Thursday, April 14, 2011

আমাদের এই মহাবিশ্ব কোথা থেকে এসেছে? (২)

পাখির বিষ্ঠা।




আজকের দুনিয়ায় বিগ ব্যাঙ থিওরী সর্বজন বিদিত ও বিজ্ঞানী মহলে সমাদৃত ও স্বীকৃত। তবে শুরুতে কেউই বিগ ব্যাঙ থিওরীকে পাত্তা দেয় নি , উড়িয়ে দিয়েছিল। যে কজন এই থিওরীকে সমর্থন করেছিল , তারা ভবিষ্যতবাণী করে যে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন এখনো অবশিষ্ট আছে।



১৯৬৫ সালে নিউ জার্সীতে বেল ল্যাবরেটরীর দুজন বিজ্ঞানী প্রায় হঠাৎ করেই একটা বড় রেডিও ডিশ-এন্টেনার মাধ্যমে এই তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের সন্ধান পেয়ে যান। পৃথিবীর সবচেয়ে সুক্ষ পরিবর্তন নির্ণয়ে সক্ষম রেডিও ডিশ-এন্টেনাকে টিউনিং করার সময় একটি ঝির ঝির শব্দ আর্নো পেন্জিয়াস ও রবার্ট উইলসনকে জ্বালাতন করছিল। কারন এন্টেনাকে আকাশের যেদিকেই ঘুরান না কেন , সকল দিক থেকেই ঝির ঝির শব্দটি আসছিল। তারা প্রথমে ভেবেছিলেন , এটা পাখির বিষ্ঠা (গু) । তাদের এন্টেনাটি এতই সুক্ষ ছিল যে , ডিশ-এন্টেনার উপরে পাখি বিষ্ঠা ত্যাগ করলে , সদ্য নির্গত সেই বিষ্ঠা গরম থাকার ফলে ওটার তাপ থেকে সৃষ্ট বিকিরনকে ও এই এন্টেনাটি ধরতে পারত। ডিশ-এন্টেনা থেকে সেই বিষ্ঠা পরিস্কার করার পরে ও দেখা গেল ঐ ঝির ঝির শব্দ আসা বন্ধ হচ্ছে না।



একবছর ধরে এই ঝির ঝির শব্দের ডাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে তারা এই স্বীদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই ঝির ঝির শব্দটিই হলো ১৩০০ কোটি বছর পূর্বে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন। তাকে বলা হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB)। সিএমবি আবিষ্কারকদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হল, যদিও এই বিকিরণের ভাবীকথন অনেক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা আগেই করেছিলেন এবং সেই সাথে বিগ ব্যাঙ নিয়ে বিজ্ঞানীদের সকল অবিশ্বাস ও সন্দেহ দুর হলো। (আপনার টেলিভিশন চ্যানেল পরিবর্তনের সময় যে চ্যানেলে কোন প্রোগ্রাম থাকে না , সেখানে যে ঝির ঝির শব্দ শোনা যায় , ওটাই সিএমবি (CMB))



এক সাক্ষাৎকারে আর্নো পেন্জিয়াসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল , বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই কেন এত বাধার সম্মুখীন হয়েছিল? কেন মূলধারার বিজ্ঞানীরা একে মেনে নেন নি?



জবাবে আর্নো পেন্জিয়াস বলেন - "বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা ছাড়াই এই মহাবিশ্বের বর্ণনা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এবং বিজ্ঞান যেহেতু কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় না , শুধু বর্ণনাই দেয় , সেহেতু মূলধারার বিজ্ঞানীদের বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই মেনে না নেয়াটাই কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন। আমাদের এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব যদি চিরস্থায়ী হয়ে থাকে , তাহলে এর কোন ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না , নয় কী?"



"কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল , 'কোন এক কোম্পানির সকল সেক্রেটারিই মহিলা কেন'? আপনি উত্তরে বলতে পারেন , 'কোম্পানির শুরু থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে।' এটা ব্যাখ্যা না দিয়েই পার পাওয়ার একটি পন্থা। ঠিক এমনি ভাবে যে সকল থিওরীর কোন ব্যাখ্যা লাগে না সেগুলোকেই সাধারনত বিজ্ঞান গ্রহণ করে এবং এভাবেই বিজ্ঞান খুব সুন্দর ভাবে কাজ করে চলেছে।"



"মহাবিশ্ব চিরস্থায়ীর ধারনা বা পুরাতন থিওরীটা এতই কুৎসীত যে সেটাকে মানুষ পরিত্যাগ করেছে। এর বদলে নুতন ও সহজতম থিওরীটা হলো - শুন্য থেকে সৃষ্টি , এই মহাবিশ্বের শুন্য (সরিষার দানা?) থেকে মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ। সাধারন বাংলায় যাকে বলে - 'হাওয়া থেকে পাওয়া'।"



রবার্ট উইলসনকে সাংবাদিক ফ্রেড হীরেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ," বিগ ব্যাঙ কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ইঙ্গিত করে কী না?"



উইলসন বললেন ," কিছু একটা তো অবশ্যই বারুদে ম্যাচের কাঠি ঠোকার কাজটা করেছিল। আর আপনি যদি ধার্মিক হোন , তাহলে এর থেকে ভাল কোন থিওরী তো আমার মাথায় আসে না।"



পরবর্তি পর্বে থাকবে - " বিগ ব্যাঙ কেন ইতিহাসের সুক্ষতম পরিকল্পিত ঘটনা?"





No comments:

Post a Comment