Wednesday, May 25, 2022

চিন্তার খোরাক


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


প্রথমে, আমি আপনাদের  নজরে আনতে চাই কোরানের আয়াতের বাংলা অনুবাদের নিম্নলিখিত স্পষ্ট অসঙ্গতি:


৫:৯০ হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা (আনসাব الْأَنصَابُ ) এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, তাঁর (শয়তানের) থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।


আরবি শব্দ "আনসাব" أنصاب এর অনুবাদ হিসেবে "প্রতিমা" শব্দটি বেছে নেওয়া হয়েছে। এই শব্দটি আসলে "নাসাব نصب"  এর বহুবচন, যার সহজ অর্থ হল: এমন কিছু যা নির্মিত  ও খাড়া করে স্থাপন করা হয়েছে (যেমন একটি স্মৃতিস্তম্ভ/সৌধ/পূজার বা বলীর বেদি)। অবশ্যই "পবিত্র" অংশটি বোধগম্য, কারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের কাঠামোকে "পবিত্র" করার প্রবণতা রয়েছে যা তারা নিজের হাতে তৈরি করে।


আরেকটি আয়াত যেখানে এই নাসাব শব্দটি থেকে উদ্ভুত 'নুসিবাত' দেখা যাচ্ছে তা হল:


৮৮:১৭-১৯ তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন (নুসিবাত نُصِبَتْ)   করা হয়েছে?


"স্থাপন" শব্দটি আরবি "নুসিবাত" نصبت এর অনুবাদ করা হয়েছে যা একই মূল

‎ "ن ص ب" থেকে স্পষ্টত উদ্ভুত। এই আয়াতটির আরও সঠিক অনুবাদ , যা এটিকে ৫:৯০ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে, এইরকম হবে: {এবং পাহাড়ের দিকে, কীভাবে তাদের খাড়া করা হয়েছিল} এটি দেখায় যে কীভাবে আল্লাহ একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নিজেই পাহাড়গুলিকে খাড়া করেছিলেন। 


অন্যত্র, কোরান মুহাম্মাদকে সম্বোধন করে এবং তার কাছে কেয়ামতের সময়ের একটি দৃশ্য বর্ণনা করে, যখন লোকেরা কবর থেকে বের হয়ে তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে ছুটে আসবে, যেন তারা সবাই একটি "নাসব" এর চারপাশে জড়ো হবে। এখন দেখা যাক কিভাবে এই একই শব্দটিকে বাংলা অনুবাদ করেছে:


৭০:৪২-৪৪ অতএব, আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন, তারা বাকবিতন্ডা ও ক্রীড়া-কৌতুক করুক সেই দিবসের সম্মুখীন হওয়া পর্যন্ত, যে দিবসের ওয়াদা তাদের সাথে করা হচ্ছে। সে দিন তারা কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হবে, যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের (নুসুবে نُصُبٍ) দিকে ছুটে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত; তারা হবে হীনতাগ্রস্ত। এটাই সেইদিন, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হত।


আমরা উপরের আয়াতে দেখতে পাচ্ছি যে একই শব্দ  نصب  অনুবাদ করা হয়েছে "লক্ষ্যস্থল" হিসাবে। আরও সঠিক বোঝাপড়া হবে এরকম: {যখন তারা কবর থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসবে, যেন তারা একটি খাড়া করে স্থাপন করা স্তম্ভের দিকে দৌড়াচ্ছে}। 


‎("ن ص ب ) এর অর্থ। আসলে এক এবং একই: নির্মিত এমন কিছু , যা খাড়া বা  সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।  


চিন্তার খোরাক (২)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


যাকে "কা'বা" বলে তা ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন, যে কিউব কাঠামোটিকে মুসলমানেরা পবিত্র বলে তৈরি করেছে। এটা কি একটা স্তম্ভ নয় যেটা মানুষ নিজের হাতে তৈরি করেছে? এটা কি জেরুজালেমের "হাহাকার প্রাচীর Wailing Wall " থেকে আলাদা, যা ইহুদিরা সলোমনের মন্দিরের অবশিষ্টাংশ বলে বিশ্বাস করে? (ইহুদিরা স্পষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণকে অস্বীকার করে চলেছে যা প্রমাণ করে যে "প্রাচীর" আসলে বাইজেন্টাইন রোমের একটি ধ্বংসাবশেষ, এবং ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে তৈরি নয়)। তারপরে আছে মুসলমানরা , যারা আরও বেশি বিপথগামী একারনে যে , এরা এই "প্রাচীর" এর প্রতি তাদের নিজস্ব দাবি কায়েম করেছে এবং এটিকে "বুরাকের প্রাচীর" (সেই প্রাচীর যেখানে বুরাক - ডানাওয়ালা ঘোড়া - অবতরণ করেছিল যখন এটি মুহাম্মাদকে মক্কা থেকে  প্যালেস্টাইন নিয়ে গিয়েছিল , তাদের রুপকথার "নাইট জার্নি" অর্থাৎ মিরাজের রাতে) নাম দিয়েছে। 


তথাকথিত বড়, মেঝ ও ছোট "শয়তান-স্তম্ভ" সম্পর্কে কি বলবেন , যখন হাজিরা তাদের নির্বোধ "হজ" অনুষ্ঠানের সময় এই স্তম্ভের দিকে পাথর ছুঁড়ে? এটাও কি নাসব ن ص ب  নয়? এই সমস্ত কাঠামো কি বুদ্ধ বা কৃষ্ণের মূর্তির চেয়ে আলাদা? এগুলো কি সবই মানুষের হাতে তৈরি নয়?


এই ধরনের পবিত্র স্তম্ভ বা কাঠামো সম্পর্কে কুরআন আমাদের কী বলে? আবারো আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে?

{৫:৯০ হে ঈমানদারগণ, নেশা, জুয়া এবং পবিত্র স্থাপনা, এবং ভাগ্য শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত একটি যন্ত্রণা। তোমরা তাকে এড়িয়ে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।}


আল্লাহর ঘর (বায়তাল্লাহ)  কিভাবে মানুষের হাত দ্বারা নির্মিত একটি স্তম্ভ হতে পারে, যখন আল্লাহ বলেছেন যে এই ধরনের কাজ শয়তানের?


এটি প্রমাণ করে যে ৯৯.৯৯% মুসলমান তাদের মগজ হারিয়েছে। তাদের মন এবং বুদ্ধি হুজুরদের কাছে  জমা দিয়ে ১৪ শ বছরের ও বেশি সময় ধরে একটি গুহায় ঘুমিয়ে গেছে।


কোরানের কা'বাহ كعبة কোনো স্থাপন করা স্তম্ভ নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ভৌগলিক স্থান। ব্যক্তিগতভাবে, আমি কল্পনা করি এটি একটি বড় - সম্ভবত একটি সমতল-শীর্ষ পাহাড় - যা চারদিকে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি উপত্যকার মাঝ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটি বেশ একটি বিস্তৃত উপত্যকা এবং হাজিরা আজ মক্কায় যে জায়গায় ছুটে আসে তার মতো কিছুই নয়।


কেন?


চিন্তার খোরাক (৩)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


 কোরানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে "আল-কাবা الكعبه" এবং "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام"-এর মধ্যে একটি সংযোগ আছে। 


৫:৯৭ جَعَلَ اللَّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْيَ وَالْقَلَائِدَ ۚ ذَٰلِكَ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

আল্লাহ বানিয়েছেন  (জা'য়ালা جَعَلَ) আল-কা'বাহ আল-বায়েত আল-হারাম (নিষিদ্ধ ঘর)মানুষের দাঁড়ানোর জন্য এবং নিষিদ্ধ মাস এবং উপহার এবং মালা [যা দ্বারা গবাদি পশু চিহ্নিত করা হয়]। এটা যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে যমীনে এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।


এই আয়াত থেকে আমি দুটি বোঝার বিকল্প দেখেছি:

1. আল্লাহ "আল-কা'বা الكعبه" কে "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" বানিয়েছেন "জা'য়ালা جعل/"।

2. "আল-কা'বা الكعبه আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" পুরোটা একটাই  কিছুর নাম। 


ক্রিয়াপদ "জা'য়ালা جعل/বানানো" যখন এটি ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হল একটি বিদ্যমান সত্ত্বা বা বস্তুর অন্য কিছু হতে রূপান্তর বা নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহার  নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা আগে ছিল না। এর সাথে ক্রিয়াপদ "খালাকা خلق/সৃষ্টি" পার্থক্য হল কাঁচামালকে (অনু পরমানু , মাটি, বায়ু ইত্যাদি) নুতন কোন সত্বা বা বস্তুতে পরিণত করা। 


আমরা দেখতে পাচ্ছি কোরান স্পষ্টভাবে এই দুটি ক্রিয়াপদের মধ্যে পার্থক্য করেছে। 

** "জা'য়ালা جعل/ বানানো" এর উদাহরণ:


৫:২০ وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ

যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর বানিয়েছেন (জা'য়ালা), তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি বানিয়েছেন(জা'য়ালা) এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি।


মূসা সম্প্রদায়ের এই লোকগুলো আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ তাদের নবী ও রাজা  "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন" , অর্থাৎ নুতন কোন সৃষ্টি (খালাকা) নয় বরং নুতন দায়িত্ব দিয়েছেন বা বলা যায়- একটি বিদ্যমান সত্ত্বাকে রূপান্তর করা হয়েছে নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহারের জন্য যা আগে ছিল না। 


৬:৯৭ وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ বানিয়েছেন (জা'য়ালা) যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।


নক্ষত্র আগে থেকেই ছিল এবং যখন লোকেরা ভ্রমণ করতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাদেরকে স্থল ও সমুদ্রে পথপ্রদর্শনের নিদর্শন "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন"।


১৬:৮১ وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃষ্ট (খালাকা) বস্তু দ্বারা ছায়া বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন গোপনের জায়গা বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং তোমাদের জন্যে পোশাক বানিয়েছেন (জা'য়ালা), যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।


এই আয়াতে এবং অন্যান্য অনেক আয়াতে "জা'য়ালা جعل/বানানো" ক্রিয়াটি দেখায় যে , এটি ব্যবহার করা হয়েছে যখন আমরা বিদ্যমান কোন  জিনিসের জন্য নুতন কোন  ব্যবহার বা অন্য ভূমিকা বা অন্য কাজ করার জন্য কিছু পরিবর্তন বা রূপান্তর করার বিষয়ে কথা বলতে চাই।


আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে,  "আদম পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ছিলেন না" , বিদ্যমান মানুষের মধ্য থেকে আদমকে বেছে নেয়া হয়েছে , খলিফার নুতন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে , যেকারনে ফেরেশতারা আগে থেকেই মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অবগত ছিল। 

২:৩০

‎وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি (জা'য়েলু)), তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে বানাবে (তাজ'য়ালু) যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।


চিন্তার খোরাক (৪)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


সুতরাং ৫:৯৭ আয়াত থকে আমরা জানলাম যে ,  "আল-কা'বা الكعبه" আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ "জা'য়ালাহা جعلها/ এটিকে "আল-বায়েত আল-হারাম ‎البيت الحرام" হওয়ার জন্য বানিয়েছেন বা বিদ্যমান আল কা'বা আলহারাম স্থানকে মানুষের দাড়ানোর স্থান বানিয়েছেন। 


ইব্রাহিম কা'বা তৈরি করেননি। আল-বাইতের সাথে সম্পর্কিত কোনো ধরনের কাঠামোর উল্লেখ কোরানে নেই। "কাওয়াইদ " শব্দের অর্থ সেই প্রসঙ্গে "ভিত্তি" নয়। এবং আব্রাহাম কিছুই সেই ভিত্তির উপরে নির্মান করেননি। 


এই ভুল ধারণা আমাদের মাথা থেকে পরিষ্কার করা দরকার যদি আমরা বুঝতে চাই কি ঘটছে। প্রচলিত অনুবাদ-


২:১২৭ وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি (কাওয়াইদ) স্থাপন করছিল (ইয়ারফা')। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।


আলবাইতের অনুবাদ করা হয়েছে কা'বাগৃহ , যদিও কা'বা বলে কোন শব্দ এই আয়াতে নেই। আলবাইত মানে - ঘর , গৃহ , আশ্রয়স্থল, অভায়ারন্য ইত্যাদি। 


এই আয়াতের আরবি টেক্সট- ইয়ারফা'উ ইব্রাহিমু আলকাওয়াইদা মিনাল বাইতি ওয়াইসমাইলু। 


ইয়ারফাউর মূলে আছে ر ف ع মানে তুলে ধরা বা তুলে ফেলা। কোরানের 27টি আয়াতে 

‎ر ف ع ব্যাবহার হয়েছে , সব জায়গায় এর মানে তুলে ধরা বা ফেলা। কোথাও স্থাপন করা নয় , কারন স্থাপন করা মানে করলে কোন মানেই হয় না। যেমন- 

২:৬৩ وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

আর আমি যখন তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম (রাফায়ানা وَرَفَعْنَا) এই বলে যে, তোমাদিগকে যে কিতাব দেয়া হয়েছে তাকে ধর সুদৃঢ়ভাবে এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে তোমরা ভয় কর।


ইব্রাহিম ও ইসমাইল কি তুলেছিলেন? আলকাওয়াইদা  الْقَوَاعِدَ যার মানে হতে পারে: "এমন কিছু যা দীর্ঘকাল ধরে বসে আছে, বা স্থবির, বা তার জায়গায় স্থির"। এটা প্রতিমা হতে পারে বা পাথর খন্ড বা গাছপালাও হতে পারে। 


কোথা থেকে তুললেন? মিনাল বাইতি  মানে আল্লাহর ঘর বা আশ্রয়স্থল বা অভায়ারন্য থেকে। 


তাহলে আয়াতটি কিসের কথা বলছে?


এই ধাঁধার উত্তর কুরআনের অন্যত্র পাওয়া যায়। এই দিকে মনোযোগ দিন:


{....এবং আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ/চুক্তি করেছিলাম (আহেদনা): "আপনি আমার পবিত্র স্থানকে যারা সফর করেন, এবং যারা নিবেদিতপ্রাণ, এবং নতজানু, সেজদা করেন তাদের জন্য পরিস্কার  করবেন।"}...[২:১২৫]


তারা পবিত্র স্থান পরিস্কার করেছেন। প্রতিমা তুলে ফেলে দিয়েছেন। তারা কিছুই নির্মাণ করেননি। অভয়ারণ্য আগে থেকেই ছিল।


চলবে... চিন্তার খোরাক (৫)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


আল্লাহই ইব্রাহিমকে এই পবিত্র স্থান (বাইত) এর অবস্থান দেখিয়েছিলেন এবং তারপর তাকে "এটি পরিষ্কার" করার নির্দেশ দিয়েছিলেন:


২২:২৬  وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

যখন আমি ইব্রাহীমকে আলবাইতের  স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পরিস্কার রাখ তায়েফিনের (তায়েফিন মানে দল - ধর্মীয় আলোচনা/বিতর্ককরতে আসা মানুষের দল হতে পারে , যাদেরকে হাজি বলে) জন্যে, দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।


আল্লাহ ইব্রাহিমকে আলবাইতের দিকে নিয়ে যান (তাকে এর অবস্থান খুঁজে পেতে সাহায্য করেন)।


আল্লাহর পবিত্র স্থান একটি প্রাকৃতিক স্থান। এটা কোনো ধরনের কাঠামো নয়। আজকে আমরা মক্কায় যে CUBE দেখতে পাচ্ছি, যেটি বহুবার ধ্বংস হয়েছে, তা ইব্রাহিমের দ্বারা নির্মিত হয়নি। এটি একটি পৌত্তলিক কাঠামো যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।


আব্রাহাম পবিত্র স্থানে অনাদিকাল থেকে গেঁড়ে থাকা প্রতিমাগুলি/মূর্তিগুলি (আল্কাওয়াইদ) তুলে ফেলে দিয়ে (রাফা'য়া) পরিস্কার/পবিত্র করলেন। তিনি কিছুই তৈরি করেননি। আল্লাহর পবিত্র স্থানটি (বাইত) আদমের সময় থেকেই ছিল।


তাহলে এটি যদি একটি মানুষের তৈরি কাঠামো না হয়, তাহলে এটি কি?


আবারো কোরানে এর উত্তর পাওয়া যায়:


১৪:৩৭ رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ  হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন (غَيْرِ ذِي زَرْعٍ )উপত্যকায় ( بِوَادٍ )আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। 


বাইত যে উপত্যকায় অবস্থিত তাকে কোরানে  "একটি উপত্যকা যা অনাবাদি/চাষাবাদহীন" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আরবি পরিভাষা 'জারা'য়া'এর স্পষ্ট অর্থ "রোপন" যার সাথে মানুষের শ্রম (বপন এবং কাটা) জড়িত। জায়গাটা যে শুষ্ক মরুভূমি ছিল তা বলে না! এটি এমন একটি উপত্তকা যেখানে আগে কেউ কখনও বসতি স্থাপন করেনি। প্রাকৃতিক উদ্ভিদকে "নাবাত" বলা হয়, "জারা'য়া" নয়।


উপসংহার: বাইত (অভয়ারণ্য) আরবের  কোথাও একটি নির্জন উপত্যকা , সম্ভবত ইয়েমেন ও সৌদি আরবের মাঝের আছির উপত্যকা । ইব্রাহিম এটিতে স্থাপন করা মূর্তিগুলি সরিয়ে এটি পরিষ্কার করেছিলেন। ("ইয়ারফা3উ'  কাওয়াইদ মিন আল বায়তি)। এই উপত্যকাটি আদিকাল থেকেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে পবিত্র ছিল।


আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে , কাবা হল একটি প্রকৃত প্রাকৃতিক স্থান, একটি বিমূর্ত ধারণা বা আইনের সেট নয়।  পৃথিবীর যেকোন জায়গায় অসংখ্য অন্যান্য বাইত থাকতে পারে, এবং হজের জন্য অন্যান্য স্থান থাকতে পারে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। কারন প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। যদি এটি একটি প্রাকৃতিক অবস্থান না হয়, তাহলে আমি জানি না কি। লোকেরা কি ইব্রাহিমের কাছে প্রতিটি গভীর এলাকা থেকে তাদের দান, গরীবদের খাওয়ানো, বাণিজ্য, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য ছুটে আসেনি... তাকে কি মানুষের জন্য ইমাম করা হয়নি? আব্রাহাম কি একটি উপত্যকায় তার বংশধরদের বসতি স্থাপন করেন নি?


প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। এর অর্থ দাড়ায় পৃথিবীতে আরো আল্লাহর ঘর আছে। এমন একটি ঘর দক্ষিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলার  টেপুই পর্বত। 


টেপুই একটি সমতল চূড়া সহ একটি অদ্ভুত-সুদর্শন পর্বত, যাকে "টেবিল-টপ" বলা হয় (কারণ এটি একটি টেবিলের মতো সমতল)। এই অনন্য ভূতাত্ত্বিক গঠনগুলি বেশিরভাগ দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার গায়ানা হাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।


"টেপুই" শব্দটি এসেছে পেমন ইন্ডিয়ানদের ভাষা থেকে। এর অর্থ 'দেবতার ঘর' 'house of the gods' আপনি এটি দেখতে যেতে পারেন, এবং নিজের জন্য দেখতে পারেন। বা গুগল ম্যাপে দেখতে পারেন। 


আরেকটি দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউনের table মাউন্টেন যার সাথে 'devil's peak' শয়তানের শৃঙ্গ আছে।


. https://www.amusingplanet.com/2013/05/tabletop-mountains-or-tepuis-of.html



No comments:

Post a Comment