Wednesday, June 22, 2011

শাফায়াত বা সুপারিশকারী

প্রায়  সব বাঙালি মুসলমান রোজ হাশরে রসুল মুহাম্মদের শাফায়াতের আশা করে একনিষ্ঠ ভাবে তার সুন্নত পালন করেন।

দেখুন কোরানে আল্লাহ শাফায়াত সম্পর্কে কি বলেছেন :

সুরা আল-যুমার(৩৯) আয়াত ৪৩-৪৪
"তারা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী গ্রহন করেছে? বলুন , এমনকি কোনকিছুর উপরে তাদের কোন ক্ষমতা না থাকলেও বা তাদের কোন বুদ্ধি জ্ঞান না থাকলেও ! বলুন , সকল সুপারিশের মালিক আল্লাহ , আসমান ও যমীনে তারি রাজত্ব। অতঃপর তারি কাছে তোমাদের ফিরতে হবে।"

সুরা সেজদাহ(৩২) আয়াত ৪
"আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল , ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ৬ দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে আসীন হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ওলী বা সুপারিশকারী নেই। এরপর ও কি তোমরা বুঝবে না?"

সুরা বাকারাহ(২) আয়াত ২৫৪
"হে ঈমানদারগণ ! আমি তোমাদের যা রিজিক্‌ দিয়েছি , তা থেকে ব্যায় কর সেদিন (রোজ হাশর) আসার পূর্বে, যেদিন চলবে না কোন দরাদরি বা থাকবেনা কোন সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই (অস্বীকারকারী) হলো প্রকৃত যালেম।"

কোরানে সুপারিশের উপর আরো অনেক আয়াত আছে। কিন্তু কোথাও বলা হয়নি মুহাম্মদ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রোজ হাশরে শাফায়াত বা সুপারিশ করবেন। এখানে ৪টি স্পষ্ট আয়াতের অনুবাদ দিলাম , কোন ব্যখ্যা ছাড়াই। মানা বা না মানার দায়িত্ব , যার যার নিজের।

শাফায়াত সম্পর্কে কোরানের কিছু আয়াত কি স্ববিরোধী? 

এই আলোচনায় যাওয়ার আগে স্মরনে রাখা দরকার:
"কোরানে আল্লাহ বলেছেন , কোরানে কোন অসঙ্গতি (contradiction) পাবে না। অন্য আরেক জায়গায় বলেছেন , কোরানে আছে স্পষ্ট আয়াত ও কিছু রূপক (মুশাবিহাত, যার ভিন্ন অর্থ হতে পারে , যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা) আয়াত। এই রূপক আয়াত ব্যবহার করে কাফেররা (কাফের অর্থ কোরান অস্বীকারকারী) আরো বিপথে যাবে। সুতরাং আমাদের উচিৎ হবে স্পষ্ট আয়াত অনুসরন করা।"

শাফায়াতের পক্ষে যে আয়াতটি প্রধানত উল্লেখ করা হয়, সেটা হলো সুরা বাকারাহ আঃ ২৫৫।
"কে আছে যে তার দরবারে সুপারিশ করতে পারে তার অনুমতি ছাড়া?"

এখন এই আয়াতটির মানে পুরাপুরি বুঝতে হলে, এর আগের আয়াত ২:২৫৪ পড়তে হবে।
“হে ঈমানদারগণ ! আমি তোমাদের যা রিজিক্‌ দিয়েছি , তা থেকে ব্যায় কর সেদিন (রোজ হাশর) আসার পূর্বে, যেদিন চলবে না কোন দরাদরি বা থাকবেনা কোন সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই (অস্বীকারকারী) হলো প্রকৃত যালেম।”

এখন ২টি আয়াত একসঙ্গে করলে দাড়ায়, আল্লাহ রোজ হাশরে কাউকে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন না বা দিলেও তা গ্রহনযোগ্য হবেনা। শাফায়াত যদি থেকেও থাকে , তবে তা আল্লাহ্‌র অনুমতিসাপেক্ষ।

 আরো কিছু আয়াতের উল্লেখ করা যায় , যা পড়ে আপাতদৃষ্টে মনে হয় সুপারিশ করা যাবে। কিন্তু ২৫৫ নং আয়াতের আলোকে পড়লে আর কোন সংশয় থাকার কথা নয়। লক্ষ করুন প্রত্যেকটি আয়াতে "লা" (না), "ইল্লা"(ব্যতীত) - Double negative ব্যাবহৃত হইয়াছে।

১০:৩ "তার অনুমতিক্রমে ব্যতীত কোন সুপারিশকারী নেই"

১৯:৮৭ "পরম করুনাময়ের নিকট থেকে যে কোন কড়ার লাভ করেছে, সে ব্যতীত কারোর সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।" (কড়ার কেউ আদৌ লাভ করেছে কিনা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।)

২০:১০৯ "সেই দিন কোন সুপারিশে কাজ হবেনা তার ব্যতীত যাকে পরম করুনাময় অনুমতি দিয়েছেন, আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন।"
২১:২৮ "তিনি জানেন যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে আর যা আছে তাদের পশ্চাতে।যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট আছেন তার জন্য ব্যতীত তারা সুপারিশ করেন না, আর তার ভয়ে তারা (সকল নবী রসূল , সুরার নাম আম্বিয়া) ভীত সন্ত্রস্থ।" (নবী রসূল রা সুপারিশ কি করবেন , তারা নিজেরাই নিজের জান বাচাতে ব্যস্ত।)
৩৪:২৩ "আর তার কাছে সুপারিশে কোন সুফল দেবে না, তার ক্ষেত্রে ব্যতীত যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছেন,"
৪০:৭,৮,৯ এই ৩ আয়াতে ফেরেশতারা মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন (সুপারিশ নয়) শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা ঈমান এনেছেন, তওবা করেছেন আর আল্লাহ্‌র পথ অনুসরন করেছেন।

৪৩:৮৬ " আর তাকে(আল্লাহ্‌কে) বাদ দিয়ে তারা যাদের ডাকে, তাদের কোন ক্ষমতা নেই সুপারিশ করার, তিনি ব্যতীত যিনি সত্যের সাথে সাক্ষ্য দেন ,আর তারা জানে।"(আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডেকে বা অন্য কারো উপরে নির্ভর করে লাভ নেই।)

আমরা কোরান থেকে জানতে পারি:
১) ইব্রাহিম আঃ তার নিজের পিতার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চেয়ে পাননি।৯:১১৪
২) নূহ আঃ নিজের পুত্রের জন্য সুপারিশ করে লাভ তো হয়নি, উল্টা তিরষ্কৃত হয়েছেন।১১:৪৬
৩) মুহাম্মদের  ক্ষমা প্রার্থনাতেও কোন কাজ হবে না।৯:৮০, ৪:১০৭,১০৯।

কোরানে যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, সুপারিশ নেই বা সুপারিশে কোন লাভ হবে না, সেখানে হাদীস কি বল্লো , তা কি বিচার্য? হাদীস থেকে শুধু এটুকুই উল্লেখ করতে চাই যে, মুহাম্মদ নিজের পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেবের মুক্তির কোন উপায় করতে পারেননি এবং নিজের মেয়ে ফাতেমা ও চাচিকে নিজের মৃত্যু শয্যায় উপদেশ দিয়েছিলেন আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে কারন তার নিজের কোন ক্ষমতা নেই।






No comments:

Post a Comment