Wednesday, May 25, 2022

চিন্তার খোরাক


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


প্রথমে, আমি আপনাদের  নজরে আনতে চাই কোরানের আয়াতের বাংলা অনুবাদের নিম্নলিখিত স্পষ্ট অসঙ্গতি:


৫:৯০ হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা (আনসাব الْأَنصَابُ ) এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, তাঁর (শয়তানের) থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।


আরবি শব্দ "আনসাব" أنصاب এর অনুবাদ হিসেবে "প্রতিমা" শব্দটি বেছে নেওয়া হয়েছে। এই শব্দটি আসলে "নাসাব نصب"  এর বহুবচন, যার সহজ অর্থ হল: এমন কিছু যা নির্মিত  ও খাড়া করে স্থাপন করা হয়েছে (যেমন একটি স্মৃতিস্তম্ভ/সৌধ/পূজার বা বলীর বেদি)। অবশ্যই "পবিত্র" অংশটি বোধগম্য, কারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের কাঠামোকে "পবিত্র" করার প্রবণতা রয়েছে যা তারা নিজের হাতে তৈরি করে।


আরেকটি আয়াত যেখানে এই নাসাব শব্দটি থেকে উদ্ভুত 'নুসিবাত' দেখা যাচ্ছে তা হল:


৮৮:১৭-১৯ তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন (নুসিবাত نُصِبَتْ)   করা হয়েছে?


"স্থাপন" শব্দটি আরবি "নুসিবাত" نصبت এর অনুবাদ করা হয়েছে যা একই মূল

‎ "ن ص ب" থেকে স্পষ্টত উদ্ভুত। এই আয়াতটির আরও সঠিক অনুবাদ , যা এটিকে ৫:৯০ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে, এইরকম হবে: {এবং পাহাড়ের দিকে, কীভাবে তাদের খাড়া করা হয়েছিল} এটি দেখায় যে কীভাবে আল্লাহ একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নিজেই পাহাড়গুলিকে খাড়া করেছিলেন। 


অন্যত্র, কোরান মুহাম্মাদকে সম্বোধন করে এবং তার কাছে কেয়ামতের সময়ের একটি দৃশ্য বর্ণনা করে, যখন লোকেরা কবর থেকে বের হয়ে তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে ছুটে আসবে, যেন তারা সবাই একটি "নাসব" এর চারপাশে জড়ো হবে। এখন দেখা যাক কিভাবে এই একই শব্দটিকে বাংলা অনুবাদ করেছে:


৭০:৪২-৪৪ অতএব, আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন, তারা বাকবিতন্ডা ও ক্রীড়া-কৌতুক করুক সেই দিবসের সম্মুখীন হওয়া পর্যন্ত, যে দিবসের ওয়াদা তাদের সাথে করা হচ্ছে। সে দিন তারা কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হবে, যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের (নুসুবে نُصُبٍ) দিকে ছুটে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত; তারা হবে হীনতাগ্রস্ত। এটাই সেইদিন, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হত।


আমরা উপরের আয়াতে দেখতে পাচ্ছি যে একই শব্দ  نصب  অনুবাদ করা হয়েছে "লক্ষ্যস্থল" হিসাবে। আরও সঠিক বোঝাপড়া হবে এরকম: {যখন তারা কবর থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসবে, যেন তারা একটি খাড়া করে স্থাপন করা স্তম্ভের দিকে দৌড়াচ্ছে}। 


‎("ن ص ب ) এর অর্থ। আসলে এক এবং একই: নির্মিত এমন কিছু , যা খাড়া বা  সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।  


চিন্তার খোরাক (২)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


যাকে "কা'বা" বলে তা ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন, যে কিউব কাঠামোটিকে মুসলমানেরা পবিত্র বলে তৈরি করেছে। এটা কি একটা স্তম্ভ নয় যেটা মানুষ নিজের হাতে তৈরি করেছে? এটা কি জেরুজালেমের "হাহাকার প্রাচীর Wailing Wall " থেকে আলাদা, যা ইহুদিরা সলোমনের মন্দিরের অবশিষ্টাংশ বলে বিশ্বাস করে? (ইহুদিরা স্পষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণকে অস্বীকার করে চলেছে যা প্রমাণ করে যে "প্রাচীর" আসলে বাইজেন্টাইন রোমের একটি ধ্বংসাবশেষ, এবং ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে তৈরি নয়)। তারপরে আছে মুসলমানরা , যারা আরও বেশি বিপথগামী একারনে যে , এরা এই "প্রাচীর" এর প্রতি তাদের নিজস্ব দাবি কায়েম করেছে এবং এটিকে "বুরাকের প্রাচীর" (সেই প্রাচীর যেখানে বুরাক - ডানাওয়ালা ঘোড়া - অবতরণ করেছিল যখন এটি মুহাম্মাদকে মক্কা থেকে  প্যালেস্টাইন নিয়ে গিয়েছিল , তাদের রুপকথার "নাইট জার্নি" অর্থাৎ মিরাজের রাতে) নাম দিয়েছে। 


তথাকথিত বড়, মেঝ ও ছোট "শয়তান-স্তম্ভ" সম্পর্কে কি বলবেন , যখন হাজিরা তাদের নির্বোধ "হজ" অনুষ্ঠানের সময় এই স্তম্ভের দিকে পাথর ছুঁড়ে? এটাও কি নাসব ن ص ب  নয়? এই সমস্ত কাঠামো কি বুদ্ধ বা কৃষ্ণের মূর্তির চেয়ে আলাদা? এগুলো কি সবই মানুষের হাতে তৈরি নয়?


এই ধরনের পবিত্র স্তম্ভ বা কাঠামো সম্পর্কে কুরআন আমাদের কী বলে? আবারো আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে?

{৫:৯০ হে ঈমানদারগণ, নেশা, জুয়া এবং পবিত্র স্থাপনা, এবং ভাগ্য শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত একটি যন্ত্রণা। তোমরা তাকে এড়িয়ে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।}


আল্লাহর ঘর (বায়তাল্লাহ)  কিভাবে মানুষের হাত দ্বারা নির্মিত একটি স্তম্ভ হতে পারে, যখন আল্লাহ বলেছেন যে এই ধরনের কাজ শয়তানের?


এটি প্রমাণ করে যে ৯৯.৯৯% মুসলমান তাদের মগজ হারিয়েছে। তাদের মন এবং বুদ্ধি হুজুরদের কাছে  জমা দিয়ে ১৪ শ বছরের ও বেশি সময় ধরে একটি গুহায় ঘুমিয়ে গেছে।


কোরানের কা'বাহ كعبة কোনো স্থাপন করা স্তম্ভ নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ভৌগলিক স্থান। ব্যক্তিগতভাবে, আমি কল্পনা করি এটি একটি বড় - সম্ভবত একটি সমতল-শীর্ষ পাহাড় - যা চারদিকে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি উপত্যকার মাঝ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটি বেশ একটি বিস্তৃত উপত্যকা এবং হাজিরা আজ মক্কায় যে জায়গায় ছুটে আসে তার মতো কিছুই নয়।


কেন?


চিন্তার খোরাক (৩)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


 কোরানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে "আল-কাবা الكعبه" এবং "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام"-এর মধ্যে একটি সংযোগ আছে। 


৫:৯৭ جَعَلَ اللَّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْيَ وَالْقَلَائِدَ ۚ ذَٰلِكَ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

আল্লাহ বানিয়েছেন  (জা'য়ালা جَعَلَ) আল-কা'বাহ আল-বায়েত আল-হারাম (নিষিদ্ধ ঘর)মানুষের দাঁড়ানোর জন্য এবং নিষিদ্ধ মাস এবং উপহার এবং মালা [যা দ্বারা গবাদি পশু চিহ্নিত করা হয়]। এটা যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে যমীনে এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।


এই আয়াত থেকে আমি দুটি বোঝার বিকল্প দেখেছি:

1. আল্লাহ "আল-কা'বা الكعبه" কে "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" বানিয়েছেন "জা'য়ালা جعل/"।

2. "আল-কা'বা الكعبه আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" পুরোটা একটাই  কিছুর নাম। 


ক্রিয়াপদ "জা'য়ালা جعل/বানানো" যখন এটি ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হল একটি বিদ্যমান সত্ত্বা বা বস্তুর অন্য কিছু হতে রূপান্তর বা নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহার  নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা আগে ছিল না। এর সাথে ক্রিয়াপদ "খালাকা خلق/সৃষ্টি" পার্থক্য হল কাঁচামালকে (অনু পরমানু , মাটি, বায়ু ইত্যাদি) নুতন কোন সত্বা বা বস্তুতে পরিণত করা। 


আমরা দেখতে পাচ্ছি কোরান স্পষ্টভাবে এই দুটি ক্রিয়াপদের মধ্যে পার্থক্য করেছে। 

** "জা'য়ালা جعل/ বানানো" এর উদাহরণ:


৫:২০ وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ

যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর বানিয়েছেন (জা'য়ালা), তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি বানিয়েছেন(জা'য়ালা) এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি।


মূসা সম্প্রদায়ের এই লোকগুলো আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ তাদের নবী ও রাজা  "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন" , অর্থাৎ নুতন কোন সৃষ্টি (খালাকা) নয় বরং নুতন দায়িত্ব দিয়েছেন বা বলা যায়- একটি বিদ্যমান সত্ত্বাকে রূপান্তর করা হয়েছে নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহারের জন্য যা আগে ছিল না। 


৬:৯৭ وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ বানিয়েছেন (জা'য়ালা) যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।


নক্ষত্র আগে থেকেই ছিল এবং যখন লোকেরা ভ্রমণ করতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাদেরকে স্থল ও সমুদ্রে পথপ্রদর্শনের নিদর্শন "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন"।


১৬:৮১ وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃষ্ট (খালাকা) বস্তু দ্বারা ছায়া বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন গোপনের জায়গা বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং তোমাদের জন্যে পোশাক বানিয়েছেন (জা'য়ালা), যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।


এই আয়াতে এবং অন্যান্য অনেক আয়াতে "জা'য়ালা جعل/বানানো" ক্রিয়াটি দেখায় যে , এটি ব্যবহার করা হয়েছে যখন আমরা বিদ্যমান কোন  জিনিসের জন্য নুতন কোন  ব্যবহার বা অন্য ভূমিকা বা অন্য কাজ করার জন্য কিছু পরিবর্তন বা রূপান্তর করার বিষয়ে কথা বলতে চাই।


আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে,  "আদম পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ছিলেন না" , বিদ্যমান মানুষের মধ্য থেকে আদমকে বেছে নেয়া হয়েছে , খলিফার নুতন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে , যেকারনে ফেরেশতারা আগে থেকেই মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অবগত ছিল। 

২:৩০

‎وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি (জা'য়েলু)), তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে বানাবে (তাজ'য়ালু) যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।


চিন্তার খোরাক (৪)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


সুতরাং ৫:৯৭ আয়াত থকে আমরা জানলাম যে ,  "আল-কা'বা الكعبه" আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ "জা'য়ালাহা جعلها/ এটিকে "আল-বায়েত আল-হারাম ‎البيت الحرام" হওয়ার জন্য বানিয়েছেন বা বিদ্যমান আল কা'বা আলহারাম স্থানকে মানুষের দাড়ানোর স্থান বানিয়েছেন। 


ইব্রাহিম কা'বা তৈরি করেননি। আল-বাইতের সাথে সম্পর্কিত কোনো ধরনের কাঠামোর উল্লেখ কোরানে নেই। "কাওয়াইদ " শব্দের অর্থ সেই প্রসঙ্গে "ভিত্তি" নয়। এবং আব্রাহাম কিছুই সেই ভিত্তির উপরে নির্মান করেননি। 


এই ভুল ধারণা আমাদের মাথা থেকে পরিষ্কার করা দরকার যদি আমরা বুঝতে চাই কি ঘটছে। প্রচলিত অনুবাদ-


২:১২৭ وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি (কাওয়াইদ) স্থাপন করছিল (ইয়ারফা')। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।


আলবাইতের অনুবাদ করা হয়েছে কা'বাগৃহ , যদিও কা'বা বলে কোন শব্দ এই আয়াতে নেই। আলবাইত মানে - ঘর , গৃহ , আশ্রয়স্থল, অভায়ারন্য ইত্যাদি। 


এই আয়াতের আরবি টেক্সট- ইয়ারফা'উ ইব্রাহিমু আলকাওয়াইদা মিনাল বাইতি ওয়াইসমাইলু। 


ইয়ারফাউর মূলে আছে ر ف ع মানে তুলে ধরা বা তুলে ফেলা। কোরানের 27টি আয়াতে 

‎ر ف ع ব্যাবহার হয়েছে , সব জায়গায় এর মানে তুলে ধরা বা ফেলা। কোথাও স্থাপন করা নয় , কারন স্থাপন করা মানে করলে কোন মানেই হয় না। যেমন- 

২:৬৩ وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

আর আমি যখন তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম (রাফায়ানা وَرَفَعْنَا) এই বলে যে, তোমাদিগকে যে কিতাব দেয়া হয়েছে তাকে ধর সুদৃঢ়ভাবে এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে তোমরা ভয় কর।


ইব্রাহিম ও ইসমাইল কি তুলেছিলেন? আলকাওয়াইদা  الْقَوَاعِدَ যার মানে হতে পারে: "এমন কিছু যা দীর্ঘকাল ধরে বসে আছে, বা স্থবির, বা তার জায়গায় স্থির"। এটা প্রতিমা হতে পারে বা পাথর খন্ড বা গাছপালাও হতে পারে। 


কোথা থেকে তুললেন? মিনাল বাইতি  মানে আল্লাহর ঘর বা আশ্রয়স্থল বা অভায়ারন্য থেকে। 


তাহলে আয়াতটি কিসের কথা বলছে?


এই ধাঁধার উত্তর কুরআনের অন্যত্র পাওয়া যায়। এই দিকে মনোযোগ দিন:


{....এবং আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ/চুক্তি করেছিলাম (আহেদনা): "আপনি আমার পবিত্র স্থানকে যারা সফর করেন, এবং যারা নিবেদিতপ্রাণ, এবং নতজানু, সেজদা করেন তাদের জন্য পরিস্কার  করবেন।"}...[২:১২৫]


তারা পবিত্র স্থান পরিস্কার করেছেন। প্রতিমা তুলে ফেলে দিয়েছেন। তারা কিছুই নির্মাণ করেননি। অভয়ারণ্য আগে থেকেই ছিল।


চলবে... চিন্তার খোরাক (৫)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


আল্লাহই ইব্রাহিমকে এই পবিত্র স্থান (বাইত) এর অবস্থান দেখিয়েছিলেন এবং তারপর তাকে "এটি পরিষ্কার" করার নির্দেশ দিয়েছিলেন:


২২:২৬  وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

যখন আমি ইব্রাহীমকে আলবাইতের  স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পরিস্কার রাখ তায়েফিনের (তায়েফিন মানে দল - ধর্মীয় আলোচনা/বিতর্ককরতে আসা মানুষের দল হতে পারে , যাদেরকে হাজি বলে) জন্যে, দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।


আল্লাহ ইব্রাহিমকে আলবাইতের দিকে নিয়ে যান (তাকে এর অবস্থান খুঁজে পেতে সাহায্য করেন)।


আল্লাহর পবিত্র স্থান একটি প্রাকৃতিক স্থান। এটা কোনো ধরনের কাঠামো নয়। আজকে আমরা মক্কায় যে CUBE দেখতে পাচ্ছি, যেটি বহুবার ধ্বংস হয়েছে, তা ইব্রাহিমের দ্বারা নির্মিত হয়নি। এটি একটি পৌত্তলিক কাঠামো যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।


আব্রাহাম পবিত্র স্থানে অনাদিকাল থেকে গেঁড়ে থাকা প্রতিমাগুলি/মূর্তিগুলি (আল্কাওয়াইদ) তুলে ফেলে দিয়ে (রাফা'য়া) পরিস্কার/পবিত্র করলেন। তিনি কিছুই তৈরি করেননি। আল্লাহর পবিত্র স্থানটি (বাইত) আদমের সময় থেকেই ছিল।


তাহলে এটি যদি একটি মানুষের তৈরি কাঠামো না হয়, তাহলে এটি কি?


আবারো কোরানে এর উত্তর পাওয়া যায়:


১৪:৩৭ رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ  হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন (غَيْرِ ذِي زَرْعٍ )উপত্যকায় ( بِوَادٍ )আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। 


বাইত যে উপত্যকায় অবস্থিত তাকে কোরানে  "একটি উপত্যকা যা অনাবাদি/চাষাবাদহীন" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আরবি পরিভাষা 'জারা'য়া'এর স্পষ্ট অর্থ "রোপন" যার সাথে মানুষের শ্রম (বপন এবং কাটা) জড়িত। জায়গাটা যে শুষ্ক মরুভূমি ছিল তা বলে না! এটি এমন একটি উপত্তকা যেখানে আগে কেউ কখনও বসতি স্থাপন করেনি। প্রাকৃতিক উদ্ভিদকে "নাবাত" বলা হয়, "জারা'য়া" নয়।


উপসংহার: বাইত (অভয়ারণ্য) আরবের  কোথাও একটি নির্জন উপত্যকা , সম্ভবত ইয়েমেন ও সৌদি আরবের মাঝের আছির উপত্যকা । ইব্রাহিম এটিতে স্থাপন করা মূর্তিগুলি সরিয়ে এটি পরিষ্কার করেছিলেন। ("ইয়ারফা3উ'  কাওয়াইদ মিন আল বায়তি)। এই উপত্যকাটি আদিকাল থেকেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে পবিত্র ছিল।


আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে , কাবা হল একটি প্রকৃত প্রাকৃতিক স্থান, একটি বিমূর্ত ধারণা বা আইনের সেট নয়।  পৃথিবীর যেকোন জায়গায় অসংখ্য অন্যান্য বাইত থাকতে পারে, এবং হজের জন্য অন্যান্য স্থান থাকতে পারে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। কারন প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। যদি এটি একটি প্রাকৃতিক অবস্থান না হয়, তাহলে আমি জানি না কি। লোকেরা কি ইব্রাহিমের কাছে প্রতিটি গভীর এলাকা থেকে তাদের দান, গরীবদের খাওয়ানো, বাণিজ্য, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য ছুটে আসেনি... তাকে কি মানুষের জন্য ইমাম করা হয়নি? আব্রাহাম কি একটি উপত্যকায় তার বংশধরদের বসতি স্থাপন করেন নি?


প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। এর অর্থ দাড়ায় পৃথিবীতে আরো আল্লাহর ঘর আছে। এমন একটি ঘর দক্ষিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলার  টেপুই পর্বত। 


টেপুই একটি সমতল চূড়া সহ একটি অদ্ভুত-সুদর্শন পর্বত, যাকে "টেবিল-টপ" বলা হয় (কারণ এটি একটি টেবিলের মতো সমতল)। এই অনন্য ভূতাত্ত্বিক গঠনগুলি বেশিরভাগ দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার গায়ানা হাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।


"টেপুই" শব্দটি এসেছে পেমন ইন্ডিয়ানদের ভাষা থেকে। এর অর্থ 'দেবতার ঘর' 'house of the gods' আপনি এটি দেখতে যেতে পারেন, এবং নিজের জন্য দেখতে পারেন। বা গুগল ম্যাপে দেখতে পারেন। 


আরেকটি দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউনের table মাউন্টেন যার সাথে 'devil's peak' শয়তানের শৃঙ্গ আছে।


. https://www.amusingplanet.com/2013/05/tabletop-mountains-or-tepuis-of.html



Sunday, May 22, 2022

আহা আমি যদি নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তার সাথে থাকতাম!


বহু নবী প্রেমী আছে যাদেরকে বলতে শোনা যায় : আমি নবী মুহাম্মদকে এতটাই ভালবাসি যে আমি যদি তার যুগে, তার সাথে আরবে, তাকে রক্ষা করতে এবং সমর্থন করতে পারতাম!   আহা , তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম। 


 হয়তো সে সময় তুমি বেঁচে থাকলে , তার চিরশত্রু হতে ! কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী এই ধরনের নবী প্রেমীদের মুহাম্মদের চির শত্রু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা ছিল তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু  , যারা তার সততা, করুণা এবং সত্যবাদিতার জন্য তাকে একজন বিশ্বস্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে জানত । উনি ছিলেন তাদের ভালবাসার যোগ্য , তবুও যখন তিনি একজন নবী হিসাবে তাদের আহ্বান করেছিলেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ,  তারা তার চিরশত্রু হয়ে গেল এবং ব্যক্তি হিসাবে তার গুণাবলী ভুলে গেল।


কোরানে  আল্লাহ মুহাম্মদকে কাফেরদের সাহাবা/সঙ্গী/বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মানে তিনি তাদের সমসাময়িক এবং তারা তার সমসাময়িক। এই সঙ্গের কারনে তারা  তার  উচ্চ নৈতিকতা সম্পর্কে জানত এবং এটাও জানত যে তিনি কখনও মিথ্যা বলেননি। তাই, তাদের তাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল যখন তিনি তাদের বলেছিলেন যে , তিনি আল্লাহর একজন বার্তাবাহক/নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তাদের অধিকাংশই তাকে বিশ্বাস করেনি, এবং তারা তাকে একজন বিপথগামী পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল। আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গী অবিশ্বাসীদেরকে সম্বোধনের মাধ্যমে এই আয়াতগুলিতে তাদের মতামত খণ্ডন করেছেন:


{তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।(৫৩:২-৪)}


অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ইঙ্গিত দেয় যে মুহাম্মদ এবং তার সমসাময়িকরা একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে খুব ভালভাবে চিনতেন এবং এটি অদ্ভুত যে তারা তাকে বিপথগামী বলে অভিযুক্ত করেছিল ,  যখন তিনি তাদের কাছে কোরানের বাণী শুনিয়েছিলেন। আল্লাহ  মুহাম্মাদকে একই অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ব্যবহার করে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন:


{বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু, দু জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা-ভাবনা কর-তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র।(৩৩:৪৬)}


মুহাম্মদ শুধু চেয়েছিলেন যে তারা আল্লাহকে নিয়ে পরিষ্কারভাবে এবং ভক্তিমূলকভাবে চিন্তা করুক। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে (আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই) আহবান করেছিলেন এবং পরকালে চিরস্থায়ী শাস্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন , তখন তারা তাদের বন্ধু মুহাম্মদকে সন্দেহ করেছিল এবং  তারা তাকে পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল । তারা তাকে একটি শিশু, তারপর একটি যুবক এবং তারপর চল্লিশের একজন পুরুষ হিসাবে দেখেছিল। তারা তাকে ভালবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। তথাপি, তিনি  আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার  সাথে সাথেই তারা তার সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তাকে ঘৃণা করা শুরু করে।


মুহাম্মদের আত্মীয় ,সঙ্গী , সমসাময়িকরা তো আল্লাহর উপাসনা করত , তবুও এক আল্লাহর পথে ডাকার জন্য তাকে ও তার গুটিকয়েক অনুসারীকে ঘৃনা করা করা শুরু করল কেন , শারীরিক নির্যাতন করত কেন , দেশত্যাগে বাধ্য করল কেন?  কারন- শুধুমাত্র এক আল্লাহর পুজা করলে তো লাত , মানাত , উজ্জার সাহায্য কামনা করা যাবে না। তারা বিশ্বাস করত লাত , মানাত , উজ্জা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে , তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। আজকের জমানায় মুহাম্মদে বিশ্বাসের সাথে কোন মিল কি পাওয়া যায়? মুহাম্মদ সুপারিশ করবে , আল্লাহর নিকটে হাউজে কাউসারে স্থান করে দেবে , ইত্যাদি। মুহাম্মদে বিশ্বাস না করার কথা বললে আজকের নবী প্রেমীদের প্রতিক্রিয়া কি চোখে পড়ে?


{আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(৩৯:২-৩)}


নবী প্রেমীঃ  মক্কার কোরাইশদের সাথে আমার ও আমার ইচ্ছার কি সম্পর্ক?


উত্তরঃ আপনি চান যে আপনি মুহাম্মদের যুগে জীবিত থাকতেন এবং মক্কার কোরাইশ গোত্রের মধ্যে জীবিত থাকতেন , যারা মুহাম্মদের আত্মীয় ছিলেন। তাহলে আপনি হয়তো তার চিরশত্রুদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। 


নবী প্রেমীঃ আপনি কিভাবে নিশ্চিত হয়ে এমন একটি জিনিস অনুমান করছেন?! আমি হয়তো নবী মুহাম্মদের সবচেয়ে আন্তরিক ও সৎ অনুসারী হতাম। আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে কিছু মক্কাবাসী এবং কোরাইশ উপজাতিরা ইসলাম গ্রহণকারী প্রাথমিক বিশ্বাসীদের মধ্যে তার নিকটতম সমর্থক ছিল। আমি নিশ্চিত তাদের একজন হতাম। আমার এই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই  বা এত প্রতিবাদ করছেন কেন?!


উত্তরঃ কোনো কিছুর প্রতিবাদ করছি না , আপনাকে উভয় সম্ভাবনাই দিচ্ছি: আপনি বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী , যে কোন একটি দলের মধ্যেই থাকতেন।


নবী প্রেমীঃ আপনার কথা ঠিক না; আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে হতাম যারা নবী মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে।


উত্তরঃ আপনার এই বক্তব্যই দেখায় যে আপনি তার চিরশত্রুদের একজন!


নবী প্রেমীঃ  আপনি আমাকে অপমান করছেন! আমি তাকে বিশ্বাস করতে গিয়ে কিভাবে তার চিরশত্রু হয়ে গেলাম?!


উত্তরঃ কারণ ইসলামে বিশ্বাস ব্যক্তি মুহাম্মদের মধ্যে নয়; তাঁর প্রতি এই বিশ্বাস  ব্যক্তি মুহাম্মদকে দেবতার আসনে বসানো। এটি ইসলামের মৌলিক সত্যের (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) বিরোধী। সুতরাং, প্রকৃত বিশ্বাস মুহাম্মদের মধ্যে নয় বরং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে: কোরান যা  আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।


নবী প্রেমীঃ সেটা কেমনে?!


উত্তরঃ আল্লাহ কোরানের ৪৭ সূরা মুহাম্মদ শিরোনামে বলেছেন: "যারা অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে - তিনি তাদের কাজকে বাতিল করে দেন।" (৪৭:১)। প্রথম আয়াতে কাফেরদের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দ্বিতীয় আয়াতে বিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে: "যদিও যারা বিশ্বাস স্থাপন করে , ভালো কাজ করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে - এবং এটি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য - তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করেন। এবং তাদের উদ্বেগ দূর করে দেবেন।" (৪৭:২)। 


লক্ষ্য করুন যে , "বিশ্বাস" ক্রিয়াটি ৪৭:২ আয়াতে দুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এক বার ভাল কাজ করার সাথে এবং অন্য বার বিশ্বাসের অর্থের সাথে মিলিয়ে :  মুহাম্মদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করা অর্থাৎ কুরআন নিজেই। বর্ণনা করা হয়েছে আমাদের প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে এই সত্যে তথা কোরানে বিশ্বাসীদের তাদের পাপের জন্য ক্ষমা করা হবে ।অবিশ্বাসীদের ও বিশ্বাসীদের সাথে পরকালে কি করা হবে তার  তুলনা করা হয়েছে আয়াত দুটিতে। 


এই বৈপরীত্যের কারণটি পরের আয়াতে এসেছে: "এর কারণ হল যারা অবিশ্বাস করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে, আর যারা বিশ্বাস করে তারা তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যকে অনুসরণ করে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের উদাহরণ তুলে ধরেন।" (৪৭:৩)। এখানেই পার্থক্য নশ্বর মানুষ/রাসুলে বিশ্বাস এবং কোরানের সত্যে বিশ্বাসের মধ্যে ।  বিপথগামীরা মিথ্যার অনুসরণ করে যা তাদেরকে নশ্বর মানুষ/রাসুলকে ও বস্তুকে দেবতা ও পবিত্র করার দিকে নিয়ে যায়।


নবী প্রেমীঃ কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি যে আমি মুহাম্মদের কাছে নাযিল করা কোরানে বিশ্বাস করি এবং আমি মুহাম্মদকেও খুব ভালোবাসি; এটা কি আমাকে মুশরিক করে?!


উত্তরঃ আমরাও মুহাম্মদকে ভালোবাসি, কিন্তু আমরা তাকে দেবতা বা পবিত্র মনে করি না। পবিত্র এবং দেবতা একজনই , তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আমরা মুহাম্মাদকে ভালোবাসি , যিনি কোরানের সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং তার এই প্রচেষ্টার জন্য কষ্ট ভোগ করেছেন। এ কারণেই আমরা তথাকথিত জীবনী এবং হাদিস/আখ্যানগুলিতে তাঁর বিকৃত চিত্রকে প্রত্যাখ্যান করি এবং প্রত্যাখ্যান করি যা তাঁর খ্যাতিকে কলঙ্কিত করে এবং কেবলমাত্র কোরানে পাওয়া তাঁর আসল এবং একমাত্র গল্পের বিরোধিতা করে।


নবী প্রেমীঃ আমার ইচ্ছাতে  ফিরে যাই - আমি চাই যে আমি নবী মুহাম্মদের সমসাময়িকদের একজন হতাম, অর্থাৎ আমি বলতে চাই যে আদি বিশ্বাসীদের একজন হতে চাই।  মক্কার কোরাইশ বা অন্যান্যদের মতো কাফের নয়। এখানে পার্থক্য আছে কি?


উত্তরঃ একমাত্র কোরানকে আল্লাহর বাণী হিসাবে বিশ্বাস করা বা না করার মধ্যে এই পার্থক্য নিহিত। 


মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে অনেকেই যারা তাঁর চমৎকার গুণাবলীর জন্য তাঁকে ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন , তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করেছিলেন যখন তিনি তাঁর নবুওয়াত ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদের কাছে কোরান  পাঠ করে তাদেরকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) আহ্বান করেছিলেন। এইভাবে যারা তাকে ঘৃণা করত ,  তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিগত কারণে এই ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেনি বরং  তাদেরকে আল্লাহর নামে তিনি যে কুরআনের বার্তা দিয়েছিলেন , তা তারা ঘৃণা করেছিল। তারা তার উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য তার চারপাশে জড়ো হতে পছন্দ করত, কিন্তু যখন তিনি কোরান প্রচার শুরু করেছিলেন , তখন থেকে তার প্রতি তাদের ভালবাসা গভীর ঘৃণা এবং শত্রুতায় পরিণত হয়েছিল।


নবী প্রেমীঃ এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!


উত্তরঃ এটা আমরা বুঝতে পারি এই আয়াতগুলো থেকে: “আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না তারা বলে, এটি ব্যতীত অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো অথবা পরিবর্তন কর।” বলুন, “আমার নিজের ইচ্ছায় এটা পরিবর্তন করা আমার কাজ নয়। আমি কেবল আমার কাছে যা অহী করা হয় তার অনুসরণ করি। যদি আমি আমার পালনকর্তার অবাধ্য হই , তবে আমি ভয় করি এক ভয়াবহ দিনের আযাবের ।" বলুন, "যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমি এটি তোমাদের সামনে পড়তাম না, আর নাইবা তিনি তোমাদেরেকে অবহিত করতেন এ সম্পর্কে। কারণ আমি তোমাদের মাঝে ইতিপূর্বেও একটা বয়স অতিবাহিত করেছি। তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না?" (১০:১৫-১৬)। এইভাবে, মুহাম্মদ তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করেছিলেন, কিন্তু একজন ব্যক্তি হিসাবে তার প্রতি তাদের পূর্বের ভালবাসা থাকা সত্বেও অনেকেই কোরান বিদ্বেষের কারনে তাকে এই কোরান পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন করতে বলেছিল , যাতে তাদের ঐতিহ্যগত, পূর্বপুরুষের ধারণাগুলিকে বাচিয়ে রাখা যায়।  আল্লাহ  তাকে এই আয়াত দুটিতে বলেছেন কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। মুহাম্মদই প্রথম যিনি কোরানে বিশ্বাস করেন এবং তিনি প্রভু আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার সাহস পাননি। কোরাইশদের অবিশ্বাসী লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিমা এবং পূর্বপুরুষদের রীতিকে শ্রদ্ধা করার সাথে সাথে তাদের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলে যায় এমন একটি ঐশী বার্তা কামনা করেছিল।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, আপনি আমাকে বলতে চাচ্ছেন যে , তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিত্বকে ভালবাসত কিন্তু কোরানের বাণী এবং (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত, তাই তো?


উত্তরঃ ঠিক তাই ; যখন তিনি তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করতেন , তখন তারা তার প্রতি তাদের ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করত: "যারা অবিশ্বাসী তারা বার্তাটি শুনে আপনাকে প্রায় তাদের দৃষ্টি দিয়ে ছুরিকাঘাত করে এবং বলে, "সে পাগল!" 

অথচ এই বার্তা তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।" (৬৮:৫১-৫২)।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, এই শত্রুতা ছিল কোরানের প্রতিই, নবী মুহাম্মদ বা অন্য কেউ যদি আবৃত্তি করে তাদের প্রতি না , তাই না?


উত্তরঃ  ঠিক; মক্কার কাফেররা প্রাথমিক মক্কার বিশ্বাসীদের ব্যক্তি হিসাবে ঘৃণা করত না, বরং তাদের কোরানে বিশ্বাসের কারনে এবং  তাদের জনসমক্ষে কোরান পাঠ করার কারনে : "যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে উঠে। ....(২২:৭২)


নবী প্রেমীঃ কিন্তু তৎকালীন আরবের আরবরা স্রষ্টা আল্লাহকে বিশ্বাস করত; তারা কুরআনকে এতটা ঘৃণা করলো কেন?!


উত্তরঃ কারণ কোরান অনুসারে, ইসলামে একেশ্বরবাদের সারমর্ম কেবলমাত্র এক আল্লাহতে  বিশ্বাস নয় , সেই সাথে অবশ্যই মানুষের কল্পিত অন্যান্য সমস্ত অনুমানকৃত পবিত্র  মানুষ/জ্বীন দেবতা ও বস্তুতে ( জমজমের পানি , হাজরে আসোয়াদ বা কাল পাথর , কাবা শরিফ ইত্যাদি) অবিশ্বাস করতে হবে। এই কারণেই ইসলামের সাক্ষ্য "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ/বিধানদাতা নেই)। মানুষের উদ্ভাবিত সমস্ত উপাস্য/দেবতার প্রতি অবিশ্বাসের সাথে শুরু হয় প্রথম ধাপ , এরপর  দ্বিতীয়টি হল একমাত্র সত্য ইলাহে বিশ্বাস করা: আল্লাহ। "ধর্মের ক্ষেত্রে কোন জবরদস্তি থাকবে না; সঠিক পথটি ভুল পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। যে তাগুতকে ত্যাগ করে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করে , সে সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাতলটি আঁকড়ে ধরেছে; যা ভাঙবে না। আল্লাহ শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ।" (২:২৫৬)। কোরাইশের মক্কাবাসীরা মানুষ ও বস্তুর দেবীকরণকে মেনে চলার কারণে, তারা কোরানের বাণীকে ঘৃণা ও উপহাস করেছিল: "এবং যখন তাদের কাছে আমাদের আয়াতগুলি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "আমরা শুনেছি। আমরা চাইলে এরকম বলতে পারতাম; এগুলি পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।" এবং তারা বলেছিল, "হে আমাদের আল্লাহ, যদি এটি আপনার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ করুন বা আমাদেরকে বেদনাদায়ক কষ্ট দিন।" (৮:৩১-৩২)।


নবী প্রেমীঃ সুতরাং, তারা কোরানের স্পষ্ট আয়াতগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তারা কোরানের বাণী শুনে বিরক্ত হয়েছিল, তাই না?


উত্তরঃ নিশ্চিতভাবে , তারা কোরানের আয়াত স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল এবং তাদের উপলব্ধি কোরানের প্রতি তাদের ঘৃণা বাড়াতে এবং মুহাম্মদ ও প্রাথমিক বিশ্বাসীদের উপর তাদের ক্রোধ প্রকাশ করতে পরিচালিত করেছিল।  একই সাথে তারা কোরানকেও ঠাট্টা করেছিল। "আর যখন তাদের কাছে আমাদের আলোকিত আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বিচ্যুত করতে চায়।" এবং তারা বলে, "এটি একটি বানোয়াট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।" যখন সত্য তাদের কাছে আসে, তখন কাফেররা সত্য সম্পর্কে বলে, "এটা তো প্রকাশ্য জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।" (৩৪:৪৩)।


নবী প্রেমীঃ যা বলছেন তা আমি বুঝতে পেরেছি।  আমি স্বীকার করি যে আমি জানি না যে সেই সময় যদি বেঁচে থাকতাম , তাহলে আমি বিশ্বাসী না কোরান অস্বীকারকারীদের মধ্যে হতাম। কিন্তু আমাদের আধুনিক যুগে, ২১ শতকের খ্রিস্টাব্দের কী হবে? আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ভালবাসি, কিন্তু সপ্তম শতাব্দীতে বসবাসকারী নশ্বর হিসাবে তাকে দেবতা না করে এই ভালবাসা কিভাবে প্রকাশ করব?


উত্তরঃ মুহাম্মদের সাথে নিজেকে যুক্ত করার বা তাকে ভালবাসার অর্থ তাকে সম্বোধন করা প্রশংসা বাক্য উচ্চারণ করা নয়, কারণ এই অভ্যাস তাকে এমনভাবে উপাস্য করে যেন তিনি একজন অমর দেবতা। ধার্মিকদের এবং মুহাম্মদের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র হল কোরান পড়া, চিন্তা করা, প্রয়োগ করা এবং মেনে চলা। এই বইটিই মুহাম্মদ পড়েছেন এবং প্রয়োগ করেছেন। অন্য কোন বই নয়। আমাদের সকলকে অবশ্যই মুহাম্মদের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে কারণ তিনি কেবল কোরান অনুসরণ করেছিলেন। মুহাম্মাদ তার জীবদ্দশায় যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলেন তার একমাত্র উৎস হল কোরান: (তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে... বলুন: "...") অথবা (বলুন: "...")। সুতরাং, একজন নবী, একজন রসূল, একজন স্বামী, একজন বন্ধু এবং একজন নেতা হিসেবে মুহাম্মদের প্রকৃত ইতিহাসের একমাত্র উৎস কোরান। এটিই আমাদের এবং তার মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র।


নবী প্রেমীঃ আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলে গেছেন!


কোরানে বিশ্বাসীঃ সেটা কি?


নবী প্রেমীঃ মুহাম্মদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার অর্থ এই যে , আমাকেও  তাঁর মতো কোরানের অন্তর্দৃষ্টি/আয়াতগুলি প্রচার ও ধর্মান্তর করতে হবে: "বলুন, "এটি আমার পথ; আমি সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিচ্ছি - আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে। মহত্ব স্রস্টার জন্য; এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।" (১২:১০৮); "আপনার প্রভুর কাছ থেকে আপনার কাছে অন্তর্দৃষ্টি এসেছে। যে কেউ দেখে, তার আত্মার উপকার হয়; আর যে অন্ধ থাকে, তার ক্ষতি হয়..." (৬:১০৪); "...এগুলি আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি, এবং হেদায়েত এবং রহমত, বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।" (৭:২০৩)।


কোরানে বিশ্বাসীঃ আপনি যদি শুধুমাত্র কোরান ব্যবহার করে লোকদেরকে বস্তু ও নশ্বরকে দেবতা ও পবিত্র মনে করে উপাসনা বন্ধ করতে বলেন, তাহলে আপনি নির্যাতিত হবেন এবং শারীরিকভাবে আক্রান্ত হবেন। মুহাম্মাদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: "তবুও যখন আল্লাহর ভক্ত তাকে ডাকতে দাঁড়ায়, তখন তারা তার চারপাশে ঘন ভিড় করে। বলুন, "আমি কেবল আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি এবং আমি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।" (৭২:১৯-২০)।


নবী প্রেমীঃ এখানে একটি বড় ঝুঁকি আছে, তাই না?!


কোরানে বিশ্বাসীঃ অনেক অপমান সম্বলিত ঘৃণামূলক চিঠি এবং ঘৃণামূলক ইমেলের জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং গালি , নির্যাতন  ও কারারুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা এগুলি করবে যাতে  আপনি কোরানের সত্য দ্বারা ধর্মান্তরন করা বন্ধ করেন। আপনার নির্যাতকরা আপনাকে ঘৃণা করবে না কিন্তু আল্লাহর কোরানকে ঘৃণা করবে। কোরানের বাণী প্রচার বন্ধ করুন , দেখবেন তারা আর আপনাকে ঘৃণা করছে না , গালি দিচ্ছে না। "তারা চায় যদি আপনি আপস করেন, তবে তারাও আপস করবে।" (৬৮:৯)।


 নবী প্রেমীঃ এটা আরো বড় ঝুঁকি!


কোরানে বিশ্বাসীঃ আল্লাহর নবীদের সীলমোহর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর প্রতি আপনার ভালবাসা প্রমাণ করা আপনার লক্ষ্য এবং কাজ। প্রেম নিছক খালি কথা নয়: তার মৃত্যুর পর তাকে যে মিথ্যা (হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী) দিয়ে তার চরিত্রকে খ্যাতিমান ও কলঙ্কিত করা হয়েছে , তা খণ্ডন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই স্পষ্টভাষী এবং সোচ্চার হতে হবে। তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে লিখিত হাদীস, বর্ণনা এবং জীবনীতে যা বর্ণিত হয়েছে তা তিনি কখনও উচ্চারণ করেননি। একমাত্র কোরানেই তার ইতিহাস পাওয়া যায়। হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী হল সুফি, শিয়া এবং সুন্নী মুহাম্মাদিদের পার্থিব, মনুষ্যসৃষ্ট ধর্মের ভিত্তি। তাদের মিথ্যা ও বিকৃত ধারণাগুলি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। যা তাদের লালিত পার্থিব ধর্মকে ক্ষুন্ন করে, সেই কোরানের আয়াত নিয়ে মুহাম্মাদিদের  মুখোমুখি হওয়া খুবই কঠিন এক মিশন। কিন্তু আপনি যদি তা করেন ,  তবে আপনি প্রমাণ করবেন যে আপনি সত্যিই  আল্লাহ , কোরান এবং মুহাম্মদকে ভালবাসেন।

বিশ্বাস মুহাম্মাদের উপর নয় বরং মুহাম্মদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে: যারা মুহাম্মাদকে বিশ্বাস করে তারা মুশরিক।


প্রথমত: ইসলামি/ একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের অর্থ হল কোরানে বিশ্বাস করা এবং মুহাম্মদ নামের নশ্বর মানবের প্রতি নয়:


প্রেক্ষাপট: মূসার সাথে আল্লাহর কথোপকথন। তাওরাতের অনুসারীদের জন্য মুহাম্মদ বিধর্মীদের নবী। 


১) এটি প্রভু আল্লাহর রহমত সম্পর্কে: "...আমার করুণা (রহমত) সমস্ত কিছুকে পরিবেষ্টন করে। আমি এটি তাদের জন্য নির্দিষ্ট করব যারা সৎ কাজ করে এবং পরিশুদ্ধ হয় এবং যারা আমাদের আয়াতগুলিতে বিশ্বাস করে।" যারা রাসুলকে অনুসরণ করে, বিধর্মীদের নবী..." (৭:১৫৬-১৫৭)। বিধর্মীদের নবীকে অনুসরণ করার অর্থ তাকে বিশ্বাস করা , তাকে দেবতা করা নয়। বরং তাকে প্রভু আল্লাহর প্রেরিত একজন নশ্বর নবী/বার্তাবাহক হিসাবে বিশ্বাস করা অর্থাৎ রসূলের প্রতি ঐশী বাণী বা পবিত্র কোরান তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করা। সুতরাং, আমরা নশ্বর নবী মুহাম্মদকে দেবতা করতে চাই না। আমাদের তাকে দেওয়া আলো অনুসরণ করতে হবে; অর্থাৎ কোরানকে। সুতরাং, মুহাম্মদকে অনুসরণ করা মানে তাকে একজন ব্যক্তি হিসাবে উপাস্য করা নয় বরং তিনি যে কুরআনের বাণী দিয়েছেন তাকে অনুসরণ করা।

২) এ আয়াতটি প্রকৃত একেশ্বরবাদীদের সম্পর্কে যারা প্রভু আল্লাহর করুণার যোগ্য: "...যারা তাকে বিশ্বাস করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সমর্থন করে এবং তার সাথে নেমে আসা আলোকে অনুসরণ করে - তারাই সফল।" (৭:১৫৭)। এর অর্থ নশ্বর নবী মুহাম্মাদকে দেবতা হিসাবে বিশ্বাস করা নয় বরং কোরানের আয়াতে বিশ্বাস করা, যা তিনি পড়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন। আমাদের এই সত্যে বিশ্বাস করতে হবে যে প্রভু আল্লাহ মুহাম্মাদকে নবী/রাসূল হিসেবে একটি মহাকাশীয় গ্রন্থ দিয়ে পাঠিয়েছেন:  কোরান। আমাদেরকে কোরানের আলোকে অনুসরণ করতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। আমরা মুহাম্মাদকে বিশ্বাস করি না অর্থাৎ আমরা মুহাম্মাদকে দেবতা করতে চাই না। 

৩) "... সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল অইহুদীদের (উম্মি) নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।" (৭:১৫৮)। এখানে ঐশ্বরিক আদেশ মুহাম্মদকে বিশ্বাস করা বা তাকে দেবতা করার বিষয়ে নয়; এখানে রাসুল শব্দটি শুধুমাত্র কোরানকেই বোঝায়। একেশ্বরবাদীদের কোরানের সত্যে বিশ্বাস করা উচিত যে , মুহাম্মদ একজন নশ্বর বার্তাবাহক/নবী এবং তাদের মধ্যে শেষ একজন , যিনি কোরানকে মানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র লক্ষ্যে প্রভু আল্লাহর দ্বারা প্রেরিত। আমাদের নবী হিসাবে তাঁর নবুওয়াত বা তাঁর বার্তাবাহনে বিশ্বাস করতে হবে। এটি একটি কুরআনিক সত্য যে তিনি অইহুদীদের নবী। এর মানে হল যে ৭:১৫৬-১৫৮-এর স্থানীয় প্রেক্ষাপটে তাঁর নবুওয়াত এবং কোরানে তিনবার বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা মানুষ হিসাবে বিশ্বাস করতে হবে , দেবতা হিসাবে নয়। মুহাম্মদকে মানবীয় গুনের উর্ধে অন্য কিছু ভাবার অর্থই বহুঈশ্বরবাদীতে বিশ্বাসী , যা কোরানের একেশ্বরবাদী শিক্ষার পরিপন্থী। 

৪) অবশ্যই, কোরানের সম্পূর্ণ পাঠ্যের বিষয়গত প্রেক্ষাপট বোধগম্য হওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে এবং বহু আয়াতে আল্লাহ আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে বলেছেন।  আমরা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করব যে "অনুসরণ" এর কোরানের ধারণার অর্থ মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা দেবতা হিসাবে অনুসরণ করা নয় বরং তিনি যে ঐশ্বরিক বাণী দিয়েছেন তা একচেটিয়াভাবে অনুসরণ করা। কোরানের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত এই সত্যটি নির্দেশ করে যে , মুহাম্মদ একজন নশ্বর মানুষ হিসাবে ভুল করেছিলেন। তিনি নির্দোষ ছিলেন না , প্রভু আল্লাহ কিছু কোরানের আয়াতে তাকে তিরস্কার ও করেছেন। সুতরাং, ইসলামে "অনুসরণ" মানে শুধুমাত্র কোরানকে অনুসরণ করা এবং এটিই একমাত্র বিষয় যা মুহাম্মদ আমাদেরকে জানিয়েছিলেন। নীচের পয়েন্টগুলিতে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

ক) মুহাম্মদ একজন নশ্বর নবী ছিলেন এবং তাকে শুধুমাত্র কোরানের বার্তা অনুসরণ করার জন্য কোরানে আদেশ করা হয়েছে। প্রভু  আল্লাহ তাকে নিম্নলিখিত ঘোষণা করার আদেশ দিয়েছেন:

{আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি ভবিষ্যত অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ?(৬:৫০)}

{আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।(৭:২০৩)}

{আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।(১০:১৫)}

প্রভু আল্লাহ এখানে মুহাম্মাদকে আদেশ করেছেন যে তিনি তার কোরান অনুসরণের ঘোষণা দেবেন , যা তার সমসাময়িকদের অধিকাংশই প্রত্যাখ্যান করেছে। কোরান অস্বীকারকারীরা এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলবে এমন আরেকটি কোরানের পাঠ দাবি করেছিল। একইভাবে, বর্তমানের মুহম্মদিরা তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে শয়তানী বর্ণনা/হাদিস অনুসরণ করার জন্য কোরানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ধরনের হাদিস একটি কাল্পনিক অমর দেবতার নামে মেনে চলেছে ,  যা তারা নিজেরা তৈরি করেছে এবং সেই দেবতার নাম দিয়েছে মুহাম্মদ।

খ) কিতাব (অর্থাৎ কোরান নিজেই) অনুসরণ করার জন্য কোরানের আদেশটি সমস্ত একেশ্বরবাদীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। প্রভু আল্লাহ কোরানে নিম্নলিখিত বলেছেন:

{এবং নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা ধার্মিক (মুত্তাকিন-যারা পাঁপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে) হও।(৬:১৫৩)}

{এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।(৬:১৫৫)}

{এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ। তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (৭:২-৩)}

গ) কোরানকে অনুসরণ করার অর্থ হল ঐশী গ্রন্থ, রাসূল এবং অন্তর্দৃষ্টিকে অনুসরণ করা; প্রভু আল্লাহ মুহাম্মদকে নিম্নলিখিত ঘোষণা করার জন্য আদেশ দিয়েছেন:

{বলে দিনঃ এই আমার পথ। আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই , আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।(১২:১০৮)}

উল্লেক্ষ্য এই আয়াতে মুহাম্মাদ এবং মুমিনদের মধ্যে সমতা লক্ষ্য করা যায় , যারা কোরান নিজেই অনুসরণ করে এবং এটি ছাড়া অন্য কিছু নয়।


দ্বিতীয়ত ৭:১৫৭ আয়াতে বর্নীত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি করা হয়েছে কোরান সম্পর্কে , মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা দেবতা হিসাবে নয়। সেই বিষয়ে তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কথা বলব। 


প্রথম বৈশিষ্ট্য: আরবের আহলে কিতাবরা (ইহুদি , নাসারা) জানত যে কোরান প্রভু আল্লাহ প্রদত্ত সত্য:


১)....যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই  সত্য তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। .... যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে। বাস্তব সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্দিহান হয়ো না। (২:১৪৪-১৪৭)


২) যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চিনে, যেমন তাদের সন্তানদেরকে চিনে। যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।(৬:২০)


৩) এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন, সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাঈলের আলেমগণ এটা অবগত আছে?(২৬:১৯২-১৯৭)


দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: আরবের আহলে কিতাবদের মধ্যে একেশ্বরবাদীরা কোরানে বিশ্বাস করত, ব্যক্তি হিসেবে মুহাম্মদকে নয়। অর্থাৎ তারা তাকে মোটেও দেবতার আসনে বসায় নি। তিনি তাদের কাছে তাঁর পূর্ববর্তীদের মতো একজন নশ্বর নবী ছিলেন। 


১) আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা ও ভয়প্রদর্শক করেই প্রেরণ করেছি। আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি। বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। এবং বলেঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়।(১৭:১০৫-১০৯)


২) আর তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতি পালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন। আমাদের কি ওযর থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে, তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং এ আশা করবো না যে, আমদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎ লোকদের সাথে প্রবিষ্ট করবেন? অতঃপর তাদেরকে আল্লাহ এ উক্তির প্রতিদান স্বরূপ এমন উদ্যান দিবেন যার তলদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তারা তন্মধ্যে চিরকাল অবস্থান করবে। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান।(৫:৮৩-৮৫)


তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: কোরানে আল্লাহ কিতাবধারীদেরকে কোরানে বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন, মুহাম্মদের প্রতি নয়।


১) আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।(২:৪১)


২) হে আসমানী গ্রন্থের অধিকারীবৃন্দ! যা কিছু আমি অবতীর্ণ করেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, যা সে গ্রন্থের সত্যায়ন করে এবং যা তোমাদের নিকট রয়েছে পূর্ব থেকে। (বিশ্বাস স্থাপন কর) এমন হওয়ার আগেই যে, আমি মুছে দেব অনেক চেহারাকে এবং অতঃপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পশ্চাৎ দিকে কিংবা অভিসম্পাত করব তাদের প্রতি যেমন করে অভিসম্পাত করেছি আছহাবে-সাবতের উপর। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর হবে।(৪:৪৭)

তৃতীয়ত: কুরআনের বাণী সম্পর্কে - "বলুন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সকলের কাছে আল্লাহর রসূল , নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। "... (৭:১৫৮):


১) এ আয়াতটি পবিত্র কোরআনের সর্বজনীনতা সম্পর্কে। প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে পৃথিবীতে মুহাম্মদের যুগ থেকে কেয়ামতের আগমন পর্যন্ত সমস্ত মানবজাতি এবং জিনদের জন্য ইসলাম/একেশ্বরবাদের শেষ বার্তা। কোরান পূর্ববর্তী সমস্ত ঐশ্বরিক, স্বর্গীয় ধর্মগ্রন্থকে সমর্থন করে এবং এটি এমনকি ইস্রায়েলীয়দের ধর্মীয় বিরোধের বিষয়ে একটি মাপকাঠি প্রদান করে: "এই কোরআন বণী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে বর্ণনা করে।" (২৭:৭৬)।


২) একজন নশ্বর নবী হিসাবে এবং একজন ব্যক্তি এবং একজন মানুষ হিসাবে, মুহাম্মদ তার যুগ এবং অঞ্চল দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিলেন। তিনি ৭ম শতাব্দীতে নির্দিষ্ট সংখ্যক বছর আরবে বেঁচে ছিলেন এবং মারা যান। তার জীবদ্দশায় প্রভু আল্লাহ তাকে এখানে সরাসরি সম্বোধন করে বলেছেন যে ,  তিনি মারা যাবেন এবং তার শত্রুরাও মারা যাবে : "নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা সবাই তোমাদের পালনকর্তার সামনে কথা কাটাকাটি করবে।"  (৩৯:৩০-৩১)। 


এর মানে হল মুহাম্মদ একজন নশ্বর নবী এবং তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল যেমনটি সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে হয়: "আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। (৩:১৪৪)


"আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।(২১:৩৪-৩৫)


আয়াতগুলি মুহাম্মাদিদের বহু-ঈশ্বরবাদী দাবীকে খণ্ডন করে , যারা বিশ্বাস করে যে মুহাম্মদ তাদের পায়ের নিচে মদিনায় একটি সমাধিতে জীবিত আছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়  ও স্থানে সীমিত ছিল মুহাম্মদের জীবন। তিনি অন্য জাতির সম্পর্কে জানতেন না , যেমন : চীন, জাপান এবং দুই আমেরিকা।


তৃতীয়ত: কুরআনের বাণী সম্পর্কে - "বলুন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সকলের কাছে আল্লাহর রসূল , নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। "... (৭:১৫৮):


৩) কোরানে  মুহাম্মদ নয় , কোরানের নিজের সম্পর্কে  নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে:


ক) "এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে।" (২১:১০৬)

খ) এটি বিশ্বের জন্যও একটি সতর্কবার্তা: "পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ (ফোরকান) অবর্তীণ করেছেন, যাতে (ফোরকান) বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়।"(২৫:১)


৪) অধিকন্তু, কোরান জিনদের জন্যও তাদেরকে সম্বোধন করা ঐশী বাণী। কিছু জ্বিনকে  আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন মুহাম্মদ কর্তৃক পড়া কোরান শোনার জন্য , একজন ব্যক্তি মুহাম্মদের সম্পর্কে তাঁর সংবাদ শোনার জন্য নয়। মুহাম্মদ অন্যান্য মানুষের মতো জ্বিনকে কখনই দেখতে পারেননি কারণ তারা ইথারিয়াল প্রাণী। জ্বীনদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তারা কোরান ব্যবহার করে অন্য জিনদের সতর্ক করেছিল।


ক) "বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি; যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।" (৭২:১-২) :আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না।"(৭২:১৩)

খ) যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল,। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল। তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে।(৪৬:২৯-৩০)


পরিশেষে-


মুহাম্মাদকে বা তাঁর সাথে বিশ্বাস করার অর্থ হল এই সত্যে বিশ্বাস করা যে , তিনি যে কোরান দিয়েছেন তা আল্লাহর বাণী। আমি অবশ্যই মুহাম্মাদ বা কোন নশ্বরকে দেবতা মনে করি না। একারনেই বাধ্যতামূলক ভাবে তার নামের শেষে (সা:) লেখা বা নামের আগে (সালামুন আলা) লাগানোকে বা তাকে অত্যাধিক  প্রশংসা বা তার শানে হামদ ও নাথ গাওয়াকে  বা নবীর সুন্নত পালনের নামে তাকে অনুকরন করাকে , তাকে দেবতার আসনে বসানোর শামিল মনে করি।


ভয়

 অ-শান্তিপূর্ণ, হিংসাত্মক, আগ্রাসী আচরণের মাধ্যমে  মুশরিক কাফেররা সর্ব কালে ও যূগে একেশ্বরবাদী বিশ্বাসীদের হুমকি দিয়ে বলপ্রয়োগ করে তাদের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।  এদেরকে ভয় পেলে চলবে না বা কোরানে লিখিত আল্লাহর বাণী প্রচার বন্ধ করা ও যাবে না। এদের এরুপ আচরন সম্পর্কে আগেই  কোরানে বলা হয়েছে , যাতে বিশ্বাসীরা হতবাক না হয়। তাই যখন আমার পোস্টে পার্শি ইমামদের হাদিসে বিশ্বাসী মুশরিকরা বিশ্রি ভাষায় আমাকে গালাগালি করে , আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কেস করার ধামকি দেয় , তখন হতবাক হই না। বরং কোরানে বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। 


১) ইব্রাহিমের পিতা তার ছেলেকে পাথর মেরে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন যদি সে এক আল্লাহর প্রচার বন্ধ না করে এবং তাকে সতর্ক করে: "...হে ইব্রাহিম, তুমি কি আমার ইলাহদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও , আমি তোমাকে পাথর ছুঁড়ে মারব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।" (১৯:৪৬)।


২) নূহের লোকেরা তাকে নিম্নলিখিতটি বলেছিল: "...হে নূহ, যদি তুমি বিরত না হও , তবে তোমাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হবে।" (২৬:১১৬)।


৩) লূত এর লোকেরা তাকে নিম্নোক্ত কথাগুলো বলেছিল: "...হে লূত, তুমি না থামলে তোমাকে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে।" (২৬:১৬৭)।


৪) অন্যায়কারী শহরের লোকেরা তাদের তিন রসূলকে নিম্নলিখিতটি বলেছিল: "... আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি। যদি তোমরা বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।" (৩৬:১৮)।