Sunday, December 26, 2021

আল্লাহর সাথে মুসার কথোপকথন

 প্রচলিত বিশ্বাস হল মুসা সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন। যেমনটি আগের পোস্টে বলেছি কোরানে আল্লাহ সম্পর্কিত সবকিছুই রূপক , তেমনি আল্লাহর সাথে মুসার কথোপকথন ও রূপক। মুসা আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন এবং কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। দেখুন নিচের আয়াত-


৪২:৫১ 

‎وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ

কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়।


আল্লাহ অবশ্যই মুসার সাথে কথা বলেছিলেন, তবে সরাসরি নয়। আল্লাহ মুসার সাথে ওহীর মাধ্যমে কথা বলেছিলেন , যেমনটি অন্যান্য রাসুল ও সাধারন মানুষের সাথে (মুসার মা) বলে থাকেন। আল্লাহর সাথে মুসার কথোপকথন যে রূপক , তা বিশ্লেষন করার আগে চলুন কোরানের কিছু আয়াত দেখি যা পড়ে আমরা জানতে পারব আল্লাহ মুসার সাথে সরাসরি নাকি ওহীর মাধ্যমে কথা বলেছিলেন -


কোরানে ৩টি সূরায় (সূরা২০ ত্বোয়া-হা, সূরা২৭ নমল, সূরা২৮ আল কাসাস) আল্লাহর সাথে মুসার একই কথোপকথন নিয়ে বিশদ বর্ণনা আছে। আয়াতগুলো পড়লে মনে হবে আল্লাহ সরাসরি মুসার সাথে কথা বলছেন। 


২০:১১ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ

অতঃপর যখন তিনি ( আগুনের কাছে ) আসলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা

২০:১২ إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى

আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।

২০:১৪ إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।


২৭:৮ فَلَمَّا جَاءَهَا نُودِيَ أَن بُورِكَ مَن فِي النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَا وَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

অতঃপর যখন তিনি (আগুনের কাছে) আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।

২৭:৯ يَا مُوسَىٰ إِنَّهُ أَنَا اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


২৮:৩০ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِن شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَن يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

যখন সে তার (আগুনের) কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।


আল্লাহর সাথে মূসার কথোপকথন সরাসরি হলে ৩টি সূরাতেই "হে মূসা! আমি আল্লাহ" বলার পরের বাক্যগুলি (word) একই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখুন বাক্যগুলো এক নয়। এগুলো এক নয় কারন এ কথা ওহীর মাধ্যমে হয়েছিল। এবং আল্লাহ সূরা ত্বোয়া-হা তে "হে মূসা," এবং "আমিই আল্লাহ" বলার মাঝে ২০:১৩ আয়াতে বলে দিয়েছেন এটা ওহী , যা আমাদের আলেমদের চোখ এড়িয়ে গেছে। 


২০:১৩ وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ

এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে(يُوحَىٰ ওহী), তা শুনতে থাক।


অনেকেই আল্লাহ মুসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন তার প্রমান স্বরুপ ৪:১৬৪ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন।  ৪:১৬৪ আয়াতে, "কাল্লামা আল্লাহু মুসা তাকলিমান" প্রায়শই 'আল্লাহ সরাসরি মুসার সাথে কথা বলেছেন' হিসাবে অনুবাদ করা হয়, কিন্তু এটি ভুল অনুবাদ। 'কাল্লামা' ক্রিয়াপদ থেকে উদ্ভুত বিশেষ্য 'তাকলিমা' দ্বারা ঐ ক্রিয়ার উপর আরবীতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। কাল্লামা আল্লাহু মুসা তাকলিমান, মানে 'আল্লাহ মুসার সাথে ব্যাপকভাবে কথা বলেছেন'। বাংলায় যেমন বলা হয় - "কত কথা কইছে বা কি মার মারছে"। আরবি ব্যাকরণে ও প্রায়শই এমন তুলনা করা হয়, 'দারাবাহু দারবান', যার অর্থ 'তিনি তাকে কঠোর প্রহার করেছেন', 'তিনি তাকে সরাসরি মেরেছেন' নয়।


এটি আক্ষরিক কথোপকথন না হওয়ার আরেকটি কারণ হল, এটি অবশ্যই কুরআনের বাকি অংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।


এই একই আয়াতে (৪:১৬৪) ‘কাসা' ক্রিয়াপদটি সকল রাসূলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ 'বর্ণনা করা', । আপনি যদি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে,  আল্লাহ আক্ষরিক অর্থে মূসার সাথে কথা বলেছিলেন বলে মেনে নেন এবং আপনি যদি আপনার পদ্ধতিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে চান তবে আপনাকে এই 'কাসা' (এবং 20:19 এবং 20:36 এ ক্বালা) সকল নবী রাসূলের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। যদি আপনি এটি করেন, তাহলে মুসাই একমাত্র রাসূল যিনি সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন এই দাবী ধোঁপে টিকবে না। চলুন দেখা যাক ইব্রাহিমের সাথে আল্লাহর কথোপকথন- 


২:২৬০ আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন।

২০:১১ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
অতঃপর যখন তিনি ( আগুনের কাছে ) আসলেন, তখন আওয়াজ (নুদিয়া) আসল হে মূসা। 

20:11, 28:30 এবং 27:8 এ 'নাদা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ 'ডাকা' (নাম ধরিয়া বা উচ্চস্বরে)। একটি জায়গারও নামকরণ করা হয়েছে, যেখান থেকে এই ডাক এসেছে। এটাও রূপক। কারণ?

20:10 থেকে 20:14 আয়াতের মধ্যে এটা বোঝানো হয়েছে এই 'ডাকা' কি রূপ ছিল। যত্ন সহকারে পড়ুন:

২০:১০ إِذْ رَأَىٰ نَارًا فَقَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِقَبَسٍ أَوْ أَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى
তিনি যখন আগুন দেখলেন(রায়া), তখন পরিবারবর্গকে বললেনঃ তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি(আনাস্তু)। সম্ভবতঃ আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনে পৌছে পথের সন্ধান পাব।
২০:১১ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
অতঃপর যখন তিনি আসলেন, তখন আওয়াজ (নুদিয়া) আসল হে মূসা,
২০:১২ إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
২০:১৩ وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ
এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ (ওহী) করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক।
২০:১৪ إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।

অনুবাদের সময় ব্রাকেটে কিছু আরবি শব্দ রেখে দিয়েছি। এর তাৎপর্য আছে। আগুন দেখলেন(রায়া) , এই দেখাটা অন্তর্চক্ষু দিয়ে দেখা। রায়া মানে অন্তর্চক্ষু বা স্বপ্নে দেখা। সরাসরি চোখে দেখার জন্য কোরানে 'বাছারা /بصر ব্যবহৃত হয়েছে। 

আমি আগুন দেখেছি(আনাস্তু) - আনাস্তু মানে উপলব্ধি করা/টের পাওয়া। 

এই 'কথোপকথন' নিয়ে আরও অদ্ভুত কিছু ঘটেছে। এটি 'আগুন' থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং এটি একটি 'পবিত্র উপত্যকায়' ঘটেছে।

28:30-এ, এই 'আওয়াজ/ডাক' পুনরাবৃত্তি হয়, আরেকটি অদ্ভুত জায়গা থেকে:

২৮:৩০ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِن شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَن يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
যখন সে তার (আগুনের) কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।

পবিত্র বা বরকতময় স্পট, একটি অনুভূত আগুন (কিন্তু এটি কি আগুন ছিল?), আওয়াজ , ওহী , ... এ সমস্ত উপাদান একত্রে নিশ্চিত করে যে এটি রূপক।

{২০:১৪ আয়াতে মুসাকে আল্লাহর স্মরনার্থে নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে। এটা কোন নামায? আমরা যাকে নামায বলে জানি সেই নামায?}

৭:১১৭ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
তারপর আমরা মূসাকে ওহী করলাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে।

 এই আয়াতটির মতোই 26:63, 10:87 এবং 20:77-আয়াতগুলিতেও মূসার কাছে ওহী (অনুপ্রানীত) করা হয় যা সরাসরি আদেশ হিসাবে উচ্চারিত হয়।

৭:১৪৪ قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ
(পরওয়ারদেগার) বললেন, হে মূসা, আমি তোমাকে আমার বার্তা পাঠানোর এবং আমার বাণীর (কালাম/word) মাধ্যমে লোকদের (নাস) উপর বিশিষ্টতা দান করেছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে দান করলাম, গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ থাক।

এই আয়াতে মুসাকে আল্লাহ তাঁর বার্তা এবং বাণী দিয়ে তাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু মুহাম্মদ সহ অন্যান্য রাসূলদের কাছে পাঠানো আল্লাহর বাণী ও বার্তার সাথে মুসার কাছে পাঠানো বার্তা ও বাণীর কোন পার্থক্য নেই। 
৪১:৪৩ مَّا يُقَالُ لَكَ إِلَّا مَا قَدْ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِن قَبْلِكَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ وَذُو عِقَابٍ أَلِيمٍ
আপনাকে তো তাই বলা হয়, যা বলা হত পূর্ববর্তী রসূলগনকে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার কাছে রয়েছে ক্ষমা এবং রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৪২:১৩ شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ (ওহী) করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।

যদি একই বার্তা ও বাণী সকল রাসূলের উপরে ওহী করা হয়ে থাকে , তাহলে প্রশ্ন ওঠে আল্লাহ কার উপর মুসাকে বিশিষ্টতা দান করেছেন? প্রচলিত ধারনা হল অন্যান্য নবী রাসূলের উপরে আল্লাহ মুসাকে বিশিষ্টতা দান করেছেন। এই ধারনা বা প্রচারনা ভুল। সত্য হল সাধারন লোকের (নাস) উপরে মুসাকে বিশিষ্টতা দান করেছেন এবং এটাই পরিস্কারভাবে উপরে দেয়া ৭:১৪৪ আয়াতে বলা আছে। সকল নবী রাসূলই আল্লাহর বার্তা ও বাণীর জন্য সাধারন মানুষ থেকে বিশিষ্ট। ইসলামে আল্লাহর বার্তা ও বানীই গুরুত্বপূর্ন , নবী রাসুল নয়। আল্লাহর বার্তা ও বানীর বাইরে মুহাম্মাদকে বিশ্বাস করা হল এক প্রকার অবিশ্বাস, অর্থাৎ সেই অবিশ্বাসীদের যারা তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়েছে।



Monday, December 20, 2021

শয়তান -


কোরানের শুরু থেকে মানুষকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তার একটি হলো , মানুষ ছাড়াও আরো সত্বা বা শক্তি আছে যারা মানুষের মতোই বুদ্ধিমান, অনুভূতিসম্পন্ন ও স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী (?)।  এমনি একটি সত্বা , যাকে আমরা শয়তান বলে জানি, জেনে শুনে অহঙ্কার বশত আল্লাহর উপস্থিতীতে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছিল।  {সে বললঃ দেখুন তো, ইনিই সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত সময় দেন, তবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব।১৭:৬২}  


এটা পরিস্কার যে, আদমের বংশধরদের সমূলে বিনষ্ট করে দেয়ার শয়তানের এই শপথকে খাটো করে দেখা মানবসমাজের উচিৎ হবে না। {সে বলল, আপনার ইযযতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। ৩৩:৮২} 


শয়তান যে ফাকা বুলি আওড়ায়নি এবং সে যে তার শপথ পুরনে সক্ষম তার প্রমান আমরা পাই এই আয়াতদ্বয়ে।{আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়। অধিকাংশ মানুষ যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।১২:১০৩,১০৬}       


শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে কসম খেয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত আদমের বংশধরকে বিপথগামি করেই যাবে। শয়তানের চক্রান্ত থেকে বাচানোর লক্ষ্যে আল্লাহ মানব সমাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন নবি ও রসূলের মাধ্যমে  ঐশীগ্রন্থ পাঠিয়ে শয়তানের পরিচিতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন এবং হেদায়েত করেছেন।

 {আমরা বল্লাম, তোমরা সবাই  নেমে যাও এখান থেকে।  অতঃপর যখন তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত    পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না তাকে দুঃখ করা লাগবে। ২:৩৮, 

তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।২০:১২৩}

                                                                                                       

পার্থিব জীবণের শুরু থেকেই  মানুষকে আল্লাহর হেদায়েত প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে বা হেদায়েতকে অকার্যকর করার জন্য শয়তান উর্ধজগতের সাথে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ও আড়িপাতার চেষ্টা করেছে। 

{ নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয় ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।৩৭:৬-১০}


আল্লাহর বাণী যাতে অপরিবর্তিতভাবে মানুষের কাছে পৌছায় এবং শয়তান যাতে আঁড়ি পাত্তে না পারে , সেকারনে সবধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শয়তানের স্বীকারোক্তি পড়ুন। 

{আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন।৭২:৮-১০}


ভাবছেন শয়তান এরপরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। না, ওহি নাযিলে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করতে পারলেও , ওহি নাযিলের পরে রসূলদের হৃদয়ে ঢুকে আল্লাহর বানীকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহর হস্তক্ষেপে শয়তানের সে চেষ্টাও বিফলে গেছে।

 {আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।২২:৫২}


সুতরাং কোরানের আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌছান পর্যন্ত প্রথম দুই ধাপ আল্লাহ শয়তানের চক্রান্ত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাই শুধু করেন নি , এই বাণী কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন।

 {আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।১৫:৯}


মানুষের কাছে আল্লাহর হেদায়েত তথা অবিকৃত শয়তানের হস্তক্ষেপমুক্ত কোরান পৌছে গেছে। এই কোরান ভেজালমুক্ত। অতীতে ও কেউ এতে মিথ্যা ঢুকাতে পারেনি , ভবিষ্যতেও পারবেনা। {কোন মিথ্যা এতে ঢুকেনি , না অতীতে না ভবিষ্যতে। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। ৪১:৪২}


কোরানে ভেজাল মেশাতে ব্যার্থ  হয়ে শয়তান নুতন পরিকল্পনা আটে। সেটা হলো - মানুষ যেন কোরানের বাণী হৃদয়াঙ্গম করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে না পারে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমেই যে কাজটি করেছে তা হলো সাধারন মানুষকে বোঝানো যে আলেম ছাড়া কোরান বোঝা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়। কোরান বুঝতে বিশাল জ্ঞানের প্রয়োজন , কারন বোঝার জন্য হাদিস বিশারদ হতে হবে , বড় বড় আলেমদের তাফসির পড়া লাগবে ইত্যাদি। শয়তান এব্যাপারে সফল হয়েছে তা নির্দ্বীধায় বলা যায়। আজ কাপড়ে জড়িয়ে চুমু খেয়ে তাকের পরে তুলে রাখা ও না বুঝে অক্ষর প্রতি ১০ নেকির (কোরানে এই নেকির কথা বলা নেই) লোভে না বুঝে পড়া ছাড়া বাঙালি মুসলমানের জন্য কোরানের আর কোন মূল্য নেই। এদের সম্পর্কে কোরানে পূর্ববর্তি সম্প্রদায়ের উদাহরন দিয়ে সাবধান করা হয়েছে - {যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। ৬২:৫}


কোরানে বহু আয়াতে শয়তান কিভাবে মানুষকে বিপথগামী করে থাকে তার বর্ণনা দেয়া আছে , যাতে মানুষ সাবধান হতে পারে। মুহাম্মদের সময় এমনি এক পদ্ধতি ছিল কোরান তেলাওয়াতের সময় " লাঘু/ الْغَوْا"  করা, অর্থাৎ অবান্তর  কথা বলে হট্টগোল সৃষ্টি করা।{আর কাফেররা বলে, তোমরা এ কোরআন শ্রবণ করো না এবং এতে হট্টগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও। ৪১:২৬} আজকের জমানায় ও এই আয়াতের গুরুত্ব অনুধাবনে আসে যখন মানুষকে কোরানের দিকে আহবান করা হয় , তখন শুনতে হয় নামাজ কিভাবে পড়ব, দাঁড়ি কতটুকু লম্বা রাখব , পায়খানায় যেতে ডান পা নাকি বাম পা আগে রাখব , কুলুখ নিয়ে কয় কদম হাটা লাগবে সেটা কিভাবে জানব ? ইত্যাদি সব অবান্তর কথাবার্তা।


অখ্যাত এক মোল্লা শেখ বড়ই পেরেশানিতে আছেন। তিনি ভাবছেন আর ভাবছেন , কিন্তু কোন সমাধান পাচ্ছেন না। শয়তানতো সব ধর্মের লোককেই আল্লাহর রাস্তা থেকে ভুলিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে। বাকি রয়েছি কেবল আমরা মুসলমানরা। ৭ম শতাব্দির শুরুতে মুহম্মদের উপর কোরান নাযিলের পর থেকে শয়তান নিশ্চয় বসে নেই। তিনি ভাবছেন কি ভালই না হোত যদি আগেভাগেই শয়তানের চক্রান্ত জেনে নিতে পারতাম , তাহলে শয়তান যত চেষ্টাই করুক না কেন আমাকে আর ভুলাতে পারতনা।


শয়তানের চক্রান্ত ও তার কাজের ধারা , শয়তানের চেয়ে আর কে ভাল জানবে? কিন্তু সমস্যা হল শয়তানের দেখা কিভাবে পাবেন? শয়তান তো আর বোকা না , নিজে থেকে এসে তার পরিকল্পনা বাৎলে দেবে!! তখন ভাবলেন , আচ্ছা আমি যদি শয়তান হতাম তাহলে কি করতাম? যে ভাবা সেই কাজ....


আমি যদি শয়তান হতাম , তাহলে মানুষকে আল্লাহর রাস্তা থেকে বিপথে নেয়ার মিশনে অটল থাকতাম। মুহাম্মদ তো আর প্রথম নবী না , তার আগে যত নবী রসূল এসেছে এবং তাদের সকলের অনুসারীদের যেভাবে বিপথে নিয়েছি , সেভাবেই মুসলমানদের বিপথে নিব। এ আর এমনকি কঠিন। তাছাড়া সকল মানুষকে বিপথে নেয়াই আমার মিশন এবং এটা করার কথাই আমি আল্লাহকে গর্বভরে বলেছি। ইতিমধ্যে বিশ্বাসীদের উদ্বুদ্ধ করেছি যীশুকে শূলে চড়াতে।


মুহাম্মদ কোরান নামের একটা বই আবৃত্তি ও প্রচার করেছে মাত্র। যে বইয়ে মানুষকে সবর করতে , আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বানীর অনুসরন না করতে , নবী রসূলদের মাঝে পার্থক্য না করতে বলা হয়েছে। সুতরাং আমার প্রথম কাজ হবে মুসলমানদের এই কোরান থেকে দুরে সরিয়ে নেয়া বা তারা যেন কোরানকে আমলে না নেয় সে ব্যাবস্থা করা। এর জন্য আমার দরকার কোরানের পাশাপাশি অনেকগুলো বই।


সমস্যা নেই। প্রথমেই নবীর নিজস্ব কথা , তার চালচলন ও তার স্বভাব চরিত্র নিয়ে কিছু গুজব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিলাম। ইসলামি রাজত্বের প্রসার ও সময়ের সাথে সাথে এই সকল গুজব নিজেই ডালপালা ছড়িয়ে চারিদিকে বহুগুনে প্রসার লাভ করল। নবীর মৃত্যুর ৩০০ বছর পরে দুই ইডিয়ট ঐশী দায়িত্ব দাবী করে তখনকার দিনে প্রচলিত অগুনতি হাদিস থেকে সহীহ হাদিস খুজে বের করে বই লিখল। ঠগ বাছতে কম্বল উজাড় করার মতো করে ১০ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই বাছাই করে প্রায় ৭ হাজার হাদিস সংকলন করে একজন লিখলেন "সত্যি  ধোঁয়া" (সহীহ বুখারি , আরবি বুখার মানে ধোঁয়া)এবং আরেকজন প্রায় একিভাবে লিখলেন "সত্যি মুসলমান (সহীহ মুসলিম)। এদের দেখাদেখি আরো চার জন লিখলেন আরো চারটি সহীহ বই। এখন পবিত্র কোরানের পাশাপাশি মুসলমানরা আরো ৬টি পবিত্র গ্রন্থ পেয়ে গেল।  বইয়ের নামগুলো খুব চটকদার কিন্তু খুব মজার হলেও আমি নিশ্চিত এটা মুসলমানেরা গ্রহন করবে। এখন এই বইগুলোকে পবিত্র করার জন্য আমি শব্দ নিয়ে খেলব।


আমি রাসুল (আল্লাহর বাণীকে হুবহু ব্যবহার করে বার্তাবাহক) এবং নবী (তার নিজের শব্দ ব্যবহার করে তথ্যদাতা নবী) শব্দগুলিকে গুলিয়ে ফেলব। রাসুলকে অনুসরণ করার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার (যখন তিনি আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করেন) সাথে নবীকে অনুসরণ করা একটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতায় পরিণত করব। ফলে মানুষ ঐশী নির্দেশ ভেবে নবীর নামে প্রচলিত বানোয়াটভাবে সংকলিত "সত্যি ধোঁয়া" , "সত্যি মুসলমান" এবং অন্যান্য হাদিসের বইগুলি মেনে নেবে। 


আমি আমার বইগুলির নামকরনের জন্য  সুন্নাহ শব্দটিকে ব্যাবহার করব। কোরানে শুধুমাত্র আল্লাহর সুন্নাহর উল্লেখ থাকলেও নবীর সুন্নতের নামে আমি বলব যে এটি আসলে কোরানের একটি ধর্মীয় পরিপূরক।


এই হাদিসের বইগুলি থেকে, আমি এমন লোকদের উদ্বুদ্ধ করব যাদেরকে আমি পর্যাপ্ত মূর্খতা এবং বিকৃততার মানদণ্ড অনুসারে মতবাদ তৈরি করতে এবং মুসলমানদের বিভক্ত করার জন্য বেছে নিয়েছিলাম। আমি তখন কোরানে  কোরানের জন্য ব্যবহৃত শরিয়া শব্দটি হাইজ্যাক করে এই সব বানোয়াট মতবাদের অনুসারীদের দেব।


এখন দেখি আমার বইগুলোতে কি লিখব।


একটু বিশ্বাসযোগ্যতা রাখার জন্য, আমাকে সম্ভবত কিছু প্রামাণিক গল্প উদ্ধৃত করতে হবে। সর্বোপরি আমার বইগুলিকে পবিত্র গ্রন্থ করার জন্য আমাকে অবশ্যই নবী এবং তাঁর সাহাবীদের পবিত্র ঘোষনা করতে হবে। এখানে যারা আমার বই অনুসরণ করে তাদের জন্য একটু জান্নাতের নিশ্চয়তা এবং যারা এটি অনুসরণ করে না তাদের জন্য একটু নরকের ভয় রাখতে হবে। 


আমার বইগুলিতে আমি পেডোফিলিয়া, দুর্ব্যবহার, খুন, নির্যাতন ও একনায়কত্ব এবং এই সমস্ত কিছুকে আল্লাহর নামে উৎসাহিত করব। নবীর নামে আমি বলব কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম এবং আমি এমন সব ধরনের মূর্খ আচার অনুষ্ঠান রাখব যা জনগণকে আমার জম্বি বানিয়ে দেবে এই বলে যে এগুলো সরাসরি জান্নাতে নিয়ে যায়। সেইসব লোক যারা শুধুমাত্র কোরানকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং আমার সত্যি হাদিস বইগুলিকে মিথ্যা বলে , আমি তাদেরকে মুসলমানদের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করব যেন তারা নবীকে এবং আল্লাহকে অমান্য করতে চায় , ঘৃনা করে। আমি তাদের ধর্মত্যাগী ঘোষণা করব এবং আমি তাদের মৃত্যুদণ্ড দেব আল্লাহর নামে এবং যারা এদের হত্যা করবে তাদের আমি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেব।


সবচেয়ে মূর্খদের মধ্য থেকে আমি আমার মোল্লা , হুজুর , মাওলানাদের বেছে নেব। আমি তাদের সম্মান ও  অনুপ্রেরণার জন্য লম্বা দাড়ি এবং বিশেষ পোশাক পরাবো এবং তাদের অনুসরণকারীদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় যতটা সম্ভব উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করতে বলব। অবশ্য এরা নিজেদের আলেম তথা বিজ্ঞানী দাবী করলেও এরা কিছুই আবিষ্কার করে না। তারা প্রকৃত বিজ্ঞান এবং ভৌত ঘটনা এমনকি যেগুলোকে আল্লাহ কুরআনের আয়াত বলেছেন সে সম্পর্কেও  সম্পূর্ণভাবে অন্ধ। তারা ব্লা ব্লা বিজ্ঞানী / ওয়াজী হবে। তারা মাঝে মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য কিছু কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করবে এবং সেগুলিকে প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে নিয়ে আমার বইগুলিতে আমি যে অর্থ দিতাম সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করবে। আমার পণ্ডিতরা কোরানের পরিবর্তে একে অপরের উদ্ধৃতি , আমার হাদিস বই এবং আমার অনুপ্রাণিত যত বই আছে সেগুলো পড়ে সময় ব্যয় করবে।


আমার বই পড়ে, আমার পণ্ডিতরা মধ্যযুগীয় সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করে বৈপরিত্ব এবং মিথ্যার মোকাবিলা করতে শিখবে। আমি তাদের যে কর্তৃত্ব অর্পণ করেছি সেই চিন্তায় তাদের জিহ্বা দিয়ে  লালা ঝরবে এবং আমি তাদের বলব যে ইসলাম একজন মুসলিমের জীবনের সমস্ত দিককে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের নিয়মিত ভাবে এই পন্ডিতদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুসলমানদের জন্য জান্নাতের  লোভ দেখিয়ে   প্রতিটি গ্রামে , গঞ্জে , শহরের কোনায় কোনায় জাক জমকপূর্ণ আল্লাহর ঘর তথা মসজিদ তৈরি করে এগুলোর ভার আমার বিভিন্ন আড়ম্বরপূর্ণ টাইটেলধারী পন্ডিতদের উপরে দিয়ে তাদের আয় উপার্জনের ব্যাবস্থা করে দেব। 


আমি এই তত্ত্বকে উৎসাহিত করব যে আমার পণ্ডিত এবং তাদের নোংরামি ছাড়া কোরান বোঝা সম্ভব নয়। ৭ম শতাব্দীতে সাধারণ বেদুইনরা  কোরানকে বুঝলেও এখন আর কেউ বুঝতে চেষ্টা করবে না।


এই পর্যায়ে আমার আলেমগণ ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং অন্য সকল চিন্তার একচেটিয়া অধিকার নিয়ে নিবে। হ্যাঁ, আমি এমন মুসলমানদের তৈরি করব যারা আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে না, এমনকি কোরান যদি তাদের চিন্তা করতে ও বলে তবুও চিন্তা করবে না। তারা আমার বাজে কথা শুনবে  বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় জ্ঞান ভেবে এবং তারা কোরান শুনবে যেভাবে কেউ একটি গান শোনে তা বোঝার চেষ্টা না করেও। আমি কুৎসিত পোশাককে আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের প্রতীক করে তুলব এবং আমি এমন যে কোনও শিল্পকে নিষিদ্ধ করব যা আমাদের ব্রেনকে কাজে লাগাতে শেখাবে। 


আল্লাহর নামে, আমি অধার্মিক দেশগুলি থেকে আসা সমস্ত বিজ্ঞানের শিক্ষার পরিবর্তে  স্কুলগুলিতে আমার বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য আমন্ত্রণ জানাব। এমনকি বিষ্ঠার মধ্যেও, তারা মনে করবে তারা সত্য পেয়েছে। পরিচয়ের অনুভূতি নিয়ে খেলা করে, আমি মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তনকে আধুনিকতা এবং অগ্রগতির একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত করে তুলব। (আফগানিস্তান)


আমি মসজিদগুলোকে কলুষিত করব এবং তাদেরকে আমার বই ও আমার দলগুলোর অনুসরণ করার আহ্বান জানাব। যদিও কোরান বলে যে মসজিদে  কেবলমাত্র আল্লাহর  নাম ডাকা উচিৎ , তবে এটি কোনও সমস্যা নয়।


নির্বোধ, এমনকি গণতন্ত্রেও, তারা আমার একনায়কত্বের পক্ষে ভোট দেবে এবং আমার বিজ্ঞানীরা এতটাই মূর্খ হবে যে তারা আমাকে অনুসরণ করবে এই বিশ্বাস করে যে , তারা আল্লাহকে অনুসরণ করছে । তারা তাদের সাথে জনগণের একটি বড় অংশকে আমার ,  মহান শয়তানের উপাসনায় নিয়ে যাবে।


১৪:২২ যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম (অন্ধকারে আছে। আরবি জুলম মানে অন্ধকার)  তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।


Tuesday, December 14, 2021

কোরান পাঠকের চিন্তার স্বাধীনতা


(ঐতিহ্যগত সতর্কীকরণ: এখানে কোরান দ্বারা ইসলামি ধর্মদ্রোহিতার স্বরুপ উম্মোচন করা হয়েছে। যারা হুজুর , মোল্লা ও শেখদেরকে তাদের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে ইসলাম সম্পর্কে শিখেছে , তারা গভীর ও ভয়ানকভাবে মর্মাহত হবে। তাদের অবিলম্বে এই নিবন্ধটি না পড়ে প্রস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক, আপনি নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়তে পারবেন না।)

"কোরান আল্লাহর গ্রন্থ"  প্রমানের জন্য এই নিবন্ধ লেখা হয় নি। বরং যারা এটা বিশ্বাস করে তাদের নিয়েই সমস্যা। যারা এই বিবৃতিটিকে (কোরান আল্লাহর গ্রন্থ) একটি অনুমান (hypothesis) হিসাবে গ্রহণ করেন , তাদের উদ্দেশ্যেই এই লেখা। 

কোরান একটি চমৎকার বই। আমরা যখন এটি পড়ি এবং এর মধ্যে  গভীর মনোনিবেশ করি, তখন একটি ব্যতিক্রমী যৌক্তিক বুঝ আমাদের মনে ধরা দেয়। আয়াতের  আন্তঃসম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে যারা অন্য বইয়ের মতো সাধারন পাঠে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখে , তারা বুঝের উচ্চ স্তরগুলিকে শোচনীয়ভাবে মিস করে। এই উচ্চ স্তরগুলি তাদের কাছেই ধরা দেয় ,  যারা তাদের মন এবং হৃদয়ে কোরান ধারন করে এবং তাদের নিজস্ব উপলব্ধি বের করার জন্য আয়াতের  ক্রস-রেফারেন্স (তারতিল) করতে সক্ষম হয়।

আমরা প্রথমে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব সমগ্র কোরানের  অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতকে:

৩:৭ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এতে বিশ্বাস করি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।

এই আয়াতটি একটি ভাল উদাহরণ যার মানে যুক্তির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। মুসলমানরা তাদের আল্লাহর আয়াতকে হালকাভাবে গ্রহণ করে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত হুজুর ও মোল্লাদের  হাতে তাদের ব্যাখ্যা অর্পণ করে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধ করে।

এই আয়াতটি বেশ কিছু বিষয়কে নিশ্চিত করে।

প্রথমত, কোরান তার পাঠককে প্রত্যয়িত করে যে তিনি প্রথম পাঠ থেকে বার্তাটির সারাংশ বুঝতে সক্ষম।

তারপর, কোরান বলে যে কিছু আয়াতের একাধিক ব্যাখ্যা /মানে (রুপক) আছে এবং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে তারা এই বহুবিধ অর্থের মধ্যে সম্পূর্ণ পচাটি দিয়ে ফিৎনা ছড়াবে।

অবশেষে আয়াতটি আদেশ দেয় যে শুধুমাত্র আল্লাহই একাধিক অর্থের আয়াতের প্রকৃত অর্থ জানেন এবং যারা সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এই "অনিশ্চয়তা" কে প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসাবে গ্রহণ করবে না। তারা অন্তত একটি ব্যাখ্যার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করবে না যা আপাত দ্বন্দ্ব দূর করে। "জ্ঞান সম্পন্ন " লোকেরা সবই মেনে নেবে কারণ তারা যা বুঝেছে তাই তাদের জন্য প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।

এটি পড়ার প্রথম স্তর। 

আপনি যখন গভীরভাবে চিন্তা করতে এবং নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন তখন জিনিসগুলি জটিল হয়ে যায়।

কেন আল্লাহ তার কোরানে এমন আয়াত রাখবেন যা বোঝা যায় না?

কেন তিনি তার পাঠকদের জন্য এটিকে সহজ করার জন্য সমস্যাযুক্ত আয়াতগুলি চিহ্নিত করেন না বা একটি সূরা 'অস্পষ্ট' রাখেন নি?

সমস্ত "মস্তিষ্কের" জন্য "সমস্যা" আয়াত কি একই?

যারা কুরআনকে পুরোপুরি আয়ত্ত করতে চায় এবং যারা মতভেদ চায় তাদের কেন তিনি একত্রিত করেন? এটা বোঝা প্রায় অসাধ্য। 

কেন তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তিনি নিজে ছাড়া কেউ সবকিছু বুঝতে পারবে না?

আয়াতটি কেন রসূল মুহাম্মাদকে তাদের থেকে বাদ দেয় যারা কোরানকে  সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারে (আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সঠিক ব্যাখ্যা জানে না  , এটি সংকীর্ণ মনের জন্যও স্পষ্ট এবং অবিসংবাদিত)?

মুহাম্মদ কিভাবে তার প্রিয়জনদের ধর্মীয় জ্ঞান শেখাতে পারেন যদি তিনি যে বার্তাটি দিচ্ছেন তার সঠিক ধারণা তার না থাকে? ফেরেশতারা কি সঠিক ব্যাখ্যা জানে?

আমরা তখনই প্রতিফলনের এই স্তরে পৌঁছাতে পারি এবং নিজেদেরকে এই ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি যখন আমরা এই দৃঢ় বিশ্বাসে পৌঁছাতে পারি যে এই বইটির লেখক হলেন সর্বোচ্চ রব (শিক্ষক) এবং তাঁর ছাত্রদের জন্য একটি শিক্ষা রয়েছে যা সময় এবং বাহককে অতিক্রম করে।

আপনি মনে করেন আপনি বুঝতে পেরেছেন , এমন যেকোন আয়াতের জন্য ৩:৭ আয়াতটি একটি যৌক্তিক ড্যামোক্লের তলোয়ার। (আপনি যদি বলেন যে কারো মাথায় ড্যামোক্লের তলোয়ার ঝুলছে, তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে তারা এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছে যেখানে যে কোনো সময় তাদের সাথে খুব খারাপ কিছু ঘটতে পারে।) অর্থাৎ আপনার বুঝ ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা বিদ্যমান। 

আয়াত ৩:৭ প্রতিফলন এবং চিন্তার স্বাধীনতার জন্য একটি স্থায়ী আহ্বান। যে কোন আয়াত প্রশ্নবিদ্ধ। আল্লাহর অবিসংবাদিত সত্য তার জানা আছে বলে কেউ দাবি করতে পারে না। আল্লাহই ইসলামের একমাত্র রব (শিক্ষক)। তিনি ছাড়া অন্য কেউ নিজেকে রব বলে দাবি করতে পারে না, কারন আয়াতের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন। 

আয়াত ৩:৭ , এর পাঠককে ব্যাখ্যা করে যে তিনি নিজে যা বুঝেছেন তার উপর মহান রব তার বিচার করবেন এবং মোল্লা , হুজুর , শেখদের কাছ থেকে পাওয়া বুঝ ও ব্যখ্যার দোহাই কোন কাজে আসবে না। 

এটাই কোরান! মানুষ এবং তাদের কল্পনার জন্য ভিন্ন অর্থ ও জ্ঞানের একটি মহাসাগর। এমন একটি বই যা পাঠ করে প্রতিটি আত্মা তারই জন্য নির্দিষ্ট জ্ঞান লাভে সক্ষম।

এটি কোরানের লেখকের রচনাশৈলী (তারতিল):

79-24: আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব (শেখ/পণ্ডিত)" ফিরাউনের দ্বারা উচ্চারিত একটি আয়াত। ফিরাউন এক উদ্ধত স্থানীয় ক্ষমতাবান , যে তার লোকেদের মধ্যে বিভেদ বপন করেছিল তাদের বিভক্ত করে (28-4)। আয়াত 40-28 প্রমাণ করে যে ফিরাউন ছিলেন একজন পুরোহিত/শেখ এবং ফেরাউনের লোকদের ঈশ্বর ছিলেন আল্লাহ। এটি আরও দেখায় যে এমনকি ফিরাউনের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যেও "ঈশ্বরের" লোক ছিল যারা স্বৈরাচারের অধীনে মানুষের ভালোর জন্য কাজ করেছিল। 66-11 আয়াতে আল্লাহ নিজেই ফিরাউনের স্ত্রীকে ভালো উদাহরণ হিসাবে দেখিয়েছেন যে, যারা ফেরআউনের সাথে ঘনিষ্ঠ তাদের যেমন তিরস্কার করা উচিত নয় , তেমনি 66-10 আয়াতে দেখান যে নবীপত্নী হলেও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আল্লাহর শাস্তির কবল থেকে  নবীরা তাদের রক্ষা করতে পারেনি। যারা অতীতের ফেরাউনের কারনে ভুগেছেন, যারা আজকের ফেরাউনের কারনে ভুগছেন এবং যারা নিজেদেরকে একজন জ্ঞানী বলে দাবি করেন ও তাদের সাথে যারা সান্ত্বনা পান , এদের  সকলের চিন্তা ও ধ্যান করার জন্য কোরান একটি দুর্দান্ত পাঠ্য বই।

ইসলামে নিজেকে একজন ধর্মীয় গুরু বা শিক্ষক হিসেবে ঘোষণা করা ফিরাউনের কুফরির সমতুল্যই শুধু নয় , এটি কোরান গভীর ভাবে না বোঝার লক্ষণও বটে। এমনকি যদি হুজুররা , মোল্লারা , শেখরা আন্তরিক হন এবং সুসংগত কথা বলেন, তবুও তাদের মূর্খ ঘোষণা করা উচিত কারণ তারা যা শেখানোর দাবি করে তা শেখাতে অক্ষম।

সম্ভাব্য এবং কল্পিত সমস্ত ধর্মদ্রোহিতার মধ্যে নিজেকে আল্লাহর দ্বীনের শিক্ষাদানকারী  ঘোষণা করা সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ!

কোরান সর্বাবস্থায় সন্দেহ করতে শেখায়। শয়তান হল একটি ছোট্ট কণ্ঠ যা আমাদের মনে ক্রমাগত ফিসফিস করে (সূরা 114)। এর লক্ষ্য হল আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং সেই সাথে সত্য থেকে। শয়তান গপ্প দ্বারা আল্লাহর বাণীকে (বুখারি অর্থে) ধূপধূনায় ধূপিত করে এবং যারা দাঁড়ি , টুপি ও  পোশাকের মধ্যে আল্লাহর জ্ঞানকে চিনতে পারে , তাদেরকে বিভ্রান্ত করে।  শয়তানের মিশন হল আল্লাহ/সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয়া। 

সত্য বনাম মিথ্যা। কোরান কখনোই ইসলামকে মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর সংগ্রাম হিসেবে উপস্থাপন করেনি। এটি গগ এবং মাগোগদের মধ্যে একটি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস। শয়তানের উদ্দেশ্য হল সত্যকে বিভ্রান্ত করা এবং ঘটনাক্রমে, মিথ্যার নামে ভাল কাজ হলে, সে তা প্রচারের জন্য ব্যবহার করে। তার মিথ্যা প্রচারের জন্য সাময়িকভাবে দরিদ্রদের খাওয়ানোর প্রয়োজন হলে, শয়তান দান খয়রাত প্রচার করতে দ্বিধা করবে না। কোরান নাস্তিক এবং মূর্তিপূজারীরা ভাল কাজ করতে পারে তা স্বীকার করার সাথে , এটাও নির্দিষ্ট করে যে তাদের ভাল কাজগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না (উদাহরণস্বরূপ 3-22 এবং 6-88)। মিথ্যার নামে ভাল কাজ মিথ্যাকে শক্তিশালী করে এবং সর্বদাই শেষ পর্যন্ত মন্দের জন্ম দেয়। রাজনীতিবিদরা এটি ভাল করেই জানেন এবং কোরান বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে দাতব্য গ্রহণ করতে নিষেধ করে (ওহিলা লি গাইর আল্লাহ: 5-3, 6-145 ,16-115)। কোরান বিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বাসকে অন্যের আস্থা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করতে বলে (16-92; 16-94) এবং বড়াইপূর্ণ/ভানপূর্ণ দাতব্যের (2-264,4-38) নিন্দা করে।

আস্তিক যখন কোরান পড়ে, তখন তাকে শয়তানের মুখোমুখি হতে হয় অর্থাৎ কে জানে কোথা থেকে পাওয়া কোরানের ব্যাখ্যা দাবিদার এই সব গপ্প , গুজব , চুটকি এবং উপাখ্যানের এই নোংরা "সংস্কৃতি" সামনে চলে আসে। কোরান বুঝার জন্য এই মিথ্যার পাহাড়ের উপর নির্ভর করা শয়তানকে রব হিসাবে ভুল করার শামিল। এটা আজকের মুসলমানদের ইসলাম , যারা  জাক্কুম গাছকে গান্ডেপিন্ডে গিলে খেয়েছে। শয়তান বাস্তবিক কারণে প্রতীকী সত্তা হলেও ধর্মীয় পণ্ডিত, দার্শনিক, বিশ্বাসী এবং চিন্তাবিদদের দ্বারা নির্মিত ইসলামি সংস্কৃতির মিথ্যার ম্যাগমা (জলন্ত গলিত লাভা)। 

হিকমা (জ্ঞান) শব্দটি কোরানে বহুবার উল্লিখিত হয়েছে যেমনটি নবী ও রসূলদের দ্বারা শেখানো হয়েছে। শয়তান এই শব্দটিকে একটি বিপরীত অর্থের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে তার হাদীসের বইগুলিকে অন্ধ বিশ্বাসের জন্য। প্রজ্ঞা হল এমন একজনের মনের অবস্থা যে জটিল বাস্তবতা এবং একাধিক অর্থ বুঝতে শেখে। মোল্লা/ঋষিরা পণ্ডিত/স্কলার নন। জ্ঞানী ব্যক্তিই কেবল চিন্তা করতে এবং অনুধাবন করতে জানে। তিনি জানেন কিভাবে দাঁড়ি টুপি পোষাকে ঢাকা চেহারা কাটিয়ে উঠতে হয় এবং যখন তিনি শেখের পোশাক পরেন তখনও নির্বুদ্ধিতার সাথে শয়তানকে অনুসরণ করেন না।

"তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? ৪৭:২৪"

"এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।৩৮:২৯"

মুহাম্মদ আল্লাহর আয়াত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে শিখিয়েছিলেন , কারণ বিখ্যাত আয়াত 3-7 ইঙ্গিত করে যে মুহাম্মদ নিশ্চিততার সাথে আয়াতের অর্থ জানতেন না। এই চিন্তা-কেন্দ্রিক জ্ঞানই শয়তান দমন করেছে ইসলাম থেকে। আজকের ধার্মিক মুসলমান  এক চিন্তাহীন এবং প্রজ্ঞাহীন মানুষের নমুনা। যে পূর্ববর্তীদের তাফসিরের বাইরে নিজের জন্য নুতন করে চিন্তা ভাবনা করা নিষিদ্ধ করেছে এবং সেই শয়তানের জম্বি/ ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে উঠেছে , যে শয়তান হিকমার /প্রজ্ঞার নামে তার মাথার মধ্যে গোবর ঢুকিয়েছে। 

শয়তানের নিকট থেকে  যে কোরানের ব্যাখ্যা গ্রহন করেছে , সে কিছুই বোঝে না। শুধু তাই নয় বরং সে দ্রুতই মূর্খ  ও মূর্খ আচার-অনুষ্ঠানে তৈরি ধর্মে নিজেকে আবিস্কার করে। সে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে সামনের মাটিতে আধ্যাত্মিকতা খুঁজে পায় এবং বিশ্বাস করে যে পৃথিবী নামক একটি বৃহৎ গোলাকার বলের উপর থাকাকালীন সুদুর মক্কার একটি বড় কিউবের / কাবার দিকে লক্ষ্য রাখতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, দীর্ঘ দূরত্বে মেঘের মধ্যে তার লক্ষ্য হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার লক্ষ্য সরাসরি সামনে দাড়ানো নামাজির নিতম্বের কাছাকাছি পরিসরে প্রবেশ করে।  মহাবিশ্বের প্রভুর কথা জানিনা , তার সামান্য এই কৌতুকে অনেকেই হাসতে হাসতে লাল হয়ে যাচ্ছে।

অনেকে আছেন যারা  সালাত , সওম ও হজের অনুশীলন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চালু রাখেন। কিন্তু আল্লাহকে বোকা বানানো সহজ নয়। দুর্ভাগ্যবশত  যখন তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি হারাতে শুরু করে তখন তারা জ্ঞানের পথ আবিষ্কার করবে না। তারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে যারা চিন্তা করে না বা চিন্তা করেনি। তাদের মন জাক্কুম গাছ থেকে পরিপূর্ণভাবে পুষ্ট হবে। সবচেয়ে "ধার্মিক" ব্যক্তিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাতনী মক্কাতে (ভয়াবহ যুদ্ধের ময়দানের উদরে 48-24) নিজেদের নিক্ষেপ করার জন্য ইয়াথরিবের(33-13) মধ্য দিয়ে যাবে। তারা জান্নাতে প্রবেশের জন্য শয়তান কতৃক অমূলক হিসাবে উপস্থাপন করা ছোট রেসিপিগুলির প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠে। (হুজুরদের বর্ণীত বিভিন্ন আমল , দোয়ার রেসিপি , যেগুলো দিনে কয়েকবার করলে বা পড়লে জান্নাত নিশ্চিত)। তার ব্রেনের নিউরনগুলিকে কাজ করাতে অক্ষম অতি-ধার্মিক গগ (গগ = মিথ্যা মুক্তা) তার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়ে দেবে শয়তানকে হাসাতে  হাসাতে  তার আঙ্গুলের মধ্যে মিথ্যা মুক্তো গুনে এই বিশ্বাসে যে সে আল্লাহর পথে সাঁতার কাটছে (তাসবিহ-ইউসাব্বিহু ,আরবি সাবাহা মানে সাঁতার কাটা)। 

শয়তানের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত হয়ে, সে নিজেকে জান্নাতের দরজার সামনে আছে বলে বিশ্বাস করে জাহান্নামের দরজার সামনে উপস্থিত হবে এবং তার একমাত্র আশ্রয় হবে আল্লাহর ক্ষমা।

“৬:২১-তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে বা তার আয়াতকে মিথ্যা বলে? জালেমরা সফল হবে না। 

৬:২২-এবং যেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্র করব, তখন যারা শিরক করবে তাদের বলব: তাহলে তোমাদের শরীকরা কোথায় আছে যাদেরকে তোমরা দাবি করেছিলে?

৬:২৩- অতঃপর তাদের জন্য একমাত্র অজুহাত অবশিষ্ট থাকে এই বলে: "আমাদের প্রভু আল্লাহর শপথ!" আমরা কখনই সহযোগী ছিলাম না”।

৬:২৪- দেখ কিভাবে তারা নিজেদের মিথ্যা কথা বলে! আর তারা যা উদ্ভাবন করেছে তা কিভাবে পরিত্যক্ত হয়!

৬:২৫ তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আপনার কথা শুনতে আসে, অথচ আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দিয়েছি যাতে একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা ভরে দিয়েছি। যদি তারা সব আয়াত/ নিদর্শন অবলোকন করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে না। আর যখন তারা তোমার সাথে তর্ক করতে আসে, তখন যারা প্রত্যাখ্যান করে, তারা বলে, এগুলো তো পূর্ববর্তীদের কিংবদন্তী মাত্র। “


(দ্বৈত অর্থে সক্ষম পাঠকদের জন্য, অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে দুটি ধরণের প্রত্যাখ্যান রয়েছে, নাস্তিকদের দ্বারা পাঠ্য এবং মূর্তিপূজারীদের দ্বারা অর্থ। উভয়ে একত্রিত হয়ে বলে যে এগুলো পুরানো গল্প)


কোরানের আবির্ভাব মানুষের প্রকৃতিতে কোনই পরিবর্তন করেনি। আল্লাহর ইচ্ছায় শয়তান তার মূর্খ আচারগুলি পুনরায় চালু করেছিল। আল্লাহর পথকে আবার ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল , অর্থাৎ মূর্খ আচার-অনুষ্ঠানের মাঝেই মানুষের আধ্যাত্মিকতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল। 

ইসলাম কোন ধর্ম নয়। এটি একটি প্রজ্ঞা এবং একটি পথ যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কালাম এবং একজন মহান শিক্ষকের শিক্ষার উপর কেন্দ্রীভূত। ইসলাম জ্ঞানের প্রতি জ্ঞানীর এবং চিন্তার প্রতি মুক্তচিন্তকের ঋণ (দ্বীন)। (دين দ্বীন মানে ঋন।)

https://translate.google.com/?sl=bn&tl=ar&text=ঋন&op=translate 

যে কোরান পড়ে তার উপরে আল্লাহর জ্ঞান (ওহী) যখন নাযিল হয় , সেই ওহী সে চিনবে কিনা তা তারই উপর নির্ভর করে।

সালাত হল তার কথার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি কাজ। এই সংযোগের সময়  আয়াত ও ব্রেনের আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে প্রতিটি বিশ্বাসী যার যার মতো আল্লাহর চিত্র নিজস্ব কল্পনায় আনে এবং কোরানের শিক্ষা অন্তরে ধারন করে। বস্তুজগতের সত্যটি যেমন আমাদের প্রত্যেকের দ্বারা আলাদাভাবে উপলব্ধি করা হয় দুটি ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে যা আমাদের চোখ হিসাবে কাজ করে, তেমনিভাবে আল্লাহর সত্যটি তার নিজের আত্মার মাধ্যমে সংযুক্ত প্রত্যেকের সাথে আলাদাভাবে প্রকাশিত হবে। শুধুমাত্র আল্লাহর শিষ্যরা রয়েছে তার জ্ঞানের পরিবেষ্টন ছাড়াই। যারা আল্লাহর সাথে যুক্ত , তারা বাস্তব জগতের দাড়ি এবং পাগড়ি দিয়ে দুষ্ট সেই ভাইরাসকে চিনতে শিখে , যারা জান্নাতে যাওয়ার জন্য মিথ্যা রাস্তা দেখায়। 

যাকাত (শুদ্ধিকরন) আদায়ের জন্য সালাত ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ শয়তানের হয়ে কাজ করা সমস্ত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি দূর করার মাধ্যমে আত্মার শুদ্ধিকরণ করে সালাত। 


কোরান পড়ার (তিলাওয়াত) সাথে আল্লাহর জ্ঞান (ওহী) অবতরন (নুযুল) করে। 

যতদিন কোরান তিলাওয়াত করা হবে ততদিন ওহী নাজিল হতে থাকবে এবং

এই অবিরাম নাজিল কুরআন ক্রমাগত নতুন অর্থ নিয়ে আসে সেই হৃদয়ের জন্য , যে 

হৃদয় এটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। 


যারা কোরান পড়েন তারা বোঝেন নবী রসূলগণ সুপারম্যান নন। আল্লাহর রসূলগণ একথা বলেনঃ

১৪:১১ তাদের রসূলগণ তাদেরকে বললেন, “নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের মতই মানুষ। কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত  তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়। আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।

আম্বিয়ারা (নবীরা) এমন মানুষ যারা খুব বড় ভুল করতে সক্ষম। আম্বিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভুলের অলরাউন্ড চ্যাম্পিয়ন সম্ভবত আমাদের প্রিয় ইব্রাহিম। এখানে তিনিই, যিনি একটি সাধারণ স্বপ্ন অনুসরণ করে, তার নিজের ছেলেকে জবাই করতে যান।


যদি কেউ আজকাল একটি স্বপ্ন অনুসরণ করে তার একটি সন্তানকে জবাই করার উদ্যোগ নেয় , তবে হয় তাকে অবিলম্বে বন্দী করা হবে নতুবা হেমায়েতপুরে পাগলা গারদে পাঠানো হবে। 






Monday, October 4, 2021

আল্লাহ সবকিছু চালাচ্ছেন

 শুধু কুরআনে বিশ্বাসী সহ সকল মুসলমানরা মনে করে যে, যা কিছু ভাল সব আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং যা কিছু খারাপ সব নিজের থেকে । দয়া করে 4:78 আয়াত নিয়ে চিন্তা করুন। কারা এইসব লোক যারা এই কথা বলে? এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে রসুলকে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন “সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে”। এবং মানুষকে এটা বুঝতে বলছেন। 


4:78

আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করবে, যদিও আপনি উঁচু টাওয়ারে আছেন, এবং যদি তাদের কোন উপকার আসে, তারা বলে: এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে; আর যদি তাদের কোন দুর্ভাগ্য ঘটে, তারা বলে: এটা তোমার পক্ষ থেকে। বলুন, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে, কিন্তু তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।

(সব ভাল আল্লাহর পক্ষ থেকে , সব মন্দ নিজের থেকে । ভাল মন্দ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে)।


নিজের শরীরের উপরে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা আমাদের হার্ট রেট, শ্বাস, ক্ষুধা, ঘুম ইত্যাদি কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা জানি না যে পরবর্তী মুহুর্তে আমি কি ভাবব বা কি নিয়ে ব্যস্ত থাকব বা কি করব। যদি কেউ মনে করে বা বিশ্বাস করে যে সে নিজের নিজের ইচ্ছায় তার নিয়তি পরিবর্তন করতে পারে এবং বিশ্বাস করে যে আল্লাহর শক্তি ব্যতীত তার নিজস্ব শক্তি আছে তবে এটা শির্ক। 


আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে আমাদের কোন ইচ্ছাই নেই। 


৭৬:৩০ আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

৮১:২৯ তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।


আমাদের কোন পছন্দ/choice নেই। 


২৮:৬৮ আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন পছন্দ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।


কাউকে এমনকি নিজেকেও আল্লাহর রাস্তায় আনার ক্ষমতা আমাদের নেই। আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন। 


২৮:৫৬ আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।

৩২:১৩ আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দিতাম; কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য যে, আমি জিন ও মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।

৬:১১২ এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না। (লক্ষ্য করুন-আল্লাহ চাইলে শয়তানকে বিপথে নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারতেন)

৪:৮৮ অতঃপর তোমাদের কি হল যে, মুনাফিকদের সম্পর্কে তোমরা দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের কারনে! তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না।

১৪:৪ আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।


এমন অনেক আয়াত আছে। শেষ করব নিম্নের  আয়াত দিয়ে..

৬:৩৯ যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে / মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারের মধ্যে মূক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।



গত দুই পোস্টে পরিস্কার আয়াত দেয়ার পরেও অনেকেই মানতে পারছেন  না যে আমাদের সকল কর্মই আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করেন , আমাদের নিজস্ব কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই। এমনকি আমরা যে হাসি ও কাঁদি , সেটাও আল্লাহই করান। 


৫৩:৪৩ এবং তিনিই হাসান ও কাঁদান। 


আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন , সৎ কাজ করবেন ? পারবেন না , যদি না আল্লাহ সামর্থ দেন। এগুলো করার আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করা লাগবে , যেমনটি সুলায়মান নবী করেছিলেন। 


২৭:১৯ তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।


আল্লাহ কাউকে শাস্তি দেন বা লাঞ্চিত  করেন আমাদের কারো না কারো হাত দিয়েই। জয়ী ও করেন তিনিই। 


৯:১৪ যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।


১৭:১৬ যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।


৫৯:৫ তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন।


২:১০২ ...... তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। ....


সম্মান ,অপমান , রিজিক , সম্পদ  , কল্যান সবই আল্লাহ দান করেন। 


৩:২৬ বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।


৪২:১২ আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং কমিয়ে দেন। তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী।


এমনকি নিজের ভাল মন্দ করার ক্ষমতা ও কারো নেই । 


১০:৪৯ তুমি বল, আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই একেকটি ওয়াদা রয়েছে, যখন তাদের সে ওয়াদা এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে,।


৭:১৮৮ আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।


৩৩:১৭ বলুন! কে তোমাদেরকে আল্লাহ থেকে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তোমাদের প্রতি অনুকম্পার ইচ্ছা? তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না।


অনেকের মতোই আমার ও মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল সব কিছুই যদি আল্লাহর ইচ্ছায় হয় এবং মানুষের যদি নিজের কোন ইচ্ছা না থাকে , তাহলে যে পাপ করে তার কি দোষ? তার কেন বিচার হবে? এ কেমন বিচার? মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি নিম্নলিখিত কারনে...


 ১)আল্লাহ আমার অনুমতি ব্যাতীত কেন আমাকে সৃষ্টি করেছেন বা তার সকল সৃষ্টির উদ্দেশ্য  বা কি তাই তো জানি না। আমার অনুমতি ছাড়া আমার সৃষ্টি যদি মেনে নিতে পারি , তাহলে আমাকে পরীক্ষার গিনিপিগ বানালেন নাকি রাজাধিরাজ সম্রাট বানালেন তাতে আমার আপত্তি থাকবে কেন? আপত্তি থাকলেও লাভ কি? আমি তো সৃষ্টি হয়েই গেছি। কোরানের অনেক আয়াতে বলা হয়েছে  আমাদের জন্মের আগে আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে  অনেক ওয়াদা করিয়েছেন বা নিয়েছেন। সেগুলোর কিছু কি আমাদের মনে আছে?


২)আল্লাহ তো সুবিচারক , তাহলে এ কেমন বিচার? আল্লাহর বিচার বোঝার সাধ্য কোন মানুষের নেই, কারন আমাদের জ্ঞানের ঘাটতি। আমরা তত টুকুই জানি , যত টকু জ্ঞান আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। মনে আছে কোরানে বর্ণীত মুসা ও তার সঙ্গীর কাহিনি? মুসার সঙ্গী যখন এক দরিদ্র জেলের নৌকা ফুটো করে দিয়েছিলেন বা এক নেক বৃদ্ধ পিতা মাতার একমাত্র সন্তানকে বিনা কারনে হত্যা করেছিলেন বা বিপদে সাহায্য না পাওয়ার পরে ও ভাঙ্গা দেয়াল মেরামত করেছিলেন , তখন মুসা নবী হওয়া সত্বেও আল্লাহর এই বিচার মানতে পারেন নি। তারপরে যখন কারন জানলেন তখন ক্ষমা চেয়ে ও কুল পাননি, মুসার সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেকারনে এমন যেন না হয় , সৃষ্টির কারন ও ভবিষ্যত না জেনে আল্লাহর বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করি। সৃষ্টির কারন ও ভবিষ্যত একমাত্র আল্লাহ জানেন। 


৩)মুসলিম-আল্লাহর কাছে , আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পনকারী। যে আত্মসমর্পন করে তার নিজের কোন ইচ্ছা কি থাকে? নাকি কোন শর্ত আরোপ করার অধিকার থাকে? প্রভু চাইলে আমাকে মারতে পারেন , চাইলে আমাকে বাচাতে পারেন। চাইলে আমাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন , চাইলে আমাকে বেহেস্ত দান করবেন। আমি কি এর বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম? নাকি আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে , যুদ্ধ করে জেতা সম্ভব? প্রতিপক্ষ যেখানে আল্লাহ সেখানে স্বতস্ফুর্ত ভাবে আত্মসমর্পন করাই শ্রেয় নয় কি? কারন আল্লাহ তো যা করার তা করবেনই করবেন। 


৪)ইগো বা আমিত্ব- কি হনু রে? কিছুই হই নি। সবি মায়া। কিছুই করার ক্ষমতা আমার নেই। আল্লাহ না চাইলে হাতের একটা আঙ্গুল ও নড়াবার ক্ষমতা আমার থাকবেনা। এই মুহুর্তে আমার পক্ষাঘাত হয়ে হাত অচল হয়ে যেতে পারে। কিযে বলেন? চাইলেই আমি একজনকে চড় মারতে পারি। না পারেন না। মারার আগে ১০ বার ভাববেন। যাকে মারবেন সে সবল নাকি দুর্বল , উল্টো মার খাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? দুর্বল হলেও ন্যায় হোক বা অন্যায় হোক একটা কারন থাকতে হবে। বিনা কারনে কাউকে মারলে পাগল সাব্যস্ত হয়ে সম্মিলিত মার খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই যে শর্ত যার উপরে ভিত্তি করে আপ্নার মার দেয়া বা না দেয়া নির্ভর করছে , এগুলোর উপরে আপনার কোন হাত নেই। এগুলো আল্লাহই নিয়ন্ত্রন করেন। 


আচ্ছা চড় না মারতে পারি সৎ কাজ তো করতে পারি , ইচ্ছা করলেই আমি এক ফকিরকে ১০ টাকা দান করতে পারি। না তাও পারেন না। প্রথমেই যে শর্ত পুরন করা লাগবে সেটা হলো দান করার জন্য আপনার কাছে ১০ টাকা আছে কিনা? পরের শর্ত গুলো হল নিজের অভাব কতটুকু, টাকা জমানোর লোভ আপনার কতটুকু , দিলে লাভ কি , যাকে দিবেন তার চেহারা , চাওয়ার ভঙ্গী আপনার পছন্দনীয় কিনা , লোকটি কি আসলেই অভাবি নাকি বাটপার ইত্যাদি। এত গুলো শর্ত পুরনের পরও ঠিক দান করার আগমুহুর্তে আপনার মন বদলে যেতে পারে। সামনের দোকানের ১০ টাকার গরম গরম লুচি খাওয়ার ইচ্ছা আপনার মনে জাগতে পারে। 


৫)চরম বাস্তবতা- একটু গভির ভাবে চিন্তা করলে আপনি দেখবেন আপনার নিজের স্ত্রী , ছেলে মেয়ে বা নিজের উপরে আপনার কোনই কন্ট্রোল নেই। আজকের আপনি আর ৫ বছরের আগের আপনি এক নয়। ৫ বছরের পরের আপনি কেমন হবেন তা আপনি জানেন না , যদি ততদিন বেচে থাকেন।  আপনার এই যে পরিবর্তন হচ্ছে তার উপরে আপনার কোন হাত নেই। এই লেখাটি যখন শুরু করেছিলাম তখন জানতাম না এর আকার কেমন হবে বা শেষ পর্যন্ত কি বক্তব্য এই লেখায় উঠে আসবে। কতবার যে কাটা ছেড়া করতে হয়েছে তা আমিই জানি। এ লেখাটি শুরুর ব্যাপারেও আমার কোন হাত ছিল না। আপনাদের মন্তব্য না পেলে এ লেখা হয়তো কোনদিন লেখাই হতো না। 


তাহলে উপায়? এ পৃথিবি মায়া হলেও বাহ্যত আমাদের কাছে এটাই বাস্তব। নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছা ভেবেই ভাল কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাব। বাকি আল্লাহ ভরসা।


আরো একটি  প্রশ্ন সামনে এসেছে। আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার সবকিছুই সরাসরি আল্লাহ সারাক্ষন নিয়ন্ত্রন করছেন কিনা?  এর উত্তর জানতে হলে আমাদের বিজ্ঞানের সাহায্য নেয়া লাগবে। 


EEG ইলেক্ট্রোএন্সেফালোগ্রামের নাম শুনেছেন? এটার কাজ হলো আমাদের ব্রেনের নিউরন কাজ করলে যে বিদ্যুত তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা রেকর্ড করে কাগজে গ্রাফ আকারে প্রকাশ করা। অনেকটা ECG র মতো , যা হার্টের কোষগুলো কাজ করলে যে বিদ্যুত তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা রেকর্ড করে। আমরা যখনই  কোন কিছু করার ইচ্ছা করি তখনি যেকাজের জন্য যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা লাগবে , সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রন করে যে নিউরনগুলো সেই নিউরনগুলো ওই অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নির্দেশ দেয় ওই কাজ করার জন্য। যেমন ডান হাত দিয়ে কাজ করায় ব্রেনের বাম পাশের কিছু নিউরন , আর বাম হাত দিয়ে কাজ করায় ব্রেনের ডান পাশের কিছু নিউরন। ডান হাত দিয়ে কিছু করার ইচ্ছা যখন হবে তখন ব্রেনের বাম পাশের নির্দিষ্ট কিছু নিউরন উজ্জীবিত হবে এবং ডান হাতকে নির্দেশ পাঠাবে। নিউরনগুলো উজ্জীবিত হলে বিদ্যুত তরঙ্গের সৃষ্টি হয় , যেটা EEGতে রেকর্ড করা যায়। এই EEG দেখে চিকিৎসকরা ব্রেনের কোন অংশ কেমন কাজ করছে তা জানতে পারে। 


পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমরা যদি সচেতনভাবে ডান হাত নাড়াবার ইচ্ছা করি  তাহলে ইচ্ছা হওয়ার সাথে সাথেই ইচ্ছাপুরনের জন্য নির্দিষ্ট নিউরনগুলো উজ্জীবিত হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু না , আমার ইচ্ছা হওয়ার ২০০ মিলিসেকেন্ড আগে থেকেই ব্রেনের সব নিউরন নয় শুধুমাত্র বাম পাশের ওই নির্দিষ্ট নিউরনগুলোই উজ্জীবিত হয়েছে এবং আমার ইচ্ছাটাও যে নিউরনগুলো উজ্জীবিত হয়েছে সেগুলোকে মেনেই হয়েছে। তাহলে কে আমার চাওয়ার আগেই  ব্রেনের বাম পাশের নিউরনগুলো উজ্জীবিত করল আর কেনই বা আমি ডান হাতই নাড়াতে চাইলাম , বাম হাত নয়? ওই মুহুর্তে আমার বাম হাত নাড়াতে চাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। চাইলেও বাম হাত নড়ত না , কারন ডান পাশের নিউরনগুলো উজ্জীবিত ছিল না। 


ইউটিউবে freewill লিখে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাবেন। যারা ইংরেজি জানেন , তারা দেখতে পারেন। আপাতত একটি লিঙ্ক দিলাম। 


https://youtu.be/UZmpUGl6eRc


ভাইরে  জগৎটাই যদি মায়া হয় , তাহলে এজগতের পরীক্ষা বলেন আর শাস্তি বলেন সবই মায়া। নয় কীআল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আর পরীক্ষা ছাড়া জানবেন না , তাই কি হয়? "৫৭:২০  পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ (মায়াবৈ কিছু নয়। মায়া কি তা জানেন তো?


পরকালের শাস্তির ব্যপারে এক কথায় উত্তর২৪:২৭ আল্লাহ যা ইচ্ছাতা করেন। :২৮৪ অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেনএবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন।২১:২৩ তিনি যা করেনতৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। ৩২:১৩ কিন্তু আমার  উক্তি অবধারিত সত্য যেআমি জিন  মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।



একজন লিখেছেন- আপনার পেশ করা আয়াতগুলোর সাথে নিচের আয়াতগুলো সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করুন.. তারপর আপনার উপলদ্ধি শেয়ার করুন।


ঠিকই বলেছেন , কুরআনের মধ্যে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক কোন আয়াত নেই। আপনার দেয়া আয়াতগুলো নিয়ে বিশ্লেষন করা যাক....


১) وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

অনুবাদ করা হয়েছে তোমাদের কর্মেরই ফল, কিন্তু আরবি দেখুন কি লেখা আছে? 

‎فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ এর মানে তোমাদের হাত যা ঘটায় , অর্জন করে তারই কারনে। 


এবার স্মরন করুন- 


আল্লাহ কাউকে শাস্তি দেন বা লাঞ্চিত  করেন আমাদের কারো না কারো হাত দিয়েই। জয়ী ও করেন তিনিই। 


৯:১৪ যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।


১৭:১৬ যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।


৫৯:৫ তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন।


এখনো কি আয়াতগুলো সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে?


২) ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।


এখানেও দেখুন অনুবাদ করা হয়েছে  মানুষের কৃতকর্মের দরুন , কিন্তু আরবিতে কি আছে? 

‎بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ মানে মানুষের হাত যা ঘটায় , অর্জন করে তারই কারনে। 


৩)

‎مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا

আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসাবে। আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সববিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত।


ঠিক এই আয়াতটির আগের আয়াতেই ৪:৭৮ বলুন, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে, কিন্তু তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।

(সব ভাল আল্লাহর পক্ষ থেকে , সব মন্দ নিজের থেকে । ভাল মন্দ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। ) দুটো আয়াতই এক সাথে মিলেয়ে পড়ুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন। এই বুঝতে চেষ্টা করাটাও আল্লাহর নির্দেশ  ৪:৭৮ অনুযায়ী। 


৪) وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।


প্রথমত "যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে" এ কথাটি (অনুবাদ) ভুল। আরবি যেটা আছে وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا মানে- আমাদের মাঝে যারা চেষ্টা (যুদ্ধ) করে। কি নিয়ে বা কিভাবে চেষ্টা করে তা এই আয়াতে নেই। 


২য়ত এই আয়াতটি সূরা আনকাবুতের সর্বশেষ আয়াত । এই আয়াতটি উপসংহার। আয়াতটির প্রকৃত অর্থ তখনই বোধগম্য হবে যখন পুরো সূরাটি বোধগম্য হবে। সূরা আনকাবুত অসাধরন একটি সূরা যেটা পড়লে আল্লাহর মাহাত্ম বুঝে আসবে ইন শা আল্লাহ।


আমরা যারা আত্মতৃপ্তিতে ও নির্ভয়ে আছি এই ভেবে  যে আমি সৎ পথে আছি এবং মুশরিক নই , তাদের জন্য দুঃসংবাদ....


১৮:১০৩-১০৪ বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।


৬:২২-২৩ আর যেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব, অতঃপর যারা শিরক করেছিল, তাদের বলবঃ যাদেরকে তোমরা অংশীদার বলে ধারণা করতে, তারা কোথায়? অতঃপর তাদের কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না; তবে এটুকুই যে তারা বলবে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম, আমরা মুশরিক ছিলাম না।


কারা এরা , যারা মনে করে  তারা সৎ কর্ম করেছে?


৭:৩০ একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।


৪৩:৩৭ শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।


যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয় ...সে কিভাবে জানবে কোনটা ভাল , কোনটা মন্দ?

৩৫:৮ 

যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।


১৬:৯ সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।


১৭:৯৭ আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না।


দেখুন জান্নাতের অধিবাসীরা কি বলছে?


৭:৪৩ তাদের অন্তরে যা কিছু দুঃখ ছিল, আমি তা বের করে দেব। তাদের তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণী প্রবাহিত হবে। তারা বলবেঃ আল্লাহ শোকর, যিনি আমাদেরকে এ পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আমরা কখনও পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করতেন। আমাদের প্রতিপালকের রসূল আমাদের কাছে সত্যকথা নিয়ে এসেছিলেন। আওয়াজ আসবেঃ এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদানে।


ভাবছেন ঠিকইতো আমার কর্মের প্রতিদানেই আমি জান্নাত পেয়েছি , কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন নেপথ্যের নায়ককে যিনি এই কর্মের ইচ্ছা , পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। 


১০:৩১ তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না?


১৩:৩৩

‎أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَم بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

তিনি কি প্রতিটি আত্মা যা অর্জন করে তার উপরে  দন্ডায়মান নন? এবং তারা আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলুন; নাম বল অথবা খবর দাও পৃথিবীর এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা তিনি জানেন না? অথবা অসার কথাবার্তা বলছ? বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।


পরবর্তি পোস্টে শির্ক নিয়ে যে বিভ্রান্তিতে  আছি সেটার উপরে আলোকপাত করব।


কোরানিক সত্য হলো - পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাসী হবে না এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের অধিকাংশই মুশরিক। 


১২:১০৩ আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়।

১২:১০৬ আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে , তাদের অধিকাংশই মুশরিক। 


ভয়ের কথা হলো অবিশ্বাসীদের কথা বাদ দিলাম , যারা বিশ্বাসী (মুমিন) তারা নিজেরাও জানে না যে তারা মুশরিক। যে কারনে তারা আল্লাহর কসম দিয়ে বলবে যে তারা মুশরিক ছিল না। 


৬:২২-২৩ আর যেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব, অতঃপর যারা শিরক করেছিল, তাদের বলবঃ যাদেরকে তোমরা অংশীদার বলে ধারণা করতে, তারা কোথায়? অতঃপর তাদের কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না; তবে এটুকুই যে তারা বলবে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম, আমরা মুশরিক ছিলাম না।


আমরা যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করি তাদের বোঝানো লাগবেনা হিন্দুরা যে দেব দেবীর পুজা করে , সেটা কেন শির্ক বা খৃষ্টানরা যে দাবী করে ইসা আল্লাহর সন্তান , সেটা কেন শির্ক? আমরা মানলে ও কোন হিন্দু বা খৃষ্টানকে মানাতে পারবেন না যে তারা শির্ক করছে। তেমনিভাবে কোন শিয়াকে যদি বলেন আলিকে ইমামের আসনে বসিয়ে তারা শির্ক করছে , তারা মানবে না। বা কোন সুন্নিকে যদি বলেন মুহম্মদের গুনগান করে (নাথ) , তার সুন্নত পালন করে শাফায়াতের আশা করে তারা শির্ক করছে , তারা মানবে কি? মানবে না। পীরের ও ধর্মীয় পন্ডিতদের অনুসারীদের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য। 


এখন বাকি থাকে যারা কোরানে বিশ্বাস এনে শুধুমাত্র কোরান অনুসরন করে। এদেরকে কোরান থেকেই কিছু আয়াত দিব চিন্তা করার  জন্য , এদের জন্য আল্লাহই  কিছু প্রশ্ন করেছেন উত্তর খোজার জন্য। 


২৩:৮৪-  বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। 

এখন তারা বলবেঃ সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে? এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না? বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব কিছুর কর্তৃত্ব , যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না? এখন তারা বলবেঃ আল্লাহর। বলুনঃ তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?


২৯:৬১-৬৪ যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে? আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না। এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।


১০:৩১ তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না? 


বলছি সব কিছুর মালিক আল্লাহ, সব কর্তৃত্ব , সব কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা আল্লাহর। তবু ও ভয় করছে না। কারন যাদুগ্রস্থ হয়ে আছি। ভাবছি আমি যেটা করছি সেটা আমিই করছি , আল্লাহ নয়। আমিই পারি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এনে সৎ কাজ করতে , এর পিছনে আল্লাহর কোন ভূমিকা নেই। 


৮:১৭ সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত।


এই যে আমি বা আমিত্ব বা আমার ইগো , এটাই সেই শির্ক যাতে আমরা সকলেই ডুবে আছি। আমরা কেঊ যদি সৎ কাজ করি , সেটা আমাদের প্রতি আল্লাহর এহসান। 


২৫:৪৩ أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَـٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا

আপনি কি তাকে দেখেন না, যারা নিজের ইচ্ছাকে (هَوَاهُআকাংখা ) উপাস্যরূপে (ইলাহ) গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?



আমরা যারা কোরানের পরিস্কার আয়াত পড়ার পরে মেনে নিয়েছি যে আমাদের স্বাধীন কোন ইচ্ছা নেই , আমরা যা কিছুই করি বা বলি সেটা আল্লাহই করান বা বলান , তারপরেও শেষ হইয়া ও হইল না শেষের মতো মনে একটা দ্বীধা কিন্তু থেকেই যায়। এই দ্বীধার অন্যতম কারন পরীক্ষা। ছোট বেলা থেকেই আমাদের মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এটা জানতে , কে আমাদের মধ্যে ভাল কাজ করবে এবং কে পাপ করবে এবং যার প্রতিফলে কে বেহেস্তে যাবে আর কে দোযখে যাবে তা নির্ধারন হবে। তাই যদি হয় এবং আল্লাহই যদি সব কিছু করান তাহলে এই পরীক্ষার কি হবে? এই পরীক্ষা যদি হয় তাহলে এই পরীক্ষাতো একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। 


পরীক্ষার এই ধারনা মনে গেঁথে দেয়ার জন্য মোল্লাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই , কারন পরীক্ষার কথা সুস্পষ্টভাবে কোরানের বহু আয়াতে বলা হয়েছে।  কোরানের অনুবাদে ভুল সেটা বলেও পার পাওয়া যাবে না। কোরানের পরীক্ষা সংক্রান্ত আয়াতগুলোকে  নুতনভাবে ব্যখ্যা করার ধৃষ্টতা ও আমি রাখিনা। আল্লাহ আমাকে ফুটো পয়সা সমতুল্য যে জ্ঞান দিয়েছেন , তা দিয়ে কিভাবে এই দ্বীধা কাটিয়েছি , সেটাই লিখব। 


৬৭:১৪ যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।


৫৪:৪৯ আমি সব কিছুই পরিমিতরূপে (بِقَدَرٍ মানে predstination/ভবিষ্যত নির্ধারিত ও হয়) সৃষ্টি করেছি।

Sahih International: Indeed, all things We created with predestination.


৫৭:২২ পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।


৩৫:১১ আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল। কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসব করে না; কিন্তু তাঁর জ্ঞাতসারে। কোন বয়স্ক ব্যক্তি বয়স পায় না। এবং তার বয়স হ্রাস পায় না; কিন্তু তা লিখিত আছে কিতাবে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।


৫০:৪ মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।


৩৪:৩ তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।


উপরের আয়াতগুলো পড়লে কি মনে হয়? তার কি কোন পরীক্ষা নেয়ার প্র‍য়োজন আছে? তিনি দৃশ্য অদৃশ্য সবই জানেন , কে কি করল বা করবে সবি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে। কিতাব খুললেই তো সব জানা যায় , পরীক্ষা কেন করা লাগবে? তাহলে?  উত্তর একটাই। আল্লাহর পরীক্ষা আর মানুষের ভাবনায় পরীক্ষার যে ধারনা আছে তা এক নয়। আল্লাহর পরীক্ষা হলো প্রকাশ করে দেখানো (manifest), যে মানুষের পরীক্ষা তিনি নিচ্ছেন সেই মানুষটার আসল রুপ। বুঝে আসল না? 


আল্লাহর পরীক্ষা হয় প্রকাশের জন্য , যাতে যে মানুষটির পরীক্ষা হচ্ছে সে নিজে যেমন জানতে পারে সে কেমন , তেমনি অন্যেরাও জান্তে পারে।  আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে। সেটা কেমন? আল্লাহ যাকে বখিল করে সৃষ্টি করেছেন , তাকে দিয়ে হাজারো ধর্মের কথা শুনিয়ে , দোজখের ভয় দেখিয়ে ও ১০ টাকা দান করাতে পারবেন না। এদের অবস্থা সেই সব লোকের মতো "নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। ২:৬।" এদের জন্য কোন পরীক্ষার দরকার আছে কী? 


বখিল ছাড়াও হাজারো মানুষ আছে। এর ভিতরে সকলে না হলেও কেউ কেউ ১০ টাকা দান করবে। আল্লাহ যার মনে যে উদ্দেশ্য সৃষ্টি করে এই টাকা দান করাবেন , সে সেই মতো ফল পাবে এবং তা তার কাছে প্রকাশ হবে। নাম কেনার জন্য টাকা দিলে নাম পাবে , আনুগত্য পাওয়ার আশায় দিলে আনুগত্য পাবে আর আল্লাহর রাহে দিলে মানসিক প্রশান্তি। এত কিছু জানার পরেও সকলেই কেন আল্লাহর রাহে দান করে না?  কারন একটাই। আমাদের সকলের অবস্থা ও ঐ বখিলের মতোই। আল্লাহ যাকে যেমন সৃষ্টি করেছেন , তার বাইরে যাওয়ার উপায় ও নেই , ক্ষমতাও নেই। সেই ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয় নি। আমাদের অবস্থা বখিলের মতোই প্রকাশ হওয়ার জন্য যে , আমি বখিল।




চোখের উপর থেকে মায়ার ঠুলি সরান। ভাবছেন আমার চিন্তা ভাবনা , সীদ্ধান্ত , কাজ , সব আমার। ভুল , সব মায়া।


৭:৫৪ 

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।


আল্লাহ সবকিছু চালাচ্ছেন। তিনি আদেশ দিচ্ছেন আর মানুষ সহ বাকি সব কিছু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই আদেশ পুরনে দৌড়াচ্ছে। 


 আল্লাহর পরীক্ষা নিয়ে গত পোস্টে লিখলেও কারো কারো কাছে বিষয়টি এখনো পরিস্কার নয়। এবার কোরান থেকে উদাহরন দিব, তবে বিষয়টি বোঝার জন্য প্রথমে একটি উপমা দিব। ....


ধরেন একটি ক্লাশের সকল ছাত্রকে না শিখিয়ে শুধুমাত্র  একটি ছাত্রকে শিক্ষক একটি অঙ্ক শেখালেন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে শুধুমাত্র ওই অঙ্কটিই আসল। স্বভাবতই ওই একটি ছাত্রই পাশ করল , বাকি সবাই ফেল করল। এখন শিক্ষক বাকি ছাত্রদের বল্লেন তোমরা কিছুই জান না , স্বীকার করে নাও , যে ছাত্রটি পাশ করেছে সে সবার চেয়ে বুদ্ধিমান ও সবার সেরা। সবাই কি ঐ ছাত্রটিকে সেরা বলে মানবে? না , কারন এটা  যে একটা প্রহসনের পরীক্ষা সে ব্যপারে কারো দ্বীমত আছে কী?  নেই। যার দ্বীমত আছে , তার মাথায় যে ছিট আছে সে ব্যপারে আমার অন্তত সন্দেহ নেই।


ঠিক ওই একই কাজ করেছেন আল্লাহ আদমের সাথে। আদমকে সবকিছুর নাম শিখিয়ে ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন ঐগুলোর নাম কী? স্বভাবতই ফেরেশতারা পারল না এবং  আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন আদমকে সিজদা করতে অর্থাৎ স্বীকার করে নিতে যে আদম তাদের থেকে সেরা। সবাই স্বীকার করল ইবলিস বাদে।  এই হলো আল্লাহর পরীক্ষা।


এখন আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীতে এই ঘটনার বিচার করলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে শুধু ইবলিসের মাথায় ছিট নেই , বাকি সবার মাথায় ছিট আছে। কিন্তু আল্লাহর নৈতিকতা ও বিচার আমাদের মানুষের নৈতিকতা ও বিচার থেকে ভিন্ন। এটা আমরা যত তাড়াতাড়ি হৃদয়ঙ্গম করব তত তাড়াতাড়ি আমরা মুসলিম হব , শুধু নামে বা মুসলিম দাবী করলে কাজ হবে না। আল্লাহ মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরন করতে নিষেধ করেছেন , মুসলিম নাম নিয়ে নয়। 


আগেই বলেছি আল্লাহর পরীক্ষা হলো প্রকাশ করা। উপরে বর্ণীত পরীক্ষায় এটাই প্রকাশ পায় যে আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন , এ জন্যে কারো ধার ধারেন না বা কে একে প্রহসনের পরীক্ষা বলল আর কে বললনা তাতে তার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। কে আল্লাহর আদেশ মেনে আদমকে সেরা মানল অর্থাৎ  আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করল বা মুসলিম হলো , সেটাই মূখ্য। যে আত্মসমর্পন করলনা সে ইবলিসের দোসর হয়ে গেল।


Jalaluddin Md Abdul Hye​​  ভাই সালামুন আলাইকা। আপনি একটি আবেদন করেছেন রসুলের দেয়া ব্যাখ্যা থেকে উদ্ধৃতকরার জন্য। ভাই আগেও বলেছি  এখনো বলছি , রসুলের দেয়া কোন ব্যাখ্যা নেই। একটু খোলা মন নিয়ে গবেষনা করুন তাহলে জানবেন রসুলের নামে প্রচলিত সকল হাদিস , সিরাত , ব্যাখ্যা সবই ১০০ভুয়া। এগুলো বিভিন্ন সময়ের আব্বাসিয় খলিফাদের তত্বাবধানে দরবারি মোল্লাদের রচিত। এই ইতিহাসকে হলেও হতে পারে এই ভাবনা থেকে আপনি মেনে নিলে  কোরানের পরিস্কার নির্দেশকে তো আর উপেক্ষা করতে পারেন না। রসুলের দায়িত্ব কোরান পড়ার  প্রচার করার , আর ব্যাখ্যার দায়িত্ব আল্লাহর।  


আল্লাহ নিজেই বলছেন কোরান , 'তিবইয়ানান লি কুল্লি শাইয়িনঅর্থ সব কিছুর পরিস্কার বর্ণনাব্যখ্যা। কোরানের আরো বহু আয়াতে আল্লাহ বারে বারে বলেছেন কোরান সুস্পষ্ট , বক্রতামুক্ত , পূর্ণ। 


 ৭৫:১৭-১৯ এর সংরক্ষণ  পাঠ আমারই দায়িত্ব। অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করিতখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।


১৭:৪১ আমি এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছিযাতে তারা চিন্তা করে। অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।



আল্লাহর ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা , সব কিছুই পূর্ব নির্ধারিত , আল্লাহই সব কিছু চালাচ্ছেন এবং আমরা তার আদেশ অনুযায়ী দৌড়াচ্ছি। এগুলো নিয়ে আরো লেখার আগে চলুন এগুলো মেনে নিয়ে সারাক্ষন মনে মনে জপ করলে কি উপকারে আসবে সেগুলো জেনে নিই। 


১)সবর করা / ধৈর্য ধরা


২:১৫৩ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

 

অনেকেই হয়তো আমার বাপের মতোই ভাবছেন বা বলছেন সবর করা / ধৈর্য ধরা  আর এমন কী? খুবই সহজ , চাইলেই সবর করা যায়। না যায় না , এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। স্বার্থে বেশির কথা বাদ দিলাম সামান্যতম আঘাত লাগলে ও ঝগড়া মারামারি না করে সবর করতে পারে , এমন লোকের সংখ্যা বিরল। কারনে অকারনে কেউ আপনাকে একটি কটু কথা বললে দুটি উচিৎ (?) জবাব না দিয়ে সবর করার লোক খুজে পাওয়া দুরুহ। 


সবর করা সহজ হয়ে যাবে যদি আপনি জানেন যে লোকটি আপনার স্বার্থে আঘাত করেছে বা কটু  কথা বলেছে , এগুলো সে করেনি বা বলেনি বরং আল্লাহই ওই লোকটিকে দিয়ে এগুলো করিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করেছেন আপনার নিজের কাছে প্রকাশের জন্য আপনি সবর করতে পারেন কি না? সবর যদি না করেন তাহলে আরো বিপদ। আপনি আর আত্মসমর্পনকারী মুসলমান থাকছেন না। সবর না করে মি লর্ড অবজেকশন বলে আপনার আপত্তি জানাচ্ছেন আল্লাহর কাজকে। 


২)আল্লাহর উপরে সর্ব কাজে ভরসা করা


যখন জানবেন আপনার হাসি কান্না , সুখ দুঃখ, বিপদ আপদ , দৈনন্দিন সকল কাজ ও কথার মালিক ও সম্পাদনকারী আল্লাহ , আপনি না নিজের থেকে কিছু করতে পারেন  না নিজে কিছু ইচ্ছা করতে পারেন। তখন আল্লাহর উপরে ভরসা না করে আপনার উপায় থাকবে না। কারন দেয়ার মালিক আল্লাহ নেয়ার মালিকও আল্লাহ, বিপদ দেন আল্লাহ আবার বিপদমুক্ত ও করেন আল্লাহ। বিপদ আপদ , ধন সম্পদ , সন্তান সন্ততি , দৈনন্দিন কাজ কর্ম সবই আল্লাহর পরীক্ষা এটা দেখানোর জন্য যে আপনি মি লর্ড অবজেকশন বলেন কি না? আল্লাহ সব কিছু চালাচ্ছেন এই মন্ত্র সব সময় জপ করলে অবজেকশনের কথা আর মনে আসবে না। 


৩)রাগ না করা


কোরানে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন রাগ না করতে। এছাড়াও আমরা জানি রাগ সকল অনর্থের মূল। কোরানে এ নির্দেশ পড়ার পরে রাগ দমনের চেষ্টা করে ও রাগমুক্ত হতে পারিনি। যতই ভাবি আর রাগ করব না কিন্তু হটাৎ করেই বৌ বা অন্য কেউ এমন কথা বলে বসবে যে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে রাগ করে চিল্লাচিল্লি ঝগড়া করেই বসি। পরে অনুতপ্ত হই ঠিকই কিন্ত রাগকে বিসর্জন দিতে পারিনি। আশার কথা যেদিন থেকে জানলাম এই যে কথাগুলো যা আমাকে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য করে দিচ্ছে , সেগুলো আল্লাহই বলিয়েছেন আমাকে রাগিয়ে পরীক্ষার জন্য যে, দেখি ব্যটা তুই রাগ না করার শপথ করে কতদিন থাকতে পারিস? সেদিন থেকে এখনো রাগ না করেই আছি । কতদিন রাগ না করে থাকতে পারব জানি না। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। হয়তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন যে আমি রাগ করতে বাধ্য হব। 


৪)ক্ষমা করা


ক্ষমা মহত্বের লক্ষন। কোরানেও আল্লাহ বলেছেন ক্ষমাই শ্রেয়। আমাদের অনেকেরই  জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। যদি আমি জানি ঐ ঘটনা আল্লাহই ঘটিয়েছেন আমাকে পরীক্ষার জন্য , তাহলে ক্ষমা করা সহজ হয়ে যায়। 


আজ এ পর্যন্ত , আরো উপকারের কথা মনে আসলে ভবিষ্যতে লিখব ইন শা আল্লাহ। আর আপনাদের মনে যদি কিছু আসে , তাহলে এখানে কমেন্টাকারে লিখুন।


চলেন একটা গান শুনি....


https://youtu.be/EaWVhM6D0P4


দেখুন আমি সব জান্তা নইআল্লাহর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বিধেয় কিছুই জানি না। শুধু সেটুকুই জানি যেটুকু আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন এবং আমার চারিপাশে অফুরন্ত আল্লাহর যে সকল আয়াত (নিদর্শনছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা থেকে যা শিখেছি।   আপনি ঠিক কি জানতে চাচ্ছেন তা আমার কাছে পরিস্কার নয়। আল্লাহর চিত্রনাট্যে যার যে টুকু রোল দেয়া আছে সে ততটুকুই করবে , তার বেশি নয় , কমও নয় এবং নিজের থেকে কিছু নয়ই নয়। 


সবই আল্লাহর ইচ্ছা , সবকিছুই চালাচ্ছেন আল্লাহ। এই সিরিজটি শুরু করেছিলাম এভাবে....


শুধু কুরআনে বিশ্বাসী সহ সকল মুসলমানরা মনে করে যে, যা কিছু ভাল সব আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং যা কিছু খারাপ সব নিজের থেকে । দয়া করে 4:78 আয়াত নিয়ে চিন্তা করুন। কারা এইসব লোক যারা এই কথা বলে? এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে রসুলকে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন “সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে”। এবং মানুষকে এটা বুঝতে বলছেন। 


4:78

আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করবে, যদিও আপনি উঁচু টাওয়ারে আছেন, এবং যদি তাদের কোন উপকার আসে, তারা বলে: এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে; আর যদি তাদের কোন দুর্ভাগ্য ঘটে, তারা বলে: এটা তোমার পক্ষ থেকে। বলুন, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে, কিন্তু তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।

(সব ভাল আল্লাহর পক্ষ থেকে , সব মন্দ নিজের থেকে । ভাল মন্দ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে)।


এর পরে পানি অনেকদুর গড়িয়েছে কিন্তু অনেকেই এটা কিছুতেই মানতে পারছে না যে খারাপ যা কিছু তা ও আল্লাহ করান । তাদের দাবী এগুলো শয়তানের প্ররোচনায় আমরা যা করি তার ফল। যদি প্রশ্ন করেন কে মানুষকে বিপথগামী করে? যারা আল্লাহর পরিস্কার আয়াত অস্বীকার করে তারা বলবে শয়তান বা শয়তানের প্ররোচনায় নিজেই নিজেকে বিপথগামী করে। এবার ২:২৬ আয়াতটি পড়ে বলুনতো কে বিপথগামী করে?


২:২৬ আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তুতঃ যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। আর যারা কাফের তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ তা’আলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন কাকেও বিপথগামী করেন না। 


উপমা দিয়েছেন আল্লাহ আর বিপথগামী করেছেন ও আল্লাহ। এর মাঝে না শয়তানের কোন ভূমিকা আছে না মানুষের নিজের কোন ভূমিকা আছে। হ্যা , এখন বলতে পারেন কিন্তু আল্লাহ তো কোন মুমিনকে বিপথগামী করেন নি, করেছেন অসৎ ব্যক্তিবর্গকে। মুমিন আর অসৎ ব্যক্তিবর্গকে কে সৃষ্টি করেছে? সৃষ্টি করার সময় কি তিনি জান্তেন না কোন উপাদান দিলে লোকটি মুমিন হবে আর কোনটি দিলে অসৎ ব্যক্তিবর্গ  হবে? সবাইকে একি উপাদান দিলে তো সবার একই রকম হওয়ার কথা। উপাদানে কম বেশি দিলে তার দায়টা তো আর সৃষ্টি তথা অসৎ ব্যক্তিবর্গের  নয়। মানুষের যুক্তি তাই বলে। মেনে নিন আমরা রোবট। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা চলি , বলি , করি , হাসি ও কাদি। এই মেনে নেয়াটাই আত্মসমর্পন। যারা মেনে নেবে তারা মুসলমান।


১০:১০০ আর কারো (لِنَفْسٍ  আত্মা soul) ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।


অনেকেরই আল্লাহ সব কিছু চালাচ্ছেন এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে আমার আমল বা কর্ম তো আমিই করছি এবং যখন যে ভাবে চাই সেভাবেই করি। এটা যে মায়া তা আমাদের বোধে আসে না । এই আমল দিয়ে সব সব ধরনের কর্মই বোঝায়। ভাল কাজ খারাপ কাজ , চোখ দিয়ে কাজ , শুনে কাজ , কথার , চিন্তার কাজ ইত্যাদি। অর্থাৎ আমাদের শরীরের যেকোন অঙ্গ দিয়ে যা কিছু করি সব আমলের অন্তর্ভুক্ত।  এবার নিচের আয়াতটি পড়ুন....


৩৭:৯৬ 

‎وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ

অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যা কিছু (আমল) তোমরা করছ। (تَعْمَلُونَ)


যারা এখনো ভাবছেন কে ঈমান আনবে এটা তার নিজের ইচ্ছা , নিজের স্বীদ্ধান্ত , তারা এই আয়াতটি পড়ুন ও বুদ্ধি প্রয়োগ করুন।


বিচার প্রকৃয়া কেমন হবে বলে মনে করেন? না যেমনটি ভাবছেন তেমন না। এবিচার প্রকৃয়ার সাথে আমাদের পৃথিবীর বিচার প্রকৃয়ার কোন মিল নেই। আপনার বিচারের ফল আপনার হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে। 


৬৯:১৯ অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ।

৬৯:২৫ যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো।


আগে পিছের আয়াতগুলো পড়ুন , তাহলে জানতে পারবেন কে কোথায় যাবে। 


কিসের ভিত্তিতে? ভিত্তিটা হলো আল্লাহর ইচ্ছা। উনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন , যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। "২:২৮৪ অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। "  এরুপ আরো অনেক আয়াত আছে কোরানে। 



সমস্যা হলো আমরা কিছুতেই এই ধারনা থেকে বের হতে পারছি না যে আমাদের কোন স্বাধীন ইচ্ছা নেই । কোরানের কোথাও কি বলা আছে আমরা চিন্তায় ও কর্মে স্বাধীন? নেই। বরং পরিস্কার বলা আছে ....


৭৬:৩০ আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

৮১:২৯ তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।


আমরা যা করি সেটাও আল্লাহ করেন, আমরা না। 


৩৭:৯৬ অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা নির্মাণ করছ (কর্ম) সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।



আকাশ ও পৃথিবী এবং এর ভিতরে মানুষ সহ যা কিছু আছে সকলেই আল্লাহর তৈরি চিত্র নাট্য অনুসারে চলছে , সেই চিত্রনাট্যের একেকটি চরিত্র আমরা সবাই। চিত্রনাট্যের পাত্র পাত্রীরা কি স্বাধীন? নাকি ওদের মুখে যে কথা বসিয়ে দেয়া হয় তাই বলে বা যা করতে বলা হয় তাই করে? এরপরে ও কোন ছবি যখন দেখেন তখন কি আপনার মনে হয় এই ছবির পাত্র পাত্রীরা যা বলছে তা তাদের কথা নয় , যা করছে তা তারা করছে না? বর্তমানের কথা বাদ দেন পরকালে ও কে কি বলবে তাও ঠিক করা আছে।  ৬৯:২৫ যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো।


আল্লাহ সব পারেন আর ভুলিয়ে দিতে পারবেন না ?  আদমকে নির্দেশ দিলেন তারপরে ভুলিয়ে দিলেন এ আর এমন কী? আর আদমের ভিতরে দৃঢ়তা দেন নি তাই পান নি। 


আয়াত তো দিয়েছি। তারপরেও যে প্রশ্ন রয়ে যায় সেটা হলো আমাদের ইগো, আমিত্ব। আসলে  আমাদের সাথে আর ব্যাক্টেরিয়া থেকে শুরু করে গরু ছাগল মাছ গাছ সহ যত প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে কারোরই কোন পার্থক্য নেই। প্রাণীরা আমাদের মতোই জাতি। 


আয়াত তো দিয়েছি। তারপরেও যে প্রশ্ন রয়ে যায় সেটা হলো আমাদের ইগো, আমিত্ব। আসলে  আমাদের সাথে আর ব্যাক্টেরিয়া থেকে শুরু করে গরু ছাগল মাছ গাছ সহ যত প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে কারোরই কোন পার্থক্য নেই। প্রাণীরা আমাদের মতোই জাতি। 


৬:৩৮ আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে। 


৬:৩৮ আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে। 


সালামুন আলাইকা জালালুদ্দিন ভাই। আয়াত গুলো নিয়ে কেন আলোচনা করতে বলেছেন সেটা জানালে ভাল হত। এই আয়াতগুলো কেন বেছে নিলেন বা কোরানের এত আয়াত থাকতে এই আয়াতগুলোই কেন আপনাকে ভাবাচ্ছে , সেটা না জানলে কেমনে আলোচনা হবে? আলোচনা হয় দুই বা ততোধিকের মধ্যে তাদের ভিন্ন মত নিয়ে। 


৩৬:৪৭ যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ।


আল্লাহ সব কছু চালাচ্ছেন এই দৃঢ় দৃষ্টি কোন (আইনাল ইয়াকিন) থেকে দেখে যেটা বুঝেছি...


" যখন তাদেরকে বলা হয়"।  কে বলেন ,তা এই আয়াতে বলা হয়নি কারন এই বলাটা কোরান নাজিলের সময় ও বলা হোত , বর্তমানে ও বলা হয় এবং ভবিষ্যতে ও বলা হবে। এবং কাকে দিয়ে আল্লাহ এই কথাগুলো বলিয়েছেন , বলাচ্ছেন ও বলাবেন তা তিনিই জানেন। যাদেরকে কাফের বানিয়েছেন তারা ও যাদেরকে মুমিন বানিয়েছেন তাদেরকে ওই একই উত্তর দেবে। এটা একটা চলমান প্রকৃয়া। এরা কেন বিভ্রান্তিতে আছে?  কারন তারা ভাবছে খাওয়ানোর মালিক তারা , যে কারনে এরা আবহমানকালে একই প্রশ্ন করে যাবে "আমরা তাকে কেন খাওয়াব? " এখন প্রশ্ন করতে পারেন তারা তো ভাবছে , এই ভাবাটা তাদের নিজস্ব। না আল্লাহই তাদের এমনটি ভাবাচ্ছেন ফলে তারা আল্লারই দেয়া উত্তর মুমিনদেকে জানিয়েই যাবে। 


আপনার দেয়া অন্য আয়াতগুলো আল্লাহ সবকিছু চালাচ্ছেন এই দৃষ্টি কোন থেকে পড়ুন তারপরে প্রশ্ন থাকলে করুন। 


১০:১০০ আর কারো (لِنَفْسٍ  আত্মা soul) ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।


যারা এখনো ভাবছেন কে ঈমান আনবে এটা তার নিজের ইচ্ছা , নিজের স্বীদ্ধান্ত , তারা এই আয়াতটি পড়ুন ও বুদ্ধি প্রয়োগকরুন।


৬:১৪৮ এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বলা। 


অনেকেরই আল্লাহ সব কিছু চালাচ্ছেন এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে আমার আমল বা কর্ম তো আমিই করছি এবং যখন যে ভাবে চাই সেভাবেই করি। এটা যে মায়া তা আমাদের বোধে আসে না। এই আমল দিয়ে সব সব ধরনের কর্মই বোঝায়। ভাল কাজ খারাপ কাজ , চোখ দিয়ে কাজ , শুনে কাজ , কথার , চিন্তার কাজ ইত্যাদি। অর্থাৎ আমাদের শরীরের যেকোন অঙ্গ দিয়ে যা কিছু করি সব আমলের অন্তর্ভুক্ত।  এবার নিচের আয়াতটি পড়ুন....


৩৭:৯৬ 

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ

অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যা কিছু আমল তোমরা করছ। (تَعْمَلُونَ)



এক জন লিখেছেন- 

"মানুষকে কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এটা অসংখ্য আয়াতে বিদ্যমান। স্পেশাল কোন আয়াতের প্রয়োজন নেই।

মুসা বলল, 'হে আমার রব আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশংকা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে।'(28:33) 


আপনার মত পোষণ করলে তো মুসার এই বিশ্বাস থাকার কথা ছিল, আল্লাহ তাকে দিয়ে হত্যা করাইছে। পুনরায় আল্লাহর কাছে বলার কারণ কি????????

(সূরা কাহাফ 94-97) কি বলা আছে! 


সঠিক এটাই, আমরা যা কিছু করি ভাল বা মন্দ সবকিছুই আল্লাহ অবগত।

অনেক চাকরিতে দেখা যায় ক্যান্ডিডেট ঠিক করাই আছে শুধু শুধু ইন্টারভিউ নিয়ে জনগণকে আইওয়াশ করা হয়। আপনি তো আল্লাহকে সেই পর্যায়েই নিয়ে গেছেন!!

প্রহসনের মতো আল্লাহ করাইতেছে আমরা সেটা জানার পরেও প্রার্থনা করতেছি, "আমার রব! আমাকে সালাত কায়েম কারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্যে হতেও। আমাদের রব আমার প্রার্থনা কবুল কর। (14:40)"


আমার উত্তর-


"মানুষকে কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এটা অসংখ্য আয়াতে বিদ্যমান। স্পেশাল কোন আয়াতের প্রয়োজন নেই।" কথাটা স্পর্ধার পর্যায়ে পড়ে। এটা কোরান অস্বীকার করার সামিল। যেখানে কোরানের পরিস্কার আয়াত আমাদের সকল স্বাধীনতা হরন করেছে। 


মুসা যখন এ কথা বলেছিল তখন ও নবী হয়নি। সুতরাং তার না জানারই কথা আল্লাহ সব কিছু চালাচ্ছেন। তিনি যে সব জানতেন না সেটা আমরা জেনেছি তার সঙ্গীর সাথে তার কথোপকথনে। 


আল্লাহ সব করাচ্ছেন /চালাচ্ছেন এটা আপনার কাছে প্রহসন মনে হলে ও বা জানার পরে ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কোন রাস্তা কি  আপনার সামনে আছে? নবী রসূলরা ও এ কারনেই প্রার্থনা করেছে। আরো একটি কথা মনে রাখুন , আল্লাহ না চাইলে এই প্রার্থনা ও আপনি করবেন না। সকলেই কি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে?


আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার কি ধারনা জানি না। আমি যেটা বুঝি আল্লাহ যদি আইওয়াশ করেন , এবং আমার ধারনা তিনি সেটাই করছেন , তাহলে আমার কিছু কি করার আছে? আমাদের কোন কিছুতেই কোন পছন্দ নেই , না আমাদের সৃষ্টিতে , না আমাদের কর্মে। আমাদের মাছ বানিয়ে পানিতে চুবিয়ে রাখলেও আমাদের বলার কিছু ছিল না। তিনি চাইলে এই মানবজাতিকে  রিপ্লেস করার ধামকি ও দিয়েছেন কোরানে। 


২৮:৬৮ وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ ۗ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের (সৃষ্টির) কোন পছন্দ নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।


একজন লিখেছেন....


'আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ'-(17:23)

কে কাকে কেন বলতেছে?????

আপনার ধারণা অনুযায়ী মানুষের যদি কর্মের স্বাধীনতা না থাকে তাহলে তো ব্যাপারটা এই দাঁড়ালো- চোরকে বলে চুরি কর, গিরস্তকে বলে সাবধান! মন্দ কাজ তো আল্লাহই করাইতেছে, আবার বলতেছে এটা মন্দ পথ কি সুন্দর!!

মন্দ কাজ করার পরেও তাহলে আফসোস করার কিছুই নাই, কারন আমি চাইলেও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবো না !! আপনার ধারণা অনুযায়ী এটাই হয়! 


"প্রত্যেকেই নিজ নিজ পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু তোমার রব অবগত আছেন, কে সর্বাধিক সঠিক পথে আছে।"(১৭:৮৪) 


ফেরাউন তার কওমকে পথভ্রষ্ট করেছিল। আর সে সঠিক পথ দেখায়নি। (20:79)


"যারা ঘাড় বাঁকিয়ে বিতর্ক করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্যে, তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা। ইহলোকে এবং কেয়ামতে আল্লাহ তাকে আস্বাদ করাবেন দহন যন্ত্রণা।" (22: 9)


আমার উত্তর.....


আপনি আমার ধারনা কে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? আমি তো কোরানের আয়াত দিচ্ছি , সেগুলো নিয়ে কি ভাবছেন? অবশ্য আল্লাহ না চাইলে সেটা নিয়ে ভাববেন ও না , আমার ধারনাই আপনাকে অন্ধ করে রাখবে।  এবারে যে আয়াতগুলো দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে কি ভেবেছিলেন?  যেমন ধরেন ...


"প্রত্যেকেই নিজ নিজ পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু তোমার রব অবগত আছেন, কে সর্বাধিক সঠিক পথে আছে।"(১৭:৮৪) 


আমি  আমার পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করছি। আমি সঠিক পথে আছি কিনা সেটাতো আমার /আপনার রবই অবগত আছেন। আপনি ভাবছেন আমি ভুলপথে আছি ,  সেই ধারনা থেকেই হয়তো বা এই আয়াত দিয়েছিলেন। এখনতো জানলেন একমাত্র আল্লাহ অবগত আছেন কে সর্বাধিক সঠিক পথে আছে। আমাদের কাজ প্রচার করা , বলে যাওয়া। 


"যারা ঘাড় বাঁকিয়ে বিতর্ক করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্যে, তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা। ইহলোকে এবং কেয়ামতে আল্লাহ তাকে আস্বাদ করাবেন দহন যন্ত্রণা।" (22: 9)


আপনার মনে হতেই পারে আমি ঘাড় বাঁকিয়ে বিতর্ক করছি , কিন্তু আমি তো আল্লাহর পথেই মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছি , সর্বান্তকরনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের কথাই আমার প্রতিটি পোস্টে লিখেছি। যতক্ষন পর্যন্ত লাঞ্ছনা না পাচ্ছি , ততক্ষন মনে হয়না আমার যদি ভুল হয় সেটা জানতে পারব।  অর্থাৎ আল্লাহই জানাবেন। 


"আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ'-(17:23)

কে কাকে কেন বলতেছে?????""


 ঠিকই বলেছেন , আল্লাহ গৃহস্তকে সাবধান করছেন।   এটা যদি আল্লাহর আদেশ (হুকুম) হোত তাহলে কারো পক্ষে ব্যভিচার করা সম্ভব হোত না। আল্লাহ হুকুম করেছেন , আর সেটা বাস্তবায়ন হয় না , এমন ভাবনা কিভাবে আসতে পারে। 


চোর চুরি করে স্বভাবে না অভাবে? স্বভাবে যারা চুরি করে তাদের ও কোন দোষ নেই , কারন  এরা মানসিক প্রতিবন্ধী। এদেরকে আল্লাহ এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। এদের অবস্থা সেই কাফেরের মতো, সাবধান কর আর না কর একই কথা। অভাব আল্লাহর সৃষ্টি। অভাবের তাড়নায় মানুষ বাধ্য হয় (আল্লাহ বাধ্য করেন) চুরি করতে। 


"ফেরাউন তার কওমকে পথভ্রষ্ট করেছিল। আর সে সঠিক পথ দেখায়নি। (20:79)"


পথ দেখান আল্লাহ , পথভ্রষ্ঠ ও করেন আল্লাহ। এর সমর্থনে আয়াত দিয়েছি আগে। চাইলে আবার ও দিব ইনশা আল্লাহ। ফেরাউন এখানে নিমিত্ত মাত্র।


একজন মন্তব্য করেছেন - 

এভাবে মানুষকে অন্ধকারে নিয়ে জান, 

যাই করেন সমস্যা নাই, সবই আল্লাহ করেছেন, নাউজুবিল্লাহ


আমার ভাবনা-  আমার যুক্তি অনুযায়ী মন্তব্য কারী যে মন্তব্য করেছেন সেটাতো তাকে দিয়ে আল্লাহই করেছেন। তাহলে আমি কি সত্যি সত্যি মানুষকে অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছি?  আবার আমি যা লিখছি , সেটাও তো আল্লাহ লেখাচ্ছেন। তাহলে কোনটা সত্য? আমি না মন্তব্যকারী? এর সমাধান কোরান। কোরান হলো ফোরকান , সত্য মিথ্যার ফয়সালাকারী।  আপ্নাদের বিচার্য - আমি যা লিখছি তার ভিত্তি কোরানের আয়াত কিনা? বা আমি ভুল বিশ্লেষন করছি কিনা?


আরেকটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, উনি নাউজুবিল্লাহ বল্লেন কেন? আউজুবিল্লাহ কেন বলেন নি?  আমাদের দেশের মানুষ সাধারনত  না বোধক বা খারাপ কিছুর পরেই নাউজুবিল্লাহ বলে। এটা ভুল ভাবনা। আউজুবিল্লাহ মানে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই । নাউজুবিল্লাহ মানে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই ।  নাউজুবিল্লাহর 'না' মানে আমরা, না নয়।


এবার আর আমার কথা নয় , কোরানই বলুক.... 


সুরা কাহাফ(18)


(32

‎وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا

আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র।

Set forth to them the parable of two men: for one of them We provided two gardens of grape-vines and surrounded them with date palms; in between the two We placed corn-fields.

(33

‎كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِم مِّنْهُ شَيْئًا ۚ وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا

উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি।

Each of those gardens brought forth its produce, and failed not in the least therein: in the midst of them We caused a river to flow.

(34

‎وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا

সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।

(Abundant) was the produce this man had : he said to his companion, in the course of a mutual argument: "more wealth have I than you, and more honour and power in (my following of) men."

(35

‎وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَـٰذِهِ أَبَدًا

নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বললঃ আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।

He went into his garden in a state (of mind) unjust to his soul: He said, "I deem not that this will ever perish,

(36

‎وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا

এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব।

"Nor do I deem that the Hour (of Judgment) will (ever) come: Even if I am brought back to my Lord, I shall surely find (there) something better in exchange."

(37

‎قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا

তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?

His companion said to him, in the course of the argument with him: "Dost thou deny Him Who created thee out of dust, then out of a sperm-drop, then fashioned thee into a man?

(38

‎لَّـٰكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا

কিন্তু আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না।

"But (I think) for my part that He is Allah, My Lord, and none shall I associate with my Lord.

(39

‎وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا

যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।

"Why didst thou not, as thou wentest into thy garden, say: '(Allah)'s will (be done)! There is no power but with Allah.' If thou dost see me less than thee in wealth and sons,

(40

‎فَعَسَىٰ رَبِّي أَن يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِّن جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاءِ فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا

আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে।

"It may be that my Lord will give me something better than thy garden, and that He will send on thy garden thunderbolts (by way of reckoning) from heaven, making it (but) slippery sand!-

(41

‎أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَن تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا

অথবা সকালে তার পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তুমি তা তালাশ করে আনতে পারবে না।

"Or the water of the garden will run off underground so that thou wilt never be able to find it."

(42

‎وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَىٰ مَا أَنفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا

অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।


এবার আমি কিছু প্রশ্ন করব আপ্নারাই উত্তর খুজুন ...


  1. কে বাগান দিয়েছে , খেজুর গাছ দিয়ে বাগানকে ঘিরেছে  মাঝখানে করেছে শস্যক্ষেত্রউত্তর পাবেন 32 নং আয়াতে। 
  1. কে যা চায় তাই তাই হয়আল্লাহ ছাড়া আর কারো কি শক্তি আছে আয়াত 39 দেখুন। 
  2. আয়াত 42  বলছে " হায়আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম। "  আল্লাহর সাথে লোকটি কাকে শরিক করেছিল?


একজন লিখেছেন...

আমি ইচ্ছে করেছি বলেই আল্লাহর ইচ্ছেই লিখেছি। আমি এটাই কুরআন থেকে জেনেছি। আয়াত নং ১৩:১১


আমার উত্তর....


প্রথমে ভাবুন ...

আপনি আল্লাহর দাঁস , নাকি আল্লাহ আপনার দাঁস? আপনি ইচ্ছা করার পরে আল্লাহর ইচ্ছা হলে , আল্লাহতো আপনার দাঁস হয়ে যায় , নয় কী?


এই আয়াতটি প্রায় সকল মুসলমান জানে।  কিন্তু পুরোটা না , আয়াতের একটি অংশ জানে। সেই অংশটা হলো  - "আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।"


চলুন আপনার উল্লিখিত আয়াত নিয়ে বিশ্লেষন করা যাক ...


["১৩:১১ لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ 

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।"]


এই আয়াতের অনুবাদে কিছু ভুল আছে , আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়াও আমরা নিজেরা কিছু করতে পারি এই প্রচলিত ধারনার উপরে ভিত্তি করেই অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদে ভুল ঠিক করার আগে চলুন যে অনুবাদ করা হয়েছে সেটাই দেখি। আগে পিছের আয়াতগুলো পড়ুন তাহলেই বুঝবেন আমি কি বলছি। 


প্রতিটি মানুষকেই আল্লাহ হেফাজত করছেন তা সে বিশ্বাসী হোক বা কাফের হোক বা মুনাফিক হোক। এই আয়াতেই দেখুন আল্লাহ বলছেন "আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।" জাতি চাইল বা না চাইল সেটার কোন মূল্য নেই , আল্লাহ কি চাচ্ছেন সেটাই বড় কথা। কেননা আল্লাহ বিপদ চাইলে কেউই রদ করতে পারবে না বা কোন সাহায্যকারী ও পাবেনা। তাহলে এই একি আয়াতে যে অনুবাদ করা হয়েছে "আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।" হয় এই অনুবাদটি ভুল , নয় পরস্পর বিরোধী কথা বলছেন আল্লাহ। আল্লাহ পরস্পর বিরোধী কথা বলতে পারেন না। তাহলে এই উপসংহারে আসতে পারি অনুবাদটি ভুল। 


{শব্দগত সঠিক অনুবাদ.. إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ

নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতিকে পরিবর্তন করেন না , যতক্ষন তার মনে যা কিছু আছে তা পরিবর্তন করেন।}


এবার আপনারা যে কোন মোল্লা , স্কলারকে জিজ্ঞাসা করুন যারা আরবি জানে , এই অনুবাদে কোন ভুল আছে কিনা , থাকলে কোন শব্দটি ভুল বা কোন আরবি শব্দের অনুবাদ বাদ দিয়েছি কিনা বা যোগ করেছি কিনা?


এক জন লিখেছেন- 


পথ দেখান আল্লাহ্‌, পথভ্রষ্ট করেনও আল্লাহ্‌!


আপনিতো এভাবে খণ্ডিত আয়াত প্রকাশ করে আল্লাহ্‌-কে স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচারী বানিয়ে দিচ্ছেন! রাব্বিগফিরলী!


আমার উত্তর- 


আল্লাহ যে স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী এব্যাপারে আপনার কি সন্দেহ আছে?  আচ্ছা বলুনতো স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী কাকে বলে? যে যা ইচ্ছা তাই করে এবং কারো কাছে জবাবদিহি করে না , তাকেই তো স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী বলে। নয় কী? পৃথিবীর স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারীর হাত থেকে মুক্তি আছে কারন তাদের মৃত্যু আছে। আল্লাহর মৃত্যু নেই। আল্লাহর কবল থেকে সৃষ্টির কারো বা কোন কিছুর মুক্তি নেই। স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বা ঘৃনাভরে জড় / জীব সকলেই আল্লাহর নির্দেশ , বিধান মেনে চলেছে ও চলবে। 


আল্লাহ যা চান, তাই হয়। (18:39)


আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের (সৃষ্টির) কোন পছন্দ নেই। (28:68)


যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।(7:178)


"২:২৮৪ অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। "


১৭:৪১ আমি এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছি, যাতে তারা চিন্তা করে। অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।


বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।(13:33)


৩৫:৮ যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।


কোরানে বিশ্বাসী যারা এখনো ভাবছেন তাদের নিজস্ব ইচ্ছা আছে এবং সেই ইচ্ছা অনুযায়ী মুমিন হতে পারেন  বা কাফের হতে পারেন , সৎ কাজ করতে পারেন বা পাপ করতে পারেন , তারা এখনো কোরানে বর্ণীত আল্লাহকে চেনেন নি। তারা প্রচলিত ধারনাকে আকড়ে ধরে আছেন। 


জন্মের পূর্ব থেকেই আল্লাহ কিছু বান্দাকে পছন্দ মতো তৈরি করেছেন , যাদেরকে গাইড করবেন। বাকি সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ন করবেন। 


২৭:৫৯ বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি!


৩৭:৭৪ তবে আল্লাহর বাছাই করা বান্দাদের কথা ভিন্ন।


৩৮:৮৩ তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার বাছাইকৃত (الْمُخْلَصِينَ ) বান্দা, তাদেরকে ছাড়া।


২৮:৬৮ আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের (সৃষ্টির) কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।


৩৫:৩২ অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেছি। তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নির্দেশক্রমে কল্যাণের পথে এগিয়ে গেছে। এটাই মহা অনুগ্রহ। 


৩:৭৪ তিনি যাকে ইচ্ছা নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।


২:১০৫ ….. আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ ভাবে স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা।


৭:১২৮ মূসা বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।


এখন আবার প্রশ্ন করেন না , আল্লাহ তাহলে ন্যায় বিচারক কেমনে হলেন? আল্লাহ এমনই। শুধু একটা কথাই বলতে পারি আল্লাহর বিচার আর মানুষের বিচার ভিন্ন। মানতে চান মানুন , না মানতে চান না মানুন।


একজন প্রশ্ন করেছেন - আপনি কী জাবরিয়া মতাদর্শী? আপনার বহু post পড়েছি। একজন কুরআন নিয়ে চিন্তনকারী গবেষণাকারি বলেই জানি। এ post টা কিন্তু আগেকার মত যাচ্ছে না।


আমার উত্তর-

সালাম। না আমি কোন মতাদর্শী নই। কোরান পড়ে যা মনে হচ্ছে সেটাই লিখছি। মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে একটা ভুল ধারনা নিয়ে আছে , বা বলতে পারেন যার যার মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের মনে আল্লাহকে কল্পনা করে রেখেছে। আমি কোরানের আলোকে কল্পনার সেই মূর্তিকে ভাঙার চেষ্টা করছি। আল্লাহ স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী , কুচক্রী , প্রহসনকারী , কুবিচারক , যেমনই হন না কেন তার হাত থেকে নিস্তার নেই। এটা জেনেই আমাদের আত্মসমর্পন করা লাগবে এবং এটা যদি করতে পারি তখনই হবে প্রকৃত আত্মসমর্পন, মুখের দাবী নয়।


এই উত্তর পড়ে আমার আপন ভাগ্নে লিখেছে -

মামা, আপনি যে বিশেষনে আমাদের প্রতিপালকের উপমা দিলেন এর সপক্ষে একটি আয়াতও কুরআনে নেই বরং এর বিপরীত’ধমী উপমা কুরআনে বিদ্যমান।আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রসংশিত।


আমার উত্তর-

ভাগ্নে , তুমি কোরান ঠিক মতো বুঝে পড়ছ না বা আমার পোস্টগুলো ও মনে হয় পড়ছ না। আমি আল্লাহর যে বিশেষন দিয়েছি , তার প্রতিটির সমর্থনে কোরানের আয়াত আছে। আগেই বলে নেই মানুষের বিচার দিয়ে আল্লাহর বিচার করতে যেও না , তাহলে দিশা হারিয়ে ফেলবে। 


মানুষের বিচারে স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী কে? যে ব্যাক্তি যা ইচ্ছা তাই করে এবং তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করা লাগে না। এবার নিচের আয়াত পড়...


আল্লাহ যা চান, তাই হয়। (18:39)


আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের (সৃষ্টির) কোন পছন্দ নেই। (28:68)


যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।(7:178)


"২:২৮৪ অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। "


কুচক্রি /ছলনাকারী-  মানুষ চক্রান্ত করে , আল্লাহ ও চক্রান্ত করেন। مَكَرَ মানে চক্রান্ত করা। নিচের আয়াতে দেখ আল্লাহ ও কাফেরের জন্য একই শব্দ ব্যবহার হয়েছে। অনুবাদকারীরা আল্লাহর জন্য কৌশল আর মানুষের জন্য চক্রান্ত অনুবাদ করেছে।  এক যাত্রায় দুই ফল হয় না। 


3:54 এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও চক্রান্ত  করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম চক্রান্তকারী। 

৮:৩০ আর কাফেরেরা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তখন তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম।

১৩:৪২ তাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা চক্রান্ত করেছে। আর সকল চক্রান্ত তো আল্লাহর হাতেই আছে। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু করে। কাফেররা জেনে নেবে যে, পর জীবনের আবাসস্থল কাদের জন্য রয়েছে।


প্রহসনের পরীক্ষা-  আগের এক পোস্ট আবার দিলাম। 


ধরেন একটি ক্লাশের সকল ছাত্রকে না শিখিয়ে শুধুমাত্র  একটি ছাত্রকে শিক্ষক একটি অঙ্ক শেখালেন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে শুধুমাত্র ওই অঙ্কটিই আসল। স্বভাবতই ওই একটি ছাত্রই পাশ করল , বাকি সবাই ফেল করল। এখন শিক্ষক বাকি ছাত্রদের বল্লেন তোমরা কিছুই জান না , স্বীকার করে নাও , যে ছাত্রটি পাশ করেছে সে সবার চেয়ে বুদ্ধিমান ও সবার সেরা। সবাই কি ঐ ছাত্রটিকে সেরা বলে মানবে? না , কারন এটা  যে একটা প্রহসনের পরীক্ষা সে ব্যপারে কারো দ্বীমত আছে কী?  নেই। যার দ্বীমত আছে , তার মাথায় যে ছিট আছে সে ব্যপারে আমার অন্তত সন্দেহ নেই।


ঠিক ওই একই কাজ করেছেন আল্লাহ আদমের সাথে। আদমকে সবকিছুর নাম শিখিয়ে ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন ঐগুলোর নাম কী? স্বভাবতই ফেরেশতারা পারল না এবং  আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন আদমকে সিজদা করতে অর্থাৎ স্বীকার করে নিতে যে আদম তাদের থেকে সেরা। সবাই স্বীকার করল ইবলিস বাদে।  এই হলো আল্লাহর পরীক্ষা।


এখন আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীতে এই ঘটনার বিচার করলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে শুধু ইবলিসের মাথায় ছিট নেই , বাকি সবার মাথায় ছিট আছে। কিন্তু আল্লাহর নৈতিকতা ও বিচার আমাদের মানুষের নৈতিকতা ও বিচার থেকে ভিন্ন। এটা আমরা যত তাড়াতাড়ি হৃদয়ঙ্গম করব তত তাড়াতাড়ি আমরা মুসলিম হব , শুধু নামে বা মুসলিম দাবী করলে কাজ হবে না। আল্লাহ মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরন করতে নিষেধ করেছেন , মুসলিম নাম নিয়ে নয়। 


আরো কোন বিশেষন বাদ গেলে জিজ্ঞাসা কর , কোরানের আয়াত দিয়ে উত্তর দেব।


কোরান অনুসারী অনেক ভাই বোন স্বাধীন ইচ্ছা ও তাকদির নিয়ে আমার লেখা পড়ে হয়ত বা হতাশ / নিরাশ হয়ে পড়েছেন। নারে ভাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ স্বেচ্ছাচারী হলেও আল্লাহ পরম দয়ালু "আররহমানুর রহিম"।


২৫:৫৮-৫৯ আপনি সেই চিরঞ্জীবের উপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই এবং তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করুন। তিনি বান্দার গোনাহ সম্পর্কে যথেষ্ট খবরদার। তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর।


 স্বেচ্চাচারী হওয়ার একটি ভাল দিক হলো আল্লাহ তকদির বা বিধিলিপির গন্ডিতে আবদ্ধ নন। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কারো বিধিলিপি বদলে দিতে পারেন। একারনেই বলেছেন যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহর রহমত থেকে কাফেররা ছাড়া আর কেউ নিরাশ হয় না। 


১২:৮৭ বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।


৩৯:৫৩ বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


আমরা ভাগ্যবান যে কোরানের মাধ্যমে আল্লাহ ভাল মন্দ দুটি রাস্তা দেখিয়েছেন , এমনকি কেমন করে ক্ষমা চাইতে হবে তাও শিখিয়েছেন। এর ফলে  ইহ জীবনেই অপরাধীর পথ তার নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 


৬:৫৪ আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিনঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।

৬:৫৫ আর এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি-যাতে অপরাধীদের পথ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

 

জানি আল্লাহই সব কিছু চালান , ফলে কোরানে বিশ্বাসীরা অনেকেই আপাতদৃষ্টে ইচ্ছাকৃত , অনিচ্ছাকৃত বা ভুলে মন্দ কাজ করে ফেলেন। যারা কোরানে বিশ্বাসী , আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা চাইতে বলেছেন। 


৭:১৫৩ আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।


১১:৫২ আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।


আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার বেশ কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করব আদমকে যে দোয়াটি শিখিয়েছিলেন। 

২:৩৭ অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।

৭:২৩ তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই  ধ্বংস হয়ে যাব।


আপনি আল্লাহকে ভয় করেন নাকি ভালবাসেন? যদি ভয় করেন তবে কেন?


আমি আল্লাহকে ভয় করি। কারন আল্লাহ স্বেচ্ছাচারী , স্বৈরাচারী , ধ্বংশকারী , চক্রান্তকারী, দুর্যোগ প্লাবন ভূমিকম্প সৃষ্টিকারী । আরো বলব? থাক আপনারাই খুজে বের করুন। 


ভয় হল প্রকৃত "ভালোবাসা" বা আল্লাহর প্রশংসা। মানুষ প্রকারান্তে তাদের বিভ্রান্তিকে   ভালবাসে। দয়ালু ,ভাল , নির্বিষকে কেউ ভয় পায় না। যারা দেখতে পারে না, এবং শুনতে পারে না, এবং বুঝতে পারে না তারা আল্লাহ সম্পর্কে নির্ভীক। যেমন একটি বধির, বোবা, এবং অন্ধ ব্যক্তিকে একটি বিচ্ছু পূর্ন ঘরে আটকে রাখলে সে কিছুই করতে পারেনা। অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত্রি। সত্য হল ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস।


আল্লাহকে ভয় কর এই নির্দেশ দিয়ে বহু আয়াত আছে। নিচে কিছু আয়াত দিলাম ভাবুন-


৩:১২৩ কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।

৩:১৩০ ... আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।

৩:২০০ হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।


৪:১ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, 


২:২০৬ আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার পাপ তাকে অহঙ্কারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং তার জন্যে দোযখই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা।


আমার বিশেষ পছন্দের দুটি আয়াত-

৮:২৯ 

হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান।


৩৫:২৮ অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।


51:56 وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব  জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।


আমি জানিনা এবাদত বলতে আপনি কি বোঝেনআমি বুঝি আলাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাসত্ব করা , যেটা আমরা সকল সৃষ্টি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় করে চলেছি। 


13:15 আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে  ভূমন্ডলে আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায়।


এবার আসি সৃষ্টির কারন নিয়ে আল্লাহ কি বলেছেন সেটা দেখি-


3:191 যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।


21:16-17 আকাশ পৃথিবী এতদুভয়ের মধ্যে যা আছেতা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতামতবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতামযদি আমাকে করতে হত।


44:38 আমি নভোমন্ডলভূমন্ডল  এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।


38:27 আমি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা। অতএব, কাফেরদের জন্যে রয়েছে দূর্ভোগ অর্থাৎ জাহান্নাম।


38:66-69 তিনি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, পরাক্রমশালী, মার্জনাকারী। বলুন, এটি এক মহাসংবাদ, যা থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ। ঊর্ধ্ব জগৎ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না যখন ফেরেশতারা কথাবার্তা বলছিল।


সৃষ্টির কারন কিছু কি জানা গেল?


Md Manik Ctg​​  এটা নিয়ে ভাবুন। যেদিন আপনি বুঝবেন মানুষের দিয়ে পাপ কাজ করার পরে ও কিভাবে নিখুঁত , সেদিন আপনার কোরানে পরিপূর্ন বিশ্বাস আসবে । আমি একরকমভাবে বুঝেছি , আপনি সেভাবে বুঝবেন সেটা হবার নয়। একারনেই ভিন্ন ভিন্ন মত। আমি কিভাবে বুঝেছি সেটা লেখা সময়সাপেক্ষ। আল্লাহ চাইলে লিখব একদিন ইনশা আল্লাহ। 


27:88 তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর, অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত (নিখুঁত)। তোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন।


67:3 তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত (খুঁত) দেখতে পাবে না।আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?



মোঃ রকিব হোসেন কোন আয়াত দেয়ার আগে নিজে একটু ভাবুন , দেখুন অনুবাদটি ঠিক আছে কিনা? আমি যে সব সমস্যার জবাব জানি এমনটি ভাবার কোন কারন নেই। আল্লাহর আয়াতগুলোর মাঝে সমন্বয় করার দায়িত্ব সকল মুসলমানের। 

2:158 وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا মানে- "এবং যে (আল্লাহর আদেশ/ইচ্ছা) মেনে ভাল কিছু করে"


আয়াতটিতে স্বেচ্ছায় বলে কোন শব্দ নেই। 


تَطَوَّعَ মূলে আছে ط و ع যার মানে - মান্য করা। আতিউল্লাহ ওয়া আতিউর রসূলের মূলে  

এই ط و ع


15:39-41 সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট( أَغْوَيْتَنِي ) করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব। আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত। আল্লাহ বললেনঃ এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।


7:14- 16 সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল। সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত (পথ ভ্রষ্ট أَغْوَيْتَنِي) করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো।


আরো গভিরে যদি ভাবেন - এগুলো সবই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করলেন পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য। ইব্লিস যদি সেজদা করত , তাহলে শয়তান ও হয়না , বা বেহেস্ত থেকে আদমকে পৃথিবীতে পাঠানোর কারন ও ঘটে না , বা যাদেরকে দিয়ে দোযখ ভর্তি করবেন সেই পাপিষ্ঠদেরকে দোযখে পাঠানোর কারন ও তৈরি হয় না। 


এর উত্তর বিভিন্নভাবে দেয়া যায়- সবগুলোই আমার কল্পনা , কোরানে আপনার মত কেউ এমন প্রশ্ন করেনি ফলে কোরানে এর উত্তর নেই। সুতরাং আমার উত্তরকে পছন্দ না হলে ডাস্টবিনে ফেলুন। 


1)শয়তান কিন্তু এই প্রশ্ন করেনি। বলেনি আল্লাহ তুমি তো ছলনাময়ী , আমাকে পথভ্রষ্ট করে আবার আমাকেই কেন শাস্তি দিচ্ছ? এই প্রশ্ন না করার দুটি কারন থাকতে পারে। শয়তান জানত আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন , আল্লাহর কাছে নালিশ করে লাভ নেই। অথবা সে ছলনা কি জিনিষ তা জানত না কারন আল্লাহ তাকে ছলনার জ্ঞান দেন নি , যেমনটি ফেরেশতারা নাম জনত না। 


2) আল্লাহর কোন কিছুর প্রয়োজন পড়েনা বা কারো কাছে দায় বদ্ধ ও নন।  তিনি শয়তানের কাছে কখনো প্রতিশ্রুতি দেন নি যে তিনি তার সাথে ছলনা করবেন না। 


3) তিনি আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছেন এবং সেভাবেই শয়তানকে পথভ্রষ্ট করেছেন। মো:রকিব হোসেন কি ভাবল না ভাবল তাতে তার কিছুই যায় আসে না। 


4) রকিব হোসেনকে আল্লাহ খাওয়া দিয়ে বাচিয়ে রেখেছেন , এর মানে কি এই যে আল্লাহ রকিবের মুখাপেক্ষি? তাকে বাচিয়ে না রাখলে আল্লাহ বিপদে পড়ে যাবেন?


আরো লিখব?


আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না-


3:9 হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না।


30:6 আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হয়ে গেছে। আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি খেলাফ করবেন না। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।


39:20 কিন্তু যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, তাদের জন্যে নির্মিত রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ। এগুলোর তলদেশে নদীপ্রবাহিত। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না।


এরুপ আরো আয়াত আছে। এর পরে ও কথা থেকে যায়। আল্লাহকে কোন গন্ডিতে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। কারন আল্লাহ সার্বভৌম। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দরকার পড়ল , তাহলে আল্লাহ আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন , সেটা আমাদের ভুলিয়ে দেবেন। এটা খুবই সহজ আল্লাহর পক্ষে। যারা কোরান পড়েছেন তারা জানেন , জন্মের পূর্বে সকল মানুষকে আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেছিলেন ," আমি কি তোমার রব নই?" সকলেই স্বীকার করেছিল 'হ্যা'। কারো কি এঘটনার কথা মনে আছে? আমার নেই।