামর্শ কর এবং তারা যে পরামর্শ দেয় তার বিপরীত কর।"



"হাদীসে আছে - স্ত্রীর গোলাম ধ্বংস হোক।"



"স্ত্রীদের লাগাম সামান্য শিথিল করে দিলে তারা পুরুষকে কয়েক হাত হেচড়ে নিয়ে যাবে। পক্ষান্তরে লাগাম টেনে রাখলে ও জায়গামতো কঠোর হলে স্ত্রীরা আয়ত্বে থাকবে।"



"ইমাম শাফেয়ী বলেন : স্ত্রী , খাদেম ও নিবর্তিদের সম্মান করলে তারা তোমাকে অপদস্ত করবে।"



"হযরত ওমর বলতেন : স্ত্রীদেরকে উৎকৃষ্ট পোশাক দিও না , তাহলে গৃহমধ্যে থাকবে। হযরত মুয়ায তার স্ত্রীকে আলো আসার ছিদ্র দিয়ে বাইরে তাকানোর জন্য শাস্তি দিয়েছেন।"



"বর্তমানে বৃদ্ধাদের ছাড়া অন্যদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি না থাকা উত্তম।"



গাজ্জালীর জ্ঞানের সমুদ্র থেকে অল্প কিছু এখানে উল্লেখ করলাম। যারা উৎসাহী , তারা পুরোটাই পড়ে নিজেকে অশেষ জ্ঞানের অধিকারী করতে পারেন। এ সুযোগ হেলায় হারানো উচিৎ নয়।

Saturday, February 25, 2012

কোরান অবমাননা



গত ৩ দিন (২১-২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১২) কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদে আফগানিস্তানে সহিংস প্রতিবাদ অব্যহত আছে। এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে আনুমানিক ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও আরো অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত। সারা মুসলিম বিশ্বে  এই সহিংস প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কোরান অবমাননার ঘটনা যূগে যূগে অতীতে আরো বহুবার ঘটেছে।  এনিয়ে ২০০৫ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ আহমদ মনসুরের কাছে লেখা এক মিশরীয়ের লেখা চিঠির জবাবে তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন , সেটার কিয়দাংশ সকলের অবগতির জন্য এখানে পেশ করছি-

এক পাঠক আমাকে ভর্ৎসনা করে একটি চিঠি লিখেছেন- "সত্যি বলতে , কোরান অবমাননার বিষয়ে আপনাকে নিঃশ্চুপ থাকতে দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি।"  তিনি উষ্কানিমূলকভাবে আমাকে প্রশ্ন করেছেন , আপনি আমেরিকায় বাস করেন বলেই কি আমেরিকান সরকারের সমালোচনা করা নিষিদ্ধ? (সেই সময়ে উনি মিশর থেকে বিতাড়িত হয়ে আমেরিকায় বসবাস করতেন) নাকি আপনার সময় হয় শুধুমাত্র আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ও এর ধর্মীয় গুরুদের সমালোচনা করার?
নাকি সারারাজীবণ যে ইসলাম ও কোরানের সমর্থনে লেখার দাবী আপনি করে থাকেন , সেটা ভুলে গেছেন?  নাকি কোরান ও ইসলাম এখন আর আপনার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে না?

আমি তাকে জবাব দিয়েছি , " মহান ভাই আমার , আমি আল-জজিরা টেলিভিশনে বলেছি , যারা জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে কোরান অবমাননার কাজ করে , তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। আমি ছাড়াও আরো অনেক আমেরিকান একি কথা বলেছে। তবে আমেরিকানরা কোরান অবমাননার নিন্দা করেছে , এ কারনে নয় যে তারা কোরানে বিশ্বাস করে। বরং তারা যে কোন ধর্মের  অবমাননার বিপক্ষে বলেই নিন্দা করেছে। একথা ভুল্লে চলবে না যে এদের সমাজে খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্মগ্রন্থের অবমাননার নিন্দা ও প্রতিবাদ ও তারা একারনেই করে থাকে।  এটা একটা উম্মুক্ত সমাজ। কোন কিছুই এখানে বেশি দিন গোপন করে রাখা যায় না। যে কেউ এখানে বাড়াবাড়ি করে , সেই তার ন্যায্য ও যথাযথ শাস্তি পায় এদের দেশের আইন অনুসারে। আমি আল্লাহকে সামনে রেখে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,এদের থেকে ভাল বিচার ব্যাবস্থা ও  মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আমি অন্য কোন দেশকে দেখিনি। আমি আমেরিকা ও তার সিস্টেমকে ডিফেন্ড করছি না , যেটা আমার কাছে সত্য মনে হয়েছে , সেটাই বল্লাম। এমনও ঘটেছে এই আমেরিকাতেই বিভিন্ন সম্মেলনে ইংরেজিতে আমি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছি , যা আমেরিকানদের জন্য সুখকর ছিল না।  এদের দেশে বলার স্বাধীনতাকে আমি উপভোগ করি , যেটা আমার দেশে আমি পাই নি।

গুয়ান্তানামো বেতে কোরান অবমাননার ঘটনার সংবাদ সর্বপ্রথম আমেরিকার মিডিয়ায় জনসম্মুখে তুলে আনে। যেমনটি তুলে এনেছিল ইরাকের আবু গ্রেইব বন্দিশালায় বন্দিদের উপরে আমেরিকান সৈন্যদের অত্যাচারের ভিডিও চিত্র। আশা করা যায় আবু গ্রেইবের মতোই এবারো তদন্ত হবে এবং দোষী ব্যাক্তিরা যথাযথ শাস্তি পাবে। আমেরিকার এই উম্মুক্ত সমাজে নিজেদের সকল ভুল বা অন্যায়কে এরা সামনে নিয়ে আসে , খোলাখুলি আলোচনা করে এবং দোষী ব্যাক্তির শাস্তি নিশ্চিত করে , তা যেই হোক না কেন।

এর বিপরীতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে আমরা কি দেখি? ভাবখানা এমন যে এদের দেশের বন্দিশালায় কোন ধরনের নির্যাতন করা হয় না এবং তাদের মাঝে এখন বা সুদুর অতীতে ও কখনো কোরান অবমাননার মতো ঘটনা কখনো ঘটে নি। যে কারনে তারা নিজেদের কথা ভুলে গিয়ে আমেরিকার সমালোচনা করে , যেন এমনটাই আমেরিকান পলিসি। যে কোরান অবমাননার জন্য জীবণ দিচ্ছে , সেই কোরানে লিখিত আল্লাহর বাণীকেই ভুলে বসে আছে-
২:৪৪ তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?


আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই ,  কোরান বা ছাপানো কোরানের (মুস-হাফ) অবমাননাকে আমি কঠোর ভাবে নিন্দা জানাই এবং এর অবমাননাকারী মুসলমান বা অমুসলমান যেই হোক না কেন , তাকে অভিশাপ দেই।
কোরান অবমাননার প্রতিক্রিয়া নিয়ে মুসলমানদের দ্বিচারিতা বা ভন্ডামি নিয়ে কিছু আলোকপাত করা প্রয়োজন। মুসলমান বলতে আমি সরলিকরন করে সকল মুসলমান নয় , বরং বেশিরভাগ মুসলমানকেই বুঝাচ্ছি।

১) আমরা সাধারনত সারা বিশ্বকে জ্ঞান দিতে ও সঠিক রাস্তা দেখাতে উৎসাহী , যেখানে আমরা নিজেরাই ভুল পথে আছি। আমরা সবসময় অন্যের দোষ ত্রুটি ও দুর্বলতা পর্যবেক্ষন করি , যদিও আমরাই সবচেয়ে দূর্ণীতিগ্রস্থ ও ভন্ড। যদি আমরা নিজেদের নিয়োজিত রাখতাম নিজেদের সংশোধনে এবং নিজেদের পাহাড়সম দুর্ণীতি ও দোষ মুক্ত হতে , তাহলে অন্যদের দোষ ও দুর্বলতা খোজার সময় আমাদের থাকত না। কিন্ত আমরা সেটা করতে অস্বীকার করি। আমরা নিজেদের অতীতের গৌরবকাথা ও সফলতা নিয়ে বারংবার বলতে এমনি পছন্দ করি যে , এটা দিবাস্বপ্ন দেখার সামিল হয়ে পড়েছে। যার ফলে আজ আমরা পৃথিবীর আর সকল মানুষের চোখে সবচেয়ে খারাপ সম্প্রদায়রুপে চিহ্নিত হয়েছি এবং রাষ্ট্রসমূহের মাঝে বিরাজমান উত্তেজনা ও ঝামেলার কারন হিসাবে মুসলমানদের দায়ী করা হচ্ছে।

আজ যারা রাস্তায় জঙ্গী মিছিল করছে ও জীবণ দিচ্ছে , তাদের ধারনা কোরানের অবমাননা শুধুমাত্র  আমেরিকান সৈন্য ও ইহুদী সৈন্যরাই করে থাকে। এটা ভুল। এরা না জানে ইতিহাস , না জানে এদের নেতা ও মোল্লারা। মুসলমান খলিফা , শাসক , মুসলিম উলামা , সুফি সাধক কর্তৃক কোরান অবমাননার ঘটনা ঘটেছে সুদুর অতীতে যখন আমেরিকা বলে কোন দেশ ছিল না।

কিছু উদাহরন-

ক) উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আব্দিল-মালিকের শাসন কাল ছিল ১২৫ হিঃ থেকে ১২৬ হিঃ সাল। তার নারী আসক্তি , ব্যাভিচার , সৎমাদের সাথে যৌণসংসর্গ ও মদাসক্তি নিয়ে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি যখন সিংহাসনের উত্তরাধিকার ছিলেন , সেই সময় কাবা ঘরের ন্যায় গম্বুজ বানিয়ে মদ নর্তকি , কুকুর নিয়ে মক্কা রওয়ানা হয়েছিলেন সেটা কাবার উপরে স্থাপনের জন্য। বণু হাশিমেরা অভিযোগ করে যে , তিনি ছিলেন প্যাগান বা জান্দাক এবং পরকাল ও কোরানে বিশ্বাস করতেন না। এক অতি বিখ্যাত ঘটনার বর্ণনায় পাওয়া যায়-  একদিন লিখিত কোরান (মুস-হাফ) খুল্লে তার চোখ পড়ে এই আয়াতের পরে , যেখানে আল্লাহ বলেছেন " প্রত্যেক অবাধ্য, অন্যায়পরায়ন শাসক ব্যর্থ কাম হবে" তিনি তখন মুস-হাফ ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং তীর ছুড়ে মুস-হাফকে ফুটো করে ফেল্লেন। এবং একটি কবিতা লিখলেন-

"তুমি আমাকে অবাধ্য, অন্যায়পরায়ন শাসক বলে ভয় দেখাও? যখন তুমি শেষ বিচারের দিনে তোমার রবের সম্মুখে উপস্থিত হবে
 বলুন , হে আমার প্রভু ,  আল-ওয়ালিদ আমাকে তীর মেরে ফুটো করে দিয়েছে।"
(সুত্র - “The Complete History” (Taareekh al kaamil) by Ibn Il-Atheer, volume 4, page 486.  Also Al-Muntadhim  by Ibn-Il-Jawzi, volume 7, pages 236 – 248.)

খ)হিজরী ৯ম শতকে বিখ্যাত সুফি সাধক শেখ ইবনে আল-বাকাকী রমজানে ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা থাকতেন না এবং লিখিত কোরান (মুস-হাফ) মাটিতে রেখে তার উপরে দাড়িয়ে উচু তাক থেকে জিনিষপত্র নামাতেন।
(সুত্র -(Ibn Hajar, “Ad-durar il kaaminah”,  volume 9, page 329.)

গ)আমাদের এই যূগে  বর্তমানে ও মুসলিম দেশগুলোতে  কোরান অবমাননার ঘটনা অহরহ ঘটছে। মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য যারা মুবারকের আমলে কারাভোগ করেছে ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে , তাদেরকে নির্যাতনের অন্যতম পন্থা ছিল আল্লাহকে গালি দেয়া ও লিখিত কোরান (মুস-হাফ) তাদের সামনে ছিড়ে ফেলা। লিখিত কোরানের (মুস-হাফ) ভিতরে পিস্তল রেখে ব্রাদারহুডের উপরে দোষ চাপানো হয়েছিল , এমনটি আমাকে লেখক ও সাংবাদিক আব্দিল-মুনিম আল-জিদ্দাওয়ী বলেছেন।

সুতরাং আপনি বুঝতেই পারছেন , আমেরিকান  সৈন্যরাই প্রথম ও একমাত্র অপরাধী নয় যারা যূগে যূগে কোরানের অবমাননা করেছে।  অতীতে ঘটা কোরান অবমাননার এমন অনেক ঘটনা জানতে চাইলে “The Great Levels” (At-Tabaqaat Al Kubraa) by  Ash-Sha'araani, volume 2.  পড়ে দেখতে পারেন। এটা এখনো ছাপা হয় ও সহজেই জোগাড় করা সম্ভব।

চিঠির পরবর্তী অংশে অধ্যাপক ডঃ আহমদ মনসুর সর্ব যূগের মুসলিমদের কোরান নিয়ে ভন্ডামির নমুনা তুলে ধরেছেন। এই ভন্ডামি নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার আশা রইল।

Tuesday, January 31, 2012

যীশু ও ইসা কি একি ব্যাক্তি? (৩)

এবারে দেখা যাক নিউ টেস্টামেন্টে যীশু সম্পর্কে কি বলা হয়েছে-
নিউ টেস্টামেন্ট মূলত ২১ টা চিঠি ও ৪ টি গসপেলের সঙ্কলন। এর মধ্যে ১৩ টা চিঠি পলের লেখা। বাকি চিঠিগুলো পল ও অন্যান্যদের লেখার মিশ্রন। ৪ টি গসপেলের দুইটি ম্যাথিউ এবং জনের লেখা। বাকি দুইটি পলের সহকারী মার্ক এবং লুকের লেখা। নিউ টেস্টামেন্ট মূলত পলের প্রচারিত ডক্ট্রিনের ধারক ও বাহক। পল নুতন এই ধর্ম প্রচারের আগে ৩ বছর বর্তমানের সৌদিআরবে/হেজাজে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন এবং ওখান থেকে চামড়ার উপরে লেখা কিছু প্রাচীন লিপি নিয়ে আসেন। এগুলো আমরা জানি পলের চিঠি থেকে। ধারনা করা হয়ে থাকে এই প্রাচীন লিপিগুলো কোরানে বর্ণীত ঈসা ইবনে মরিয়মের বাণী বা অরিজিনাল গসপেলের অংশ বিশেষ।  মরিয়ম কোরানের ও বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী মুসাও হারুনের সমসাময়িক ছিলেন , কারন মরিয়ম ছিলেন হারুনের বোন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যীশুর অন্তত ৭০০ বছর আগে ঈসা ইবনে মরিয়মের জন্ম এবং তাদের জন্মস্থান ও ভিন্ন। যীশুর সাথে ঈসা ইবনে মরিয়মের যে মিল দেখা যায় তার মূলেই হলো পল কর্তৃক যীশুর অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বাধীনতার আন্দোলন কে দমানোর জন্য ঈসা ইবনে মরিয়মের বাণীকে যীশুর উপরে আরোপন করে তাকে ইস্রাইল নয় বরং সমগ্র বিশ্বের পরিত্রাতা হিসাবে চিত্রিত করা।
আসলে যীশু কোন নবি বা রসূল ছিলেন না। তিনি কোন ধর্ম প্রচার করতেও আসেন নি। তিনি এসেছিলেন ইস্রাইলকে স্বাধীন করতে। এর প্রমান নিউ টেস্টামেন্টেও পাওয়া যায়।
১)যীশু প্যালেস্টাইনের আদিবাসী ছিলেন না বা তার জন্ম ও প্যালেস্টাইনে হয় নি। এর প্রমান পাওয়া যায় মার্কের গসপেলে -  ক্রসে যখন যীশুকে পেরেক দিয়ে গেঁথে রাখা হয়েছিল , কষ্টের শেষ সীমায় পৌছে যীশুর কাতর বাণী ছিল, "ইলোই ইলোই , লামা সাবাখ-থানি?" এটা ছিল আরামিক ভাষায়। এর অর্থ " আমার প্রভু আমার প্রভু , কেন আমাকে পরিত্যাগ করলে?" সমবেত জনতা তার মাতৃভাষা (কষ্টের সময় সাধারনত মানুষ তার মাতৃভাষায় বিলাপ করে) না বুঝে বলতে থাকে দেখ দেখ , সে ইলিয়াসকে ডাকতেছে।
ম্যাথিউর গসপেলেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।
২) যীশু যে ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি তা বোঝা যায় ম্যাথিউর গসপেল থেকে -  পুরা ৩ নং অধ্যায় জনকে (ইয়াহিয়া) নিয়ে লেখা। জন মানুষকে বাপ্টাইজ করত। যীশু ও জনের কাছে এসেছিলেন বাপ্টাইজ হতে। এখন প্রশ্ন জাগে পানি দিয়ে বাপ্টাইজ করা খৃষ্টান ধর্মের নাকি ইহুদী ধর্মের রিচুয়াল? যীশু কখনো কাউকে বাপ্টাইজ করেন নি , অন্তত নিউ টেস্টামেন্টের কোথাও তেমন প্রমাণ নেই বরং তিনি নিজেই জনের কাছে বাপ্টাইজ হয়েছিলেন। খৃষ্টান ধর্মে বাপ্টাইজ করার রীতি চালু করেন পল।
৩) 4:12    Now when it came to his ears that John had been put in prison, he went away to Galilee;  জনকে রোমান গভর্নরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যীশু যদি গভর্ণরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করবেন বা  বিদ্রোহ না করবেন , তাহলে তিনি জনের গ্রেফতারের খবর শুনে গালিলিতে পালিয়ে গেলেন কেন?
৪) গ্যালিলিতে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দলে ভেড়ান সিমিয়নের দুই ছেলে পিটার ও এন্ড্রুকে , যারা সমুদ্রে মাছ ধরতেন। তিনি তাদের বলেন - 4:19    And he said to them, Come after me, and I will make you fishers of men.
মাছের বদলে মানুষ শিকারী বানাতে চান তাদের। এর অর্থ - রোমান সৈন্য শিকার করা।
৫) “Do not think that I have come to abolish the law or the prophets. I have come not to abolish but to fulfill”.  যীশু পুরাতন ধর্ম বিনাশ করতে আসেন নি বা নুতন ধর্ম প্রচার করতেও আসেন নি , বরং পুরাতন টেস্টামেন্টে বর্ণীত ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যতবাণী পুরন করতে (fulfill) এসেছিলেন।
৬) “Do not think that I have come to bring peace upon the earth. I have come to bring not peace but the sword. For I have come to set a man 'against his father, a daughter against her mother, and a daughter-in-law against her mother-in-law; and one's enemies will be those of his household”.   [Matthew – 10: 34-36]. যীশু পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আসেন নি , বরং তরবারী দ্বারা তার সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন।

Sunday, January 15, 2012

যীশু ও ইসা কি একি ব্যাক্তি? (২)

যীশু - ছুতারপুত্র
(তিনি এসেছিলেন ক্ষমতা দখলের জন্য , হয়ে গেলেন ঈশ্বরপুত্র)
১) ইসা (ইসাউ) এবং যীশু দুটি সম্পুর্ণ ভিন্ন নাম:
যীশু সম্পর্কে বলার আগে , যীশু (يسوع) ও ইসার (عيسى) মধ্যকার নাম বিভ্রাট দুর করা দরকার। মুসলমানরা যেমনটি ভাবে - যীশু ও ইসা একই নাম , একটি হিব্রুতে , অন্যটি আরবিতে - তা ঠিক  নয়। এটা ভুল বা মিথ্যা বিশ্বাস।
 দুটোই অতি পরিচিত হিব্রু নাম। ওল্ড টেষ্টামেন্টে দুটি ভিন্ন মানুষের নাম হিসাবে ব্যাবহার হয়েছে। যেমন- ইব্রাহিম পুত্র ইসহাকের প্রথম দুটি ছেলে ছিল যমজ। একজনের নাম ছিল ইসা(ইসাউ) , অন্যজন ইয়াকুব।
ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে-
“And the first one came out red all over, like a hairy garment; and they called his name Esau…” [Genesis – 25:25]. "এবং যে প্রথমে ভূমিষ্ঠ হলো , সে রক্তবর্ণ , তার সর্বাঙ্গ ঘন লোমের পোষাকের মতো , এবং তার নাম রাখা হলো ইসাউ।
হিব্রু 'ইসাউ' (عيسو) হলো আরবিতে 'ইসা' (عيسى)। যে কোন আরবি ও হিব্রু জানা লোক এর সাক্ষ্য দিবে। আরবি বর্ণ (ى), যাকে বলা হয় 'আলিফ মাকসুরা' , হিব্রুতে উচ্চারিত হয় বর্ণ (و)এর মতো।
সত্যটা হলো -  যীশু (يسوع) ও ইসার (عيسى) মধ্যকার সম্পর্কটাকে তুলনা করা যায় , আরবি নাম কামাল (كمال) ও মালেক (مالك)এর মাঝে যে সম্পর্ক , তার সাথে। দুটি নামই আরবি একি তিন বর্ণ দিয়ে লেখা হলেও নাম দুটি ভিন্ন। যদি আমরা মালেকের শেষ বর্ণ 'কাফ'(ك)এর জায়গা পরিবর্তন করে শেষ বর্ণ থেকে প্রথম বর্ণ করে দেই , তাহলে আমরা পাই কামাল। ঠিক একি ভাবে যীশুর (يسوع)শেষ বর্ণ 'আইন' কে প্রথম বর্ণ করে দিলে , পাওয়া যায় ইসা (عيسى)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যীশু (يسوع) ও ইসা (عيسى) দুটি ভিন্ন নাম, কোন ভাবেই এ দুটিকে একজনের নাম বলা যায় না।
এখন দেখা যাক যীশু কে ছিলেন?
২) যীশুর খোঁজে
অপবাদ ও ষড়যন্ত্র তত্ব মুক্ত থাকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত খৃষ্টান চিন্তাবিদ , ইতিহাসবেত্তা ও প্রত্নতত্বের প্রফেসর ডঃ কামাল সালিবির (জন্ম ১৯২৯) বই “The Search for Jesus”, থেকে যীশুর পরিচয় জানব। উনি নিউ টেস্টামেন্ট থেকেই যীশুর পরিচয় বের করেছেন।
- নিউ টেস্টামেন্টের ৪ টি গসপেলের কোথাও এমন ইঙ্গিত করে না যে , যীশু ধার্মিক ব্যাক্তি ছিলেন বা তিনি কোন ধর্মীয় আইন প্রণেতা বা তিনি কখনো কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করেছেন। সত্যটা হলো - জন দি বাপ্টিস্ট সাক্ষ্য দেন যে যীশু কখনোই তার কোন অনুসারীকে পানি দিয়ে বাপ্টাইজ্ড করেন নি , যেমনটি তার অনুসারীরা তার মৃত্যুর পরে করেছেন।
[John – 4:2].(Though Jesus himself baptized not, but his disciples,)
এটা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে যীশু নিজে ধর্ম প্রবর্তন করেন নি , বরং অনেক অনেক বছর পরে পলের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা ধর্মের এই সকল রীতি নীতি চালু করেন।

- ডঃ সালিবি বলেছেন - ম্যাথিউর গসপেলে বলা হয়েছে যীশুর জন্ম বেথলেহেমে , যাতে ওল্ড টেস্টামেন্টে করা যীশুর ভবিষ্যতবাণীর সাথে মিলে যায়।Mic 5:2 But thou, Bethlehem Ephratah, though thou be little among the thousands of Judah, yet out of thee shall he come forth unto me that is to be ruler in Israel; whose goings forth have been from of old, from everlasting.
এখানেই পাওয়া যায় ম্যাথিউর সাথে জনের গসপেলের পরস্পর বিরোধীতা। জনের গসপেলে বলা হয়েছে ইহুদীরা যীশুকে মেসিয়াহ হিসাবে মেনে নেয় নি , কারন যীশুর জন্ম গ্যালিলিতে।
7:41    Others said, This is the Christ. But some said, Shall Christ come out of Galilee?
7:42    Hath not the scripture said, That Christ cometh of the seed of David, and out of the town of Bethlehem, where David was?
7:43    So there was a division among the people because of him.

- ৪টি গসপেলের প্রতিটিতে যীশুকে নাজারেথের বাসিন্দা বলে বলা হয়েছে। তবে ৩য় শতাব্দির পূর্বে নাজারেথ বলে কোন শহরের অস্তিত্বের কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না। নাজারেথ সম্পর্কে জানতে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন -   http://www.jesusneverexisted.com/nazareth.html  
- নিউ টেস্টামেন্টের ৪ টি গসপেলের বাইরে আরো কয়েকটি গসপেলেলের সন্ধান পাওয়া গেছে , অনেকটা ভাগ্যক্রমে। এগুলো হলো থমাসের গসপেল , মেরির গসপেল এবং ফিলিপের গসপেল। এ গসপেলগুলোকে ৩য় শতাব্দিতে অনুষ্ঠিত নীসেন কাউন্সিলে নিষিদ্ধ করা হয় এবং এদের সকল কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এগুলো ১৯৪৫ সালে মিশরে আবিষ্কৃত হয় এবং নাম দেয়া হয় নাগ হামাদি কোড Codex of Nag Hammadi (نجع حمادي)। হল্যান্ডের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মের প্রফেসর গিলেস কুইসপেল বলেছেন - এই গসপেলগুলোতে নিউটেস্টামেন্টের গসপেলগুলোর সাথে যেমন মিল আছে , তেমনি আবার এমন অনেক কিছুই আছে যা খৃষ্টানদের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী।
 যেমন ফিলিপের গসপেলে বলা হয়েছে যোসেফ যীশুর সত্যিকারের পিতা (biological father)। যীশু যে মানুষই ছিলেন তা প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী মেরি ম্যাগডালেনের পরিচয় দিয়ে , যাকে যীশু খুব ভাল বাসতেন।
“There were three who always walked with the master (Jesus): His mother, her sister Mary, and his companion Mary Magdalene. His mother’s sister’s name was Mary, and the name of his companion was likewise Mary”. যীশুর সার্বক্ষনিক সহচর ছিল ৩ জন - এরা হলেন তার মা , খালা মেরি ও তার সঙ্গী মেরি ম্যাগডালেন।
একটা জিনিষ খেয়াল করুন - খালার নাম যদি মেরি হয় , তাহলে তার মার নাম মেরি না হওয়াটাই স্বাভাবিক। (দুই বোনের নাম তো আর এক হতে পারে না) এর অর্থ দাড়ায় গসপেলে বর্ণীত এই যীশু মেরি বা মরিয়ম পুত্র নন।
- কৌতুহলের বিষয় হলো ১৯৪৭ সালে পাওয়া ডেড সী স্ক্রল , যেখানে খৃঃপূঃ -১০০ থেকে +১০০ খৃঃ , এই সময়কালে ঘটিত ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে এবং এর লেখকগণ ও ছিলেন যীশুর সমসাময়িক ইহুদী গোষ্ঠির লোক। তাদের লেখায় যীশুর কোন উল্লেখ নেই বা ওল্ড টেস্টামেন্টের কপি থাকলে ও , নিউটেস্টামেন্টের কোন কপি নেই।
যীশুর সমসাময়িক বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ - গ্রিক প্লুটার্খ (+৪০ - +১২০), রোমান প্লিনাস থ্য এলডার (+২৩ - +৭৯ ইনি ৫ বছর প্যালেস্টাইনে বসবাস করেছেন), ট্যাসিটাস (+৫৪ - +১১৯), স্যুয়েটোনিয়াস (+৭৫ - ??) এদের কারো লেখায় যীশু বা তার প্রচলিত নুতন খৃষ্টান ধর্মের কোন উল্লেখ নেই , নাম গন্ধ ও নেই। এর অর্থ দাড়ায় খৃষ্টান ধর্মের সাথে যীশুর কোন সম্পর্ক নেই।
খৃষ্টান ধর্ম শুরু হয়েছিল যীশুর মৃত্যুর অনেক পরে , তার অনুসারীদের দমনের লক্ষ্যে তাদের মাঝে পল ও আনানিয়াস কর্তৃক বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে। যীশুর একমাত্র লক্ষ ছিল রাজনৈতিক , ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা , ধর্ম প্রচার নয়।
চলবে .....