Tuesday, March 8, 2011

চোরের শাস্তি

১২:১-৩ “আলিফ-লাম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত। আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমতে আমি এ কোরআন তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি। তুমি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভূক্ত ছিলে।”


কোরআনে চুরির শাস্তির কথা কি বলা হয়েছে?

৫:৩৮ আয়াতে চুরির জন্য জন্য নির্ধারিত শাস্তির বর্ননা দেয়া আছে।

৫:৩৮ “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে ‘এক্‌তা’উ’ ‘আইদিয়াহুমা’ তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”
৫:৩৯ “অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।”

আরবি শব্দ ‘এক্‌তা’উ’ অর্থ “কাটো” , আর ‘আইদিয়াহুমা’ অর্থ “হাতগুলো” (তিন বা ততোধিক)।

৫:৩৮ শাব্দিক অর্থ দাড়ায় – “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাতগুলো (তিন বা ততোধিক) কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।”

হাতগুলো কতটুকু কাটতে হবে , তার দুই ধরনের মত পাওয়া যায়।

১ম মতানুযায়ী হাতগুলো একেবারে কেটে ফেলে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর সাথে একমত হওয়া যাচ্ছে না নিম্নোক্ত কারনে। প্রথমত আরবি শব্দ ‘আইদিয়াহুমা’ , ‘ইয়াদ’ বা দুই হাতের বহুবচন। এক হাতের আরবি ‘ইদ’। আমরা জানি প্রতিটি মানুষের এমনকি চোরের ও দুইটার বেশি হাত নেই। তাহলে আমরা তিন বা ততোধিক হাত কেমনে কাটব? যদি আমরা স্বীকার ও করে নেই যে এই আয়াতে পুরুষ ও নারী দুই চোরের কথা বলা হয়েছে , তাহলে কি আমাদের চোরের দুটো হাতই কেটে ফেলতে বলা হয়েছে?

দ্বিতীয়ত যদি কাউকে ভুলবশত চোর সাব্যস্ত করা হয় বা কাউকে শত্রুতাকরে চোর হিসাবে ফাসানো হয় অতঃপর তাদের দুই হাত কেটে ফেলা হয় , তখন কিভাবে শুধরানো হবে? আবার এমন ও তো হতে পারে , এমন কেউ যার হাত নেই কিন্ত বুদ্ধি দিয়ে চুরি করতে সহায়তা করেছে, তার কি শাস্তি?

তৃতীয়ত হাত কেটে ফেলা হলে , ৫:৩৯ আয়াতে আল্লাহ যে বলেছেন চোর যদি তওবা করে ও সংশোধিত হয় , তো আল্লাহ নিশ্চয় তার তওবা কবুল করেবেন। এই আয়াতের প্রোয়োগ কিভাবে হবে? হাত তো ফিরে আসবে না!! এর অর্থ দাড়ায় হাত সম্পুর্ন কেটে ফেল্লে ৫:৩৯ আয়াতের কোন কার্যকারীতাই থাকে না। কোরানের আয়াত তো আর মিথ্যা হতে পারে না!!

২য় মতানুযায়ী হাত একেবারে কেটে না ফেলে , হাতে cut mark বা দাগ চিহ্ন রেখে দিতে। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে তারা কোরআনের ১২:৩১ ও ১২:৫০ আয়াতদ্বয়ের উল্লেখ করেন , যেখানে মহিলারা ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটেছিল। নিজেই নিজের হাত নিশ্চয় সম্পুর্ন কেটে ফেলা সম্ভব না। কমনসেন্স তাই বলে।

১২:৩১ “…. সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললঃ ইউসুফ এদের সামনে চলে এস। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ কখনই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা।”
১২:৫০ “বাদশাহ বললঃ ফিরে যাও তোমাদের প্রভুর কাছে এবং জিজ্ঞেস কর তাকে ঐ মহিলার স্বরূপ কি, যারা স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল! আমার পালনকর্তা তো তাদের ছলনা সবই জানেন।”

যদিও হাতে দাগ দেয়া মানবিক ও ব্যাবহারিকভাবে অধিক গ্রহনযোগ্য তবুও এই মতের সাথেও একমত হওয়া যাচ্ছে না। কারন ১ম মতের বিরুদ্ধে যে কারন গুলো উল্লেখ করা হয়েছে , তা এই মতের বিরুদ্ধেও খাটে। তাছাড়াও বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতই উন্নতি হয়েছে যে প্লাস্টিক সার্জারী করে দাগ তুলে ফেলা কোন ব্যাপারই নয়।

তদুপরি ৫:৩৮ আয়াতে ‘কাতা’আ’ আর ১২:৩১ আয়াতে ‘কাত্তা’আ’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যদিও দুটো শব্দই আরবিতে একই শব্দের ভিন্ন রুপ এবং ‘কাত্তা’আ’ শব্দের মানে কোরানের অন্য আয়াতগুলোতে (৫:৩৩, ৭:১২৪, ২০:৭১ ও ২৬:৪৯) সম্পুর্ন কেটে ফেলা বলা হয়েছে। তাহলে আমরা কোন মানেটা নিব? হাত সম্পুর্ন কেটে ফেলা নাকি হাতে কেটে দাগ বা চিহ্ন দিয়ে দেয়া? উত্তর কোরানের আলোকে পরের পোস্টে দিব ইনশাল্লাহ।

1 comment: