Saturday, July 15, 2017

ফিরাউন , সামিরি কে বা কারা?


কোরানের যে চিরাচরিত অনুবাদ আমরা পড়ে থাকি , সেটা হাদিস ও রুপকথা নির্ভর। কোরানকে তারতিল সহকারে অর্থাৎ কোরানের এক অংশকে অন্য অংশগুলোর সাথে মিলিয়ে পড়লে আমরা যে চিত্র পাই তা চিরাচরিত অনুবাদের সম্পূর্ণ বিপরিত। চিরাচরিত অনুবাদ যারা পড়েছেন তারা সকলেই ফিরাউন , সামিরি ও সোনার বাছুরের গল্প জানেন এবং কিভাবে সামিরি মাত্র মূসার ৪০ দিনের অনুপস্থিতীতে বণী ইস্রাইলের মুমিনদেরকে সোনার বাছুর পূজায় রাজি করিয়েছিল। এটা কি সম্ভব? তখনকার মানুষ কি এতটাই গাধা বা বেকুব ছিল যে আল্লাহর কেরামতি (সমুদ্র ভাগ হয়ে যাওয়া) নিজ চোখে দেখার পরেও মাত্র ৪০ দিনে সোনার বাছুর পূজায় লেগে গেল? যেখানে মূসা তাদেরকে পই পই করে মূর্তী গড়তে নিষেধ করেছিল। না সম্ভব না। কোরানে কোন সোনার বাছুরের কথা বলা হয় নি বা সেই বাছুর হাম্বা স্বরে ডাকেও নি।
১৮:৫৪ নিশ্চয় আমি এ কোরানে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়। 
ফিরাউন فرعون শব্দের মূলে আছে فرع + ون
فرع অর্থ নেতৃত্ব দেয়া , নেতা।
ون আরবিতে নামের শেষে 'উন' ব্যাবহার হয় আদরকরে ছোটদের ডাকার জন্য , যেমন আমরা বাবু বলে ডাকি। জায়েদ-জায়দুন, সাদ-সাদুন ইত্যাদি। বড়দের নামের শেষে 'উন' যোগ হয় তাচ্ছিলার্থে ছোট করে দেখানোর জন্য। 
ফিরাউন অর্থ ছোট উপাস্য (إِلَهٍ god)/ পাতি নেতা , যে নিজেকে জনগনের ভাগ্যবিধাতা মনে করে। আমাদের দেশের কথা নাই বল্লাম, আজকের দুনিয়ায় কিম জং উন , পুটিনের মতো ফিরাউন দেশে দেশে বিদ্যমান।
(২৮:৩৮ ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য إِلَهٍ আছে।)
কোরানে যত নাম আছে , সকলেরই একটি মানে আছে। ভবিষ্যতে একে একে সেগুলো নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।

ইব্রাহিম কে বা কারা?


এটা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে ইব্রাহিম অর্থ কী? এই নামের দুইটি অংশ- ইব্রা ও হিম। 
ইব্রা অর্থ- برأ: مقاييس اللغة
البرء وهو السلامة من السقم অসুখ থেকে সুস্থ / রোগমুক্ত হওয়া। (শারীরিক নয় আত্মার অসুখ)। 
হিম অর্থ- الهاء والياء والميم كلمة تدل على عطش شديد. فالهيمان: العطش প্রচন্ড তৃষ্ণা।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ আত্মাকে রোগমু্ক্ত করার প্রচন্ড তৃষ্ণা অনুভব করে , তাকেই ইব্রাহিম বলে। কোরানে থেকে জানতে পারি 'বারি' বা চিকিৎসক হলেন আল্লাহ। (২:৫৪ فَتُوبُواْ إِلَى بَارِئِكُمْ)। 
এই প্রচন্ড তৃষ্ণার কারনেই ইব্রাহিম পেরেছিলেন বাপ দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করে নিজের বুদ্ধি বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজের আত্মাকে শির্কমুক্ত / রোগমুক্ত করতে। ইব্রাহিমকে বলা হয় 'উসওয়াতু হাসানা' (৬০:৪) , যেমনটি মুহাম্মদকেও বলা হয়েছে (৩৩:২১)। এর অর্থ দাড়ি রাখা নয় বা টাখনুর উপরে কাপড় পরা নয় যেমনটি উলামারা বলে থাকে , বরং ইব্রাহিমের উদাহরনকে সামনে রেখে মুসলমানরা নিজের আত্মাকে রোগমুক্ত শির্কমুক্ত করতে পারে।
৩:৬৭ ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, কিক্তু তিনি ছিলেন ‘হানীফ’ অর্থাৎ, সব মিথ্যা ধর্মের প্রতি বিমুখ এবং মুসলিম, এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।

Monday, July 10, 2017

নবী কে?



নবী শব্দের উৎপত্তি নাবা (ن ب أ) থেকে। নাবা অর্থ সংবাদ / খবর/ তথ্য। যে সংবাদপ্রাপ্ত / অবহিত , তাকেই নবী বলে। আল্লাহ মনোনীত নবীদের কাছে ওহী করে কিতাব পাঠান , যার ভিতরে থাকে মানুষের জন্য সংবাদ /দিকনির্দেশনা। এই কিতাব সীল করা (খাতামা) , অর্থাৎ নুতন কোন সংবাদ /দিকনির্দেশনা এই কিতাবে ঢুকবে না বা এর থেকে বাদ ও যাবে না।

কোরান আল্লাহর কিতাব। সুতরাং এই কোরান পড়ে , বুঝে যারা বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সেই অনুযায়ী নিজের জীবণ পরিচালনা করবে , তখনই বলা যাবে এরা আল্লাহর নাবা বা সংবাদপ্রাপ্ত। অর্থাৎ এরা সকলেই নবী। এর অর্থ দাড়ায় শেষ নবী বলে কিছু নেই।

কোরানে আল্লাহ 'ইউনাব্বিউ' বলে সাধারন মানুষকে সংবাদ দিচ্ছেন , প্রচলিত বিশ্বাসের নবী রসূলকে নয়। আমরাই যে নবী সেটা জানতে ৬৫:১ আয়াত পড়ুন। যেখানে আমাদেরকে আল্লাহ নবী বলে সম্বোধন করেছেন। ( নবীর পরে সবকিছুই বহুবচন)

"হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।"