Sunday, January 15, 2012

যীশু ও ইসা কি একি ব্যাক্তি? (২)

যীশু - ছুতারপুত্র
(তিনি এসেছিলেন ক্ষমতা দখলের জন্য , হয়ে গেলেন ঈশ্বরপুত্র)
১) ইসা (ইসাউ) এবং যীশু দুটি সম্পুর্ণ ভিন্ন নাম:
যীশু সম্পর্কে বলার আগে , যীশু (يسوع) ও ইসার (عيسى) মধ্যকার নাম বিভ্রাট দুর করা দরকার। মুসলমানরা যেমনটি ভাবে - যীশু ও ইসা একই নাম , একটি হিব্রুতে , অন্যটি আরবিতে - তা ঠিক  নয়। এটা ভুল বা মিথ্যা বিশ্বাস।
 দুটোই অতি পরিচিত হিব্রু নাম। ওল্ড টেষ্টামেন্টে দুটি ভিন্ন মানুষের নাম হিসাবে ব্যাবহার হয়েছে। যেমন- ইব্রাহিম পুত্র ইসহাকের প্রথম দুটি ছেলে ছিল যমজ। একজনের নাম ছিল ইসা(ইসাউ) , অন্যজন ইয়াকুব।
ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে-
“And the first one came out red all over, like a hairy garment; and they called his name Esau…” [Genesis – 25:25]. "এবং যে প্রথমে ভূমিষ্ঠ হলো , সে রক্তবর্ণ , তার সর্বাঙ্গ ঘন লোমের পোষাকের মতো , এবং তার নাম রাখা হলো ইসাউ।
হিব্রু 'ইসাউ' (عيسو) হলো আরবিতে 'ইসা' (عيسى)। যে কোন আরবি ও হিব্রু জানা লোক এর সাক্ষ্য দিবে। আরবি বর্ণ (ى), যাকে বলা হয় 'আলিফ মাকসুরা' , হিব্রুতে উচ্চারিত হয় বর্ণ (و)এর মতো।
সত্যটা হলো -  যীশু (يسوع) ও ইসার (عيسى) মধ্যকার সম্পর্কটাকে তুলনা করা যায় , আরবি নাম কামাল (كمال) ও মালেক (مالك)এর মাঝে যে সম্পর্ক , তার সাথে। দুটি নামই আরবি একি তিন বর্ণ দিয়ে লেখা হলেও নাম দুটি ভিন্ন। যদি আমরা মালেকের শেষ বর্ণ 'কাফ'(ك)এর জায়গা পরিবর্তন করে শেষ বর্ণ থেকে প্রথম বর্ণ করে দেই , তাহলে আমরা পাই কামাল। ঠিক একি ভাবে যীশুর (يسوع)শেষ বর্ণ 'আইন' কে প্রথম বর্ণ করে দিলে , পাওয়া যায় ইসা (عيسى)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যীশু (يسوع) ও ইসা (عيسى) দুটি ভিন্ন নাম, কোন ভাবেই এ দুটিকে একজনের নাম বলা যায় না।
এখন দেখা যাক যীশু কে ছিলেন?
২) যীশুর খোঁজে
অপবাদ ও ষড়যন্ত্র তত্ব মুক্ত থাকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত খৃষ্টান চিন্তাবিদ , ইতিহাসবেত্তা ও প্রত্নতত্বের প্রফেসর ডঃ কামাল সালিবির (জন্ম ১৯২৯) বই “The Search for Jesus”, থেকে যীশুর পরিচয় জানব। উনি নিউ টেস্টামেন্ট থেকেই যীশুর পরিচয় বের করেছেন।
- নিউ টেস্টামেন্টের ৪ টি গসপেলের কোথাও এমন ইঙ্গিত করে না যে , যীশু ধার্মিক ব্যাক্তি ছিলেন বা তিনি কোন ধর্মীয় আইন প্রণেতা বা তিনি কখনো কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করেছেন। সত্যটা হলো - জন দি বাপ্টিস্ট সাক্ষ্য দেন যে যীশু কখনোই তার কোন অনুসারীকে পানি দিয়ে বাপ্টাইজ্ড করেন নি , যেমনটি তার অনুসারীরা তার মৃত্যুর পরে করেছেন।
[John – 4:2].(Though Jesus himself baptized not, but his disciples,)
এটা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে যীশু নিজে ধর্ম প্রবর্তন করেন নি , বরং অনেক অনেক বছর পরে পলের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা ধর্মের এই সকল রীতি নীতি চালু করেন।

- ডঃ সালিবি বলেছেন - ম্যাথিউর গসপেলে বলা হয়েছে যীশুর জন্ম বেথলেহেমে , যাতে ওল্ড টেস্টামেন্টে করা যীশুর ভবিষ্যতবাণীর সাথে মিলে যায়।Mic 5:2 But thou, Bethlehem Ephratah, though thou be little among the thousands of Judah, yet out of thee shall he come forth unto me that is to be ruler in Israel; whose goings forth have been from of old, from everlasting.
এখানেই পাওয়া যায় ম্যাথিউর সাথে জনের গসপেলের পরস্পর বিরোধীতা। জনের গসপেলে বলা হয়েছে ইহুদীরা যীশুকে মেসিয়াহ হিসাবে মেনে নেয় নি , কারন যীশুর জন্ম গ্যালিলিতে।
7:41    Others said, This is the Christ. But some said, Shall Christ come out of Galilee?
7:42    Hath not the scripture said, That Christ cometh of the seed of David, and out of the town of Bethlehem, where David was?
7:43    So there was a division among the people because of him.

- ৪টি গসপেলের প্রতিটিতে যীশুকে নাজারেথের বাসিন্দা বলে বলা হয়েছে। তবে ৩য় শতাব্দির পূর্বে নাজারেথ বলে কোন শহরের অস্তিত্বের কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না। নাজারেথ সম্পর্কে জানতে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন -   http://www.jesusneverexisted.com/nazareth.html  
- নিউ টেস্টামেন্টের ৪ টি গসপেলের বাইরে আরো কয়েকটি গসপেলেলের সন্ধান পাওয়া গেছে , অনেকটা ভাগ্যক্রমে। এগুলো হলো থমাসের গসপেল , মেরির গসপেল এবং ফিলিপের গসপেল। এ গসপেলগুলোকে ৩য় শতাব্দিতে অনুষ্ঠিত নীসেন কাউন্সিলে নিষিদ্ধ করা হয় এবং এদের সকল কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এগুলো ১৯৪৫ সালে মিশরে আবিষ্কৃত হয় এবং নাম দেয়া হয় নাগ হামাদি কোড Codex of Nag Hammadi (نجع حمادي)। হল্যান্ডের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মের প্রফেসর গিলেস কুইসপেল বলেছেন - এই গসপেলগুলোতে নিউটেস্টামেন্টের গসপেলগুলোর সাথে যেমন মিল আছে , তেমনি আবার এমন অনেক কিছুই আছে যা খৃষ্টানদের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী।
 যেমন ফিলিপের গসপেলে বলা হয়েছে যোসেফ যীশুর সত্যিকারের পিতা (biological father)। যীশু যে মানুষই ছিলেন তা প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী মেরি ম্যাগডালেনের পরিচয় দিয়ে , যাকে যীশু খুব ভাল বাসতেন।
“There were three who always walked with the master (Jesus): His mother, her sister Mary, and his companion Mary Magdalene. His mother’s sister’s name was Mary, and the name of his companion was likewise Mary”. যীশুর সার্বক্ষনিক সহচর ছিল ৩ জন - এরা হলেন তার মা , খালা মেরি ও তার সঙ্গী মেরি ম্যাগডালেন।
একটা জিনিষ খেয়াল করুন - খালার নাম যদি মেরি হয় , তাহলে তার মার নাম মেরি না হওয়াটাই স্বাভাবিক। (দুই বোনের নাম তো আর এক হতে পারে না) এর অর্থ দাড়ায় গসপেলে বর্ণীত এই যীশু মেরি বা মরিয়ম পুত্র নন।
- কৌতুহলের বিষয় হলো ১৯৪৭ সালে পাওয়া ডেড সী স্ক্রল , যেখানে খৃঃপূঃ -১০০ থেকে +১০০ খৃঃ , এই সময়কালে ঘটিত ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে এবং এর লেখকগণ ও ছিলেন যীশুর সমসাময়িক ইহুদী গোষ্ঠির লোক। তাদের লেখায় যীশুর কোন উল্লেখ নেই বা ওল্ড টেস্টামেন্টের কপি থাকলে ও , নিউটেস্টামেন্টের কোন কপি নেই।
যীশুর সমসাময়িক বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ - গ্রিক প্লুটার্খ (+৪০ - +১২০), রোমান প্লিনাস থ্য এলডার (+২৩ - +৭৯ ইনি ৫ বছর প্যালেস্টাইনে বসবাস করেছেন), ট্যাসিটাস (+৫৪ - +১১৯), স্যুয়েটোনিয়াস (+৭৫ - ??) এদের কারো লেখায় যীশু বা তার প্রচলিত নুতন খৃষ্টান ধর্মের কোন উল্লেখ নেই , নাম গন্ধ ও নেই। এর অর্থ দাড়ায় খৃষ্টান ধর্মের সাথে যীশুর কোন সম্পর্ক নেই।
খৃষ্টান ধর্ম শুরু হয়েছিল যীশুর মৃত্যুর অনেক পরে , তার অনুসারীদের দমনের লক্ষ্যে তাদের মাঝে পল ও আনানিয়াস কর্তৃক বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে। যীশুর একমাত্র লক্ষ ছিল রাজনৈতিক , ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা , ধর্ম প্রচার নয়।
চলবে .....

No comments:

Post a Comment