Friday, January 26, 2018

কেয়ামত কবে হবে?

কেয়ামত কবে হবে , সর্বকালের মুসলমানদের তা জানার আগ্রহ অপরিসীম। কোরানিক সত্য হলো , আমাদের নবীর ভবিষ্যতের কোন জ্ঞান ছিলনা বা কেয়ামতের দিনক্ষন ও জানা ছিলনা। এমনকি তিনি জানতেন ও না , তার বা তার উম্মতের ভবিষ্যত কি? এ ব্যাপারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন : "আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।৬:৫০" এবং "বলুনঃ আমি জানি না তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয় আসন্ন না আমার পালনকর্তা এর জন্যে কোন মেয়াদ স্থির করে রেখেছেন। ৭২:২৫" এবং "অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিনঃ আমি তোমাদেরকে পরিস্কার ভাবে সতর্ক করেছি এবং আমি জানি না, তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা নিকটবর্তী না দূরবর্তী। ২১:১০৯" এবং এর থেকেও আর কত পরিস্কার ভাবে আল্লাহ বলবেন : " বলুন, আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয়। আমি স্পষ্ট সতর্ক কারী বৈ নই। ৪৬:৯"  



এত কিছুর পরেও আরো অনেক আয়াত আছে , যেখানে দৃঢ় ভাবে বলা হয়েছে যে কবে কেয়ামত হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন। "নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। ৩১:৩৪" এবং "কেয়ামতের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই জানা। ৪১:৪৭" এবং "বরকতময় তিনিই, নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু যার। তাঁরই কাছে আছে কেয়ামতের জ্ঞান এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ৪৩:৮৫"



উপরের আয়াতগুলো থেকে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি যে , আমাদের নবী ভবিষ্যত জানতেন না এবং কেয়ামত কবে হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। যদিও একটি আয়াতই যথেষ্ট ছিল , তবুও মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে নবীকে বারে বারে একি প্রশ্ন করতে থাকে। নবী ও যথারীতি উত্তর না দিয়ে ওহীর অপেক্ষা করেন । ফলে প্রতিবারেই ওহীর মাধ্যমে একি উত্তর আসে এই বলে যে , রসূল ভবিষ্যত জানেন না এবং কেয়ামতের দিনক্ষন শুধু আল্লাহই জানেন।



প্রতিবারি যখনি নবীকে কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতো , তিনি পূর্বে নাযিল হওয়া আয়াতের উপর নির্ভর করে নিজের থেকে কোন উত্তর দিতেন না এবং যদিও তিনি জানতেন যে পূর্বে নাযিল হওয়া আয়াতের পরিপন্থি কোন উত্তর আসা সম্ভব না , তবুও তিনি ধৈর্য্যের সাথে ওহীর অপেক্ষা করতেন। "আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। ৭:১৮৭-১৮৮"  



মানুষ এই উত্তরে সন্তুষ্ট না। তারা সঠিক দিনক্ষন জানতে চায়। আবারো প্রশ্ন। আবারো অপেক্ষা। উত্তর আসে - "তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কখন হবে? এর বর্ণনার সাথে আপনার (মুহম্মদের) কি সম্পর্ক ? এর চরম জ্ঞান আপনার পালনকর্তার কাছে। যে একে ভয় করে, আপনি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবেন। ৭৯:৪২-৪৫" 



এতক্ষন যে ঘটনাগুলো বর্ননা করলাম , তা সকলি মক্কার ঘটনা , হিজরতের আগে। নবী মদিনায় আসার পরে , মদিনা বাসীর ও একি প্রশ্ন , কেয়ামত কবে হবে? নবী আগের আয়াতগুলোর উপরে ভিত্তি করে উত্তর দিতে পারতেন , কিন্তু তিনি তা না করে আবারো আল্লাহ্‌র নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। ওহী আসে - "লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই।33:63"



এভাবেই নবীর জীবদ্দশায় বারে বারেই বিভিন্ন মানুষ একি প্রশ্ন করেছে কিন্তু নবী আগে নাযিল হওয়া আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মানুষকে সন্তুষ্ট না করতে পেরে আল্লাহ্‌র ওহীর অপেক্ষা করেছেন এবং বারে বারে একি উত্তর পেয়েছেন। আল্লাহ্‌র বানী তো আর পরিবর্তন হয় না বা পরস্পর বিরোধী আয়াত আসা ও সম্ভব না। তাহলে মানুষকে কিভাবে সন্তুষ্ট করা সম্ভব? কোরানের তো পরিবর্তন সম্ভব না , কারন আল্লাহ নিজেই এর হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। যদিও কোরান থেকে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানতে পারি , রসূল ভবিষ্যত জানতেন না এবং কেয়ামতের কোন জ্ঞান তার ছিল না , তারপরেও আমরা রসূলের মৃত্যুর পরে হাদীসের নামে বিভিন্ন বর্ননা পাই - কেয়ামতের লক্ষন কি কি , জান্নাত ও জাহান্নাম বাসীদের হাল হকিকতের বর্ননা , তার উম্মতের ভবিষ্যত নিয়ে বিভিন্ন ভবিষ্যদবানী , যেমন কয় দল হবে , কারা সঠিক পথে থাকবে , কারা শাফায়াত পাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সহীহ হাদিসগ্রন্থগুলো এইধরনের সহীহ হাদীস দিয়ে পূর্ন , যা মানুষকে সন্তুষ্ট করে চলেছে কিন্তু এগুলো পরিস্কার কোরানিক শিক্ষার পরিপন্থি। 



এই সকল হাদীস কোরানের মহিমাকে বুঝতে সাহায্য করে , কারন এখন আমরা জানি কেন বারে বারে কেয়ামতের দিনক্ষন ও রসূলের ভবিষ্যত জ্ঞান নিয়ে এতগুলো আয়াত একি উত্তর নিয়ে বিভিন্ন সময়ে এসেছিল।



এস.এম.রায়হান আমাকে ও আইভিকে চ্যালেন্জ করেছিলেন মিথ্যা হাদীসের বর্ননা দেয়ার জন্য। একটি বা দুটি নয় , এমন শত শত হাদীস আছে যা কেয়ামত ও ভবিষ্যদবানী নিয়ে , যা পরিস্কার কোরানিক শিক্ষার পরিপন্থি। হয় কোরান সঠিক নয়তো হাদীস।