Sunday, May 22, 2022

আহা আমি যদি নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তার সাথে থাকতাম!


বহু নবী প্রেমী আছে যাদেরকে বলতে শোনা যায় : আমি নবী মুহাম্মদকে এতটাই ভালবাসি যে আমি যদি তার যুগে, তার সাথে আরবে, তাকে রক্ষা করতে এবং সমর্থন করতে পারতাম!   আহা , তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম। 


 হয়তো সে সময় তুমি বেঁচে থাকলে , তার চিরশত্রু হতে ! কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী এই ধরনের নবী প্রেমীদের মুহাম্মদের চির শত্রু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা ছিল তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু  , যারা তার সততা, করুণা এবং সত্যবাদিতার জন্য তাকে একজন বিশ্বস্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে জানত । উনি ছিলেন তাদের ভালবাসার যোগ্য , তবুও যখন তিনি একজন নবী হিসাবে তাদের আহ্বান করেছিলেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ,  তারা তার চিরশত্রু হয়ে গেল এবং ব্যক্তি হিসাবে তার গুণাবলী ভুলে গেল।


কোরানে  আল্লাহ মুহাম্মদকে কাফেরদের সাহাবা/সঙ্গী/বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মানে তিনি তাদের সমসাময়িক এবং তারা তার সমসাময়িক। এই সঙ্গের কারনে তারা  তার  উচ্চ নৈতিকতা সম্পর্কে জানত এবং এটাও জানত যে তিনি কখনও মিথ্যা বলেননি। তাই, তাদের তাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল যখন তিনি তাদের বলেছিলেন যে , তিনি আল্লাহর একজন বার্তাবাহক/নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তাদের অধিকাংশই তাকে বিশ্বাস করেনি, এবং তারা তাকে একজন বিপথগামী পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল। আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গী অবিশ্বাসীদেরকে সম্বোধনের মাধ্যমে এই আয়াতগুলিতে তাদের মতামত খণ্ডন করেছেন:


{তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।(৫৩:২-৪)}


অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ইঙ্গিত দেয় যে মুহাম্মদ এবং তার সমসাময়িকরা একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে খুব ভালভাবে চিনতেন এবং এটি অদ্ভুত যে তারা তাকে বিপথগামী বলে অভিযুক্ত করেছিল ,  যখন তিনি তাদের কাছে কোরানের বাণী শুনিয়েছিলেন। আল্লাহ  মুহাম্মাদকে একই অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ব্যবহার করে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন:


{বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু, দু জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা-ভাবনা কর-তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র।(৩৩:৪৬)}


মুহাম্মদ শুধু চেয়েছিলেন যে তারা আল্লাহকে নিয়ে পরিষ্কারভাবে এবং ভক্তিমূলকভাবে চিন্তা করুক। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে (আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই) আহবান করেছিলেন এবং পরকালে চিরস্থায়ী শাস্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন , তখন তারা তাদের বন্ধু মুহাম্মদকে সন্দেহ করেছিল এবং  তারা তাকে পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল । তারা তাকে একটি শিশু, তারপর একটি যুবক এবং তারপর চল্লিশের একজন পুরুষ হিসাবে দেখেছিল। তারা তাকে ভালবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। তথাপি, তিনি  আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার  সাথে সাথেই তারা তার সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তাকে ঘৃণা করা শুরু করে।


মুহাম্মদের আত্মীয় ,সঙ্গী , সমসাময়িকরা তো আল্লাহর উপাসনা করত , তবুও এক আল্লাহর পথে ডাকার জন্য তাকে ও তার গুটিকয়েক অনুসারীকে ঘৃনা করা করা শুরু করল কেন , শারীরিক নির্যাতন করত কেন , দেশত্যাগে বাধ্য করল কেন?  কারন- শুধুমাত্র এক আল্লাহর পুজা করলে তো লাত , মানাত , উজ্জার সাহায্য কামনা করা যাবে না। তারা বিশ্বাস করত লাত , মানাত , উজ্জা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে , তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। আজকের জমানায় মুহাম্মদে বিশ্বাসের সাথে কোন মিল কি পাওয়া যায়? মুহাম্মদ সুপারিশ করবে , আল্লাহর নিকটে হাউজে কাউসারে স্থান করে দেবে , ইত্যাদি। মুহাম্মদে বিশ্বাস না করার কথা বললে আজকের নবী প্রেমীদের প্রতিক্রিয়া কি চোখে পড়ে?


{আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(৩৯:২-৩)}


নবী প্রেমীঃ  মক্কার কোরাইশদের সাথে আমার ও আমার ইচ্ছার কি সম্পর্ক?


উত্তরঃ আপনি চান যে আপনি মুহাম্মদের যুগে জীবিত থাকতেন এবং মক্কার কোরাইশ গোত্রের মধ্যে জীবিত থাকতেন , যারা মুহাম্মদের আত্মীয় ছিলেন। তাহলে আপনি হয়তো তার চিরশত্রুদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। 


নবী প্রেমীঃ আপনি কিভাবে নিশ্চিত হয়ে এমন একটি জিনিস অনুমান করছেন?! আমি হয়তো নবী মুহাম্মদের সবচেয়ে আন্তরিক ও সৎ অনুসারী হতাম। আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে কিছু মক্কাবাসী এবং কোরাইশ উপজাতিরা ইসলাম গ্রহণকারী প্রাথমিক বিশ্বাসীদের মধ্যে তার নিকটতম সমর্থক ছিল। আমি নিশ্চিত তাদের একজন হতাম। আমার এই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই  বা এত প্রতিবাদ করছেন কেন?!


উত্তরঃ কোনো কিছুর প্রতিবাদ করছি না , আপনাকে উভয় সম্ভাবনাই দিচ্ছি: আপনি বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী , যে কোন একটি দলের মধ্যেই থাকতেন।


নবী প্রেমীঃ আপনার কথা ঠিক না; আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে হতাম যারা নবী মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে।


উত্তরঃ আপনার এই বক্তব্যই দেখায় যে আপনি তার চিরশত্রুদের একজন!


নবী প্রেমীঃ  আপনি আমাকে অপমান করছেন! আমি তাকে বিশ্বাস করতে গিয়ে কিভাবে তার চিরশত্রু হয়ে গেলাম?!


উত্তরঃ কারণ ইসলামে বিশ্বাস ব্যক্তি মুহাম্মদের মধ্যে নয়; তাঁর প্রতি এই বিশ্বাস  ব্যক্তি মুহাম্মদকে দেবতার আসনে বসানো। এটি ইসলামের মৌলিক সত্যের (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) বিরোধী। সুতরাং, প্রকৃত বিশ্বাস মুহাম্মদের মধ্যে নয় বরং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে: কোরান যা  আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।


নবী প্রেমীঃ সেটা কেমনে?!


উত্তরঃ আল্লাহ কোরানের ৪৭ সূরা মুহাম্মদ শিরোনামে বলেছেন: "যারা অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে - তিনি তাদের কাজকে বাতিল করে দেন।" (৪৭:১)। প্রথম আয়াতে কাফেরদের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দ্বিতীয় আয়াতে বিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে: "যদিও যারা বিশ্বাস স্থাপন করে , ভালো কাজ করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে - এবং এটি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য - তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করেন। এবং তাদের উদ্বেগ দূর করে দেবেন।" (৪৭:২)। 


লক্ষ্য করুন যে , "বিশ্বাস" ক্রিয়াটি ৪৭:২ আয়াতে দুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এক বার ভাল কাজ করার সাথে এবং অন্য বার বিশ্বাসের অর্থের সাথে মিলিয়ে :  মুহাম্মদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করা অর্থাৎ কুরআন নিজেই। বর্ণনা করা হয়েছে আমাদের প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে এই সত্যে তথা কোরানে বিশ্বাসীদের তাদের পাপের জন্য ক্ষমা করা হবে ।অবিশ্বাসীদের ও বিশ্বাসীদের সাথে পরকালে কি করা হবে তার  তুলনা করা হয়েছে আয়াত দুটিতে। 


এই বৈপরীত্যের কারণটি পরের আয়াতে এসেছে: "এর কারণ হল যারা অবিশ্বাস করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে, আর যারা বিশ্বাস করে তারা তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যকে অনুসরণ করে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের উদাহরণ তুলে ধরেন।" (৪৭:৩)। এখানেই পার্থক্য নশ্বর মানুষ/রাসুলে বিশ্বাস এবং কোরানের সত্যে বিশ্বাসের মধ্যে ।  বিপথগামীরা মিথ্যার অনুসরণ করে যা তাদেরকে নশ্বর মানুষ/রাসুলকে ও বস্তুকে দেবতা ও পবিত্র করার দিকে নিয়ে যায়।


নবী প্রেমীঃ কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি যে আমি মুহাম্মদের কাছে নাযিল করা কোরানে বিশ্বাস করি এবং আমি মুহাম্মদকেও খুব ভালোবাসি; এটা কি আমাকে মুশরিক করে?!


উত্তরঃ আমরাও মুহাম্মদকে ভালোবাসি, কিন্তু আমরা তাকে দেবতা বা পবিত্র মনে করি না। পবিত্র এবং দেবতা একজনই , তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আমরা মুহাম্মাদকে ভালোবাসি , যিনি কোরানের সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং তার এই প্রচেষ্টার জন্য কষ্ট ভোগ করেছেন। এ কারণেই আমরা তথাকথিত জীবনী এবং হাদিস/আখ্যানগুলিতে তাঁর বিকৃত চিত্রকে প্রত্যাখ্যান করি এবং প্রত্যাখ্যান করি যা তাঁর খ্যাতিকে কলঙ্কিত করে এবং কেবলমাত্র কোরানে পাওয়া তাঁর আসল এবং একমাত্র গল্পের বিরোধিতা করে।


নবী প্রেমীঃ আমার ইচ্ছাতে  ফিরে যাই - আমি চাই যে আমি নবী মুহাম্মদের সমসাময়িকদের একজন হতাম, অর্থাৎ আমি বলতে চাই যে আদি বিশ্বাসীদের একজন হতে চাই।  মক্কার কোরাইশ বা অন্যান্যদের মতো কাফের নয়। এখানে পার্থক্য আছে কি?


উত্তরঃ একমাত্র কোরানকে আল্লাহর বাণী হিসাবে বিশ্বাস করা বা না করার মধ্যে এই পার্থক্য নিহিত। 


মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে অনেকেই যারা তাঁর চমৎকার গুণাবলীর জন্য তাঁকে ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন , তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করেছিলেন যখন তিনি তাঁর নবুওয়াত ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদের কাছে কোরান  পাঠ করে তাদেরকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) আহ্বান করেছিলেন। এইভাবে যারা তাকে ঘৃণা করত ,  তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিগত কারণে এই ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেনি বরং  তাদেরকে আল্লাহর নামে তিনি যে কুরআনের বার্তা দিয়েছিলেন , তা তারা ঘৃণা করেছিল। তারা তার উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য তার চারপাশে জড়ো হতে পছন্দ করত, কিন্তু যখন তিনি কোরান প্রচার শুরু করেছিলেন , তখন থেকে তার প্রতি তাদের ভালবাসা গভীর ঘৃণা এবং শত্রুতায় পরিণত হয়েছিল।


নবী প্রেমীঃ এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!


উত্তরঃ এটা আমরা বুঝতে পারি এই আয়াতগুলো থেকে: “আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না তারা বলে, এটি ব্যতীত অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো অথবা পরিবর্তন কর।” বলুন, “আমার নিজের ইচ্ছায় এটা পরিবর্তন করা আমার কাজ নয়। আমি কেবল আমার কাছে যা অহী করা হয় তার অনুসরণ করি। যদি আমি আমার পালনকর্তার অবাধ্য হই , তবে আমি ভয় করি এক ভয়াবহ দিনের আযাবের ।" বলুন, "যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমি এটি তোমাদের সামনে পড়তাম না, আর নাইবা তিনি তোমাদেরেকে অবহিত করতেন এ সম্পর্কে। কারণ আমি তোমাদের মাঝে ইতিপূর্বেও একটা বয়স অতিবাহিত করেছি। তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না?" (১০:১৫-১৬)। এইভাবে, মুহাম্মদ তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করেছিলেন, কিন্তু একজন ব্যক্তি হিসাবে তার প্রতি তাদের পূর্বের ভালবাসা থাকা সত্বেও অনেকেই কোরান বিদ্বেষের কারনে তাকে এই কোরান পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন করতে বলেছিল , যাতে তাদের ঐতিহ্যগত, পূর্বপুরুষের ধারণাগুলিকে বাচিয়ে রাখা যায়।  আল্লাহ  তাকে এই আয়াত দুটিতে বলেছেন কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। মুহাম্মদই প্রথম যিনি কোরানে বিশ্বাস করেন এবং তিনি প্রভু আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার সাহস পাননি। কোরাইশদের অবিশ্বাসী লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিমা এবং পূর্বপুরুষদের রীতিকে শ্রদ্ধা করার সাথে সাথে তাদের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলে যায় এমন একটি ঐশী বার্তা কামনা করেছিল।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, আপনি আমাকে বলতে চাচ্ছেন যে , তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিত্বকে ভালবাসত কিন্তু কোরানের বাণী এবং (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত, তাই তো?


উত্তরঃ ঠিক তাই ; যখন তিনি তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করতেন , তখন তারা তার প্রতি তাদের ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করত: "যারা অবিশ্বাসী তারা বার্তাটি শুনে আপনাকে প্রায় তাদের দৃষ্টি দিয়ে ছুরিকাঘাত করে এবং বলে, "সে পাগল!" 

অথচ এই বার্তা তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।" (৬৮:৫১-৫২)।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, এই শত্রুতা ছিল কোরানের প্রতিই, নবী মুহাম্মদ বা অন্য কেউ যদি আবৃত্তি করে তাদের প্রতি না , তাই না?


উত্তরঃ  ঠিক; মক্কার কাফেররা প্রাথমিক মক্কার বিশ্বাসীদের ব্যক্তি হিসাবে ঘৃণা করত না, বরং তাদের কোরানে বিশ্বাসের কারনে এবং  তাদের জনসমক্ষে কোরান পাঠ করার কারনে : "যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে উঠে। ....(২২:৭২)


নবী প্রেমীঃ কিন্তু তৎকালীন আরবের আরবরা স্রষ্টা আল্লাহকে বিশ্বাস করত; তারা কুরআনকে এতটা ঘৃণা করলো কেন?!


উত্তরঃ কারণ কোরান অনুসারে, ইসলামে একেশ্বরবাদের সারমর্ম কেবলমাত্র এক আল্লাহতে  বিশ্বাস নয় , সেই সাথে অবশ্যই মানুষের কল্পিত অন্যান্য সমস্ত অনুমানকৃত পবিত্র  মানুষ/জ্বীন দেবতা ও বস্তুতে ( জমজমের পানি , হাজরে আসোয়াদ বা কাল পাথর , কাবা শরিফ ইত্যাদি) অবিশ্বাস করতে হবে। এই কারণেই ইসলামের সাক্ষ্য "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ/বিধানদাতা নেই)। মানুষের উদ্ভাবিত সমস্ত উপাস্য/দেবতার প্রতি অবিশ্বাসের সাথে শুরু হয় প্রথম ধাপ , এরপর  দ্বিতীয়টি হল একমাত্র সত্য ইলাহে বিশ্বাস করা: আল্লাহ। "ধর্মের ক্ষেত্রে কোন জবরদস্তি থাকবে না; সঠিক পথটি ভুল পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। যে তাগুতকে ত্যাগ করে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করে , সে সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাতলটি আঁকড়ে ধরেছে; যা ভাঙবে না। আল্লাহ শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ।" (২:২৫৬)। কোরাইশের মক্কাবাসীরা মানুষ ও বস্তুর দেবীকরণকে মেনে চলার কারণে, তারা কোরানের বাণীকে ঘৃণা ও উপহাস করেছিল: "এবং যখন তাদের কাছে আমাদের আয়াতগুলি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "আমরা শুনেছি। আমরা চাইলে এরকম বলতে পারতাম; এগুলি পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।" এবং তারা বলেছিল, "হে আমাদের আল্লাহ, যদি এটি আপনার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ করুন বা আমাদেরকে বেদনাদায়ক কষ্ট দিন।" (৮:৩১-৩২)।


নবী প্রেমীঃ সুতরাং, তারা কোরানের স্পষ্ট আয়াতগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তারা কোরানের বাণী শুনে বিরক্ত হয়েছিল, তাই না?


উত্তরঃ নিশ্চিতভাবে , তারা কোরানের আয়াত স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল এবং তাদের উপলব্ধি কোরানের প্রতি তাদের ঘৃণা বাড়াতে এবং মুহাম্মদ ও প্রাথমিক বিশ্বাসীদের উপর তাদের ক্রোধ প্রকাশ করতে পরিচালিত করেছিল।  একই সাথে তারা কোরানকেও ঠাট্টা করেছিল। "আর যখন তাদের কাছে আমাদের আলোকিত আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বিচ্যুত করতে চায়।" এবং তারা বলে, "এটি একটি বানোয়াট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।" যখন সত্য তাদের কাছে আসে, তখন কাফেররা সত্য সম্পর্কে বলে, "এটা তো প্রকাশ্য জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।" (৩৪:৪৩)।


নবী প্রেমীঃ যা বলছেন তা আমি বুঝতে পেরেছি।  আমি স্বীকার করি যে আমি জানি না যে সেই সময় যদি বেঁচে থাকতাম , তাহলে আমি বিশ্বাসী না কোরান অস্বীকারকারীদের মধ্যে হতাম। কিন্তু আমাদের আধুনিক যুগে, ২১ শতকের খ্রিস্টাব্দের কী হবে? আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ভালবাসি, কিন্তু সপ্তম শতাব্দীতে বসবাসকারী নশ্বর হিসাবে তাকে দেবতা না করে এই ভালবাসা কিভাবে প্রকাশ করব?


উত্তরঃ মুহাম্মদের সাথে নিজেকে যুক্ত করার বা তাকে ভালবাসার অর্থ তাকে সম্বোধন করা প্রশংসা বাক্য উচ্চারণ করা নয়, কারণ এই অভ্যাস তাকে এমনভাবে উপাস্য করে যেন তিনি একজন অমর দেবতা। ধার্মিকদের এবং মুহাম্মদের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র হল কোরান পড়া, চিন্তা করা, প্রয়োগ করা এবং মেনে চলা। এই বইটিই মুহাম্মদ পড়েছেন এবং প্রয়োগ করেছেন। অন্য কোন বই নয়। আমাদের সকলকে অবশ্যই মুহাম্মদের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে কারণ তিনি কেবল কোরান অনুসরণ করেছিলেন। মুহাম্মাদ তার জীবদ্দশায় যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলেন তার একমাত্র উৎস হল কোরান: (তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে... বলুন: "...") অথবা (বলুন: "...")। সুতরাং, একজন নবী, একজন রসূল, একজন স্বামী, একজন বন্ধু এবং একজন নেতা হিসেবে মুহাম্মদের প্রকৃত ইতিহাসের একমাত্র উৎস কোরান। এটিই আমাদের এবং তার মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র।


নবী প্রেমীঃ আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলে গেছেন!


কোরানে বিশ্বাসীঃ সেটা কি?


নবী প্রেমীঃ মুহাম্মদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার অর্থ এই যে , আমাকেও  তাঁর মতো কোরানের অন্তর্দৃষ্টি/আয়াতগুলি প্রচার ও ধর্মান্তর করতে হবে: "বলুন, "এটি আমার পথ; আমি সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিচ্ছি - আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে। মহত্ব স্রস্টার জন্য; এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।" (১২:১০৮); "আপনার প্রভুর কাছ থেকে আপনার কাছে অন্তর্দৃষ্টি এসেছে। যে কেউ দেখে, তার আত্মার উপকার হয়; আর যে অন্ধ থাকে, তার ক্ষতি হয়..." (৬:১০৪); "...এগুলি আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি, এবং হেদায়েত এবং রহমত, বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।" (৭:২০৩)।


কোরানে বিশ্বাসীঃ আপনি যদি শুধুমাত্র কোরান ব্যবহার করে লোকদেরকে বস্তু ও নশ্বরকে দেবতা ও পবিত্র মনে করে উপাসনা বন্ধ করতে বলেন, তাহলে আপনি নির্যাতিত হবেন এবং শারীরিকভাবে আক্রান্ত হবেন। মুহাম্মাদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: "তবুও যখন আল্লাহর ভক্ত তাকে ডাকতে দাঁড়ায়, তখন তারা তার চারপাশে ঘন ভিড় করে। বলুন, "আমি কেবল আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি এবং আমি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।" (৭২:১৯-২০)।


নবী প্রেমীঃ এখানে একটি বড় ঝুঁকি আছে, তাই না?!


কোরানে বিশ্বাসীঃ অনেক অপমান সম্বলিত ঘৃণামূলক চিঠি এবং ঘৃণামূলক ইমেলের জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং গালি , নির্যাতন  ও কারারুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা এগুলি করবে যাতে  আপনি কোরানের সত্য দ্বারা ধর্মান্তরন করা বন্ধ করেন। আপনার নির্যাতকরা আপনাকে ঘৃণা করবে না কিন্তু আল্লাহর কোরানকে ঘৃণা করবে। কোরানের বাণী প্রচার বন্ধ করুন , দেখবেন তারা আর আপনাকে ঘৃণা করছে না , গালি দিচ্ছে না। "তারা চায় যদি আপনি আপস করেন, তবে তারাও আপস করবে।" (৬৮:৯)।


 নবী প্রেমীঃ এটা আরো বড় ঝুঁকি!


কোরানে বিশ্বাসীঃ আল্লাহর নবীদের সীলমোহর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর প্রতি আপনার ভালবাসা প্রমাণ করা আপনার লক্ষ্য এবং কাজ। প্রেম নিছক খালি কথা নয়: তার মৃত্যুর পর তাকে যে মিথ্যা (হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী) দিয়ে তার চরিত্রকে খ্যাতিমান ও কলঙ্কিত করা হয়েছে , তা খণ্ডন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই স্পষ্টভাষী এবং সোচ্চার হতে হবে। তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে লিখিত হাদীস, বর্ণনা এবং জীবনীতে যা বর্ণিত হয়েছে তা তিনি কখনও উচ্চারণ করেননি। একমাত্র কোরানেই তার ইতিহাস পাওয়া যায়। হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী হল সুফি, শিয়া এবং সুন্নী মুহাম্মাদিদের পার্থিব, মনুষ্যসৃষ্ট ধর্মের ভিত্তি। তাদের মিথ্যা ও বিকৃত ধারণাগুলি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। যা তাদের লালিত পার্থিব ধর্মকে ক্ষুন্ন করে, সেই কোরানের আয়াত নিয়ে মুহাম্মাদিদের  মুখোমুখি হওয়া খুবই কঠিন এক মিশন। কিন্তু আপনি যদি তা করেন ,  তবে আপনি প্রমাণ করবেন যে আপনি সত্যিই  আল্লাহ , কোরান এবং মুহাম্মদকে ভালবাসেন।

No comments:

Post a Comment