Thursday, February 1, 2018

রসূল স্বনির্ভর আইনপ্রণেতা ছিলেন কি?

রসূলের একমাত্র দায়ীত্ব ছিল কোরানের বাণী মানুষের কাছে পৌছানো। নিজের থেকে আইন প্রনয়ন তার দায়ীত্বের মধ্যে পড়ে না বা তিনি সেটা করতেন ও না।


৫:৯৯ রসূলের দায়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেওয়া। আল্লাহ জানেন, যা কিছু তোমরা প্রকাশ্যে কর এবং যা কিছু গোপন কর।




কোরান পড়ে আমরা জানতে পারি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোক বা গোষ্টি রসূলের কাছে আসত বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে তার সমাধানের জন্য বা ধর্মীয় নির্দেশনার জন্য। রসূল নিজের থেকে কোন নির্দেশনা বা উত্তর না দিয়ে আল্লাহর ওহীর অপেক্ষা করতেন। তার নিজেরই যদি আইন প্রনয়নের ক্ষমতা থাকত , তাহলে নিশ্চয় তিনি ওহীর অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নের জবাব বা নির্দেশনা দিয়ে দিতেন। প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কিভাবে জানা গেল? এটা জানতে হলে কোরানের কিছু আয়াতের দিকে নজর দেয়া লাগবে , যেগুলো শুরু হয়েছে "তোমাকে জিজ্ঞাসা করে .......",আর শেষ হয়েছে 'বল'.....দিয়ে। মানুষের জিজ্ঞাসার জবাবে উত্তরটা কি হবে , তা আয়াতের মাধ্যমে বলে দেয়া হচ্ছে রসূলকে। কিছু নমুনা দেখা যাক -



৮:১ আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।




২:২১৯ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।
রসূল ইচ্ছা করলেই কি পারতেন না নিজের থেকে বলে দিতে , গনীমতের মাল কে কতটুকু পাবে বা মদ খাওয়া খারাপ বা কতটুকু দান করা ভাল? না , তিনি তা না করে আল্লাহর আয়াতের অপেক্ষা করেছেন।



এমনো হয়েছে , কোন একটি বিষয়ে আগেই আয়াত নাযিল হয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরে ও মানুষ যখন আবার একি বিষয়ে আবারো প্রশ্ন করেছে , তখন রসূল পারতেন আগের আয়াতগুলো শুনিয়ে দিতে বা নিজের থেকে আগের আয়াতগুলোর উপরে ভিত্তি করে নির্দেশনা দিতে। তিনি তা করেন নি , বরং বরাবরের মতো আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করেছেন। যেমন এতিমদের উপরে মক্কায় থাকতে অনেকগুলো আয়াত নাযিল হয়। 



৯৩:৯ সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না; ১০৭:১,২ আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে? সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়; ৮৯:১৭ এটা অমূলক, বরং তোমরা এতীমকে সম্মান কর না। ৯০:১৪,১৫ অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান। এতীম আত্বীয়কে; ১৭:৩৪ আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; 
মদীনায় থাকাকালীন আরো কিছু আয়াত নাযিল হয় এতিমদের সাথে কেমন ব্যাবহার করা উচিৎ তার নির্দেশনা দিয়ে। 



৭৬:৮ তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। ২:১৭৭ আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। 


এরপরেও যখন আবারো এতিমদের নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করে তখন রসূল কি পারতেন না আগের আয়াতগুলোর উপর ভিত্তি করে বা নিজের বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে নির্দেশনা দিতে? না , তিনি তা দেন নি। তিনি অপেক্ষা করেছেন আল্লাহর অহীর।



২:২২০ আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই । বস্তুতঃ অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। 




এমনো দেখা গেছে জবাব বা নির্দেশনামূলক ওহী আসতে দেরি হচ্ছে বিধায় মানুষ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে , তবুও রসূল নিজের থেকে কোন নির্দেশনা দেন নি। এমনি একটি ঘটনার বর্ননা পাওয়া যায় কোরানে। এক মহিলা রসূলের নিকট আসেন 'জিহার' (নিজের স্ত্রীকে মাতা বলে ঘোষনা দিয়ে তার সাথে যৌন সম্পর্ক না করা) বৈধ কিনা তা জানার জন্য। রসূল তাকে অ্পেক্ষা করতে বলেন আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত। অ্পেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে আল্লাহর দরবারে মহিলা নালিশ করেন। 



৫৮:১,২ যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। 


এমন অনেক ছোটখাট বিষয় আছে , যেগুলো সম্পর্কে রসূল নিজের থেকে নির্দেশনা দিলে খুব একটা ক্ষতি বৃদ্ধি হয়তো বা হতো না । তবুও এগুলোর উত্তরের জন্য কোরানের আয়াতের অপেক্ষা করতে হয়েছে।



২:১৮৯ তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। ২:২২২ আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়।




তাহলে আমরা কোরান পড়ে জানতে পারি , আইন প্রনয়নের একমাত্র মালিক আল্লাহ। রসূলের কাজ আল্লাহর বানীকে মানুষের কাছে পৌছানো, এর অধিক কিছু নয়। রসূল নিজে কখনো আইন প্রনয়নের চেষ্টা করেন নি , তিনি সকল সময় কোরানের আয়াতের জন্য অপেক্ষা করেছেন।