বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের নাম শোনে নি , এমন বিজ্ঞানমনস্ক লোক আজকের বিশ্বে খুজে পাওয়া যাবে না। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে আইনস্টাইন ৩টি গবেষনাপত্র প্রকাশ করে সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। এই গবেষনাপত্রের মাধ্যমে তিনি পরমানূর (atom) অস্তিত্ব প্রমান করেন , আপেক্ষিক তত্ব (theory of relativity) সকলের সামনে উপস্থাপন করেন এবং কুয়ান্টাম বলবিদ্যার (quantum mechanics) বর্ণনা করেন।
২৬ বছর বয়সী এক বৈজ্ঞানিকের জন্য শুরুটা মন্দ ছিল না!
তার আপেক্ষিকতার সমীকরন , আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হচ্ছে , এমনটাই ইঙ্গিত করছিল। এটাকে তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। কারন তাহলে স্বীকার করে নিতে হয় , এই মহাবিশ্বের শুরু আছে এবং কেউ একে শুরু করেছিল। যেহেতু এটা তার মনঃপুত হয় নি , সেকারনে তিনি আপেক্ষিকতার সমীকরনের মধ্যে একটি 'গোঁজামিল ফ্যাক্টর' ('fudge factor') ঢুকিয়ে দিলেন। যাতে করে "এই মহাবিশ্বের শুরু বা শেষ নেই , এটা প্রসারিত বা সঙ্কুচিত হচ্ছে না" এটা নিশ্চিত করা যায়।
কিন্তু ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল্ দেখালেন , বিগ ব্যাঙের মডেলের ভবিষ্যদবাণী অনুযায়ী কীভাবে সবচেয়ে দুরের গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দুরে আরো দুরে সরে যাচ্ছে। ১৯৩১ সালে আইনস্টাইন বিগ ব্যাঙ থিওরীকে মেনে নিয়ে বল্লেন ," সৃষ্টির যত ব্যাখ্যা আমি শুনেছি , এটাই তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ও সন্তুষ্টিকর।" আর 'গোঁজামিল ফ্যাক্টর'কে তার কর্মময় জীবণের সবচেয়ে বড় ভুল বা ব্লান্ডার বলে স্বীকার করেছিলেন।
পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের পরীক্ষা ও মাপজোঁকে আইনস্টাইনের থিওরীগুলোর সত্যতা বারে বারে প্রমানিত হয়েছে। তবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্বের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ হলো , বিগ ব্যাঙের মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্বের শুরুই শুধু হয় নি , সময় এবং কারন ও ঘটনার (cause and effect) যোগসুত্রের শুরুটাও একি সাথে শুরু হয়েছিল।
হ্যা , এটাই ঠিক। মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে কোন সময় ছিল না। সময় রেখার শুরুই হয় বিগব্যাঙের সাথে। সময় ও স্পেস বা মহাশুন্যের বাইরে থেকে এক বুদ্ধিমত্তা কতৃক বস্তু , শক্তি , সময় ও মহাশুন্য সৃষ্টি হয়েছিল।
এই বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আইনস্টাইন তার "বিশ্বকে আমি যেভাবে দেখি /The World As I See It" বইয়ে লিখেছেন যে , প্রাকৃতিক আইনগুলোর সুসামন্জস্যতা এক উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বই প্রকাশ করে , যার তুলনায় সকল মানবের চিন্তা ও কাজ একেবারেই নগন্য।
তিনি আরো লিখেছেন , যারাই আন্তরিকতার সাথে বিজ্ঞান চর্চার সাথে জড়িত , তাদের কাছে মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাকৃতিক আইনের ভিতরে একটি আত্মা /spirit সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হবে - যে আত্মা মানুষের থেকে বহু গুনে উন্নততর এবং যার সামনে আমাদের সীমিত ক্ষমতা একেবারেই তুচ্ছ।
খুবি তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য , নয় কি?
No comments:
Post a Comment