Sunday, March 6, 2011

একটি নুতন বিবর্তনবাদ - ভিন্ন চিন্তা (২)

(প্রচলিত ধারনা বা জানার বাইরে কোন বক্তব্য আসলেই মোল্লারা যেমন গালাগালি করে থাকে বা বলে থাকে কোরান হাদীস পড়ে আসুন , তেমনটি মুক্তমনাদের কাছ থেকে ও গালাগালি বা বিবর্তনের অমূক বইটি পড়ে আসুন , এমন ধরনের বক্তব্য আকাঙ্খিত নয়।)

নুতন বিবর্তনবাদ -
"পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জীবের ডিএনএ'তে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) নয় বরং পরিকল্পিত বদল বা প্রতিকল্পন ঘটে থাকে।"
(There is a mutation algorithm in DNA that makes *intelligent*
substitutions when species need to adapt to their environment.)

গত পোস্টে একটি উদাহরন দিয়েছিলাম যেখানে -
"The quick brown fox jumped over the lazy dog"
সফল বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছিল নিম্নের বাক্যে-
"The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man."

এই সফল বাক্যটি পাওয়া গিয়েছিল পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ্য ও ক্রিয়া বদলের মাধ্যমে , যা বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণ বদলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।

ডিএনএ'তে ও পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে , একই ভাবে ব্যাকরণের নিয়ম মেনেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কোন একটি নিওক্লেইক এসিডের পরিবর্তে পুরো একটি ডিএনএ অনুক্রমের (Transposon) পরিকল্পিত বদল ঘটে থাকে।

এটা নুতন কোন তথ্য ও নয় বা থিওরী ও নয়। এটাই ঘটনা ,ফ্যাক্ট।

এটা আসলে ৬০ বছরের ও বেশি পুরনো। যারা আগে শোনেন নি , তাদের কাছেই শুধু এটা নুতন ঘটনা।

জীববিজ্ঞানী বারবারা ম্যাকক্লিনটক ১৯৪৪ সালে এটা আবিস্কার করেন এবং এই আবিস্কারের জন্য ১৯৮৩ সালে নোবেল প্রাইজ পান। তার ছবি আমেরিকার ডাক টিকেটে ছাপা হয়েছে এবং তিনি ইতিহাসের এক অন্যতম জীববিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত।

তার এই আবিস্কার এতটাই র‌্যডিকেল ও ডারউইনের থিওরীর পরিপন্থী ছিল যে , বারবারা ম্যাকক্লিনটক তার এই আবিস্কার প্রচার না করে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তখনকার বৈজ্ঞানিক সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়েই তিনি এমনটি করেছিলেন।

কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন - জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না কেন?

ভাল প্রশ্ন।

শুধু এটুকুই বলা যায় - জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না , এর কারন এটা নয় যে এটার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় বা এমন ও নয় যে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে। আসলে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে না। এখনো এমন কোন সত্যিকারের গবেষনা বা পরীক্ষার কথা কেউ বল্তে পারবে না , যার মাধ্যমে দেখানো সম্ভব বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি বিবর্তনকে চালনা করে।(কারো এমন কোন গবেষনার কথা জানা থাকলে , জানালে উপকৃত হব।) দুঃখের সাথে বল্তে হয় , বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির থিওরী একটি শহুরে লৌকিক উপাখ্যান (যার সত্যতা নিরূপন দুরূহ) ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার কিছু তথ্য -

পরিকল্পিত বিবর্তন যে উপায়ে ঘটে , ঠিক সেই উপায়েই আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) সম্পুর্ণ নুতন জীবাণুর (যার সাথে আগে কখনো মোলাকাত হয় নি) সাথে যুদ্ধের অস্ত্র (এন্টিবডি) তৈরির জ্ঞান অর্জন করে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন সংযুক্তির (combination) মাধ্যমে চেষ্টা করে আক্রমনকারী জীবাণুর কোড ভাঙ্গতে। যখনই এই কোড ভাঙ্গা সম্ভব হয় , তখন পরবর্তি প্রজন্মের কোষে (daughter cells.) ডিএনএ'র নুতন পুনর্বিন্যাসের তথ্য সরবরাহ করা হয়।

আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি ক্ষুদ্রাকার প্রতিরূপ বা মডেল।

চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জেমস্‌ শাপিরোর একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ আবিস্কারের কথা উল্লেখ না করলেই নয় -
"প্রোটোজোয়া পরিবেশের চাপে পড়লে নিজের ডিএনএ'কে কেটে প্রায় ১লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো করে ফেলে। অতঃপর পরিবেশের শত শত পরিবর্তনীয়কে (variables) ধর্তব্যে এনে ডিএনএ'কে এমনভাবে পুনঃসংযোজন করে , যাতে একটি নুতন আরো ভাল ও সক্ষম প্রোটোজোয়ায় বিবর্তিত বা বিকশিত হয়।"

ভাল করে আর একবার পড়ে এর গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করুন। প্রটোজোয়া নিজের ডিএনএ'কে নিজেই রিপ্রোগ্রাম করে বিবর্তিত হয়। এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ও একি প্রকৃয়ায় ঘটে থাকে। আমাদেরকে ব্যাক্টেরিয়ার জনপুন্জে সুদুর ভবিষ্যত পর্যন্ত যত এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হবে , তার প্রত্যেকটির একটি/কয়েকটি করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থীতি আগে থেকেই বিদ্যমান , এমন উদ্ভট দাবীতে আর বিশ্বাস না রাখলেও চলবে।

No comments:

Post a Comment