Tuesday, January 31, 2012

যীশু ও ইসা কি একি ব্যাক্তি? (৩)

এবারে দেখা যাক নিউ টেস্টামেন্টে যীশু সম্পর্কে কি বলা হয়েছে-
নিউ টেস্টামেন্ট মূলত ২১ টা চিঠি ও ৪ টি গসপেলের সঙ্কলন। এর মধ্যে ১৩ টা চিঠি পলের লেখা। বাকি চিঠিগুলো পল ও অন্যান্যদের লেখার মিশ্রন। ৪ টি গসপেলের দুইটি ম্যাথিউ এবং জনের লেখা। বাকি দুইটি পলের সহকারী মার্ক এবং লুকের লেখা। নিউ টেস্টামেন্ট মূলত পলের প্রচারিত ডক্ট্রিনের ধারক ও বাহক। পল নুতন এই ধর্ম প্রচারের আগে ৩ বছর বর্তমানের সৌদিআরবে/হেজাজে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন এবং ওখান থেকে চামড়ার উপরে লেখা কিছু প্রাচীন লিপি নিয়ে আসেন। এগুলো আমরা জানি পলের চিঠি থেকে। ধারনা করা হয়ে থাকে এই প্রাচীন লিপিগুলো কোরানে বর্ণীত ঈসা ইবনে মরিয়মের বাণী বা অরিজিনাল গসপেলের অংশ বিশেষ।  মরিয়ম কোরানের ও বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী মুসাও হারুনের সমসাময়িক ছিলেন , কারন মরিয়ম ছিলেন হারুনের বোন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যীশুর অন্তত ৭০০ বছর আগে ঈসা ইবনে মরিয়মের জন্ম এবং তাদের জন্মস্থান ও ভিন্ন। যীশুর সাথে ঈসা ইবনে মরিয়মের যে মিল দেখা যায় তার মূলেই হলো পল কর্তৃক যীশুর অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বাধীনতার আন্দোলন কে দমানোর জন্য ঈসা ইবনে মরিয়মের বাণীকে যীশুর উপরে আরোপন করে তাকে ইস্রাইল নয় বরং সমগ্র বিশ্বের পরিত্রাতা হিসাবে চিত্রিত করা।
আসলে যীশু কোন নবি বা রসূল ছিলেন না। তিনি কোন ধর্ম প্রচার করতেও আসেন নি। তিনি এসেছিলেন ইস্রাইলকে স্বাধীন করতে। এর প্রমান নিউ টেস্টামেন্টেও পাওয়া যায়।
১)যীশু প্যালেস্টাইনের আদিবাসী ছিলেন না বা তার জন্ম ও প্যালেস্টাইনে হয় নি। এর প্রমান পাওয়া যায় মার্কের গসপেলে -  ক্রসে যখন যীশুকে পেরেক দিয়ে গেঁথে রাখা হয়েছিল , কষ্টের শেষ সীমায় পৌছে যীশুর কাতর বাণী ছিল, "ইলোই ইলোই , লামা সাবাখ-থানি?" এটা ছিল আরামিক ভাষায়। এর অর্থ " আমার প্রভু আমার প্রভু , কেন আমাকে পরিত্যাগ করলে?" সমবেত জনতা তার মাতৃভাষা (কষ্টের সময় সাধারনত মানুষ তার মাতৃভাষায় বিলাপ করে) না বুঝে বলতে থাকে দেখ দেখ , সে ইলিয়াসকে ডাকতেছে।
ম্যাথিউর গসপেলেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।
২) যীশু যে ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি তা বোঝা যায় ম্যাথিউর গসপেল থেকে -  পুরা ৩ নং অধ্যায় জনকে (ইয়াহিয়া) নিয়ে লেখা। জন মানুষকে বাপ্টাইজ করত। যীশু ও জনের কাছে এসেছিলেন বাপ্টাইজ হতে। এখন প্রশ্ন জাগে পানি দিয়ে বাপ্টাইজ করা খৃষ্টান ধর্মের নাকি ইহুদী ধর্মের রিচুয়াল? যীশু কখনো কাউকে বাপ্টাইজ করেন নি , অন্তত নিউ টেস্টামেন্টের কোথাও তেমন প্রমাণ নেই বরং তিনি নিজেই জনের কাছে বাপ্টাইজ হয়েছিলেন। খৃষ্টান ধর্মে বাপ্টাইজ করার রীতি চালু করেন পল।
৩) 4:12    Now when it came to his ears that John had been put in prison, he went away to Galilee;  জনকে রোমান গভর্নরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যীশু যদি গভর্ণরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করবেন বা  বিদ্রোহ না করবেন , তাহলে তিনি জনের গ্রেফতারের খবর শুনে গালিলিতে পালিয়ে গেলেন কেন?
৪) গ্যালিলিতে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দলে ভেড়ান সিমিয়নের দুই ছেলে পিটার ও এন্ড্রুকে , যারা সমুদ্রে মাছ ধরতেন। তিনি তাদের বলেন - 4:19    And he said to them, Come after me, and I will make you fishers of men.
মাছের বদলে মানুষ শিকারী বানাতে চান তাদের। এর অর্থ - রোমান সৈন্য শিকার করা।
৫) “Do not think that I have come to abolish the law or the prophets. I have come not to abolish but to fulfill”.  যীশু পুরাতন ধর্ম বিনাশ করতে আসেন নি বা নুতন ধর্ম প্রচার করতেও আসেন নি , বরং পুরাতন টেস্টামেন্টে বর্ণীত ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যতবাণী পুরন করতে (fulfill) এসেছিলেন।
৬) “Do not think that I have come to bring peace upon the earth. I have come to bring not peace but the sword. For I have come to set a man 'against his father, a daughter against her mother, and a daughter-in-law against her mother-in-law; and one's enemies will be those of his household”.   [Matthew – 10: 34-36]. যীশু পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আসেন নি , বরং তরবারী দ্বারা তার সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন।

No comments:

Post a Comment