Saturday, December 31, 2011

যীশু ও ইসা কি একি ব্যাক্তি? (১)

সকলকে ছালাম।

খৃষ্টান ধর্মের উৎপত্তি ও এর বিবর্তন এবং সেইসাথে কোরান ও নিউ টেস্টামেন্টের তুলনা নিয়ে সাম্প্রতিক পঠিত একট সুন্দর লেখা সকলের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই এই পোস্ট।  কোরানের মরিয়ম পুত্র ইসা ও নিউ টেস্টামেন্টের যীশু কি একি ব্যাক্তি? এর উত্তর খুজতে গেলে খৃষ্টান ও মুসলমান দাবীদার উভয় গোষ্ঠীর রোশানলে পড়া বিচিত্র নয়। কারন উভয়েই যীশু/ইসাকে নিয়ে বিভ্রান্ত।

খৃষ্টান ধর্মের প্রবর্তন -
(থিওরি)

ডেভিড (দাউদ নবী) যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন , সেটাই ছিল ইস্রাইলীদের জন্য সত্যিকার অর্থে প্রথম স্বাধীন রাজ্য (Kingdom of Judah)। ডেভিডের পরে তার পু্ত্র সলোমন (সুলাইমান নবী) এই রাজ্যের রাজা হন এবং তারি আমলে এই রাজ্য শৌর্য্য বীর্য অর্থ সম্পদ ও আয়তনে প্রভূত বিস্তার লাভ করে। তবে সলোমনের মৃত্যুর পরে রাজ্যটি অন্তর্দ্বন্দ্ব বিভেদ ও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পরিণতিতে খৃঃপূঃ -৫৮৬ সালে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার রাজ্যটি দখল করেন এবং হাজার হাজার ইস্রাইলীকে যুদ্ধবন্দি হিসাবে ব্যাবিলনে নিয়ে যান।

সেই তখন থেকে , ১৯৪৮ সালে বর্তমানের প্যালেস্টাইনে স্বাধীন ইস্রাইল প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত , সুদীর্ঘ ২৫০০ বছর ইস্রাইলী ও অন্যান্য ইহুদীরা , অইহুদী (‘gentiles’) কর্তৃক শাসিত হয়ে আসছিল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময়ে তারা অব্যাহতভাবে স্বপ্ন দেখত নিজেদের মধ্য থেকে এক পরিত্রাতার (savior), যে কিনা তাদেরকে বিদেশি শাসন থেকে তাদের আবাসভূমিকে মুক্ত করে তাদের সকল গোত্রকে একত্রে বসবাসের সুযোগ করে দেবে। তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এই পরিত্রাতা 'মেসিয়াহ' “Messiah” , যিনি কিনা ডেভিডের বংশধর কেউ হবেন।

+২৮/+৩০ সালের দিকে ডেভিডের বংশদ্ভূত এক লোক , যার নাম ছিল যীশু (Jesus يسوع), তার মা , খালা মরিয়ম , ৪ ভাই ও কিছু অনুসারীকে নিয়ে প্যালেস্টাইনে আসেন এবং দাবী করেন যে, তিনিই মেসিয়াহ এবং তিনি এসেছেন রোমান শাসন থেকে প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করে শুধুমাত্র ইস্রাইলী ও ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ডেভিডের সময়কার পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনতে। যীশু প্যালেস্টাইনকে বেছে নিয়েছিলেন , কারন সেই সময়ে পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে সর্বাধিক ইস্রাইলী ইহুদীর বাস ছিল এই প্যালেস্টাইনে।

প্যালেস্টাইনে আসার পর থেকেই , তিনি শহরে শহরে যেয়ে অত্যাচারী রোমান শাসন থেকে তাদের মুক্ত স্বাধীন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে তার সাথে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাতে লাগলেন। অনেক গরিব সাধারন মানুষ উন্নত জীবণের আকাংখায় তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার সাথে যোগ দিল। তবে সচরাচর যা ঘটে থাকে , ইহুদী মোল্লা (Pharisees, Jewish priests of non-Israeli lineage) ও এলিট শ্রেণী তার বিরোধীতা করল। কারন রোমাণ সম্রাজ্যে তারা ছিল সুযোগ ও সুবিধা প্রাপ্ত গোষ্ঠী। এদেরি চক্রান্তে যীশু যে রাতে রোমাণ গভর্ণর হেরডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন , সেই রাতে গ্রেফতার হন এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে বিচারে তার মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় ও ক্রুশবিদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলা হয়।

যীশু নামের অখ্যাত অপরিচিত লোকটি ও তার রোমাণ শাসন মুক্ত করে ইহুদীদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ব্যার্থ প্রচেষ্টা , একটি ক্ষুদ্র ঘটনা হিসাবে ইতিহাসের গহ্বরে হয়তো বা হারিয়েই যেত , যদি না তার ৪ ভাই ও কিছু অতি অনুগত অনুসারী গোপনে স্বাধীন ইস্রাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে মানুষের মাঝে প্রচারের মাধ্যমে জীইয়ে না রাখত।

রোমাণ গভর্নর হেরড তার সকল শাসন ক্ষমতা যীশুর অনুসারীদের দমনে ব্যাবহার করেন ও তাদের ধরে ধরে জেলে পোরেন বা হত্যা করেন। অনেক বছর পরে 'সল' নামে রোমাণ বংশদ্ভূত এক ইহুদী মোল্লা যীশুর অনুসারীদের দমন , অত্যাচার ও নিধনে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তিনি যীশুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং শত শত অনুসারীকে হত্যা করেন। তার এই প্রচেষ্টা সত্বেও যীশুর অনুসারীদের সংখ্যা কমার বদলে বাড়তেই লাগল।

রোমাণ ম্যান্ডেট নিয়ে যীশু অনুসারীদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে দামেস্ক যান 'সল'। সেখানে তার সাথে সাক্ষাৎ হয় ইহুদী ধর্ম যাজক আনানিয়াসের। আনানিয়াসের বুদ্ধি ও পরামর্শে যীশু অনুসারীদের নির্মূল করার রণকৌশলে আমূল পরিবর্তন আনেন সল। শক্তি প্রয়োগ , হত্যা , জেল জুলুমের পরিবর্তে ভিন্ন পন্থায় ভিতর থেকে যীশু প্রবর্তিত স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনার পরিবর্তন করে তাদের আন্দোলনকে দমানোর উদ্যোগ নেন।

তার নুতন কৌশলের অংশ হিসাবে , তিনি যীশুর অনুসারীদের মধ্যে এই ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচার শুরু করেন যে , যীশু কখনোই ইহুদীদের মুক্ত করে স্বাধীন ইস্রাইলী রাষ্ট্র করার জন্য আসেন নি , বরং সমগ্র মানব সম্প্রদায়কে মুক্ত করার জন্য এই ধরাধামে আগমন করেছিলেন এবং সকল মানুষের পাপমোচনের লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। এ পৃথিবীতে নয় , বরং তার রাজত্ব হবে মৃত্যু পরবর্তি জমানায়।

বছরের পর বছর যীশুর অনুসারীরা সলের এই ভ্রান্ত প্রচারনা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোন চেষ্টায় কাজে আসেনি , কারন সল এই সময় 'পল' নাম ধারন করেন ও তার সমর্থনে ছিল রোমাণ রাজশক্তি। ফলে পলের অনুসারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যীশুর ভাই ও অনুসারীরা  স্বাধীনতা কামী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দেশ ও সমাজ থেকে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যায়।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে খৃষ্টান ধর্মের উৎপত্তিই হয়েছিল স্বাধীনতাকামী ইহুদীদের ইস্রাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও আন্দোলনকে বান্চাল করার মানসে পল ও আনানিয়াসের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এই নুতন ধর্ম ও হয়তো হারিয়েই যেত , যদি না রোমাণ প্যাগান রাজা  কনস্টান্টিন ৪০০ বছর পরে একে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারী ধর্ম হিসাবে ঘোষণা দিতেন। ফলে খৃষ্টান ধর্ম নব জীবণ লাভ করে এবং এর অনুসারীর সংখ্যা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তে বাড়তে বর্তমান অবস্থায় পৌচেছে। প্যাগান কনস্টান্টিনের রাজত্বকালেই নিসেন কাউন্সিলে খৃষ্টান ধর্মের মূল মতবাদগুলো গৃহীত হয় এবং রাজা কনস্টান্টিনকে খুশি করার জন্য প্যাগানদের কিছু রীতি নীতি খৃষ্টান ধর্মে অনুপ্রবেশ করানো হয়। যেমন - রোববারে প্রার্থনা (প্যাগানদের রবি বা সূর্য দেবতার সম্মানে), খৃষ্টমাস , সান্টাক্লজ , ইস্টার ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে বর্তমানের মুসলমান নামধারীরা বিশ্বাস করেন যে -
১) আদি খৃষ্টান ধর্ম আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী মরিয়ম পুত্র ইসা কর্তৃক প্রচলিত ধর্ম যা পরবর্তিতে বিকৃত হয়েছে।
২) খৃষ্টানদের আদি ধর্ম গ্রন্থ ইন্জিল , যা পরবর্তিতে একাধিক ধর্মযাজক কর্তৃক বিকৃত হয়ে বর্তমানের নিউটেস্টামেন্টে পরিণত হয়েছে।
৩) যীশুই (يسوع) ইসা (عيسى) এবং নামের উচ্চারনের এই ভিন্নতার কারন হলো ইসা কে হিব্রুতে যীশু বলা হয়।

খৃষ্টান ও মুসলমানরা যে সকল বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করেন -
১) যীশু/ইসার জন্ম কুমারী মাতার গর্ভে।
২) তিনি জীবিত অবস্থায় স্বর্গারোহন করেছেন , এখনো জীবিত আছেন এবং ভবিষ্যতে কোন এক সময় পুনর্বার এই ধরাধামে আসবেন আল্লাহর/গডের শাসন প্রতিষ্ঠায় , যদিও কোরানে বলা আছে তিনি আর সকল নবী রসূলের মতোই মৃত্যু বরণ করেছেন।

আসলেই যীশু ও কোরানে বর্ণীত মরিয়মপুত্র ইসা কি একি ব্যাক্তি , নাকি ভিন্ন দুই জন ব্যাক্তি , যাদের জন্মস্থান ও বিচরন কাল ভিন্ন ছিল? পরবর্তি পর্বগুলোতে কোরান নিউটেস্টামেন্ট ও ইতিহাস থেকে এর উত্তর খোজার চেষ্টা করব।

Sunday, October 23, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ। (১১)

হাদীস কোরানের ব্যাখ্যা। আসলেই কি তাই?

সহীহ বুখারী সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ। দেখা যাক বুখরীর হাদীস থেকে আমরা কি ধরনের কোরানের ব্যখ্যা পাই। আমার এই বক্তব্যের রেফারেন্সের জন্য ডঃ মুহাম্মদ মুহসিন খানের লেখা (ইসলামিক ইউনিভার্সিটি , মদিনা মুনাওয়ারা) 'সহীহ আল-বুখারী' ৬ষ্ঠ খন্ড , প্রকাশক কিতাব ভবন নয়া দিল্লি , দেখতে পারেন।

যদিও কোরানে ১১৪ টা সূরা আছে , বুখারী কিন্তু সকল সূরার সকল আয়াতের ব্যখ্যা দেন নি। ২৮ টি সুরার ব্যাখ্যা সম্বলিত কোন হাদীস বুখারীতে নেই। সূরা বাক্কারাহতে ২৮৬ টি আয়াত আছে , বুখারীতে মাত্র ৫০ টির মতো আয়াতের ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীস পাবেন। এর অর্থ দাড়ায় ২০% আয়াতের ব্যাখ্যা আছে , বাকি ৮০% এর জন্য আপনাকে উলামাদের কল্পনাশক্তির উপরে নির্ভর করা লাগবে।

এখন দেখা যাক ব্যাখ্যার ধরন। সূরা আল-কাওসারে(১০৮) ৩টি আয়াত আছে। একটি মাত্র শব্দের ব্যাখ্যার মধ্য দিয়েই পুরা সুরার ব্যাখ্যা সম্পন্ন করাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। বুখারী বলেছেন - 'কাওসার' জান্নাতের একটি নদী। বুখারী যে আরবি জানতেন না এটা মনে হয় তার একটা উদাহরন। কারন 'কাওসার' মানে পর্যাপ্ত পরিমানে ভালো কিছু। 'কাথির' মানে অনেক , পর্যাপ্ত।


সুরা হুদ(১১)

إِلَى اللّهِ مَرْجِعُكُمْ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ 04

আল্লাহর সান্নিধ্যেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

أَلا إِنَّهُمْ يَثْنُونَ صُدُورَهُمْ لِيَسْتَخْفُواْ مِنْهُ أَلا حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ 05

জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।

وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ 06

আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।
এই আয়াতগুলোর মানে বোঝা কি কষ্টকর? সরল মানে দাড়ায় - আমরা সকলেই আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে যাব। কোন কিছুই আল্লাহ্‌র কাছ থেকে লুকানো সম্ভব না। প্রতিটি জীবিত প্রাণী , ক্ষুদ্র ও বৃহৎ , সকলের রেকর্ড তার কাছে আছে।


বুখারীর হাদীস থেকে উপরোক্ত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা - ভলুম ৬ হাদীস নং ২০৩ - মুহাম্মদ বিন আব্বাদ বিন জাফর বর্ননা করেছেন - "তিনি ইবনে আব্বাসের এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলতে শুনেছেন - কিছু লোক যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে খোলা জায়গায় বসত , তখন কাপড় দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে নিত , যাতে আকাশ থেকে তাদেরকে দেখা না যায়। এই লোকদের উদ্দেশ্যেই ৫ নং আয়াত নাযিল হয়।" বুখারীর এই হাদীসের বর্ননার কারন এটাই বুঝানো যে , যেহেতু আল্লাহ সবকিছুই জানেন ও দেখেন , ফলে পেশাব পায়খানার সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার কোন দরকার নেই । এই আয়াতের পরে যে সকল সাহাবা স্ত্রীদের সাথে সফর করতেন , তারা সংযম পরিত্যাগ করেন , কারন আল্লাহ যখন সব দেখতে পান , তখন আর সংযম করে ফায়দা কি। তাহলেই বুঝুন ব্যাখ্যার কি দশা!!

এই রকম বিকৃত ব্যখ্যা আরো অনেক আয়াতের দেয়া হয়েছে। যেগুলো লিখে কয়েক খন্ডেও শেষ করা যাবে না।

পরিশেষে বলব - যে ২৮ টি সূরার ব্যখ্যার কোন হাদীসই পাওয়া যায় না , সে সম্পর্কে কি বলবেন , হাদীস কোরানের ব্যাখ্যা , এই মতবাদের সমর্থকরা? এই সূরাগুলো হলো 23, 27, 29, 35, 51, 57, 58, 64, 67, 69, 70, 73, 76, 81, 82, 86, 88, 89, 90, 94, 100, 101, 103, 104, 105, 106, 107, এবং 109। বুখারী বলেছেন , এই সূরাগুলোর ব্যাখ্যায় কোন হাদীস নাই।

হাদীস ও সুন্নাহ। (১০)

দুটি পরস্পর বিরোধী হাদীস - রসূল হাদীস লিখতে নিশেধ করেছেন , রসূল হাদীস লিখতে বলেছেন। দুটৈ সহী। এটা ১০০% বিশ্বাসযোগ্য কারন রসুল একজনকে যখন একটা হাদীস বলেছেন , অন্যজন সেটা শোনেনি। এই দুই বিপরিত কথা বলার মাঝে বিস্তর সময়ের ব্যবধান। সুতরাং দুটো বিপরিত হাদীস বলার মাঝে সময়ের দাবী ও যৌক্তিকতা ছিল। আমার লজিক সেন্স কম আমি বুঝিনি।

এখন এই বুদ্ধিমানেরা কি জবাব দেবেন , যখন দেখি বিদায় হজ্জের মতো গুরুত্বপূর্ন ভাষনটি যা হাজার হাজার মানুষ একি সময়ে শুনেছিল , সেই ভাষনকে কোট করে ২টি নয় ৩টি পরস্পর বিরোধী সহী হাদীস পাওয়া যায়!!

১) আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর বই (কোরান) ও আমার পরিবার কে রেখে গেলাম , যদি তোমরা এদুটোকে আকড়ে থাকো , তবে কখনো বিপথগামী হবে না। মুসলিম ৪৪/৪ , নু ২৪০৮/৩৩১৯, ইবনে হাম্বল ৪/৩৬৬, দারিমি ২৩/১।

২) আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর বই (কোরান) ও আমার সুন্নাহকে রেখে গেলাম , যদি তোমরা এদুটোকে আকড়ে থাকো , তবে কখনো বিপথগামী হবে না।   মুয়াত্তা ৪৬/৩।

৩) আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর বই কে রেখে গেলাম , যদি তোমরা এটাকে আকড়ে থাকো , তবে কখনো বিপথগামী হবে না। মুসলিম ১৫/১৯, নু ১২১৮, ইবনে মাজাহ ২৫/৮৪, আবু দাউদ ১১/৫৬।


দেখুন বিদায় হজ্বের বাণী হাজার হাজার সমবেত মুসলমান শোনার পরেও এর ৩টি ভার্ষান পাওয়া যায়। প্রতিটিই সহী হাদীস। তাহলেই বুঝুন হাদীস বানানো কত সোজা ছিল এবং কেনো লক্ষ লক্ষ হাদীসের ছড়াছড়ি ছিল। এই মিথ্যা হাদীস ব্যবহার করে মুসলমানদের মাঝে যে বিভক্তি এসেছে , তার প্রমান ১ নং হাদীসটি শীয়ারা বিশ্বাস করে শীয়া হয়েছে আর ২ নং হাদীসটি বিশ্বাস করে সুন্নিরা সুন্নি হয়েছে।

Thursday, October 6, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ। (৯ )

বুখারী ও তার সমর্থকদের দাবীর যৌক্তিকতা!!


দাবী করা হয় যে , বুখারী ১০০০ শিক্ষকের তত্বাবধানে থেকে ১৬ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৬ লক্ষ হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও শ্রেনীভূক্ত করেন , যার ভিতরে ১ লক্ষের ও বেশি হাদীস তার মুখস্ত ছিল। তিনি হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও শ্রেনীভূক্ত করার কাজটি অতি সতর্কতার সাথে করেছিলেন। যাতে কোন ভুল হাদিস তার সঙ্কলনে ঢুকে পড়তে না পারে। ফলশ্রুতিতে তিনি ৯৯% হাদীস বাদ দিয়ে মাত্র ৭ হাজারের মতো হাদীসকে সহী আখ্যা দিয়ে তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। তার এই অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য মুসলিম উম্মাহ ৫ লক্ষ ৯৩হাজার মিথ্যা হাদীসের প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছে , এ জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবীদার।

তিনি যে কত সতর্ক ছিলেন এবং কি পরিমান কষ্ট স্বীকার করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি নিজে প্রতিটি হাদীসের বর্ননাকারীর বাড়িতে গিয়ে খোজ নিয়েছেন , বর্ননাকারী মদ খেতো কিনা , জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলেছে কিনা , তার চরিত্র কেমন , স্মরনশক্তি কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোন কিছুতে এতটুকু ব্যাত্যয় পেলেই তিনি সেই হাদীস ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এই সকল বর্ননাকারী আবার আরবের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। প্রতিটি বর্ননাকারীর বাড়িতে যাওয়া এত সহজ ছিল না। তখনকার দিনে প্রাইভেট প্লেন বা পাজেরো বা road sign দেয়া রাজপথ ছিলনা যে নিমেশেই তিনি পৌছে যাবেন। ফলে তাকে শত শত মাইল উট বা ঘোড়ার পিঠে করে যেতে হয়েছে। সঙ্গে নিতে হয়েছে রসদ , রাস্তার গাইড , চোর দস্যু মোকাবেলার জন্য পাইক বরকন্দাজ আরো কত কি। হয়তো বা দেখা গেছে একজনের বাড়িতে যেয়ে ফিরে আসতেই বছর শেষ।

বুখারী হয়তো করিৎকর্মা লোক ছিলেন , তার এতো সময় নাও লাগতে পারে। ধরে নিলাম প্রতিটি হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও মুখস্ত করতে তার ১ ঘন্টা সময় লেগেছে। এই হিসাবে দিনে ২৪ ঘন্টা ঘুম খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে তিনি এক নাগাড়ে কাজ করলেও ৬৮ বছর লাগার কথা। তারপরে ও না হয় প্রতিটি সহী হাদীস (৭০০০) লিপিবদ্ধ করার পরে তার ওজু করে ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়ার কথা বাদ ই দিলাম। তার আয়ুষ্কালই ছিল ৬২ বছর।

হাদীস ও সুন্নাহ (৮ )



ছবিটা একটু ভালো করে দেখুন। সহী সিত্তাহ বা যে ছয়টি হাদীস গ্রন্থ আছে , এদের সঙ্কলক কারো বাড়ি সৌদি আরব বা আরব দেশে না এবং এদের কারো মাতৃভাষা আরবি ও না। এরা সকলেই ফার্সি ভাষী ইরানি বংশোদ্ভূত।



কারো কি খটকা লাগে না আরব বা আরবি ভাষীরা কেনো হাদীসের সঙ্কলন করে নি? ইরানে কেনো হাদীসের এই সব বড় বড় আলেমদের আগমন? হাজার বছর আগে যখন উট ও ঘোড়া ই ছিল যানবাহনের একমাত্র উপায় , তখন তারা শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে কিভাবে হাদীস জোগাড় করেছেন ও সত্যাসত্য পরীক্ষা করেছেন? আমার তো খটকা লাগে। চিন্তা করে কুল কিনারা পাই না। কেউ কি আমাকে সাহায্য করবেন।


হাদীস ও সুন্নাহ। (৭ )

ব্যভিচারের শাস্তির শরীয়া আইনের বিধান , আদতে বানরের আইন , যেটা বাইবেল থেকে চুরি করা।

শরীয়া আইনের নির্দেশ হলো - ব্যভিচারি ও ব্যভিচারিনীকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে হবে। যদি তারা অবিবাহিত হয় , তবে প্রত্যেকের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত।

এই আইন দিয়ে ইসলামি উলেমারা ইসলামকে জনসমক্ষে হেয় করেছেন। কারন আগেই বলেছি , কোরানের কোথাও পাথর ছুড়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান নেই। তবে আমাদের উলেমারা মুসলমানদেরকে বিশ্বাস করানোর জন্য একটি গল্প ফেদেছেন , আর তাহলো পাথর ছুড়ে মৃত্যুদন্ডের কোরানের আয়াতটি যে পর্চামের ওপরে লেখা ছিল , মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে ছাগল পর্চামটি উমরের বালিশের তলা থেকে বের করে খেয়ে ফেলেছিল। যেকারনে 'রজম'(পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা) ও 'রেজাহ কবির' আয়াতদুটি কোরানে নেই। সুত্র- Sahih al Bukhari (Volume 8, pages 209-210, translation by Dr Muhammad Muhsin Khan) আমাদের উলেমারা কেমন ছাগল , এর চেয়ে ভালো কোনো কল্পনা তাদের মাথায় খেলেনি।


যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে এই শরীয়া আইনটি লেখা হয়েছে , তা নিম্নরুপ।

Bukhari Volume 5, Book 58, Number 188:

আমর বিন মাইমুন বর্নীত : ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে আমি দেখলাম একটি মেয়ে বানরকে অনেকগুলো বানর মাথর ছুড়ে মারছে। তাকে পাথর ছুড়ে মারছে , কারন মেয়ে বানরটি ব্যভিচার করেছিল। আমিও ওকে অন্যান্য বানরের সাথে পাথর ছুড়ে মেরেছিলাম।


কি সুন্দর বানরের আইন। আমার তো মনে হয় বিবর্তনের থিওরি অনুযায়ী মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি , তার সমর্থনে এর থেকে ভালো কোন প্রমান আর পাওয়া যাবে না।



এখন দেখা যাক বাইবেল কি বলে?


Deuteronomy 22: 23 - 24

22 If a man is found sleeping with another man's wife, both the man who slept with her and the woman must die. You must purge the evil from Israel.

23 If a man happens to meet in a town a virgin pledged to be married and he sleeps with her,

24 you shall take both of them to the gate of that town and stone them to death-the girl because she was in a town and did not scream for help, and the man because he violated another man's wife. You must purge the evil from among you.

Leviticus 20:10

10 " 'If a man commits adultery with another man's wife- with the wife of his neighbor- both the adulterer and the adulteress must be put to death.


বাইবেলে বলা হচ্ছে যদি কোন ব্যক্তি অন্যের বা প্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে , তবে দুইজনকেই পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে হবে। এটাই আমাদের শরীয়া আইনের উৎস। শরীয়া আইনের সাথে বিব্লিকাল আইনের কোন পার্থক্য চোখে পড়ে কি?


সময় হয়েছে চিন্তা করার , আমরা কোরানের আইন অনুসরন করব , নাকি হাদীস অনুযায়ী শরীয়া আইন তথা বানর ও বাইবেলের আইন অনুসরন করব? Choice is yours.

Wednesday, October 5, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ। (৬ )

হাদীস ও সুন্নাহর অনুসারিরা প্রকৃতপক্ষে কট্টর খৃষ্টান।


গত হাজার বছর ধরে হাদীস ও সুন্নাহর অনুসারিরা ইসলামের ঐশীগ্রন্থ কোরান অনুসরন না করে বাইবেলকেই অনুসরন করে চলেছেন । বাইবেলের যে সকল বানী আজকের খৃষ্টানরা অনুসরন করেন না , সেই একি বানী আজকের হাদীস ও সুন্নাহর অনুসারিরা কট্টরভাবে মেনে চলেছেন। হাদীসের বানীগুলোর উৎস বাইবেল , কোরান নয়। এগুলো সম্ভব হয়েছে ইসলামের ১ম ২০০-৩০০ বছর দ্রুত ইসলামি রাজ্যের বিস্তারলাভের ফলে তৎকালীন খলিফা ও ইসলামি পন্ডিতগন ব্যপকভাবে খৃষ্টানদের সংস্পর্শে এসে বাইবেল কতৃক প্রভাবিত হয়ে ভূয়া হাদীস ও সুন্নাহর প্রচলন করার মধ্য দিয়ে। আমরা কোরানের আয়াত থেকে জানি আমাদের রসূল পূর্ববর্তী কেতাবসমূহ পড়েন নি , তিনি শুধু কোরানকেই অনুসরন করতে আল্লাহ কতৃক আদীষ্ট ছিলেন। আজকের অনেক হাদীস ও সুন্নাহ পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই , এগুলো কোরানে খুজে পাবেন না , কিন্তু বাইবেলে অনেক ক্ষেত্রেই হুবহু খুজে পাবেন।


সুরা আল-ইমরান ৩:১০০ হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোন ফেরকার কথা মান, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদিগকে কাফেরে পরিণত করে দেবে।

যেমন ধরুন- ইসলাম পরিত্যাগকারীদের (apostates) শাস্তি মৃত্যু দন্ড। এই হাদীসটির সমর্থনে কোন আয়াত কোরানে পাবেন না। বাইবেল কি বলে?

Leviticus 24:16

'Moreover, the one who blasphemes the name of the LORD shall surely be put to death; all the congregation shall certainly stone him. The alien as well as the native, when he blasphemes the Name, shall be put to death.

Deuteronomy 13:6 – 10

"If your brother, your mother' s son, or your son or daughter, or the wife you cherish, or your friend who is as your own soul, entice you secretly, saying, 'Let us go and serve other gods' you shall not yield to him or listen to him; and your eye shall not pity him, nor shall you spare or conceal him. "But you shall surely kill him; your hand shall be first against him to put him to death, and afterwards the hand of all the people. "So you shall stone him to death because he has sought to seduce you from the LORD your God who brought you out from the land of Egypt, out of the house of slavery.


বাইবেলে বলা হচ্ছে যারা তার লর্ডের অবমাননা করবে বা অন্য ধর্ম গ্রহন করবে বা অন্য ধর্ম গ্রহন করতে প্রোরোচিত করবে , তারা তোমার ছেলে মেয়ে ভাই বোন নিকটাত্মীয় হলেও মেরে ফেল। সকলে মিলে পাথর ছুড়ে মেরে ফেল। কোন মায়া দয়া করবে না। দেখুন তো আমাদের মোল্লাদের কথার সাথে মেলে কিনা? আরো লক্ষ্য করুন পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার বর্বর এই ধরনের আদেশ কোরানের কোথাও নেই। শুধু একটি আয়াতেই উল্লেখ আছে , সেটা কাফেররা পাথর ছুড়ে মেরে ফেলে তার বর্ননা দিয়ে।


বাইবেলে এমনকি ভিন্ন চিন্তা করার শাস্তিও মৃত্যুদন্ড।

Deuteronomy 13 : 5

"But that prophet or that dreamer of dreams shall be put to death, because he has counseled rebellion against the LORD your God who brought you from the land of Egypt and redeemed you from the house of slavery, to seduce you from the way in which the LORD your God commanded you to walk. So you shall purge the evil from among you.

আজকে দেখুন ভিন্ন চিন্তার কারনে আমাদের ব্লগ মোল্লারা আমাকে মৃত্যুদন্ড না দিতে পারলেও ২টা ব্লগ থেকে ব্যান করেছেন, যেটা ভার্চুয়াল মৃত্যুদন্ডের সমান ও ব্যাক্তি আক্রমন করে চলেছেন। এদেরকে খৃষ্টান না মুসলিম বলা বেশি যুক্তিযুক্ত? আপনারাই বলুন।

পরের পোস্টগুলিতে আরো হাদীসের বর্ননা দেব , যার উৎস বাইবেল। 

Tuesday, October 4, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ (৫)

খোলাফায়ে রাশেদীন ও হাদীস।



মূল নথিপত্রগুলো , যেমন ইবনে সা'দ (২৩০/৮৪৫), মালিক ইবনে আনাস (১৭৯/৭৯৫),

তায়ালিসি (২০৩/৮১৮), হুমায়দী (২১৯/৮৩৪) এবং ইবনে হাম্বাল (২৪১/৮৫৫) পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে খোলাফায়ে রাশেদীনের ৪ খলিফাই তাদের শাসনামলে রসূলের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাদীস লেখা ও সঙ্কলনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলেন।

আবুবকর , রসূলের হাদীস পুড়িয়ে ফেলার আদেশ শোনার পরে , ঠিক করতে পারছিলেন না কি করবেন। রসূলের সাথে দীর্ঘ কালীন এক সাথে থাকার সময় তিনি ৫০০ হাদীস সংগ্রহ করেছিলেন কিন্তু সেই রাতে হাদীসগুলো না পোড়ানো পর্যন্ত তিনি ঘুমাতে পারেন নি।

ওমর ইবনে আল-খাত্তাব তার ছেলে আবদুল্লাহকে তারই সংগৃহিত হাদীসগুলো ধ্বংস করতে বাধ্য করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন ঘটনা ও পাওয়া যায় যে , ওমর ইবনে আল-খাত্তাব ৪ ছাহাবীকে হাদীস বলা থেকে বিরত থাকার জন্য আদেশ করেছিলেন। এরা হলেন:- ইবনে মাসুদ , আবু আল-দারদা , আবু মাসুদ আল আনসারি এবং আবু দার আল-গফ্ফারি। ওমর ইবনে আল-খাত্তাব আবু হুরায়রাকে মিথ্যাবাদি বলেছিলেন এবং তাকে এই বলে শসিয়েছিলেন যে , যদি আবু হুরায়রা রসূলের সম্পর্কে মিথ্যা হাদীস বলা থেকে বিরত না হয় , তবে তাকে তার জন্মস্থান ইয়েমেনে ফেরৎ পাঠাবেন। ওমর ইবনে আল-খাত্তাবের জীবদ্দশায় আবু হুরায়রা আর কোন হাদীস বলেন নি।

৪র্থ খলিফা আলি ইবনে আবু তালেব এক খোতবায় বলেছিলেন , " যাদের কাছে আল্লাহর রসূলের কোন হাদীস আছে , আমি তাদেরকে অনুরোধ করব বাড়ি যেয়ে সেগুলো মুছে ফেলতে। তোমাদের আগের মানব সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের ধর্মীয় পন্ডিতদের হাদীস অনুসরন করার জন্য এবং প্রভুর বাণী পরিত্যাগ করার জন্য।"(সুত্র- সুনান আল দারামি)


আবু হুরায়রা , সর্বাধিক হাদীসের বর্ননাকারী।


আবু হুরায়রা হিজরী ৭ সালে ইয়েমেন থেকে মদিনায় আসেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তিনি রসূলের সঙ্গী হয়েছিলেন ২ বছরের ও কম সময়ের জন্য । আশ্চর্যের ব্যাপার আবু হুরায়রা বর্নীত হাদীসের সংখ্যা, আবুবকর , ওমর , আলী ও আয়েশা যারা সারা জীবন রসূলের সাথে কাটিয়েছেন, তাদের বর্নীত হাদীসের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়ে ও বেশি। মুহাম্মদ জুবায়ের সিদ্দিকির বই হাদীস সাহিত্য থেকে জানা যায় :

১)আবু হুরায়রা ৫৩৭৪ টি হাদীস বর্ননা করেছেন।

২)আয়েশা ২২১০ টি হাদীস বর্ননা করেছেন।

৩)ওমর ৫৩৭ টি হাদীস বর্ননা করেছেন।

৪)আলি ৫৩৬ টি হাদীস বর্ননা করেছেন।

৫)আবুবকর ১৪২ টি হাদীস বর্ননা করেছেন।


আবু হুরায়রা বর্নীত হাদীসগুলোর বেশিরভাগি 'আহাদ' হাদীস , অর্থাৎ একজন ছাড়া আর কোন সাক্ষী নেই এই হাদীসগুলোর এবং সেই একজন হলেন আবু হুরায়রা। আয়েশা ও কিছু ছাহাবীর মতে আবু হুরায়রা রসূলের নামে বানিয়ে মিথ্যা হাদীস বলতেন সমাজে প্রতিপত্তি লাভের আশায়। মুয়াবিয়ার রাজত্বকালে সিরিয়াতে তার দরবারে থাকার সময় খলিফাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি অধিকাংস হাদীস বর্ননা করেন। আবু হুরায়রা একবার তার শোতৃমন্ডলীদের বলেছিলেন , তাদেরকে উনি যে হাদীস শোনাচ্ছেন , এটা যদি ওমরের সময় ঘটত , তবে তাকে বেতের বাড়ি খেতে হোত।

আবু হুরায়রা কিছু হাদীস সন্দেহযুক্ত , কারন তার দাবী মতে ঘটনার সময় তিনি যেখানে উপস্থিত ছিলেন , সেখানে তার থাকা সম্ভব ছিল না। যেমন রসূলের মেয়ে রুকাইয়ার চিরুনি দিয়ে রসূলের চুল আচড়ানোর সময় ওসমান সম্পর্কে রসূলের মন্তব্য। রুকাইয়া মৃত্যুবরন করেন হিজরী ৩ সালে , আর আবু হুরায়রা মদিনা আসেন হিজরী ৭ সালে।

ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায়, আবু হুরায়রা মদিনা এসে ছিলেন খালি হাতে এবং তার ভরনপোষন চলত দান ও ভিক্ষার ওপরে নির্ভর করে। এ ব্যাপারে আয়েশার একটি বিখ্যাত হাদীস ও আছে।(সুত্র-ইবনে কুতিবা আল-দিনোরির 'তাওইল মুখতালাফ আল হাদিথ বই)

খলিফা ওমরের সময় তাকে বাহরাইনের আমীর করে পাঠানো হয় এবং ২ বছর আমীর থাকার সুবাদে তিনি প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হয়ে যান। একারনে ওমর তাকে ফিরিয়ে আনেন ও বলেন : "তুমি , আল্লাহর শত্রু , তুমি আল্লাহর সম্পদ চুরি করেছ। আমি যখন তোমাকে বাহরাইনের আমীর করে পাঠিয়েছিলাম , তখন তোমার পায়ে এক জোড়া জুতা ও ছিল না। তুমি কোথা থেকে এত টাকা (৪০,০০০ দিরহাম??) পেয়েছ? ইতিহাস বলে ওমর তার কাছ থেকে ১০,০০০ দিরহাম উদ্ধার করেন। আবু হুরায়রা ২০,০০০ দিরহামের কথা স্বীকার করেছিল।



Sunday, October 2, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ (৪)

সহী বুখারি বইটি আদৌ বুখারির লেখা নয়।

কোরানের পরেই যে বইটিকে আমাদের সুন্নি আলেম সমাজ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে সেটা হলো সহী বুখারি। মজার ব্যপার হলো এই বইটি যে বুখারি লিখেছেন তারো কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের আলেমরা দিতে পারেন না বা মূল বুখারি বই বা তার কোন অনুলিপি কেউ দেখাতে পারবেন না। কারন বুখারির বই , একটি একক বই হিসাবে আসেনি। বেশিরভাগ আলেম কতৃক গৃহীত ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানির(মৃত্যু ৮৫২ হিজরী) বুখারির হাদীসের উপর লিখিত টীকা বা মন্তব্য মূলক বই 'ফাথ আল বারি' র উপর ভিত্তি করেই বর্তমান বুখারি হাদীসগুলিকে একটি বইয়ের আকার দেয়া হয়েছে। ইবনে হাজার আল-আসকালানি আবার তার টীকা টিপ্পনির জন্য নির্ভর করেছিলেন আল-কুশাইমানির (মৃত্যু ৩৮৯ হিজরি) লিখিত অনেকগুলো খন্ডের (রিওয়াইয়াত) উপর , যেগুলো বুখারির ছাত্র আল-ফিরাব্রির উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা। আসকালানি বা কুশাইমানি কারো সাথে বুখারির(মৃত্যু ২৫৬ হিজরী) দেখা হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ছিলনা , তেমনি উনারা সরাসরি বুখারী কতৃক সঙ্কলিত হাদীসের বই ও পড়েন নি। একেই বলে আলেমদের চতুরতা। তাদের কাছে বুখারি লিখিত একক কোন গ্রন্থ নেই। যার অস্তিত্ব নেই তা থাকারো কথা না। যা আছে তা বুখারির মৃত্যর পরের ৬০০ বছর এখান থেকে কিছু ওখান থেকে কিছু , এমনি করেই কথিত বুখারির হাদীসের সংগ্রহ করে একক বইয়ের আকার দেয়া। হাদীসে যে 'সানাদ' বা ইসনাদ নিয়ে এত মাতামাতি , সেই সানাদেরি কোন ঠিক ঠিকানা নেই বুখারির মৃত্যুর পরের ৬০০ বছর।
৪ 

Saturday, October 1, 2011

হাদীস ও সুন্নাহ (৩)

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।

ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ফলে একি ঘটনা বারে বারে ঘটে। ইহুদীরা মূসার মৃত্যুর শত শত বছর পরে মিসনাহ (হাদীস, নবীর কথা) ও গেমারাহ (সুন্নাহ , নবীর কর্ম) আবিস্কার করে । এর ভিতরে পরবর্তি কালের রাব্বীদের বানানো বিভিন্ন আইন অন্তর্ভুক্ত হয়। এখনকার ইহুদীদের জন্য আল্লাহ প্রেরিত তাওরাতের পাশাপাশি মিসনাহ ও গেমারাহ অনুসরন করা অত্যাবশ্যক , অর্থাৎ মানুষ রচিত মিসনাহ ও গেমারাহ কালের আবর্তে তাদের ধর্মেরই একটি অংশ হয়ে গিয়েছে।

খৃষ্টানদের বাইবেলের গসপেল ইমাম ম্যথিউ , ইমাম মার্ক , ইমাম লুক ও ইমাম জনের লেখা। ইতিহাস বলে এই ৪ জনের কেউ কখনো যীশুকে চোখে দেখেন নি। অথচ দেখুন নিউটেস্টামেন্টের ভিত্তি এই ৪ জনের লেখা বইয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। যে ট্রিনিটি খৃষ্টান ধর্মবিশ্বাসের মূল (কলেমা), যা না মানলে খৃষ্টান হওয়াই যায় না , জানেন কি ট্রিনিটির কোন অস্তিত্বই ছিল না খৃষ্টান ধর্মের প্রথম ৩০০বছর। ৩২৫ খৃষ্টাব্দে নিসেন শহরে প্যগান রোমান রাজা কনস্টান্টিনের অধীনে তৎকালীন পোপ ও বিশপদের কাউন্সিলে প্রথম ট্রিনিটি ধারনার সৃষ্টি ও র‌্যটিফিকেশন করা হয়।

অনুরুপ ইসলামের প্রথম ২০০ বছর হাদীস বা হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত শরীয়া আইনের কোন অস্তিত্বই ছিল না। শরীয়া আইনের ভিত্তি রচনা করেন বিখ্যাত ইমাম শাফেয়ী ,হিজরি ২০৪/৮২০ খৃষ্টাব্দে। এরি পর পর আবির্ভাব হলো বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থগুলো, সহী সেত্তাহ বা ছয়টি বইয়ের। এগুলোর সঙ্কলক হলেন ইমাম বুখারি(২৫৬/৮৭০) , মুসলিম (২৬১/৮৭৫), আবু দাউদ (২৭৫/৮৮৮), তিরমিজি (২৭৯/৮৯২), ইবনে মাযা (২৭৩/৮৮৬) এবং আল নাসাঈ (৩০৩/৯১৫)। লক্ষ্য করুন , এদের কেউই আমাদের নবীকে জীবিত দেখেন নি বা এই হাদীসগুলোর কোন জীবিত সাক্ষী থাকা নবীর মৃত্যুর ২৫০ বছর পরে সম্ভব ছিল না। অনেকে প্রশ্ন করেন , কোরান মানতে পারলে , হাদীস মানতে অসুবিধা কোথায়? তারা ভুলে যান , কোরানের বর্তমান ভার্ষান ওসমানের সময় যখন সঙ্কলন হয় তখনো , বহু হাফেজ ও সাহাবী বেচে ছিলেন , যারা সরাসরি নবীর কাছ থেকে কোরান শিখেছিলেন। সুতরাং ভুল কিছু কোরানে ঢোকানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু হাদীসের বেলা তা খাটেনা।

তাওরাত ও ইন্জিলের মতোই হাদীস ও সুন্নাহ ইসলাম ধর্মের অংশ হয়ে উঠেছে।

সুরা মায়েদাহ(৫) আয়াত ৬৭
হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

এখানে হাদীস ও সুন্নাহর কথা বলা হয় নি। আল্লাহর পয়গাম কোরানকেই মানুষের কাছে পৌছানোর কথা বলা হয়েছে। (বালাগা)।

হাদীস ও সুন্নাহ।(২)

কোরানে হাদীস সম্পর্কীয় আয়াত।

কোরানে ব্যবহৃত হাদীস শব্দটির পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে , আল্লাহ চান আমরা তারই হাদীস অর্থাৎ কোরান ছাড়া যেন অন্য কোন হাদীস অনুসরন না করি।

নিম্নে আমি কয়েকটি আয়াতের অনুবাদ দিচ্ছি , যেগুলো পড়লে পরিস্কার হয়ে যাবে আল্লাহ কি বলেছেন। এখানে আরবি শব্দ হাদীসের কোন মানে করা হয় নাই। হাদীস শব্দটিই কোরানে ব্যবহার হইয়াছে।

সূরা আল আ’রাফ (৭) আয়াত ১৮৫
তারা কি প্রত্যক্ষ করেনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজ্য সম্পর্কে এবং যা কিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তা’আলা বস্তু সামগ্রী থেকে এবং এ ব্যাপারে যে, তাদের সাথে কৃত ওয়াদার সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে? বস্তুতঃ এরপর আর কোন হাদীসের উপর ঈমান আনবে?

সূরা লোকমান (৩১) আয়াত ৬
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর হাদীস সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।

সূরা আল জাসিয়া (৪৫) আয়াত ৬
এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথরূপে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন হাদীসে বিশ্বাস স্থাপন করবে।

সূরা আত্ব তূর (৫২) আয়াত ৩৪
যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে এর (কোরানের) অনুরূপ কোন হাদীস উপস্থিত করুক।

সূরা আল মুরসালাত (৭৭) আয়াত ৫০
এরপরে (কোরানের) আর কোন হাদীসে বিশ্বাস স্থাপন করবে?

যারা আল্লাহর উপরোক্ত আয়াতগুলো বিশ্বাস করবে না , তাদের স্মরনের জন্য নিম্নের আয়াত।
 
সূরা সেজদাহ (৩২) আয়াত ২২
যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।

৩১) সূরা লোকমান ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত ৭
যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু’কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।

হাদীস ও সুন্নাহ।(১)

হাদীস ও সুন্নাহ কি আসলেই ইসলামের অবিচ্ছেদ্দ অংশ নাকি এটা একটি ভিত্তিহীন প্রথা যা কোরানের শান্তির বাণীকে পঙ্গু করে দিচ্ছে?

বর্তমানে প্রতিটি মুসলমানের জন্য হাদীস ও সুন্নাহ মেনে চলা বাধ্যতামূলক এবং কোরানের পরেই একে স্থান দেয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী মুসলমানরা দাবী করেন যে , যারা হাদীস ও সুন্নাহ বিশ্বাস করেন না তারা কাফের। হাদীস বলতে বুঝায় মুহাম্মদের কথাকে যা তিনি কোরানের নির্দেশের বাইরে বলেছিলেন (আদেশ , নির্দেশ উপদেশ..) এবং সুন্নাহ হলো মুহাম্মদ কতৃক প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।

প্রচলিত বিশ্বাস হল ,কোরান নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তারই তত্বাবধানে লিখিত হত (কোরান সংকলন হয় আবুবকর ও ওসমানের সময়) কিন্তু হাদীস লেখার ব্যপারে নবী মুহম্মদের পরিস্কার নিষেধ ছিল , যে কারনে হাদীস মুখে মুখে প্রচলিত ছিল এবং নবীর মৃত্যুর ১০০ বৎসর পরেই কেবল লিখিত আকারে আসা শুরু করে। সর্বাধিক প্রচলিত হাদীস গ্রন্থ সহী বুখারীর লেখক বুখারীর জন্ম নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ২০০ বৎসর পরে।

১) ইবনে সাঈদ আল খুদরি ইরশাদ করেছেন যে আল্লাহর নবী বলেছেন : তোমরা কোরান ছাড়া আমার কোন কথা লিপিবদ্ধ করবে না। যদি কেউ কোরান ছাড়া অন্যকিছু লিখে থাকে , তবে তা মুছে ফেলবে।

২)যায়িদ ইবনে থাবিত (রসুলের মৃত্যুর ৩০ বষর পরে) মুয়াবিয়ার দরবারে রসূলের সম্পর্কে একটি গল্প বলেছিলেন। মুয়াবিয়ার গল্পটি ভালো লাগে এবং এটি লিখে রাখার আদেশ দেন। কিন্তু যায়িদ বল্লেন : রসূল আমাদেরকে আদেশ করেছেন তার কোন হাদীস কখনো না লিখতে। (ইবনে হাম্বল থেকে) এই গল্প থেকে বুঝা যায় হাদীস লেখার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা রসূল মৃত্যুর আগে তুলে নেন নি।

৩)ইবনে সালাহ'র উলুম আল হাদীস বই তে উল্লেখ আছে - আবু হুরায়রা বলেছেন: আমরা একদিন যখন হাদীস লিখছিলাম তখন আল্লাহর রসূল এসে বল্লেন , তোমরা কি লিখছ? হাদীস , যা আমরা আপনার কাছ থেকে শুনি। তিনি বল্লেন: আল্লাহর বই ছাড়া অন্য আরেকটা বই? আবু হুরায়রা বল্লেন: আমরা যত হাদীস লিখেছিলাম , তা একত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দিলাম।

৪) তাকঈদ আল ইলম বইতে উল্লেখ আছে- আবু সাঈদ আল খুদরি বলেছেন: আমি আল্লাহর রসূলের কাছে হাদীস লেখার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন।

একারনেই নবীর জীবদ্দশায় বা তার মৃত্যুর পরে ২০০ বৎসর পর্যন্ত হাদীস লিখিত আকারে সংকলিত হয় নি। আজ যারা হাদীসের সমর্থক তারা উপরে বর্নীত হাদীসকে পালন না করে হাদীস লিখে ও প্রচার করে চলেছেন যা হাদীস ও সুন্নাহর পরিপন্থি।

ইসলামের নবীর সাথে বিয়ের সময় মা আয়েশার প্রকৃত বয়স কত ছিল? ৬ নাকি ১৯?

ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের একটি অতি প্রিয় প্রচারনা হলো – শেষ নবী মুহম্মদ শিশু নির্যাতনকারী ছিলেন। কথিত আছে মুহম্মদ যখন আয়েশাকে বিয়ে করেন , তখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর ছিল এবং তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় আয়েশার ৯ বছর বয়সে। এই নাস্তিকদেরি বা দোষ কি? বহু মুসলমান বিশেষ করে সুন্নি মুসলমানরা ও অন্ধভাবে এটাই বিশ্বাস করে। তাদের এই অভিযোগ বা বিশ্বাসের ভিত্তি হলো চরম মুহাম্মদ বিদ্বেষী বুখারীর একটি হাদীস । বুখারীর হাদীসগ্রন্থে এমন বহু হাদীস পাওয়া যায় , যেগুলো আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদের অবমাননাকারী। এই হাদীসটি যে বুখারী কোন রকম যাচাই বাছাই না করেই তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন শুধুমাত্র মুহম্মদ বিদ্বেষের কারনে , তার প্রমান হলো এমন আরো হাদীসের বর্ননা তার গ্রন্থে পাওয়া যায় , যেগুলো এই হাদীসের পরিপন্থি বা সাংঘর্ষিক।

নবী মুহাম্মদ কোরানের আদর্শেই জীবন পরিচালিত করতেন। তার জীবনাদর্শ সর্বকালের মুসলমানদের জন্য অনুকরনীয়। তিনি কোরানের পরিপন্থি কোন কাজ করতে পারেন না। কোরান থেকে বিবাহের যোগ্যতা বা উপযুক্ত বয়সের যে দিগনির্দেশনা পাওয়া যায় , তাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে শিশুবিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। যারা আগ্রহী তারা ৪:৬ , ৪:২১ , ৩০:২১ ও ২৫:৭৪ আয়াতগুলো পড়ে দেখতে পারেন। এই আয়াতগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গেলাম না , কারন নাস্তিকরা কোরানে বিশ্বাস করে না এবং সুন্নি মুসলমানরা ও কোরানের চেয়ে হাদীসের বর্ননায় বেশি আস্থাবান। যেহেতু এই অভিযোগের ভিত্তি হলো বুখারী বর্নীত একটি হাদীস , তাই হাদীস থেকেই প্রমানের চেষ্টা করব যে উক্ত হাদীসট ছিল ভূয়া। বুখারী হাদীসটি তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন মুহাম্মদ তথা ইসলামকে অবমাননা করার জন্য কিনা তা আল্লাহই ভালো জানেন।

১) এই হাদীসটির বর্ননাকারীদের শেষ ব্যাক্তি হিশাম বিন উর্‌ওয়া তার বাপের কাছ থেকে হাদীসটি শুনেছিলেন। হাদীসটি মূলত আহাদ হাদীস। হিশাম তার জীবনের প্রথম ৭১ বছর মদিনায় কাটালেও মদিনার কেউ এই হাদীসটি শোনেনি , এমনকি তার বিখ্যাত ছাত্র মালিক বিন আনাস ও এই হাদীসের উল্লেখ করেন নি। হিশামের শেষ জীবন কাটে ইরাকে । একারনেই এই হাদীসের বর্ননাকারী বাকি সকলেই ইরাকি। ইয়াকুব ইবনে শায়বাহ বলেছেন , “হিশামের সকল হাদীস বিশ্বাসযোগ্য , শুধুমাত্র ইরাকিরা যেগুলো বর্ননা করেছে সেগুলো ছাড়া।” মালিক বিন আনাস , যিনি হিশামের ছাত্র ছিলেন , তিনি হিশামের ইরাকিদের মাধ্যমে বর্নীত হাদীসগুলোকে সন্দেহকরে ওগুলোকে বাতিল করেন। (সুত্র – তেহজিবুল তেহজিব , লেখক-ইবনে হাজার আল আশকানি। বইটি হাদীস বর্ননাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে লিখিত।)

২) এমন বিবরন পাওয়া যায় যে , হিশাম বিন উর্‌ওয়া শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগেছিলেন , যেকারনে তার শেষ বয়সের অর্থাৎ ইরাকে বসবাসকালীন বর্নীত হাদীসগুলোতে বিশ্বাস করা যায় না। (সুত্র- আল যাহবি লিখিত “মিজানুল-আই
তিদাল”। বইটি হাদীস বর্ননাকারীদের জীবনী নিয়ে লিখিত।)

৩) বুখারীর কিতাবুল তাফসিরে একটি হাদীস পাওয়া যায় , যেখানে আয়েশা নিজেকে সূরা ৫৪ নাযিলের সময় কিশোরি মেয়ে ‘যারিয়াহ’ (শিশু ‘সিবিয়াহ’ নয়) হিসাবে দাবী করেছেন।

Volume 6, Book 60, Number 399:
Narrated Yusuf bin Mahik:

I was in the house of ‘Aisha, the mother of the Believers. She said, “This revelation: “Nay, but the Hour is their appointed time (for their full recompense); and the Hour will be more previous and most bitter.” (54.46) was revealed to Muhammad at Mecca while I was a playfull little girl.”

স্মরন থাকে যে , সূরা ৫৪ হিজরীপূর্ব ৯ সালে মক্কায় অবতীর্ন হয়। আয়েশার সাথে নবীর বিয়ে হয় ২য় হিজরীতে। এখন সূরা ৫৪ নাযিলের সময় আয়েশার বয়স ৫ বছর ও হয় (যেহেতু তার এই ঘটনা স্মরন আছে এবং এর নিচে হলে তাকে কিশোরি না বলে শিশু বলা উচিৎ ছিল) তাহলে বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ৫+৯+২=১৬ বছর ন্যুনতম ছিল। দাম্পত্য জীবন শুরু হয় আরো ২ বছর পরে। তাহলে আমরা কোন হাদীসটি বিশ্বাস করব? এটি নাকি হিশাম বিন উর্‌ওয়া বর্নীত হাদীসটি? ১৬ নাকি ৬? বুখারী এই আপাত বিরোধী ২ টি হাদীস কিভাবে তার গ্রন্থে সংকলন করলেন? বলাবাহুল্য দুটৈ সহী হাদীস!!

৪) অনেক হাদীসের বর্ননায় পাওয়া যায় আয়েশা ওহুদের যুদ্ধে নবীর সফরসঙ্গী ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ১৫ বছরের নিচে কাউকে যুদ্ধে নেয়া হয় নি। ওহুদের যুদ্ধ ২য় হিজরীর নিকটবর্তী কোন এক সময় সংঘটিত হয়। এর অর্থ দাড়ায় আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ১৫ বছরের বেশি ছিল।

৫) ঐতিহাসিকগন মহিলা সাহাবি ‘আসমা’র বয়স সম্পর্কে একমত। আসমা , আয়েশার বড় বোন ও বয়সে আয়েশার থেকে ১০ বছরের বড়। তাকরিবুল তেহজিব ও আল-বিদায়াহ ওয়াল নিহায়াহ বই দুটিতে বর্নীত হয়েছে যে , আসমা ৭৩ হিজরী সালে ১০০ বছর বয়সে মারা যান। এর অর্থ দাড়ায় , হিজরতের সময় আসমার বয়স ছিল ২৭ বছর। আয়েশা যেহেতু আসমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট , তাহলে হিজরতের সময় আয়েশার বয়স ছিল ১৭ বছর। আয়েশার বিয়ে হয় ২য় হিজরীতে । এই হিসাবে আয়েশার বয়স বিয়ের সময় হয় ১৯ বছর।
(For Asma being 10 years older than Ayesha, see A`la’ma’l-nubala’, Al-Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu’assasatu’l-risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years” (Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: “She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH.” Taqribu’l-tehzib, Ibn Hajar Al-Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al-harfu’l-alif, Lucknow).

৬) তাবারি তার ইসলামের ইতিহাস বইতে উল্লেখ করেছেন যে , আবুবকরের ৪ সন্তানের সকলেই ইসলামপূর্ব ৬১০ সালের আগেই জন্মগ্রহন করেন। আয়েশার বিয়ে হয় ৬২৪ সাল বা ২য় হিজরীতে। এর মানে দাড়ায় বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ন্যুন্নতম ১৪ বছর ছিল। (Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979).

৭) ঐতিহাসিক ইবনে হিশামের বর্ননামতে আয়েশা উমর ইবনে আল-খাত্তাবের বেশ কিছু আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর অর্থ দাড়ায় আয়েশা ৬১০ সালের কাছাকাছি সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন । এখন যদি ধরা যায় তিনি বুঝে শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন , তাহলে তখন তার বয়স ছিল ৭-৮ বছর। এই হিসাবে আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ২০ বছরের উপরে হয়। (Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh).

এইরুপ আরো অনেক হাদীস বা ঐতিহাসিকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমান করা যায় যে আয়েশার বয়স বিয়ের সময় ৬-৭ বছর ছিল না। স্মরন করা যেতে পারে যে , রসূল নিজমুখে কিন্তু বলেননি যে , বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ছিল ৬-৭ বছর। এই দাবী করেছে হিশাম ইবনে উরওয়া নামে এক লোক তার বাপের বরাত দিয়ে। বুখারী এইরুপ একটি বিতর্কিত হাদীস সংকলন করে প্রমান করেছেন , তিনি কতটুকু সততা ও পরিশ্রম করে হাদীস সংকলন করেছিলেন।

Friday, September 30, 2011

রসূলকে মান্য করা বা অনুসরন করা

সর্বশক্তিমান বলেছেন : “আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।” (৩:১৩২)। তিনি আরো বলেছেন : “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের।”(৪:৫৯)।

 আমাদের ধর্মে কয়জনের আনুগত্য বা মান্য করার আদেশ করা হয়েছে? এক জনের , দুই জনের নাকি তিন বা ততোধিকের? আসলেই আমরা এক জনকেই মানতে বাধ্য , তিনি আল্লাহ। আমারা পালন করি আল্লাহ্‌র বানীকে বা আদেশকে , যা রসূল উচ্চারন করেন এবং রসূলের মৃত্যুর পরে যে বা যারা আল্লাহ্‌র বানী উচ্চারন করেন , তাদের। কোরানের মূল নীতি অনুযায়ী , আল্লাহ্‌র বানী অমান্য করে , এমন কাউকে বা আল্লাহ্‌কে অমান্য করার কোন আদেশ মানা যাবে না। নবী যখন জীবিত ছিলেন , তখন তাকে মান্য করা বা আনুগত্য করা অত্যাবশ্যকীয় , যখন তাহার সকল কাজ ও বাণীর উৎস আল্লাহ। এটা আমরা বুঝতে পারি নিম্নের আয়াত থেকে। “ও নবী, যদি তোমার কাছে মুমিন নারীগণ আসিয়া বয়াত করিল যে, তাহারা আল্লাহর সহিত কোন কিছুর শরীক করিবে না, চুরি, জেনা ও সন্তান হত্যা করিবে না, অথবা নিজেদের হাত পার মধ্যে মিথ্যা সৃষ্টি ( বানাইয়া মিথ্যা বলা) করিবে না বা তোমাকে অমান্য করিবে না যখন তুমি সঠিক নির্দেশ দাও, তবে তাহাদিগকে বয়াত কর ও তাহাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।” ৬০:১২।

লক্ষ্য করুন , উপরের আয়াতে বলা হয়েছে ” ও নবী”। নবী ও রসূলের মধ্যে মূলগত কিছু পার্থক্য আছে। রসূল মুহম্মদ ও কোরান বা আল্লাহ্‌র বানী সমার্থক। কোরানের বানীকেও রসূল বলা হইয়াছে। যেকারনে রসূলকে মান্য করা বাধ্যতামূলক। রসূলের বাইরে ও মানুষ মুহম্মদের একটি জীবন আছে , সেই মানুষ মুহম্মদকেই নবী বলা হয়। এই নবী মুহম্মদের ভুল ত্রুটির কথা কোরানে উল্লেখ করা হইয়াছে। এ সম্পর্কে পরে কোন পোস্টে আলোচনা করা যাবে। উপরের আয়াত থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে , আল্লাহ নবীকে মানার ব্যাপারে কিছু বিধি নিশেধ আরোপ করেছেন। নবী যখন সঠিক নির্দেশ দেন , তখন তাকে মানা বাধ্যতামূলক। বেঠিক নির্দেশ না মানলে ও চলবে। কোন নির্দেশ সঠিক আর কোন নির্দেশ বেঠিক , তা নির্নয়ের মাপকাঠি কোরান।

আল্লাহ বলেছেন: “বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়।(৪:৬৪)”।

“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে , তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।(৪:৮০)”। একারনেই প্রতিটি নবী এসেছিলেন রসূলরুপে আল্লাহ্‌র বানীকে মানুষের কাছে প্রচারের উদ্দশ্যে এবং এই বানীর উপরে ভিত্তি করেই মানুষকে অনুরোধ করেছেন তাকে অনুসরন করার জন্য। “আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত রসূল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।” (২৬:১০৭/১০৮ এবং ১২৫/১২৬ ও ১৬২/১৬৩)। উনারা বলেন নি , আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত নবী। রসূলকে মান্য করার অর্থই হলো কোরানকে মান্য করা, যা আল্লাহ রসূলের কাছে প্রকাশ করেছেন। কোরানই রসূল , যা আমাদের মাঝে বর্তমান আছে।


“অনুসরন কর সে আলোকে , যা তার কাছে নাযিল হয়েছে।”


মুসলমানদেকে মানুষ মুহম্মদকে নয় বরং আল্লাহ্‌র বানীকেই বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। “আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।(৪৭:২)”


আমরা মানুষ মুহম্মদকে অনুসরন করি না ; আমরা অনুসরন করি সেই আলো’কে , যা মুহম্মদের কাছে এসেছে। অর্থাৎ কোরানকে। কোরান নিজেই এ ব্যাপারে বলেছে : “সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।৭:১৫৭”

লক্ষ্য করুন এই আয়াতে মুহম্মদকে অনুসরন করতে না বলে সেই নূরের অনুসরন করতে বলা হয়েছে , যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে। যদি আয়াতটি এমন হইত “সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং তার অনুসরন করেছে” তাহলে কোরানকে অনুসরন না করে মুহম্মদকেই অনুসরন করতে হতো।


মুহম্মদ প্রথম ব্যাক্তি , যিনি সকলের আগে কোরানকে অনুসরন করেছেন। আল্লাহ তাকে আদেশ করেছেন – “আপনি তাই অনুসরণ করুন, যার আদেশ পালনকর্তার পক্ষ থেকে আসে। ৬:১০৬” এবং “আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ।১০:১০৯” এবং “আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুন। ৩৩:২” এবং “অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন।৭৫:১৮” । রসূলকে বলতে বলা হয়েছে (সহী হাদীস) – ” বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ক কারী বৈ নই। ৪৬:৯” এবং “…আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে।৭:২০৩”


রসূল মুহম্মদ যখন কোরানকে অনুসরন করতেন, তখন তার উম্মত হিসাবে আমাদেরও কোরানকেই অনুসরন করা উচিৎ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে ও নবীকে একি সাথে উদ্দেশ্য করে বলেছেন : “এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ। তোমরা সকলে অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। ৭:২-৩”  “আল্লাহকে বাদে অন্য সাথীদের অনুসরন করো না”, অনেকেই এর অর্থ করেছেন এভাবে – কোরানকে বাদে অন্য কিছু অনুসরন করতে নিশেধ করা হয়েছে। আল্লাহকে অনুসরন করা সম্ভব একমাত্র কোরানকে অনুসরনের মাধ্যমে। আল্লাহর আদেশ নির্দেশ একমাত্র কোরানেই লিপিবদ্ধ আছে। কোরানের বাইরে অন্য কিছুকে অনুসরনের মানেই দাড়ায় , অন্য সাথীদের অনুসরন করা। কোরানের বাইরে অন্য কিছুকে অনুসরন করার মানেই দাড়ায় , সেই অন্য কিছুকে কোরানের সমকক্ষ করা , প্রকারান্তরে আল্লাহর সমকক্ষ করা , যা শির্ক। এটা আল্লাহ্‌র তরফ থেকে আদেশ এবং এনিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই।



স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে , তাই যদি হয় , তাহলে নবীকে কিভাবে অনুসরন করব? সহজ উত্তর হলো – নবী যখন কোরানকে অনুসরন করতেন , তখন কোরানকে অনুসরন করলেই নবীকে অনুসরন করা হবে। আর কোরানকে অনুসরন করলে রসূলকেও অনুসরন করা হবে , কারন কোরান ও রসূল সমার্থক।


বেশিরভাগ মুসলমান আজ কোরান ছাড়া বা কোরানের পাশাপাশি অন্য কিছু ও অনুসরন করে। তারাই সংখ্যায় ভারী। সংখ্যায় ভারী হলেই যে তারা সত্যপথে আছে এটা ভাবার কোন কারন নেই। কোরানের বানীই সত্য , বেশিরভাগ লোক কি বল্লো তাতে কিছুই যায় আসে না। “আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।৬:১১৬”


“আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর” , এই বাক্য দ্বারা আল্লাহ মানুষের স্বাভাবিক চরিত্রের কথাই বলেছেন।


রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া। আল্লাহ জানেন, যা কিছু তোমরা প্রকাশ্যে কর এবং যা কিছু গোপন কর। বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা মুক্তি পাও। ৫:৯৯-১০০”

Tuesday, June 28, 2011

কোরান নিয়ে চিন্তা ভাবনা। দায়িত্ব কার? রসূলের ও আলেম ওলামাদের নাকি আমাদের সকলের?

"এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।৩৮:২৯"

"এরা কি লক্ষ্য করে না কোরানের প্রতি?....। “Why do they not study the Quran carefully?.....। ৪:৮২"

"তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? ৪৭:২৪"

"অতএব তারা কি এই কালাম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? না তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি? ২৩:৬৮

"তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই। ৬:১০৪

"আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।When the Quran is recited, you shall listen to it and take heed, that you may attain mercy.৭:২০৪

"আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? ৫৪:১৭"

আয়াতগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে বলুনতো , কোরান পড়ে চিন্তাভাবনা কে করবে? রসূল ও আলেম ওলামারাই কি আমাদের জন্য চিন্তা ভাবনা করে দেবেন? আল্লাহর নির্দেশ কি বলে!!

Wednesday, June 22, 2011

শাফায়াত বা সুপারিশকারী

প্রায়  সব বাঙালি মুসলমান রোজ হাশরে রসুল মুহাম্মদের শাফায়াতের আশা করে একনিষ্ঠ ভাবে তার সুন্নত পালন করেন।

দেখুন কোরানে আল্লাহ শাফায়াত সম্পর্কে কি বলেছেন :

সুরা আল-যুমার(৩৯) আয়াত ৪৩-৪৪
"তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী গ্রহন করেছে? বলুন , এমনকি কোনকিছুর উপরে তাদের কোন ক্ষমতা না থাকলেও বা তাদের কোন বুদ্ধি জ্ঞান না থাকলেও ! বলুন , সকল সুপারিশের মালিক আল্লাহ , আসমান ও যমীনে তারি রাজত্ব। অতঃপর তারি কাছে তোমাদের ফিরতে হবে।"

সুরা সেজদাহ(৩২) আয়াত ৪
"আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল , ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ৬ দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে আসীন হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ওলী বা সুপারিশকারী নেই। এরপর ও কি তোমরা বুঝবে না?"

সুরা বাকারাহ(২) আয়াত ২৫৪
"হে ঈমানদারগণ ! আমি তোমাদের যা রিজিক্‌ দিয়েছি , তা থেকে ব্যায় কর সেদিন (রোজ হাশর) আসার পূর্বে, যেদিন চলবে না কোন দরাদরি বা থাকবেনা কোন সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই (অস্বীকারকারী) হলো প্রকৃত যালেম।"

কোরানে সুপারিশের উপর আরো অনেক আয়াত আছে। কিন্তু কোথাও বলা হয়নি মুহাম্মদ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রোজ হাশরে শাফায়াত বা সুপারিশ করবেন। এখানে ৪টি স্পষ্ট আয়াতের অনুবাদ দিলাম , কোন ব্যখ্যা ছাড়াই। মানা বা না মানার দায়িত্ব , যার যার নিজের।

শাফায়াত সম্পর্কে কোরানের কিছু আয়াত কি স্ববিরোধী? 

এই আলোচনায় যাওয়ার আগে স্মরনে রাখা দরকার:
"কোরানে আল্লাহ বলেছেন , কোরানে কোন অসঙ্গতি (contradiction) পাবে না। অন্য আরেক জায়গায় বলেছেন , কোরানে আছে স্পষ্ট আয়াত ও কিছু রূপক (মুশাবিহাত, যার ভিন্ন অর্থ হতে পারে , যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা) আয়াত। এই রূপক আয়াত ব্যবহার করে কাফেররা (কাফের অর্থ কোরান অস্বীকারকারী) আরো বিপথে যাবে। সুতরাং আমাদের উচিৎ হবে স্পষ্ট আয়াত অনুসরন করা।"

শাফায়াতের পক্ষে যে আয়াতটি প্রধানত উল্লেখ করা হয়, সেটা হলো সুরা বাকারাহ আঃ ২৫৫।
"কে আছে যে তার দরবারে সুপারিশ করতে পারে তার অনুমতি ছাড়া?"

এখন এই আয়াতটির মানে পুরাপুরি বুঝতে হলে, এর আগের আয়াত ২:২৫৪ পড়তে হবে।
“হে ঈমানদারগণ ! আমি তোমাদের যা রিজিক্‌ দিয়েছি , তা থেকে ব্যায় কর সেদিন (রোজ হাশর) আসার পূর্বে, যেদিন চলবে না কোন দরাদরি বা থাকবেনা কোন সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই (অস্বীকারকারী) হলো প্রকৃত যালেম।”

এখন ২টি আয়াত একসঙ্গে করলে দাড়ায়, আল্লাহ রোজ হাশরে কাউকে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন না বা দিলেও তা গ্রহনযোগ্য হবেনা। শাফায়াত যদি থেকেও থাকে , তবে তা আল্লাহ্‌র অনুমতিসাপেক্ষ।

 আরো কিছু আয়াতের উল্লেখ করা যায় , যা পড়ে আপাতদৃষ্টে মনে হয় সুপারিশ করা যাবে। কিন্তু ২৫৫ নং আয়াতের আলোকে পড়লে আর কোন সংশয় থাকার কথা নয়। লক্ষ করুন প্রত্যেকটি আয়াতে "লা" (না), "ইল্লা"(ব্যতীত) - Double negative ব্যাবহৃত হইয়াছে।

১০:৩ "তার অনুমতিক্রমে ব্যতীত কোন সুপারিশকারী নেই"

১৯:৮৭ "পরম করুনাময়ের নিকট থেকে যে কোন কড়ার লাভ করেছে, সে ব্যতীত কারোর সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।" (কড়ার কেউ আদৌ লাভ করেছে কিনা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।)

২০:১০৯ "সেই দিন কোন সুপারিশে কাজ হবেনা তার ব্যতীত যাকে পরম করুনাময় অনুমতি দিয়েছেন, আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন।"
২১:২৮ "তিনি জানেন যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে আর যা আছে তাদের পশ্চাতে।যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট আছেন তার জন্য ব্যতীত তারা সুপারিশ করেন না, আর তার ভয়ে তারা (সকল নবী রসূল , সুরার নাম আম্বিয়া) ভীত সন্ত্রস্থ।" (নবী রসূল রা সুপারিশ কি করবেন , তারা নিজেরাই নিজের জান বাচাতে ব্যস্ত।)
৩৪:২৩ "আর তার কাছে সুপারিশে কোন সুফল দেবে না, তার ক্ষেত্রে ব্যতীত যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছেন,"
৪০:৭,৮,৯ এই ৩ আয়াতে ফেরেশতারা মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন (সুপারিশ নয়) শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা ঈমান এনেছেন, তওবা করেছেন আর আল্লাহ্‌র পথ অনুসরন করেছেন।

৪৩:৮৬ " আর তাকে(আল্লাহ্‌কে) বাদ দিয়ে তারা যাদের ডাকে, তাদের কোন ক্ষমতা নেই সুপারিশ করার, তিনি ব্যতীত যিনি সত্যের সাথে সাক্ষ্য দেন ,আর তারা জানে।"(আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডেকে বা অন্য কারো উপরে নির্ভর করে লাভ নেই।)

আমরা কোরান থেকে জানতে পারি:
১) ইব্রাহিম আঃ তার নিজের পিতার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চেয়ে পাননি।৯:১১৪
২) নূহ আঃ নিজের পুত্রের জন্য সুপারিশ করে লাভ তো হয়নি, উল্টা তিরষ্কৃত হয়েছেন।১১:৪৬
৩) মুহাম্মদের  ক্ষমা প্রার্থনাতেও কোন কাজ হবে না।৯:৮০, ৪:১০৭,১০৯।

কোরানে যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, সুপারিশ নেই বা সুপারিশে কোন লাভ হবে না, সেখানে হাদীস কি বল্লো , তা কি বিচার্য? হাদীস থেকে শুধু এটুকুই উল্লেখ করতে চাই যে, মুহাম্মদ নিজের পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেবের মুক্তির কোন উপায় করতে পারেননি এবং নিজের মেয়ে ফাতেমা ও চাচিকে নিজের মৃত্যু শয্যায় উপদেশ দিয়েছিলেন আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে কারন তার নিজের কোন ক্ষমতা নেই।






Monday, June 20, 2011

কোরান আল্লাহর বই

কোরান আল্লাহ্‌র বই।



এটা স্বীকার করে নেয়ার অর্থ দাড়ায়-

১) আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকে স্বীকার করা।

২) তিনি এই বইয়ের মাধ্যমে মানবজাতিকে পথনির্দেশনা (guidance) পাঠিয়েছেন।

৩) প্রশ্নাতীতভাবে কোরান সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র অকাট্য কথা , যা চুড়ান্ত এবং যার উপরে অন্য কারো কথার স্থান নেই।

যদি আপনি উপরের এই বক্তব্যের সাথে একমত হোন , তাহলে হে পাঠক , আপনি পোস্টের বাকি অংশ পড়ুন। যারা একমত নন , তাদেরকে অনুরোধ করব , এখনই পোস্টটি বন্ধ করে বাকি অংশ না পড়ার জন্য।

দুনিয়ার সর্ববিষয় অর্থাৎ পাঁচালি পাঠ থেকে শুরু করে আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব নিয়ে আমার হাজারো একটা নিজস্ব মত আছে। কিন্তু আমার নিজস্ব মতের সাথে সত্যের বা আপনাদের কোন সম্পর্ক না থাকারই কথা। আমার নিজের ধারনা ভুল হতে পারে বা যে কাউকে বিপথে নিতে পারে , কারন আমি জানি আল্লাহ নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী শয়তান সবসময় আমাকে কুমন্ত্রনা দিচ্ছে। একারনেই আমি ঠিক করেছি নিজের ধারনা অনুসরন না করে , শুধুমাত্র কোরানের বাণীকে অনুসরন করব। নিশ্চয় কোরানের বাণী সকল কলুষিত মুক্ত এবং সর্বৈব সত্য।

শুরু করা যাক নিম্নোক্ত আয়াত দিয়ে।


"আলিফ লাম রা , এটি এমন এক বই , যার আয়াতসমূহ নিখুত নির্ভুল (perfect) এবং এক মহাজ্ঞাণী সর্বজ্ঞ সত্বার পক্ষ হইতে সবিস্তার ব্যাখ্যা সহ বর্ণীত। যেনো তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী না কর। নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তাহারই পক্ষ হইতে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
" সুরা হুদ (১১) আয়াত ১-২


উপরের আয়াত অনুযায়ী কোরান মহাজ্ঞাণী সর্বজ্ঞ আল্লাহ প্রদত্ত নিখুত নির্ভুল (perfect)সবিস্তার ব্যাখ্যা সহ বর্ণীত বাণী।
আল্লাহ বলেছেন কোরান পরিস্কার সহজ।


সুরা আল-হাদীদ(৫৭) আয়াত ১৭ - আল্লাহ এই আয়াতে দাবী করেছেন যে তিনি কোরানকে পরিস্কার সহজ (clear) করে দিয়েছেন , যাতে সকলেই বুঝতে পারে।


"তোমরা জেনে রাখ , আল্লাহ্‌ই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্য আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি , যাতে তোমরা বোঝ।"


সুরা ইব্রাহিম(১৪) আয়াত ৫২ - কোরান মানুষের কাছে পরিস্কার বার্তা নিয়ে এসেছে।


"এটা (কোরান) মানুষের জন্য এক পরিস্কার বার্তা(Clear message) এবং এদ্বারা সাবধান করা হচ্ছে ও জানানো যাচ্ছে যে , উপাস্য তিনিই একক এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা ভাবনা করে।"


উপরের আয়াতদুটি থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে কোরানের বার্তা পরিস্কার স্বচ্ছভাবে বর্ণনা করা হয়েছে , যাতে সকলেই কোন ব্যখ্যা ছাড়াই বুঝতে পারে।

কোরানের ব্যখ্যার জন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কারন আল্লাহ্ই বিশদব্যাখ্যাসহ কোরানকে পাঠিয়েছেন।


সুরা সেজদাহ(৪১) আয়াত ১-২

"পরম করুনাময় দয়ালুর পক্ষ হইতে এই বই , আরবি কোরান , যার আয়াত সমূহ বিশদব্যাখ্যাসহ অবতীর্ন হয়েছে তাদের জন্য , যারা জানে।"



সুরা হজ্ব(২২) আয়াত ১৬

"এমনিভাবে আমি সুষ্পষ্ট আয়াতরুপে কোরান নাযিল করেছি এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।"


আমরা যেটা বুঝলাম -


১) কোরান মহাজ্ঞাণী সর্বজ্ঞ আল্লাহ প্রদত্ত নিখুত নির্ভুল (perfect)সবিস্তার ব্যাখ্যা সহ বর্ণীত বাণী।

২) আল্লাহ বলেছেন কোরান পরিস্কার সহজ।

৩) কোরানের ব্যখ্যার জন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কারন আল্লাহ্ই বিশদব্যাখ্যাসহ কোরানকে পাঠিয়েছেন।


৬:৩৮)আর এমন কোনো জীব নেই এই পৃথিবীতে , আর না আছে কোন উড়ন্ত প্রাণী যে উড়ে তার দুই ডানার সাহায্যে, যারা তোমাদের মতো এক সম্প্রদায়ের নয়। আমরা এই কিতাবে কোন কিছুই বাদ দেই নি।অতঃপর তাদের প্রভূর দিকে এইসকল জীবদের একত্রিত করা হবে।



তাহলে দেখা যাচ্ছে , কোরানে মানুষের মুক্তির জন্য যা যা দরকার , তার কিছুই বাদ পড়েনি।

আল্লাহ বলেছেন কোরান যথেষ্ট।


২৯:৫১) এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে , আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি , যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্য রহমত ও উপদেশ আছে।



৪৫:৬) এগুলো কোরানের আয়াত, আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথভাবে। অতএব আল্লাহ ও তার আয়াতের পর তারা কোন কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে।


আল্লাহ্‌র এই বাণীর পরেও কোন কোন বিশেষজ্ঞ দাবী করছেন , কোরান সহজ সরল তো নয়ই , উপরোন্ত এর ব্যখ্যার জন্য হাদীস , ইজমা কিয়াসের প্রয়োজন আছে এবং কোরান যথেষ্ট নয়। কার কথা বিশ্বাস করব? আলেম ওলামা ও বিশেষজ্ঞদের নাকি আল্লাহ্‌র বানী কোরান কে?

সঠিক শাহাদা

নবী ইব্রাহিম না ছিলেন ইহুদী , না ছিলেন খৃষ্টান। উনি এমনই আদর্শবান মুসলমান ছিলেন যে , আল্লাহ , রসূল মুহম্মদকে আদেশ করেছেন ইব্রাহিম নবীকে অনুসরন করার জন্য। "অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শির্ককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।১৬:১২৩"

আমাদের রসূল ও তার অনুসারীগন সেটাই করেছেন আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।
"যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, "আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।" আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের(যাদের কাছে আগে কোন কিতাব নাযিল হয় নি) বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।৩:২০"

তাহলে কেনো আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান হাদীস সাহিত্যের এক বিতর্কিত চরিত্র আবু হুরায়রাকে অনুসরনের ফাঁদে আটকে গেছে?  কোরানের শিক্ষাকে অস্বীকার করেও তারা কি ভাবছে তারা সঠিক পথে আছে? আল্লাহ বলেছেন:
"আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তা এজন্য যে, তারা বলে থাকে যে, দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না; তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন কথায় তারা ধোকা খেয়েছে।৩:২৩-২৪"
দেখুন আজকের মুসলমানেরাও একি কথা বলে থাকে যে , দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না; আর যদি করেও তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। এগুলো সবই ভিত্তিহীন কথাবাত্রা। আসলেই আল্লাহ্‌র সুন্নতে কোন নড়চড় নেই।

শাহাদা।

প্রতিটি মুসলমানকে সুন্নি মাযহাব মোতাবেক ঘোষনা দিতে হয় যে , "আমি সাক্ষ্য দিতেছি আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিতেছি যে মুহম্মদ আল্লাহ্‌র রসূল।" আরবিতে "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।" এই যে সাক্ষ্য দেয়া , একেই শাহাদা বলে। নুতন কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে সর্ব সমক্ষে এই ঘোষনা পাঠ করতে হয় এবং যারা জন্মগতভাবে মুসলমান , তাদের এই শাহাদা মুখস্ত জানা ও বলা আবশ্যকীয়। অন্যদিকে কেউ যদি এই সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয় , তবে সে আর মুসলমান থাকে না। একারনেই এই শাহাদাকে ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম বা প্রধান স্তম্ভ হিসাবে গন্য করা হয়। শুধু তাই নয় , নামাজের ভিতরে এই শাহাদা না পড়লেও নামাজ হয় না।

এখন দেখা যাক , এই অতি গুরুত্বপূর্ন শাহাদা কিভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হলো। এই শাহাদার উৎপত্তি আবু হুরায়রা থেকে এবং এটা হাদীসগ্রন্থে রসূলের হাদীস হিসাবে লিপিবদ্ধ। এই হাদীসের অনেকগুলো ভার্সান আছে , যা তিরমিজি ও অন্যান্য গ্রন্থে পাবেন। হাদীসটি নিম্নরুপ-সুত্র "Mishkat-ul-Masabih", translation by Maulana Fazlul Karim, Volume 1, Chapter 1, no.27.

একদিন আবু হুরায়রা লোকজনের কাছে যেয়ে বল্লেন , রসূল তাকে বলেছেন লোকজনকে জানাতে যে এখন থেকে এই শাহাদা আবৃত্তি করা লাগবে , " আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।" অন্য হাদীসে এসেছে " মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।" আবু হুরায়রা প্রথম যে ব্যক্তির সামনে পড়লেন , তিনি হলেন ২য় খলিফা সায়্যিদিনা ওমর। ওমর তার এই শাহাদার কথা শুনেই তার বুকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে বল্লেন , এই মিথ্যা অবমাননাকর কথা বল , তোমার এত সাহস!! আবু হুরায়রা কাদতে কাদতে বল্লেন , রসূল নিজেই তাকে একথা মানুষজনকে জানাতে বলেছেন। ওমর একথায় সন্তুষ্ট না হয়ে যখন তাকে আরো মারতে লাগলেন , তখন আবু হুরায়রা এক জোড়া চামড়ার জুতা দেখিয়ে বল্লেন , রসূল তাকে এই জুতা জোড়া দিয়েছেন প্রমান হিসাবে। ওমর যখন দেখলেন এটা সত্যিই রসূলের জুতা , তখন তিনি শান্ত হলেন। এরপর থেকে সকলেই খুশিমনে শাহাদা আবৃত্তি করা শুরু করল। সেই শুরু , যা এখনো চলছে।

এই হলো আবু হুরায়রার শাহাদার অবিশ্বাস্য ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে কিছু প্রশ্নের জবাব জানা প্রয়োজন। প্রথমত আবু হুরায়রা রসূলের সঙ্গ পেয়েছিলেন রসূলের মৃত্যুর আগের ২ বছর। তাহলে ইসলামের প্রথম দিকের মুসলমানরা কোন শাহাদা পড়ে মুসলমান হতেন বা আবৃত্তি করতেন? দ্বিতীয়ত আবু হুরায়রার শাহাদার মধ্যে কি এমন অবমাননাকর বক্তব্য ছিল যে , ওমর এমন ক্ষেপায় ক্ষেপলেন যে আরেক সাহাবীর উপরে চড়াও হয়ে মারধর করলেন? কোরান আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, "মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।৪৮:২৯"  ওমরের আবু হুরায়রার উপরে চড়াও হয়ে মারধোর করা কি সহানুভূতিশীলতার উদাহরন?

আরেক হাদীসে এই ঘটনার ধারাবাহিকতাই বর্ননা করা হয়েছে যে , ওমর রসূলকে চ্যলেন্জ করে জানতে চেয়েছেন - তিনি সত্যিই কি আবু হুরায়রাকে নিজের জুতা দিয়ে পাঠিয়েছেন মানুষের মাঝে এই শাহাদা প্রচারের জন্য? রসূল উত্তর দিলেন - হ্যা। তখন ওমর দ্বিমত পোষন করে বল্লেন - এই শাহাদা মানুসকে 'অলস' করে ফেলবে। শাহাদা মানুসকে কিভাবে অলস করে ফেলবে , তার ব্যাখ্যা হাদীস বিশারদরাই ভালো দিতে পারবেন। তবে এই অবান্তর হাদীসের বর্ননাকারী ও কিন্তু ঐ আবু হুরায়রা। অবান্তর বল্লাম , কারন এই হাদীস ও কোরানের শিক্ষার পরিপন্থি। ওমর , যিনি একজন মুমীন ছিলেন , তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন -
"মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।২৪:৫১"  এরপরেও কি ওমরের পক্ষে সম্ভব রসূলের সাথে দ্বীমত পোষন করা? আমার তো এই হাদীস দুটি রামের জুতা জোড়ার কথা স্মরন করিয়ে দেয় , যা ভরত সিংহাসনে রেখে রামের অবর্তমানে দেশ শাসন করেছিলেন। ইসলামের ভিত্তি কি এইরকম গল্পের উপরে দাড় করানো সম্ভব!!

তবু ও না হয় শাহাদা মেনে নেয়া যেত বা benefit of doubt দেয়া যেত যদি না এই শাহাদা প্রতি নামাজে বৈঠকের সময় আবৃত্তি করা বাধ্যতামূলক  করা হত। কারন এটা শির্কের সমতুল্য।

কোরানের আলোকে আবুহুরায়রার শাহাদা কেন গ্রহনযোগ্য নয় -



 
রসূলের সত্যিকারের শিক্ষার সাথে আবু হুরায়রার শাহাদার বিরোধ কোথায়? রসূলের শিক্ষা হলো কোরানের বানী , যা আল্লাহ তার কাছে নাযিল করেছেন। ওহী পাওয়ার পরে তিনি প্রথমে তার সঙ্গী সাথী বা সাহাবাদের জানিয়েছেন , তারপরে ধীরে ধীরে জগৎ সংসারের বাকি মানুস ,যাদের কাছে এই বানী পৌছেছে , তারা জেনেছে। কোরানকে  আল্লাহর বানী এবং রসূলের হাদীস ও বলা যায় , কারন কোরানের বানী রসূলের মুখ দিয়েই কথা আকারে এসেছে। কোরানের বানী আল্লাহ গ্রন্থাকারে পাঠান নি , যেমনটি তিনি মূসার কাছে পাথরের ট্যবলেটে লিখে পাঠিয়েছিলেন।
একারনেই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি , রসূলের সত্যিকার শিক্ষাই হলো কোরানের বানী । কোরান ছাড়া বাকি যেসব দাবী করা হয় , তা রসূল পরবর্তী আলেম , ওলামা , মুনাফিকদের বানানো মন গড়া কল্পনা মাত্র , যার সাথে সত্যিকারের ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

আল্লাহ রসূলকে আদেশ করেছেন আমাদের জানানোর জন্য -
"মসজিদসমূহ আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে ডেকো না।৭২:১৮"

আমরা আবু হুরায়রার শাহাদায় আল্লাহর সাথে সাথে মুহম্মদের সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং তা মসজিদে  নামাজে ও আজানে এই শাহাদা বলার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সাথে মুহম্মদকেও স্মরন করে চলেছি।
আজকের মুসলমান স্কলাররা বলে থাকেন , এটা রসূলের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য বলে থাকেন এবং একি সাথে এটা ও স্মরন করিয়ে দেন যে , এই শাহাদা প্রতি বৈঠকে না পড়লে নামাজ হবে না। এটাকে আল্লাহর উপাসনার সাথে সাথে ব্যক্তি (মুহম্মদ) উপাসনা ছাড়া আর কি বলা সম্ভব? এটাকে শির্ক না বল্লে আর কোনটাকে শির্ক বলবেন?

শুধুমাত্র আল্লাহ।

মানুসের একটা বড় দুর্বলতা হলো , তদের পক্ষে অদেখা গায়েবি আল্লাহ বা গডে বিশ্বাস করা কষ্টকর। এমনকি ইব্রাহিম ও মূসা নবীর ও এই সমস্যা ছিল।
"তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, .... ৭:১৪৩"

মানুস তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি দিয়েই সব কিছু গ্রহন করতে চায়। একারনেই খৃষ্টানরা জেসাস কে প্রথমে গডের পুত্রে উন্নীত করলো , তারপর স্বয়ং গডেরি অংশ বানিয়ে ফেল্লো। হিন্দুরা মানুস রাম এবং কৃষ্নকে দেবতা বা ভগবান বানিয়ে পুজা করতে শুরু করল। মুসলমানরা ও পিছিয়ে থাকবে কেন?  তারাও মুহম্মদের নামে হামদ্‌ নাথ বানিয়ে , নামাজে তার নাম ঢুকিয়ে , মিলাদ মহফিল করে , তার কবর জিয়ারতকে হজ্বের  সময় আত্যাবশ্যকীয় বানিয়ে , তার সুপারিশকে জান্নাতে ঢোকার চাবি বানিয়ে  , তাকে ঐশী স্তরে নিয়ে গেছে এবং  প্রায় আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। আজকের মুসলমানদের তাই মোহামেডান বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত।

তারা যে মোহামেডান হয়ে গেছে এটা বলার কারনে কত গালিই না সইতে হচ্ছে বা হবে। কোরান ওনলি যিন্দিক শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা। বস্তুত তারা খেয়াল করে না , মুহম্মদ নিজেই আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন -

blockquote>"যখন এক (اللَّهُ وَحْدَهُ ) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে। ৩৯:৪৫"

লক্ষ্য করুন , যদি শুধুমাত্র " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলা হয় , তাহলে মোহামেডানরা কিভাবে ক্ষেপে ওঠে!! আর যদি এর সাথে "মুহম্মদ রাসুলুল্লাহ" বলা যায় , তাহলে তারা শান্ত হয় ,  আনন্দিত হয়।

আল্লাহ রসূলকে জানিয়েছেন যে এই শাহাদা আসলে হিপোক্রাট মুনাফেকদের শাহাদা। রসূলের চারিপাশে মুনাফেকরা বর্তমান ছিল , রসূল তাদের চিনতেন না।
"আর কিছু কিছু তোমার আশ-পাশের মুনাফেক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফেকীতে অনঢ়। তুমি তাদের জান না; আমি তাদের জানি। ৯:১০১"


একারনে , মুনাফেকরা চিন্তিত ছিল যে , হয়তো বা আল্লাহ তাদের পরিচয় ফাঁস করে দেবেন।
"মুনাফেকরা এ ব্যাপারে ভয় করে যে, মুসলমানদের উপর না এমন কোন সূরা নাযিল হয়, যাতে তাদের অন্তরের গোপন বিষয় অবহিত করা হবে। সুতরাং আপনি বলে দিন, ঠাট্টা-বিদ্রপ করতে থাক; আল্লাহ তা অবশ্যই প্রকাশ করবেন যার ব্যাপারে তোমরা ভয় করছ।৯:৬৪"


আল্লাহ রসূলকে তাদের পরিচয় ফাঁস করেছেন-
"মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।৬৩:১"


তাহলে দেখতে পাই মুনাফিকরাই সাক্ষ্য দেয় , মুহম্মদ আল্লাহর রসূল। এটাই আবু হুরায়রার শাহাদার দ্বিতীয় অংশ।

আল্লাহ কোরানে বলেছেন , আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। আর কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই।



مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولاً وَكَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি রসূল হিসাবে। আর আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। ৪:৭৯




আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ৪:১৬৬


এ ছাড়াও আল্লাহ রসূলদের ব্যাপারে সাক্ষী হতে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং এটা সম্ভবও নয় কেউ যে রসূল , তার সাক্ষ্য দেয়া। নবীর কাছে যে ওহী আসে তা আল্লাহ ছাড়া আর কোন মানুসের পক্ষে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে জানা সম্ভব না।


"মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না।২৮:৪৪"





তাহলে সঠিক শাহাদা কোনটি , যা মুসলমানরা দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা দিতে পারে বা যা ঘোষনা করে নব্য মুসলমানরা মুসলমানদের দলভুক্ত হতে পারে? হয়তো বা সাহাবারা এই একি প্রশ্ন আমাদের নবী মুহম্মদকেও করেছিলেন এবং হয়তো বা তিনি উত্তর দিয়েছিলেন -

"তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।৬-১১৪-১১৫"


তাহলে দেখা যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর বা শাহাদা অবশ্যই কোরানে থাকতে হবে। ইব্রাহিম নবী এর প্রকৃষ্ট উদাহরন -

"যে আল্লাহর কাছে নিজেকে (أَسْلَمَ وَجْهَهُ) সমর্পন করে , সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তার চাইতে উত্তম ধর্ম কার? আল্লাহ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।৪:১২৫"


স্মরনে রাখা প্রয়োজন যে , এই আয়াতটি আমাদের নবীর কাছে নাযিল হয়েছিল এবং তিনিই প্রথমে সাহাবীদের কাছে এই আয়াত তেলোয়াত বা আবৃত্তি করেছিলেন , অতঃপর কোরানের মাধ্যমে এই আয়াত আমাদের কাছে পৌছেছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরন করা।

"ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে। নিশ্চয়ই আমি তাকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছি এবং সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।২:১৩০"


শুধু বোকারাই ইব্রাহীমের ধর্ম থেকে মুখ ফেরায়। তাহলে মুসলমানদের , যারা কোরানে বিশ্বাস করে ও বোকা না হতে চায় , তাদের উচিৎ ইব্রাহিম যা করতো , তাই করা। ইব্রাহিম কি করতো? পরের আয়াতেই তা বলা আছে -

"স্মরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ নিজেকে সমর্পন কর(أَسْلِمْ)। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের কাছে নিজেকে সমর্পন করলাম (أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ)।২-১৩১"


এটাই , যা আমরা খুজতেছি। যখন আল্লাহ ইব্রাহিমকে সঠিক ধর্মের নির্দেশনা দিলেন , তখন তিনি ইব্রাহিমকে আত্মসমর্পন (আসলিমু) করতে বল্লেন এবং ইব্রাহিম বল্লেন,
"আসলামতু লি রাব্বিল আলামিন"।
এভাবেই সকল মুসলমানের ঘোষনা বা শাহাদা হওয়া উচিৎ।  কোন কোর্টে যদি কেউ সাক্ষ্য দেয় , " হুজুর , আমি চোখে দেখিনি বা ঘটনাস্থলেও উপস্থিৎ ছিলাম না" , তাহলে সেই সাক্ষ্য কোন জড়বুদ্ধি সম্পন্ন মানুস ছাড়া আর কারো কাছে গ্রহনযোগ্য হবে কি? তেমনি আবু হুরায়রার শাহাদাও গ্রহনযোগ্য নয়। কারন আমরা কেউ আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখিনি বা মুহম্মদের নবুয়ত্ব পাওয়ার বা রসূল হওয়ার ঘটনাস্থলে উপস্থিৎ ছিলাম না। এব্যপারে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। দেখুন শাহাদা।(সাক্ষ্য) (২)

ইব্রাহিমের গল্পের ধারাবাহিকতায় পরের আয়াত-

"এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে (আত্মসমর্পন না করে) কখনও মৃত্যুবরণ করো না।২:১৩২"


"তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য। আমরা সবাই তাঁর কাছে আত্মসমর্পন করলাম।২:১৩৩"


তাহলে দেখা যাচ্ছে ইব্রাহিম ও তার বংশধরগন সকলেই আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পন করেছিলেন। এটাই সত্য ঘটনা , এটাই কোরানের বানী। কোরানে আমাদের নবীকে আদেশ করা হয়েছে ইব্রাহিমকে অনুসরন করার জন্য। -

"তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম.....। ।২:১৩৫-১৩৬"


এই একি নির্দেশনা আল্লাহ কোরানে আবারো দিয়েছেন এবং যারা এই সত্যকে গোপন করে তাদের জন্য -

"অথবা তোমরা কি বলছ যে, নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব (আঃ) ও তাদের সন্তানগন ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান ছিলেন? আপনি বলে দিন, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ বেশী জানেন? তার চাইতে অত্যাচারী কে, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কাছে প্রমাণিত সাক্ষ্যকে গোপন করে? আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। ২:১৪০"


তাহলে মানুস কেনো এই শাহাদা বা সাক্ষ্য গোপন করে? ইব্রাহিম ঘোষনা দিয়েছিলেন -
"আসলামতু লি রাব্বিল আলামিন"। অর্থাৎ আমি দুই জাহানের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করলাম।
এবং তিনি তার সন্তানদের ও জ্যকবকেও এই একি কাজ করতে আদেশ  করেছিলেন।

আমাদের নবী ও সাহাবাদের ও এই একি শাহাদা দেয়া হয়েছিল । তাহলে কেন আজ সকলে সঠিক শাহাদা গোপন করে  মুনাফিকদের শাহাদা আকড়ে ধরে আছে?

এতে কোনই সন্দেহ নেই যে , আমাদের রসূল ইব্রাহিমের বিশ্বাসকেই অনুসরন করেছিলেন।

"অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শির্ককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।১৬:১২৩"


আমাদের নবী ও আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ঠিক এটাই করেছিলেন। যদি কেউ  মুসলমান হতে চায় , তবে তাকে নবী যেমন ইব্রাহিমের মতো আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন , তেমনি আত্মসমর্পন করা উচিৎ নয় কি?

"মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু।৩:৬৮"
"বলুন, যখন আমার কাছে আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে গেছে, তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাকে ডাকো , তার এবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে আদেশ করা হয়েছে বিশ্ব পালনকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পন করতে।(ওয়া উমিরতু আন আসলিমা লি রাব্বিল আলামিন) ৪০:৬৬"


যদি কেউ এটা নিয়ে বাদানুবাদ করে , তবে তার জবাব ও কোরানে আছে -
""যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, "আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।"...৩:২০


রসূল ও তার অনুসারীরা সোজা ভাষায় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন।
"আপনি বলে দিনঃ আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে আহবান করব, যে আমাদের উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না এবং আমরা কি পশ্চাৎপদে ফিরে যাব, এরপর যে, আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন? ঐ ব্যক্তির মত, যাকে শয়তানরা বনভুমিতে বিপথগামী করে দিয়েছে-সে উদভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। তার সহচররা তাকে পথের দিকে ডেকে বলছেঃ আস, আমাদের কাছে। আপনি বলে দিনঃ নিশ্চয় আল্লাহর পথই সুপথ। আমরা আদিষ্ট হয়েছি যাতে স্বীয় পালনকর্তা কাছে নিজেকে সমর্পন করি।৬:৭১"


অনেকে বলতে পারেন এই শাহাদা আমার কল্পনা প্রসূত। না এটা আমার কল্পনা নয়। এর বর্ননা কোরান থেকেই নেয়া। রানী শেবা মতান্তরে বিলকিছ যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুসলমান হয়েছিলেন তখন এই শাহাদা পড়েছিলেন -
"তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলকীস বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি।
আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পন করলাম।২৭:৪৪"


সঠিক শাহাদা-
 
"আসলামতু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন" আমি বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করলাম।





Monday, April 25, 2011

স্ত্রী প্রহার !!

আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম কোরানানুযায়ী জীবনযাপন করলে মুশ্কিল্টা কি তা জানার জন্য। কোরান স্কেপ্টিকরা কয়েকটি মুশ্কিলের কথা জানিয়েছেন , যার অন্যতম স্ত্রী প্রহার। আজ স্ত্রী প্রহার নিয়ে আলোকপাত করব। বাকিগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা থাকল।



মুসলিম দেশগুলোতে অতি সামান্য কারনে (রান্না কেন ভাল হয় নি , এইরকম তুচ্ছ কোন বিষয়) বউ পেটানোর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও বউ পেটায় , যার অহরহ নজীর আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখে থাকি কিন্তু সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। কারন মুসলমানরা বউ পেটায় ধর্মীয়ভাবে জায়েজ করে। আমাদের ধর্মগুরুরা গত হাজার বছর ধরে বউ পেটানোর সমর্থনে কোরানের ৪:৩৪ নং আয়াত নিয়ে খাড়া হয়ে যান। এখন আমি যদি বলি এই আয়াতটির ভুল মানে করা হচ্ছে গত হাজার বছর ধরে , তাহলে আস্তিক নাস্তিক ও কোরান স্কেপ্টিক সকলেই একবাক্যে প্রতিবাদ করে উঠবে , হাজার বছর ধরে কেউ কিছু বুঝলো না , তুমি কোথাকার দিগপাল এলে যে , তোমার চোখেই এই ভুল ধরা পড়লো!! দেখুন কপের্নিকাসের আগ পর্যন্ত আবহমানকাল ধরে মানুষ বিশ্বাস করতো , সূর্য পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে। তাই বলে কি এটা সত্য? গত হাজার বছর ধরে কোরানের আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করলে , ব্যাখ্যাটা সত্য হয়ে যায় না। তাই সকলের কাছে অনুরোধ খোলামন নিয়ে (অর্ধেক খালি নয় , অর্ধেক ভর্তি চিন্তা নিয়ে) পোস্টের বাকি অংশ পড়ুন তাহলেই কোরানের মহিমা বুঝতে পারবেন।



৪:৩৪ "পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে ('নুশুয' نُشُوزَ)অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং ('ইদরিবুহুন্না'وَاضْرِبُوهُنَّপ্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"

যদি আল্লাহ সত্যি সত্যিই অবাধ্যতার জন্য স্ত্রী প্রহার করতে বলে থাকেন , তাহলে মুসলমানদের জন্য বউ পেটানো অবশ্য করনীয়। মুসলমানরা আল্লাহর আদেশ মানতে বাধ্য। আসলেই কি আল্লাহ বউ পেটাতে বলেছেন ? চলুন দেখি কোরান থেকেই এর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কিনা।



কোরানের কোন শব্দের সঠিক মানে জানতে হলে , ঐ একি শব্দ দিয়ে কোরানের অন্য আয়াতে কি বোঝানো হয়েছে , সেটা জানা জরুরী। এই পদ্ধতিকে বলে 'তারতীল' , যার কথা বলা হয়েছে ৭৩:৪ নং আয়াতে।



বউ পেটানোর আয়াতটির সঠিক মানে জানতে হলে ২ টা শব্দের মানে জানা জরুরী , যা আমি আরবিতে দিয়েছি।


১) নুশুয (যার মানে করা হয়েছে অবাধ্যতা)

২) ইদরিবুহুন্না (মানে করা হয়েছে প্রহার কর)


'নুশুয'এর সঠিক মানে জানলে আয়াতটি কি নিয়ে তা জানা যাবে এবং সে কালের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষ শ্রেষ্ঠ , এই চিন্তা মাথায় রেখেই যে আমাদের আলিম ও ইমামরা ঐ রকম অনুবাদ করেছিলেন , তা পরিস্কার হবে।

'নুশুয' এর অর্থ - উঠে যাওয়া / `to rise / go above'

কোন স্থান থেকে উঠে যাওয়াই যে 'নুশুয'এর মানে , তা পরিস্কার হবে ৫৮:১১ নং আয়াত পড়লে।



"মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহর জন্যে তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয়ঃ ('এনশুযু'انشُزُو উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর।"

৪:৩৪ আয়াতে স্ত্রী কতৃক স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়া বা উপেক্ষার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে , অবাধ্যতার কথা বলা হয় নি। এখনো যদি এটা বিশ্বাস না হয় তাহলে ৪:১২৮ নং আয়াত দেখুন , যেখানে স্বামী কতৃক স্ত্রীকে উপেক্ষার কথা বলা হয়েছে ও একি শব্দ 'নুশুয' ব্যবহৃত হয়েছে।


"যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে (نُشُوزً)অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।"

একি কাজের জন্য তো আর দুই রকম নির্দেশ হতে পারে না। স্বামী উপেক্ষা করলে মিমাংসা আর স্ত্রী উপেক্ষা করলে প্রহার। এখন দেখি 'ইয়াদরিবুহুন্না' মানে কি?

'ইয়াদরিবুহুন্না' র মূল হলো 'দারাবা"। দারাবা অনেক আয়াতে আছে , এবং এর ভিন্ন ভিন্ন মানে করা হয়েছে। নিম্নের আয়াত থেকে দারাবার মানে আমরা নিতে পারি।

২:২৭৩ "খয়রাত ঐ সকল গরীব লোকের জন্যে যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র (ضَرْبًا) ঘোরাফেরা করতে (যেতে) সক্ষম নয়। "

এখান থেকে আমরা ইয়াদরিবুহুন্নার মানে নিতে পারি যেতে দেয়া। তাহলে ৪:৩৪ এর মানে দাড়ায় -

"পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে ('নুশুয' نُشُوزَ)চলে যাওয়ার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং ('ইদরিবুহুন্না'وَاضْرِبُوهُنَّযেতে দাও যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"

দেখুন তো আল্লাহর আইন কত সুন্দর। স্বামী , স্ত্রী উভয়ের সমাধিকার।


৩৯:১৮ যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।











Thursday, April 14, 2011

আমাদের এই মহাবিশ্ব কোথা থেকে এসেছে? (২)

পাখির বিষ্ঠা।




আজকের দুনিয়ায় বিগ ব্যাঙ থিওরী সর্বজন বিদিত ও বিজ্ঞানী মহলে সমাদৃত ও স্বীকৃত। তবে শুরুতে কেউই বিগ ব্যাঙ থিওরীকে পাত্তা দেয় নি , উড়িয়ে দিয়েছিল। যে কজন এই থিওরীকে সমর্থন করেছিল , তারা ভবিষ্যতবাণী করে যে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন এখনো অবশিষ্ট আছে।



১৯৬৫ সালে নিউ জার্সীতে বেল ল্যাবরেটরীর দুজন বিজ্ঞানী প্রায় হঠাৎ করেই একটা বড় রেডিও ডিশ-এন্টেনার মাধ্যমে এই তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের সন্ধান পেয়ে যান। পৃথিবীর সবচেয়ে সুক্ষ পরিবর্তন নির্ণয়ে সক্ষম রেডিও ডিশ-এন্টেনাকে টিউনিং করার সময় একটি ঝির ঝির শব্দ আর্নো পেন্জিয়াস ও রবার্ট উইলসনকে জ্বালাতন করছিল। কারন এন্টেনাকে আকাশের যেদিকেই ঘুরান না কেন , সকল দিক থেকেই ঝির ঝির শব্দটি আসছিল। তারা প্রথমে ভেবেছিলেন , এটা পাখির বিষ্ঠা (গু) । তাদের এন্টেনাটি এতই সুক্ষ ছিল যে , ডিশ-এন্টেনার উপরে পাখি বিষ্ঠা ত্যাগ করলে , সদ্য নির্গত সেই বিষ্ঠা গরম থাকার ফলে ওটার তাপ থেকে সৃষ্ট বিকিরনকে ও এই এন্টেনাটি ধরতে পারত। ডিশ-এন্টেনা থেকে সেই বিষ্ঠা পরিস্কার করার পরে ও দেখা গেল ঐ ঝির ঝির শব্দ আসা বন্ধ হচ্ছে না।



একবছর ধরে এই ঝির ঝির শব্দের ডাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে তারা এই স্বীদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই ঝির ঝির শব্দটিই হলো ১৩০০ কোটি বছর পূর্বে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন। তাকে বলা হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB)। সিএমবি আবিষ্কারকদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হল, যদিও এই বিকিরণের ভাবীকথন অনেক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা আগেই করেছিলেন এবং সেই সাথে বিগ ব্যাঙ নিয়ে বিজ্ঞানীদের সকল অবিশ্বাস ও সন্দেহ দুর হলো। (আপনার টেলিভিশন চ্যানেল পরিবর্তনের সময় যে চ্যানেলে কোন প্রোগ্রাম থাকে না , সেখানে যে ঝির ঝির শব্দ শোনা যায় , ওটাই সিএমবি (CMB))



এক সাক্ষাৎকারে আর্নো পেন্জিয়াসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল , বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই কেন এত বাধার সম্মুখীন হয়েছিল? কেন মূলধারার বিজ্ঞানীরা একে মেনে নেন নি?



জবাবে আর্নো পেন্জিয়াস বলেন - "বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা ছাড়াই এই মহাবিশ্বের বর্ণনা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এবং বিজ্ঞান যেহেতু কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় না , শুধু বর্ণনাই দেয় , সেহেতু মূলধারার বিজ্ঞানীদের বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই মেনে না নেয়াটাই কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন। আমাদের এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব যদি চিরস্থায়ী হয়ে থাকে , তাহলে এর কোন ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না , নয় কী?"



"কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল , 'কোন এক কোম্পানির সকল সেক্রেটারিই মহিলা কেন'? আপনি উত্তরে বলতে পারেন , 'কোম্পানির শুরু থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে।' এটা ব্যাখ্যা না দিয়েই পার পাওয়ার একটি পন্থা। ঠিক এমনি ভাবে যে সকল থিওরীর কোন ব্যাখ্যা লাগে না সেগুলোকেই সাধারনত বিজ্ঞান গ্রহণ করে এবং এভাবেই বিজ্ঞান খুব সুন্দর ভাবে কাজ করে চলেছে।"



"মহাবিশ্ব চিরস্থায়ীর ধারনা বা পুরাতন থিওরীটা এতই কুৎসীত যে সেটাকে মানুষ পরিত্যাগ করেছে। এর বদলে নুতন ও সহজতম থিওরীটা হলো - শুন্য থেকে সৃষ্টি , এই মহাবিশ্বের শুন্য (সরিষার দানা?) থেকে মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ। সাধারন বাংলায় যাকে বলে - 'হাওয়া থেকে পাওয়া'।"



রবার্ট উইলসনকে সাংবাদিক ফ্রেড হীরেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ," বিগ ব্যাঙ কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ইঙ্গিত করে কী না?"



উইলসন বললেন ," কিছু একটা তো অবশ্যই বারুদে ম্যাচের কাঠি ঠোকার কাজটা করেছিল। আর আপনি যদি ধার্মিক হোন , তাহলে এর থেকে ভাল কোন থিওরী তো আমার মাথায় আসে না।"



পরবর্তি পর্বে থাকবে - " বিগ ব্যাঙ কেন ইতিহাসের সুক্ষতম পরিকল্পিত ঘটনা?"





Tuesday, March 8, 2011

চোরের শাস্তি।(শেষ অংশ)

৩য় মতানুযায়ী কুরআনের নৈতিকতা স্মরনে রেখে বলা হয়েছে চোরদের হাত নয় , তাদের চুরির সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের কেটে ফেলতে অর্থাৎ তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। এই মতের সমর্থনে ৩টি কারন দর্শানো হয়েছে।




১ম কারন - সকলেই জানেন বাংলায় কিছু শব্দ আছে যার আক্ষরিক ও আলঙ্করিক দুই ধরনের মানে করা হয়। যেমন – যদি বলা হয় আমার হাত ব্যাথা করছে। এখানে ‘হাত’ শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই হাতকে বোঝায়। কিন্তু যদি বলি , আমার খুব হাত টানাটানি যাচ্ছে। এখানে নিশ্চয় কেউ আমার হাত ধরে টানাটানি করছে না। এখানে হাতের আলঙ্করিক অর্থ বোঝানো হয়েছে , অর্থাৎ আমার টাকা বা সম্পদের অভাব ঘটেছে।



সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের বুঝাতে বাংলায় বা ইংরাজীতে বা আরবিতেও ‘হাত’ শব্দটি ব্যাবহৃত হয়। যেমন এরশাদ শিকদারের ডান হাত বা right hand man ছিল অমুক , এটা বলতে আমরা বুঝি এরশাদ শিকদারের প্রধান সহায়তাকারী ছিল অমুক। অমুকের পক্ষে এ কাজটা করা সম্ভব ছিল না , যদি না তমুকের হাত ওর পিছনে থাকত!! এখানে পৃষ্ঠপোষককে বুঝানো হয়েছে। কোন চোরের পক্ষে সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষক ছাড়া একা চুরি করা দূরুহ। তাকে চুরির মাল কারো না কারো কাছে বেচা লাগবে , কারো না কারো সহায়তা তার লাগবে। একারনেই সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের তার কাছ থেকে কেটে বা বিচ্ছিন্ন করে ফেল্লেই , তার চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিচ্ছিন্ন কিভাবে করতে হবে তার বর্ননাও কুরআনে আছে। সে বর্ননায় পরে আসছি।



তদ্রুপ কুরআনেও ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আক্ষরিক ও আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। প্রমানস্বরুপ ২৭:১২ , ৫:৬৪ , ৩৮:৪৫ আয়াতগুলো পড়ে দেখুন।



২৭:১২ “আপনার হাত আপনার বগলে ঢুকিয়ে দিন, সুশুভ্র হয়ে বের হবে নির্দোষ অবস্থায়। এগুলো ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্যতম। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।”

এই আয়াতে ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আক্ষরিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে।



৫:৬৪ “আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।….” এই আয়াতে ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। এখানে হাত বন্ধ বলতে কৃপনতা বোঝায়।



৩৮:৪৫ “স্মরণ করুন, হাত ও চোখের অধিকারী আমার বান্দা ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা।” এখানেও ‘হাত’ (ইয়াদ) শব্দটি আলঙ্করিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে। আরো দেখতে পারেন ২:১৯৫, ২:২৩৭ ও ২২:১০ আয়াতগুলি।



তাহলে ৫:৩৮ আয়াতের তর্জমা যদি “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের তাদের কাছ থেকে কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।” এভাবে করা হয় তাহলে দেখুন ৫:৩৯ নং আয়াতের সাথেও কোন বিরোধ থাকে না।



৫:৩৯ “অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”



২য় কারন - মানুষ খুন করা নিশ্চয় চুরি করার থেকেও জঘন্য অপরাধ। কুরআনে খুনীর জন্য দুই ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৪:৯২ আয়াতে বিশ্বাসীদের অনিচ্ছাকৃত খুনের শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে। এই শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও নয় বা জেল বাস ও নয়। ৪:৯২ “মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”



ইচ্ছাকৃত খুনের শাস্তি – ২:১৭৮ “হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।”



দুটো আয়াতেই দেখুন ক্ষতিপুরন দেয়া ও ক্ষতিপুরন দিয়ে মৃত্যুদন্ড রহিতের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। এটা হয়তোবা খুন হওয়া ব্যাক্তির পরিবারের ভরনপোষনের স্বার্থে করা হয়েছে। খুনীর এই যে শাস্তি , এটা নিশ্চয় চোরের হাত কেটে ফেলার শাস্তির চেয়ে বেশী নয়। চুরির শাস্তি তো আর খুনের শাস্তির চেয়ে বেশি হতে পারেনা?



৩য় বা শেষ কারন আল্লাহ সুরা ইউসুফে (১২) উদাহরন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন , চোরের শাস্তি কিভাবে দিতে হবে।



১২:৭০ অতঃপর যখন ইউসুফ তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিল, তখন পানপাত্র আপন ভাইয়ের রসদের মধ্যে রেখে দিল। অতঃপর একজন ঘোষক ডেকে বললঃ হে কাফেলার লোকজন, তোমরা অবশ্যই চোর।

১২:৭১ তারা ওদের দিকে মুখ করে বললঃ তোমাদের কি হারিয়েছে?

১২:৭২ তারা বললঃ আমরা বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছি এবং যে কেউ এটা এনে দেবে সে এক উটের বোঝা পরিমাণ মাল পাবে এবং আমি এর যামিন।

১২:৭৩ তারা বললঃ আল্লাহর কসম, তোমরা তো জান, আমরা অনর্থ ঘটাতে এদেশে আসিনি এবং আমরা কখনও চোর ছিলাম না।

১২:৭৪ তারা বললঃ যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তবে যে, চুরি করেছে তার কি শাস্তি?

১২:৭৫ তারা বললঃ এর শাস্তি এই যে, যার রসদপত্র থেকে তা পাওয়া যাবে, এর প্রতিদানে সে দাসত্বে যাবে। আমরা যালেমদেরকে এভাবেই শাস্তি দেই।

১২:৭৬ অতঃপর ইউসুফ আপন ভাইদের থলের পূর্বে তাদের থলে তল্লাশী শুরু করলেন। অবশেষে সেই পাত্র আপন ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে বের করলেন। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম। সে বাদশাহর আইনে আপন ভাইকে কখনও দাসত্বে দিতে পারত না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আমি যাকে ইচ্ছা, মর্যাদায় উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর এক জ্ঞানীজন।

১২:৭৭ তারা বলতে লাগলঃ যদি সে চুরি করে থাকে, তবে তার এক ভাইও ইতিপূর্বে চুরি করেছিল। তখন ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে রাখলেন এবং তাদেরকে জানালেন না। মনে মনে বললেনঃ তোমরা লোক হিসাবে নিতান্ত মন্দ এবং আল্লাহ খুব জ্ঞাত রয়েছেন, যা তোমরা বর্ণনা করছ;

১২:৭৮ তারা বলতে লাগলঃ হে আযীয, তার পিতা আছেন, যিনি খুবই বৃদ্ধ বয়স্ক। সুতরাং আপনি আমাদের একজনকে তার বদলে রেখে দিন। আমরা আপনাকে অনুগ্রহশীল ব্যক্তিদের একজন দেখতে পাচ্ছি।

১২:৭৯ তিনি বললেনঃ যার কাছে আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। তা হলে তো আমরা নিশ্চিতই অন্যায়কারী হয়ে যাব।”



উপরের আয়াতগুলোতে আল্লাহর আইনে চুরির শাস্তির প্রয়োগ কিভাবে হবে তা দেখানো হয়েছে।

১২:৭ “অবশ্য ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”

১২:৩৮ “আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্ত অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ স্বীকার করে না।”



উপরের আয়াতগুলো থেকে এটা পরিস্কার তারা রাজার আইন (১২:৭৬) অনুসরন করেনি , বরং চোরকে শাস্তি দিয়েছে আল্লাহর আইনে(১২:৭৫)। লক্ষ করুন ওরা ১২:৩৮ “আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি।”






দেখা যাচ্ছে আল্লাহর আইনে চোরের শাস্তি নিম্নরুপ :


১) সন্দেহভাজন চোরকে প্রথমেই চুরি স্বীকার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং স্বীকার করে চুরির মাল ফেরৎ দিলে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।১২:৭২


২)৫:৩৮ চুরি প্রমান হলে তার সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের থেকে কেটে ফেলা হবে অর্থাৎ সে দাসত্বে যাবে।১২:৭৫ এর অর্থ দাড়ায় চোরাই মালের টাকা বা জরিমানার সমপরিমান অর্থ চোর শ্রম মজুরি দিয়ে শোধ দিবে।



এখন দেখুন এরপরে যদি চোর ক্ষমা চায় ও অনুতপ্ত হয় , তাহলে তাকে ক্ষমা করা সম্ভব।

আয়াতগুলো থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে কাউকে চুরির দায়ে ফাসানো সম্ভব। হাত কেটে ফেল্লে যার চুরির মিথ্যা অভিযোগে হাত কাটা গেছে , তার হাত কিভাবে ফেরৎ দেয়া যাবে। আর চুরির শাস্তি যদি হাত কেটেই ফেলা হবে , তাহলে নিশ্চয় ইউসুফ নিজের আদরের ভাইকে চুরির দায়ে ফাসাতো না।



আজকের মুসলমান ভাইয়েরা বলতে পারেন , এই আইন সেই ইউসুফের জমানার জন্য প্রযোজ্য ছিল , আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর উত্তরে বলব , আল্লাহ আমাদের এই কাহিনী শুনিয়েছেন কিছু শেখানোর জন্য , আনন্দ উপভোগের জন্য নয়।



পোস্টের শুরু করেছিলাম সূরা ইউসুফের ১ম আয়াত দিয়ে , শেষ করছি শেষ আয়াত দিয়ে।





১২:১১১ তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হেদায়েত।






চোরের শাস্তি

১২:১-৩ “আলিফ-লাম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত। আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমতে আমি এ কোরআন তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি। তুমি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভূক্ত ছিলে।”


কোরআনে চুরির শাস্তির কথা কি বলা হয়েছে?

৫:৩৮ আয়াতে চুরির জন্য জন্য নির্ধারিত শাস্তির বর্ননা দেয়া আছে।

৫:৩৮ “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে ‘এক্‌তা’উ’ ‘আইদিয়াহুমা’ তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”
৫:৩৯ “অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”

আরবি শব্দ ‘এক্‌তা’উ’ অর্থ “কাটো” , আর ‘আইদিয়াহুমা’ অর্থ “হাতগুলো” (তিন বা ততোধিক)।

৫:৩৮ শাব্দিক অর্থ দাড়ায় – “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাতগুলো (তিন বা ততোধিক) কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”

হাতগুলো কতটুকু কাটতে হবে , তার দুই ধরনের মত পাওয়া যায়।

১ম মতানুযায়ী হাতগুলো একেবারে কেটে ফেলে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর সাথে একমত হওয়া যাচ্ছে না নিম্নোক্ত কারনে। প্রথমত আরবি শব্দ ‘আইদিয়াহুমা’ , ‘ইয়াদ’ বা দুই হাতের বহুবচন। এক হাতের আরবি ‘ইদ’। আমরা জানি প্রতিটি মানুষের এমনকি চোরের ও দুইটার বেশি হাত নেই। তাহলে আমরা তিন বা ততোধিক হাত কেমনে কাটব? যদি আমরা স্বীকার ও করে নেই যে এই আয়াতে পুরুষ ও নারী দুই চোরের কথা বলা হয়েছে , তাহলে কি আমাদের চোরের দুটো হাতই কেটে ফেলতে বলা হয়েছে?

দ্বিতীয়ত যদি কাউকে ভুলবশত চোর সাব্যস্ত করা হয় বা কাউকে শত্রুতাকরে চোর হিসাবে ফাসানো হয় অতঃপর তাদের দুই হাত কেটে ফেলা হয় , তখন কিভাবে শুধরানো হবে? আবার এমন ও তো হতে পারে , এমন কেউ যার হাত নেই কিন্ত বুদ্ধি দিয়ে চুরি করতে সহায়তা করেছে, তার কি শাস্তি?

তৃতীয়ত হাত কেটে ফেলা হলে , ৫:৩৯ আয়াতে আল্লাহ যে বলেছেন চোর যদি তওবা করে ও সংশোধিত হয় , তো আল্লাহ নিশ্চয় তার তওবা কবুল করেবেন। এই আয়াতের প্রোয়োগ কিভাবে হবে? হাত তো ফিরে আসবে না!! এর অর্থ দাড়ায় হাত সম্পুর্ন কেটে ফেল্লে ৫:৩৯ আয়াতের কোন কার্যকারীতাই থাকে না। কোরানের আয়াত তো আর মিথ্যা হতে পারে না!!

২য় মতানুযায়ী হাত একেবারে কেটে না ফেলে , হাতে cut mark বা দাগ চিহ্ন রেখে দিতে। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে তারা কোরআনের ১২:৩১ ও ১২:৫০ আয়াতদ্বয়ের উল্লেখ করেন , যেখানে মহিলারা ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটেছিল। নিজেই নিজের হাত নিশ্চয় সম্পুর্ন কেটে ফেলা সম্ভব না। কমনসেন্স তাই বলে।

১২:৩১ “…. সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললঃ ইউসুফ এদের সামনে চলে এস। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ কখনই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা।”
১২:৫০ “বাদশাহ বললঃ ফিরে যাও তোমাদের প্রভুর কাছে এবং জিজ্ঞেস কর তাকে ঐ মহিলার স্বরূপ কি, যারা স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল! আমার পালনকর্তা তো তাদের ছলনা সবই জানেন।”

যদিও হাতে দাগ দেয়া মানবিক ও ব্যাবহারিকভাবে অধিক গ্রহনযোগ্য তবুও এই মতের সাথেও একমত হওয়া যাচ্ছে না। কারন ১ম মতের বিরুদ্ধে যে কারন গুলো উল্লেখ করা হয়েছে , তা এই মতের বিরুদ্ধেও খাটে। তাছাড়াও বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতই উন্নতি হয়েছে যে প্লাস্টিক সার্জারী করে দাগ তুলে ফেলা কোন ব্যাপারই নয়।

তদুপরি ৫:৩৮ আয়াতে ‘কাতা’আ’ আর ১২:৩১ আয়াতে ‘কাত্তা’আ’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যদিও দুটো শব্দই আরবিতে একই শব্দের ভিন্ন রুপ এবং ‘কাত্তা’আ’ শব্দের মানে কোরানের অন্য আয়াতগুলোতে (৫:৩৩, ৭:১২৪, ২০:৭১ ও ২৬:৪৯) সম্পুর্ন কেটে ফেলা বলা হয়েছে। তাহলে আমরা কোন মানেটা নিব? হাত সম্পুর্ন কেটে ফেলা নাকি হাতে কেটে দাগ বা চিহ্ন দিয়ে দেয়া? উত্তর কোরানের আলোকে পরের পোস্টে দিব ইনশাল্লাহ।

Sunday, March 6, 2011

আমাদের এই মহাবিশ্ব কোথা থেকে এসেছে? (১)

বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের নাম শোনে নি , এমন বিজ্ঞানমনস্ক লোক আজকের বিশ্বে খুজে পাওয়া যাবে না। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে আইনস্টাইন ৩টি গবেষনাপত্র প্রকাশ করে সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। এই গবেষনাপত্রের মাধ্যমে তিনি পরমানূর (atom) অস্তিত্ব প্রমান করেন , আপেক্ষিক তত্ব (theory of relativity) সকলের সামনে উপস্থাপন করেন এবং কুয়ান্টাম বলবিদ্যার (quantum mechanics) বর্ণনা করেন।

২৬ বছর বয়সী এক বৈজ্ঞানিকের জন্য শুরুটা মন্দ ছিল না!

তার আপেক্ষিকতার সমীকরন , আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হচ্ছে , এমনটাই ইঙ্গিত করছিল। এটাকে তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। কারন তাহলে স্বীকার করে নিতে হয় , এই মহাবিশ্বের শুরু আছে এবং কেউ একে শুরু করেছিল। যেহেতু এটা তার মনঃপুত হয় নি , সেকারনে তিনি আপেক্ষিকতার সমীকরনের মধ্যে একটি 'গোঁজামিল ফ্যাক্টর' ('fudge factor') ঢুকিয়ে দিলেন। যাতে করে "এই মহাবিশ্বের শুরু বা শেষ নেই , এটা প্রসারিত বা সঙ্কুচিত হচ্ছে না" এটা নিশ্চিত করা যায়।

কিন্তু ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল্‌ দেখালেন , বিগ ব্যাঙের মডেলের ভবিষ্যদবাণী অনুযায়ী কীভাবে সবচেয়ে দুরের গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দুরে আরো দুরে সরে যাচ্ছে। ১৯৩১ সালে আইনস্টাইন বিগ ব্যাঙ থিওরীকে মেনে নিয়ে বল্লেন ," সৃষ্টির যত ব্যাখ্যা আমি শুনেছি , এটাই তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ও সন্তুষ্টিকর।" আর 'গোঁজামিল ফ্যাক্টর'কে তার কর্মময় জীবণের সবচেয়ে বড় ভুল বা ব্লান্ডার বলে স্বীকার করেছিলেন।

পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের পরীক্ষা ও মাপজোঁকে আইনস্টাইনের থিওরীগুলোর সত্যতা বারে বারে প্রমানিত হয়েছে। তবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্বের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ হলো , বিগ ব্যাঙের মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্বের শুরুই শুধু হয় নি , সময় এবং কারন ও ঘটনার (cause and effect) যোগসুত্রের শুরুটাও একি সাথে শুরু হয়েছিল।

হ্যা , এটাই ঠিক। মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে কোন সময় ছিল না। সময় রেখার শুরুই হয় বিগব্যাঙের সাথে। সময় ও স্পেস বা মহাশুন্যের বাইরে থেকে এক বুদ্ধিমত্তা কতৃক বস্তু , শক্তি , সময় ও মহাশুন্য সৃষ্টি হয়েছিল।

এই বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আইনস্টাইন তার "বিশ্বকে আমি যেভাবে দেখি /The World As I See It" বইয়ে লিখেছেন যে , প্রাকৃতিক আইনগুলোর সুসামন্জস্যতা এক উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বই প্রকাশ করে , যার তুলনায় সকল মানবের চিন্তা ও কাজ একেবারেই নগন্য।

তিনি আরো লিখেছেন , যারাই আন্তরিকতার সাথে বিজ্ঞান চর্চার সাথে জড়িত , তাদের কাছে মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাকৃতিক আইনের ভিতরে একটি আত্মা /spirit সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হবে - যে আত্মা মানুষের থেকে বহু গুনে উন্নততর এবং যার সামনে আমাদের সীমিত ক্ষমতা একেবারেই তুচ্ছ।

খুবি তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য , নয় কি?

একটি নুতন বিবর্তনবাদ - ভিন্ন চিন্তা (২)

(প্রচলিত ধারনা বা জানার বাইরে কোন বক্তব্য আসলেই মোল্লারা যেমন গালাগালি করে থাকে বা বলে থাকে কোরান হাদীস পড়ে আসুন , তেমনটি মুক্তমনাদের কাছ থেকে ও গালাগালি বা বিবর্তনের অমূক বইটি পড়ে আসুন , এমন ধরনের বক্তব্য আকাঙ্খিত নয়।)

নুতন বিবর্তনবাদ -
"পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জীবের ডিএনএ'তে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) নয় বরং পরিকল্পিত বদল বা প্রতিকল্পন ঘটে থাকে।"
(There is a mutation algorithm in DNA that makes *intelligent*
substitutions when species need to adapt to their environment.)

গত পোস্টে একটি উদাহরন দিয়েছিলাম যেখানে -
"The quick brown fox jumped over the lazy dog"
সফল বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছিল নিম্নের বাক্যে-
"The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man."

এই সফল বাক্যটি পাওয়া গিয়েছিল পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ্য ও ক্রিয়া বদলের মাধ্যমে , যা বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণ বদলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।

ডিএনএ'তে ও পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে , একই ভাবে ব্যাকরণের নিয়ম মেনেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কোন একটি নিওক্লেইক এসিডের পরিবর্তে পুরো একটি ডিএনএ অনুক্রমের (Transposon) পরিকল্পিত বদল ঘটে থাকে।

এটা নুতন কোন তথ্য ও নয় বা থিওরী ও নয়। এটাই ঘটনা ,ফ্যাক্ট।

এটা আসলে ৬০ বছরের ও বেশি পুরনো। যারা আগে শোনেন নি , তাদের কাছেই শুধু এটা নুতন ঘটনা।

জীববিজ্ঞানী বারবারা ম্যাকক্লিনটক ১৯৪৪ সালে এটা আবিস্কার করেন এবং এই আবিস্কারের জন্য ১৯৮৩ সালে নোবেল প্রাইজ পান। তার ছবি আমেরিকার ডাক টিকেটে ছাপা হয়েছে এবং তিনি ইতিহাসের এক অন্যতম জীববিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত।

তার এই আবিস্কার এতটাই র‌্যডিকেল ও ডারউইনের থিওরীর পরিপন্থী ছিল যে , বারবারা ম্যাকক্লিনটক তার এই আবিস্কার প্রচার না করে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তখনকার বৈজ্ঞানিক সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়েই তিনি এমনটি করেছিলেন।

কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন - জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না কেন?

ভাল প্রশ্ন।

শুধু এটুকুই বলা যায় - জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না , এর কারন এটা নয় যে এটার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় বা এমন ও নয় যে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে। আসলে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে না। এখনো এমন কোন সত্যিকারের গবেষনা বা পরীক্ষার কথা কেউ বল্তে পারবে না , যার মাধ্যমে দেখানো সম্ভব বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি বিবর্তনকে চালনা করে।(কারো এমন কোন গবেষনার কথা জানা থাকলে , জানালে উপকৃত হব।) দুঃখের সাথে বল্তে হয় , বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির থিওরী একটি শহুরে লৌকিক উপাখ্যান (যার সত্যতা নিরূপন দুরূহ) ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার কিছু তথ্য -

পরিকল্পিত বিবর্তন যে উপায়ে ঘটে , ঠিক সেই উপায়েই আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) সম্পুর্ণ নুতন জীবাণুর (যার সাথে আগে কখনো মোলাকাত হয় নি) সাথে যুদ্ধের অস্ত্র (এন্টিবডি) তৈরির জ্ঞান অর্জন করে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন সংযুক্তির (combination) মাধ্যমে চেষ্টা করে আক্রমনকারী জীবাণুর কোড ভাঙ্গতে। যখনই এই কোড ভাঙ্গা সম্ভব হয় , তখন পরবর্তি প্রজন্মের কোষে (daughter cells.) ডিএনএ'র নুতন পুনর্বিন্যাসের তথ্য সরবরাহ করা হয়।

আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি ক্ষুদ্রাকার প্রতিরূপ বা মডেল।

চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জেমস্‌ শাপিরোর একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ আবিস্কারের কথা উল্লেখ না করলেই নয় -
"প্রোটোজোয়া পরিবেশের চাপে পড়লে নিজের ডিএনএ'কে কেটে প্রায় ১লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো করে ফেলে। অতঃপর পরিবেশের শত শত পরিবর্তনীয়কে (variables) ধর্তব্যে এনে ডিএনএ'কে এমনভাবে পুনঃসংযোজন করে , যাতে একটি নুতন আরো ভাল ও সক্ষম প্রোটোজোয়ায় বিবর্তিত বা বিকশিত হয়।"

ভাল করে আর একবার পড়ে এর গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করুন। প্রটোজোয়া নিজের ডিএনএ'কে নিজেই রিপ্রোগ্রাম করে বিবর্তিত হয়। এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ও একি প্রকৃয়ায় ঘটে থাকে। আমাদেরকে ব্যাক্টেরিয়ার জনপুন্জে সুদুর ভবিষ্যত পর্যন্ত যত এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হবে , তার প্রত্যেকটির একটি/কয়েকটি করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থীতি আগে থেকেই বিদ্যমান , এমন উদ্ভট দাবীতে আর বিশ্বাস না রাখলেও চলবে।