Thursday, November 24, 2022

একটি নুতন বিবর্তনবাদ – ভিন্ন চিন্তা

 ফেব্রুয়ারী 15, 2011


কেমন হয় , যদি বলি বিবর্তনবাদ সত্য , তবে ডারউইন যেটা বলেছিলেন , তার থেকে কিছুটা ভিন্ন?

কেমন হয় , যদি বিবর্তনের এমন একটা নুতন মডেল থাকত , যেটায় জীবাশ্ম ( fossils ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জীবের প্রায় কোনই পরিবর্তন না ঘটার ….. অতঃপর হটাৎ ঘটে যাওয়া ক্যাম্ব্রিয়ান বিষ্ফোরনের (Cambrian Explosion) ব্যাখ্যা থাকত? ক্যাম্ব্রিয়ান বিষ্ফোরন: প্রায় রাতারাতিই হাজার হাজার নুতন জীবের প্রেক্ষাপটে আগমন।

কেমন হয় , যদি “বিবর্তনবাদ বনাম সৃষ্টিতত্ত্ববাদ” , হয় এটা নয় ওটা এই অবস্থান না নিয়ে “দুটৈ+আরো কিছু” অবস্থান নিতে পারি?

কেমন হয় , যদি জীবাশ্ম নিয়ে অন্তহীন বিতর্ক না করে , আমরা ‘1’ ও ‘0’ র মতৈ নির্ভুলভাবে বিবর্তনের ইতিহাস জানতে পারতাম?

কেমন হয় , বিজ্ঞান ও বিশ্বাস যদি অনন্তর পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত না থাকে?

এ সকল কিছুই শুধু সম্ভব-ই নয় , বরং বর্তমানের বাস্তবতা। আমি জানি এটা একটা অসম্ভব দাবী , তবে সকলের কাছে অনুরোধ , একটু ধৈর্য ধরে আমার কথাগুলো পড়ে দেখুন নির্বোধের মতো কিছু বলছি কি না।

সত্যি সত্যিই আমার কাছে বিবর্তনের একটি নুতন থিওরী আছে। শুধু তাই নয় , এই নুতন থিওরীর সাহায্যে আগামি ৩-২০ বছরে নুতন কি আবিষ্কৃত হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হবে।

ডারউইন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে , জীবাশ্মের সাহায্যে দেখানো সম্ভব হবে , কিভাবে সরল এককোষী জীব নিয়মিত গতিতে ক্রমে ক্রমে বহুকোষী ও জটিল জীবে বিবর্তিত হয়েছে। এখন এটা সর্বজন বিদিত যে , নিয়মিত গতিতে বিবর্তন না ঘটে লাফ দিয়ে দিয়ে বিবর্তন ঘটেছে , অর্থাৎ লম্বা সময় স্থিতীশীল থেকে হটাৎ হটাৎ সামনে ঝাপ দিয়েছে।

স্টিফেন জে গৌল্ড এর নাম দিয়েছেন ‘বিরাম ভারসাম্য’ (punctuated equilibrium)। ঐ সময়ে এটা কিভাবে ঘটেছিল , তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আজ আমাদের হাতে অনেক যোগসুত্র ( clues ) আছে , যার সাহায্যে এর উত্তর পাওয়া সম্ভব।

ডারউইন বলেছিলেন বিবর্তনের চালিকাশক্তি হলো বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের যোগফল।

ডারউইনের এই মতবাদ আধা সঠিক এবং আধা ভুল। ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ব্যাপারে অবশ্যই সঠিক ছিলেন।

পক্ষপাতহীন ভাবে বল্তে গেলে প্রাকৃতিক নির্বাচন যে সঠিক , এটা জানতে রকেট সায়েন্স জানা লাগে না। দুর্বলের মৃত্যু ঘটে আর সবলেরা বেচে থাকে। আমার মনে হয় আমাদের গুহা মানবেরা ও এর সাথে পরিচিত ছিল।

(রহিম করিমের মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করল এবং মেরে ফেলল। অতঃপর দুজনেই ক্ষুধার্ত বাঘের পেটে গেল। Survival of the fittest…. এটাই স্বাভাবিক।)

প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোন সৃজনশক্তি নেই , যেটা করে তা হলো প্রসবকৃত শাবকগুলোর ক্ষুদ্রতমটিকে বা বামন গাছটিকে মেরে ফেলা।

বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তির রহস্য বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির (random mutation) মাঝেই নিহিত হতে হবে।

ডারউইন , তার সময়ে, বিশ্বাস করতেন বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির বা ভিন্নতার ( variation ) মধ্য দিয়েই সকল প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। তিনি বলেছিলেন : বেশিরভাগ সময় এটা ক্ষতিকারক , কিন্তু কখনো কখনো এটা সকল ধরনের সুন্দর ও নুতন আকার দিতে সাহায্য করে , মনে হয় যেন নকশা করা।

বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি কি? সকল জীববিজ্ঞানের বইয়ে বলা হয়েছে- এটা দুর্ঘটনাজনিত ‘ডিএনএ’র ভুল নকল বা প্রতিলিপি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী , এটা আসলে অবিশুদ্ধ ডাটা ( corrupted data ), যা মাঝে মাঝে ক্ষতি না করে , উপকার করে।

এখানেই ডারউইন ও জীববিজ্ঞানের বইগুলো ভুল করছে।

একজন প্রকৌশলীর দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এটা ১০০% ভুল। প্রকৌশলের এমন কোন বিভাগ নেই , যেখানে দেখানো সম্ভব অবিশুদ্ধ ডাটা ক্ষতির বদলে উপকার করে। এটা সব সময় ক্ষতিকারক। ভুল নকল বা ভুল ডাটা প্রেরন (data transmission) কখনোই সঙ্কেতকে (signal) কে সাহায্য করে না। তারা শুধু ক্ষতিই করে।

অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না। আমি বলছিনা যে বিবর্তন ঘটে নি বা ঘটবে না। এটাই বলতে চাচ্ছি যে , ডারউইন যেভাবে বলেছিলেন , ঠিক সেভাবে ঘটেনি। ভিন্নভাবে বিবর্তন ঘটেছে।

কিভাবে বিবর্তন ঘটেছে তা বিস্তারিতভাবে বলার আগে , বিক্ষিপ্ততা (randomness ) কিভাবে তথ্যকে জঞ্জাল (garbage) বানিয়ে ফেলে তার ব্যাখ্যা করা দরকার।

আমরা নিচের বাক্য দিয়ে শুরু করতে পারি।

“The quick brown fox jumped over the lazy dog”

এখন যদি আমরা বিক্ষিপ্ত বা এলোপাতাড়িভাবে এই বাক্যের বর্ণগুলো পরিবর্তন বা মিউটেট করি , তাহলে নিম্নের বাক্যগুলোর মতো দেখা যাবে।

The 6uHck brown fox jukped over the lazyHdog
Tze quick bro0n foL juXped over the lazy doF
Tae quick browY fox jumped oGer tgePlazy dog
The iuick brown fox jumped lver the lazy dog
The quiikQbKowSwfox .umped oveh the lazy dog

আপনি দুনিয়ার সকল প্রাকৃতিক নির্বাচন এর পরে প্রয়োগ করার পরেও একটি সুন্দর বাক্যকে ধ্বংশ ছাড়া কোন বোধগম্য বাক্য তৈরী করতে পারবেন না। www.RandomMutation.com এই ওয়েবসাইটে যেয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

এটা কেন কাজ করে না? কারন হলো , একেকবারে একটি বর্ণ পরিবর্তন করে একটি বাক্য তৈরি করা কখনৈ সম্ভব নয় , ইচ্ছাকৃত ভাবে চেষ্টা যদি করেন তবু ও।

প্রযুক্তিগতভাবে , এটা হয় কারন সকল বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) হলো গোলমেলে বা অতিরিক্ত শব্দ (noise) , যা সঙ্কেতকে (signal) ধ্বংশ করে। ক্লড শ্যানন এটাকে বলেছেন – তথ্য এন্ট্রপি। এন্ট্রপি কখনো বিপরিতমুখী হয় না। অতিরিক্ত শব্দ কখনৈ সঙ্কেতের উন্নতি করে না , বরং সঙ্কেতকে গোবর বানিয়ে ফেলে।

বিবর্তন সফল হওয়ার একটাই রাস্তা , আর তা হলো যদি বিবর্তন ভাষার নিয়ম অনুসরন করে।

সুতরাং.. সফল বিবর্তন ঘটলে বাক্যটি এমনটাই দেখাবে

The fast brown fox jumped over the slothful dog.
The dark brown fox jumped over the light brown dog.
The big brown fox leaped over the lazy dog.
The quick black fox sped past the sleeping dog.
The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man.

ইংরেজিতে সফল বিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বিশেষ্য ও ক্রিয়া পদের নির্ভুল প্রতিস্থাপন এবং ভাষার নিয়ম অনুসরন করা।

‘ডিএনএ’ ও এর ব্যাতিক্রম নয়। কারন ‘ডিএনএ’র নিজস্ব ভাষা আছে। ফ্যাক্ট হলো , হাজার হাজার ভাষাবিদ মানব জেনোম প্রজেক্টে জীনের ডিকোড বা অর্থোদ্ধারে সাহায্য করেছেন। ডজন ডজন ভাষার বইতে বর্ননা করা হয়েছে ‘ডিএনএ’ ও মানুষের মুখের ভাষার মধ্যেকার রহস্যজনক সাদৃশ্য নিয়ে।

পরের পর্বে নুতন বিবর্তনবাদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হবে।

Newsweek Magazine: “Was Darwin Wrong About Evolution?”
http://www.newsweek.com/id/180103

“Darwin: Brilliantly Half Right, Tragically Half Wrong”
http://www.cosmicfingerprints.com/blog/darwin-half-right/

“A 3rd Way” – James Shapiro’s 21st century view of evolution
http://shapiro.bsd.uchicago.edu/Shapiro.1997.BostonReview1997.ThirdWay.pdf


নুতন বিবর্তনবাদ –
“পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জীবের ডিএনএ’তে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) নয় বরং পরিকল্পিত বদল বা প্রতিকল্পন ঘটে থাকে।”
(There is a mutation algorithm in DNA that makes *intelligent*
substitutions when species need to adapt to their environment.)

গত পোস্টে একটি উদাহরন দিয়েছিলাম যেখানে –
“The quick brown fox jumped over the lazy dog”
সফল বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছিল নিম্নের বাক্যে-
“The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man.”

এই সফল বাক্যটি পাওয়া গিয়েছিল পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ্য ও ক্রিয়া বদলের মাধ্যমে , যা বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণ বদলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।

ডিএনএ’তে ও পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে , একই ভাবে ব্যাকরণের নিয়ম মেনেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কোন একটি নিওক্লেইক এসিডের পরিবর্তে পুরো একটি ডিএনএ অনুক্রমের (Transposon) পরিকল্পিত বদল ঘটে থাকে।

এটা নুতন কোন তথ্য ও নয় বা থিওরী ও নয়। এটাই ঘটনা ,ফ্যাক্ট।

এটা আসলে ৬০ বছরের ও বেশি পুরনো। যারা আগে শোনেন নি , তাদের কাছেই শুধু এটা নুতন ঘটনা।

জীববিজ্ঞানী বারবারা ম্যাকক্লিনটক ১৯৪৪ সালে এটা আবিস্কার করেন এবং এই আবিস্কারের জন্য ১৯৮৩ সালে নোবেল প্রাইজ পান। তার ছবি আমেরিকার ডাক টিকেটে ছাপা হয়েছে এবং তিনি ইতিহাসের এক অন্যতম জীববিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত।

তার এই আবিস্কার এতটাই র‌্যডিকেল ও ডারউইনের থিওরীর পরিপন্থী ছিল যে , বারবারা ম্যাকক্লিনটক তার এই আবিস্কার প্রচার না করে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তখনকার বৈজ্ঞানিক সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়েই তিনি এমনটি করেছিলেন।

কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন – জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না কেন?

ভাল প্রশ্ন।

শুধু এটুকুই বলা যায় – জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না , এর কারন এটা নয় যে এটার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় বা এমন ও নয় যে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে। আসলে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে না। এখনো এমন কোন সত্যিকারের গবেষনা বা পরীক্ষার কথা কেউ বল্তে পারবে না , যার মাধ্যমে দেখানো সম্ভব বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি বিবর্তনকে চালনা করে।(কারো এমন কোন গবেষনার কথা জানা থাকলে , জানালে উপকৃত হব।) দুঃখের সাথে বল্তে হয় , বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির থিওরী একটি শহুরে লৌকিক উপাখ্যান (যার সত্যতা নিরূপন দুরূহ) ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার কিছু তথ্য – 

পরিকল্পিত বিবর্তন যে উপায়ে ঘটে , ঠিক সেই উপায়েই আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) সম্পুর্ণ নুতন জীবাণুর (যার সাথে আগে কখনো মোলাকাত হয় নি) সাথে যুদ্ধের অস্ত্র (এন্টিবডি) তৈরির জ্ঞান অর্জন করে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন সংযুক্তির (combination) মাধ্যমে চেষ্টা করে আক্রমনকারী জীবাণুর কোড ভাঙ্গতে। যখনই এই কোড ভাঙ্গা সম্ভব হয় , তখন পরবর্তি প্রজন্মের কোষে (daughter cells.) ডিএনএ’র নুতন পুনর্বিন্যাসের তথ্য সরবরাহ করা হয়।

আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি ক্ষুদ্রাকার প্রতিরূপ বা মডেল।

চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জেমস্‌ শাপিরোর একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ আবিস্কারের কথা উল্লেখ না করলেই নয় –
“প্রোটোজোয়া পরিবেশের চাপে পড়লে নিজের ডিএনএ’কে কেটে প্রায় ১লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো করে ফেলে। অতঃপর পরিবেশের শত শত পরিবর্তনীয়কে (variables) ধর্তব্যে এনে ডিএনএ’কে এমনভাবে পুনঃসংযোজন করে , যাতে একটি নুতন আরো ভাল ও সক্ষম প্রোটোজোয়ায় বিবর্তিত বা বিকশিত হয়।”

ভাল করে আর একবার পড়ে এর গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করুন। প্রটোজোয়া নিজের ডিএনএ’কে নিজেই রিপ্রোগ্রাম করে বিবর্তিত হয়। গত পোস্টে অভিজিতের সাথে আমার বিতর্কের কথা মনে আছে? এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ও একি প্রকৃয়ায় ঘটে থাকে। আমাদেরকে ব্যাক্টেরিয়ার জনপুন্জে সুদুর ভবিষ্যত পর্যন্ত যত এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হবে , তার প্রত্যেকটির একটি/কয়েকটি করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থীতি আগে থেকেই বিদ্যমান , এমন উদ্ভট দাবীতে আর বিশ্বাস না রাখলেও চলবে।

ভুল জানা?

 এপ্রিল 17, 2011

এতদিন জেনে এসেছি বিজ্ঞান সকল কিছুর বিজ্ঞাসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করে , এখানে বিশ্বাসের কোন স্থান নেই। কিন্তু…..

কয়েকদিন আগে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB) আবিষ্কারক দুজনের একজন , নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আর্নো পেন্জিয়াসের সাক্ষাৎকার পড়ে দ্বীধায় পড়ে গেলাম। তিনি বলেছেন-

“বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা ছাড়াই এই মহাবিশ্বের বর্ণনা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এবং বিজ্ঞান কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় না , শুধু বর্ণনাই দেয়।

এটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন – “কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল , ‘কোন এক কোম্পানির সকল সেক্রেটারিই মহিলা কেন’? আপনি উত্তরে বলতে পারেন , ‘কোম্পানির শুরু থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে।’ এটা ব্যাখ্যা না দিয়েই পার পাওয়ার একটি পন্থা।”

এটা পড়ে চিন্তা জাগল , আসলেই কি তাই? বিজ্ঞান কি কোনই ব্যাখ্যা দেয় না? মনে পড়ল নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার সেই বিখ্যাত গল্পটির কথা। যার ফলশ্রুতিতে আমরা থিওরী অফ গ্রাভিটি বা মহাকর্ষ সুত্রটি জানতে পেরেছি। এই সুত্র কি আপেল মাথায় কেন পড়ল বা মাথায় না পড়ে কেন আকাশে উড়ে গেল না , তার ব্যাখ্যা নয় কি? যতই চিন্তা করি ততই মাথা গুলিয়ে যায়। দুটি মহাজাগতিক বস্তু পরস্পরকে আকর্শন করে , এটা তো বর্ণনা। নিউটনের আগেও আপেল মাথায় পড়ত এবং এখনো পড়ে। সকলেই দৈনন্দিন জীবণে এটা দেখছে।

কেন আপেল মাথায় পড়ে? কেন দুটি মহাজাগতিক বস্তু পরস্পরকে আকর্শন করে বা আকর্ষন না করে কেন পরস্পরকে বিকর্শন করে না? এর জবাব কি নিউটন বা অন্য কোন বিজ্ঞানী দিয়েছেন? নিউটনের সুত্র থেকে জানতে পারি আকর্শনের পরিমানটা নির্ভুলভাবে। ব্যাখ্যাটা কি জানতে পারি?

ভাবনা

 জুন 1, 2011


কি নিয়ে এত ভাবছেন? এত পেরেশানি , এত চিন্তা – সবি বৃথা। জানেন না , কুয়ান্টাম ফিজিক্স আপনার অস্তিত্বকেই নাই করে দিয়েছে। আপনার কোন চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার জন্য আপনার কোন শরীর বা মন বা জীবণ নেই। সকলি মায়া। চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার মানুষ নেই। যদি ভেবে থাকেন পাগলের প্রলাপ বকছি , তাহলে এই শতাব্দির অনেক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক , দার্শনিক ও কিছু ধার্মিক আপনাকেই পাগল ভাববে। মানুষের কোন অস্তিত্বই নেই , আধুনিক বিজ্ঞান ও গণিত এমনটিই প্রস্তাব করছে বা সম্ভাবনার কথা বলছে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান ও কুয়ান্টাম মেকানিক্সের যত অগ্রগতি হচ্ছে , ততই এটা পরিস্কার হয়ে উঠছে যে মানুষ হিসাবে আমাদের অস্তিত্ব একপ্রকার মায়া ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা ভেবে থাকি আমরা মানুষ , আমাদের শরীর আছে , ব্রেণ আছে যা দিয়ে চিন্তা করি। ভুল , এই ভাবনাটাই ভুল। আমরা কেউ নই। আমরা একেকজন বহুসংখ্যক মৌলিক পদার্থের অনু, পরমানু ও অন্যান্য আন্তঃআনবিক কণিকার সমষ্টি। আমাদের কল্পনাতেই শুধুমাত্র শরীর ব্রেণ ও মনের অবস্থান।

মায়া – এর সবটুকুই মায়া। এই শতাব্দির বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অথার এডিংটন কুয়ান্টাম থিওরি সম্পর্কে বলেছেন : পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে …. আমার কনুইয়ের ছায়া একটি টেবিলের ছায়ার উপরে সেভাবেই ঠেক দিয়ে থাকে , যেভাবে কাগজের ছায়ার উপরে কালির ছায়া গড়িয়ে যায়….. বাস্তবতা হলো , পদার্থবিজ্ঞান যতই উন্নতি করছে , ততই ছায়ার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ছায়া বলতে অথার এডিংটন মায়া বা illusionকেই বুঝিয়েছেন। বিজ্ঞানের অনেক শাখা থাকলেও কণিকা বিজ্ঞান বা পার্টিকেল ফিজিক্স বাস্তবতার মৌলিক ধারনায় আঘাত করেছে এবং যত বেশি সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যাচ্ছে , ততই ‘বাস্তবতা বলে কিছু নেই’ এমনটাই মনে হচ্ছে। গত ৩০০ বছর ধরে বিজ্ঞান এমনটাই ধারনা করে এসেছে যে , সকল বস্তু ‘পরমানূ’ বা ‘এটম’ দ্বারা গঠিত। স্যার আইজাক নিউটন এই ধারনাকে আরো মজবুত করেছেন পরমানূকে বিলিয়ার্ড বলের সাথে তুলনা করে। যথেষ্ঠ সংখ্যক এই বল একটার পরে একটা রেখে একজায়গায় জড়ো করুন এবং তারপরে গুতো দিয়ে বলগুলোকে গড়িয়ে দিন। আপনি পাবেন পাথর , গাছপালা , জীবজন্তু ও মানুষ। তবে ১৯০০ সালে আইন্সটাইনের হিরো , প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক শক্তির রেডিয়েশন নিয়ে গবেষনা করার সময় কিছু অস্বস্তিকর আবিস্কার করে বসেন। সংক্ষেপে- মৌলিক লেভেলে বস্তু কঠিন/শক্ত (solid) নয় বা লাগাতার (continuous) ও নয়। কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিলিয়ার্ড বল ও নয়। একটি পরমানূকে ভাঙলে আপনি পাবেন এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন , প্রটন এবং হয়তো বা নিউট্রন। এখন আমরা জানি এখানেই শেষ নয় , এগুলোকে ভেঙ্গে আপনি পেতে পারেন বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ , যেগুলো এই আছে তো এই নেই। চোখের পলকে এগুলো আবির্ভুত হচ্ছে আবার অদৃশ্য ও হচ্ছে।

এই ছায়া কণিকা যখন অদৃশ্য হয় , তখন কোথায় যায়? কোথাও যায় না , এদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। আবার পরক্ষনেই এরা আবির্ভূত হয়। তাতে কী? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। তাতে কিছু না , তবে কিনা আমাদের মানুষের শরীর এই সকল মৌলিক ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। তাই একটু চিন্তা হয় বৈ কি। আমাদের বেশিরভাগই পানি , আর রক্তে আছে কিছু লোহা , হাড়ে ক্যালসিয়াম ও কম বেশি অন্যান্য মৌলিক উপাদান। এই সকল উপাদানের প্রত্যেকটিই পরমানূ দিয়ে তৈরি। পরমানূগুলো আবার ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। এই আছে তো এই নেই। একমুহুর্তে বাস্তব তো পরমুহুর্তে অবাস্তব। বিজ্ঞানীরা বাস্তব ও অবাস্তবের মধ্যকার মুহুর্মুহ এই অবস্থানের পরিবর্তনকে নাম দিয়েছেন – “quantum fluctuation”. ছায়া কণিকাগুলোর দোদুল্যমানতার সাথে সাথে আপনার শরীর দোদুল্যমান হয় , সেই সাথে আপনি। আপনার ব্রেণ ও ব্রেনের ভিতরের রাসায়নিক কণিকাগুলো ও ফ্লাকচুয়েট করে। ফ্যাক্ট হলো হয়তো বা এই মুহুর্তে আপনি ‘কিছুই না'(nothingness) , তো পরক্ষনেই ‘কিছু’ একটা(somethingness)। 

এমনকি সবচেয়ে কঠিন শক্ত পদার্থের পরমানূ ও কঠিন নয়। পরমানূর ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগই হলো শুন্য স্পেস। আমরা যদি একটি পরমানূর নিউক্লিয়াসকে পিং পং বলের সমান কল্পনা করি এবং এটাকে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের কেন্দ্রে তথা মাঝখানে রাখি , তাহলে যে ইলেক্ট্রনটি এই নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘোরে , সেটার অবস্থান স্টেডিয়ামের বাইরের দেয়াল বরাবর। নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রনের মাঝে কী আছে? কিছুই না , শুন্য স্পেস। এই নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রন কী দিয়ে তৈরী? এগুলো আরো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ দ্বারা গঠিত। এগুলো কঠিন , তরল নাকি বায়বীয়? সেটা জানা না গেলেও ধারনা করা হয় এগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি , যেটাকে স্ট্রীং বা তারের ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সির ধ্বণির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। তাহলে বুঝলাম একটি সোনার বার বা আপনার বাড়ি বা আপনি নিজে আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি/ধ্বণির সমষ্টি এবং ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগ শুন্য স্পেস ছাড়া আর কিছুই না। 

বুঝলাম সবি মায়া , শুন্য। এখন আমি যদি আপনাকে একটা কষে চড় মারি , তাহলে আপনি তো ব্যাথা পাবেন , নাকি এটাও মায়া? 

এটার উত্তর জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে মায়া কিভাবে কাজ করে। মায়া কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে গোডেলের অসম্পুর্ন থিওরেম( Incompleteness Theorm) , হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সুত্র (Heisenbreg Uncertainty principle) জানা লাগবে। এছাড়াও জানা লাগবে মানুষের ভাষা ও বিতর্ক কিভাবে মায়ার অংশ হয়ে আমাদেরকে মায়ার আরো গভিরে ঠেলে দিয়েছে। পাঠক আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে লিখতেও পারি।

সুত্র- অপরিচিত এক কলাম লেখকের লেখা অবলম্বনে।

বিস্ময়কর এই মহাবিশ্ব হলোগ্রাম/ছায়া/মায়া ছাড়া আর কিছু নয়

 জানুয়ারী 28, 2011


১৯৮২ সালে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল পদার্থবিদ এলেন এসপেক্টের নেতৃত্বে এক পরীক্ষা চালান , যা বিংশ শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ গবেষনাগুলোর একটি বলে ধারনা করা যেতে পারে। বাস্তবে যারা সচরাচর বৈজ্ঞানিক জার্নাল পড়েন না , তাদের এলেন এসপেক্টের নাম জানার কথা নয়। কিছু লোকের ধারনা , এলেন এসপেক্টের আবিস্কার , মহাবিশ্ব সম্পর্কে এপর্যন্ত বিজ্ঞানীদের অর্জিত সকল জ্ঞানকে আমূল পাল্টে দেবে।

এসপেক্ট ও তার দলের আবিস্কারটা হলো – নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে সাব-এটমিক পার্টিকেল , যেমন ইলেক্ট্রন একে অন্যের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করে/রাখে , তা একে অন্যের থেকে যত দুরে বা নিকটে থাকুক না কেন। দুরত্ব এখানে কোন সমস্যা নয় , তা একে অন্যের থেকে ১০ ফুট দুরেই থাকুক বা ১০ হাজার কোটি মাইল দুরেই থাকুক।

কোন না কোনভাবে প্রতিটি পার্টিকেল বা কণিকা জানে অন্যগুলো কি করছে। একটাই সমস্যা , এসপেক্ট ও তার দলের আবিস্কারটা , কোন যোগাযোগ আলোর গতির বেশি হতে পারেনা , আইনস্টাইনের এই মতবাদ/বিশ্বাস্বের পরিপন্থি। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য , প্রচলিত ধারনা বহির্ভূত কিছু মৌলিক ব্যাখ্যা এসেছে। এমনি এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ডেভিড বোহম। বোহমের মতে এস্পেক্টের আবিস্কার এটাই ইঙ্গিত করে যে , বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার (objective reality) কোন অস্তিত্ব নেই। আমাদের এই মহাবিশ্ব এক ছায়া/মায়া মাত্র , এক অতিকায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজানো চমৎকার ত্রিমাতৃক (3-D) ছবি বা হলোগ্রাম।

বোহম কি বলতে চাচ্ছেন , তা বুঝতে হলে , আমাদের হলোগ্রাম সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনা থাকা দরকার। হলোগ্রাম হলো লেজার রশ্মির সাহায্যে তোলা ত্রিমাতৃক ছবি। যে বস্তুর ছবি তোলা হবে , তার উপরে একটি লেজার রশ্মি ফেলে প্রতিফলিত করা হয়। ঐ প্রতিফলিত রশ্মির উপরে দ্বিতীয় একটি লেজার রশ্মি ফেলা হয়। এই দুই রশ্মির মিলিত প্যাটার্নকে (the area where the two laser beams commingle) একটি ফিল্মে ধারন করা হয়। তারপরে ঐ ফিল্মকে ডেভেলপ করা হয়। ডেভেলপ করা ঐ ফিল্মের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠালেই কেবল ত্রিমাতৃক ছবি দেখা যায়। ত্রিমাতৃকতাই কেবল হলোগ্রামের বৈশিষ্ঠ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ হলো , হলোগ্রামের প্রতিটি বিন্দুই সম্পুর্ন বস্তুর ছবি ধারন করে। যদি গোলাপ ফুলের একটি হলোগ্রামকে কেটে দুভাগ করা হয় এবং যে কোন একাংশের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠানো হয় , তাহলে অর্ধেক ফুল নয় , পুরো গোলাপ ফুলটার ত্রিমাতৃক ছবি দেখা যাবে , যা আয়তনে অর্ধেক। যত খুশি হলোগ্রামকে কেটে ছোট করুন না কেন , প্রতিটি অংশই আয়তনে ছোট কিন্তু পুরো ফুলটির ছবি দেখাবে।

‘প্রতিটি অংশে সম্পুর্ন’ (“whole in every part) হলোগ্রামের এই প্রকৃতি , আমাদের সামনে চিন্তার এক নুতন দুয়ার খুলে দিয়েছে। পশ্চিমা বিজ্ঞান আমাদের এতদিন এই শিক্ষা দিয়েছে যে , কোন জিনিষকে , তা একটি ব্যাঙ হোক বা অনুই হোক , ভালভাবে জানতে বা বুঝতে হলে , তাকে কেটে ছোট করে প্রতিটি অংশের গুনাবলি বিশ্লেষন করাই সর্বোত্তম পন্থা। হলোগ্রাম আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে , এই মহাবিশ্বে এমন ও কিছু আছে , যাকে কেটে ছোট করে বিশ্লেষন করা সম্ভব নয়। যদি কোনকিছু হলোগ্রামের মতো করে তৈরি হয়ে থাকে , তবে আমরা কখনৈ জানব না এটা কি দিয়ে তৈরি। কারন আমরা একে যতই ভাগ করি না কেন , আমরা পাব আয়তনে ছোট কিন্তু পুরাটাই (smaller wholes)।

হলোগ্রামের এই বৈশিষ্ঠই বোহমকে সাহায্য করেছে এস্পেক্টের আবিস্কারের নুতন ব্যাখ্যা দিতে। বোহমের মতে , সাব-এটমিক কণিকাগুলো একে অন্যের সাথে কোন রহস্যজনক তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে না , বরং তাদের মধ্যেকার দুরত্বটা এক মায়া। এই
সাব-এটমিক কণিকাগুলোর আলাদা আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই , এরা সকলেই মৌলিক কোন একটি জিনিষের সম্প্রসারন বা সংযোজিত অংশ।

বোহম ঠিক কি বলতে চেয়েছেন , সেটা বোঝানোর জন্য নিম্নের উপমা বর্ননা করেছেন-

একটি মাছ ভর্তি এক্যুয়ারিয়াম কল্পনা করুন , যেটা আপনি সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন না। মাছ ও এক্যুয়ারিয়ামটির ছবি দুটি ভিডিও ক্যামেরা , যার একটি এক্যুয়ারিয়ামের সামনে থেকে ও আরেকটি একপাশ থেকে তুলে টেলিভিশনের পর্দায় পাঠাচ্ছে। আপনি একটি টেলিভিশনের পর্দায় সামনে থেকে তোলা ও আরেকটিতে একপাশ থেকে তোলা ছবি যুগপথ দেখছেন। যেহেতু ভিন্ন কোন(angle) থেকে ছবি তোলা হচ্ছে , সেকারনে আপনার কাছে মনে হবে দুই পর্দায় দেখতে পাওয়া মাছটি একি মাছ নয় , দুটি ভিন্ন মাছ। আপনি যতই মাছ দুটি দেখতে থাকবেন , ততই আপনার কাছে প্রতীয়মান হবে যে মাছ দুটির মাঝে নিশ্চিত একটি সম্পর্ক আছে। কারন যখন একটি মাছ ঘুরবে বা পাশ ফিরবে , তখন অন্যটি ও নিশ্চিতভাবেই কিছুটা ভিন্নভাবে হলেও ঘুরবে বা পাশ ফিরবে। একটিতে যদি মাছটি আপনার দিকে মুখ করে থাকে , অন্যটাতে আপনার দিকে পাশ ফিরে থাকবে। আপনার যদি এই পুরা সেটআপ সম্মন্ধে জানা না থাকে , তাহলে আপনার মনে হবে , মাছ দুটি একে অন্যের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছে , যা আদৌ সত্য নয়। কারন এখানে দুটি নয় , একটিই মাছ আপনি দেখছেন।

বোহম বলছেন , ঠিক এভাবেই এস্পেক্টের গবেষনায় পাওয়া সাব-এটমিক পার্টিকেলগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে , দুরত্ব যেখানে কোন বাধায় নয়। বোহমের মতে আপাতদৃষ্টে আলোর চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন সাব-এটমিক কণিকাগুলোর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এটাই ইঙ্গিত করে যে , বাস্তবতার আরো গভিরতর লেভেলে অনেক জটিল মাত্রা (dimension) আছে , যা আমাদের পঞ্চেন্দ্রীয় দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন , আমরা সাব-এটমিক কণিকাগুলোকে একে অন্যের থেকে পৃথক ভাবি , কারন আমরা তাদের বাস্তবতার একটি অংশই কেবল দেখতে পাই।

বোহমের মতে এই কনিকাগুলোর স্বতন্ত্র কোন অস্তিত্ব নেই , এরা বৃহৎ কোন এককের এক একটি অংশ , হলোগ্রাফিক গোলাপের মতোই অবিভাজ্য। যেহেতু আমাদের এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই এই জাদুর কণিকা দিয়ে তৈরি , সেকারনে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি , এই মহাবিশ্ব হলোগ্রাম/ছায়া/মায়া ছাড়া আর কিছু নয়।

মহাবিশ্বের এই ছায়াপ্রকৃতি আরো অনেক অভূতপূর্ব বৈশিষ্ঠের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কণিকাগুলোর এই আপাতদৃষ্টে ভিন্ন অবস্থান যদি মায়া হয় , এর অর্থ দাড়ায় বাস্তবতার আরো গভিরতর লেভেলে কণিকাগুলো একে অন্যের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত। মানুষের ব্রেনের একটি কার্বন অনুর ইলেক্ট্রন , সাতরে বেড়ানো সকল সালমান মাছের ব্রেনের বা সকল জীবিত প্রাণীর বা আকাশে যত তারা আছে , তাদের প্রত্যেকের সাব-এটমিক কণিকার সাথে যোগাযোগ রক্ষার মধ্য দিয়ে জড়িত। এই মহাবিশ্বের সকলকিছুই একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত , এরা একটি তারবিহীন জালের অংশ। এদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ঠ খোজা অর্থহীন।

এই হলোগ্রাম বা ছায়া বিশ্বে সময় ও স্থান বা স্পেস বলে কিছু নেই। কারন মহাবিশ্বের কোনকিছুই যখন কোনকিছুর থেকে পৃথক নয় , তখন অবস্থানের ধারনাই বাতিল হয়ে যায়। একারনেই মনে হয় স্পেসকে মহাশুন্য বলে।

গভিরতর লেভেলে বাস্তবতা হলো একটি সুপার হলোগ্রাম , যেখানে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত একসাথে অবস্থান করে। ধারনা করতে দোষ নেই , ভবিষ্যতে সঠিক প্রযুক্তির উদ্ভব হলে , সুপার হলোগ্রাম লেভেলের বাস্তবতায় যেয়ে সুদুর অতীতের ভুলে যাওয়া কোন দৃশ্য তুলে এনে সকলের সামনে দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব এই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল , মানুষ কিভাবে ধাপে ধাপে জীবের বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল , কোন বিতর্ক বা অবিশ্বাসের অবকাশ আর থাকবে না।

বোহম-ই একমাত্র গবেষক নন যিনি ‘আমাদের এই মহাবিশ্ব যে একটা হলোগ্রাম’ তার স্বপক্ষে যুক্তি প্রমান হাজির করার চেষ্টা করেছেন। ব্রেন নিয়ে গবেষনা করতে যেয়ে স্টানফোর্ড নেউরোফিজিওলোজিস্ট কার্ল পিরিব্রাম স্বাধীনভাবে এই হলোগ্রাম লেভেলের বাস্তবতার মুখোমুখি হন। ব্রেনের ঠিক কোন অংশে স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে , এটার গবেষনা করতে যেয়ে গবেষকগণ আশ্চর্য হয়ে দেখেন ব্রেনের কোন একটি বিশেষ অংশে স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে না , বরং সম্পুর্ণ ব্রেনটাতেই স্মৃতি ছড়িয়ে থাকে। ১৯২০ সালে ব্রেন বিজ্ঞানী কার্ল ল্যাশলী দেখেন যে , ইদুরের ব্রেনের যে কোন অংশই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন না কেন , ইদুরটি অস্ত্রোপচারের পূর্বে শেখানো জটিল কিছু কাজের অভ্যাস ভুলছে না। সমস্যা দেখা দিল ব্রেনের ‘প্রতিটি অংশে সম্পুর্ন’ স্মৃতি সংরক্ষনের এই বিষয়টি ব্যাখ্যা সে সময়ে কারো জানা ছিল না।

১৯৬০ সালে কার্ল পিরিব্রাম হলোগ্রামের ধারনার সাথে পরিচিত হয়ে উপলব্ধি করলেন, ব্রেন বিজ্ঞানীরা এতদিন যে সমস্যার জবাব খুজে পাচ্ছিলেন না , তার জবাব লুকিয়ে আছে হলোগ্রামের ভিতরে , অর্থাৎ পুরো ব্রেনটাই একটা হলোগ্রাম। পুরো ব্রেন কিভাবে স্মৃতি সংরক্ষন করে তা লিখে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়ে এটুকু বলা যায় যে , আমাদের পঞ্চেন্দ্রীয় বাহ্যিক বাস্তবতার যে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল পাঠায় , তা আমাদের ব্রেন যাচাই বাছাই করে একটি প্যাটার্ন হিসাবে সমগ্র ব্রেনে সংরক্ষিত রাখে , গোলাপফুলের যে হলোগ্রামের কথা লিখেছিলাম গত পর্বে , সেটার মতো। আমরা সহ আমাদের চারিপাশের এই মহাবিশ্বের বাস্তবতা আমাদের ব্রেনে ধারনকৃত ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল ছাড়া আর কিছু নয় এবং এরা সকলেই একে অন্যের সাথে সবসময় কোন না কোন ভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে। এর ভিতরেই হয়তোবা প্যারানর্মাল কার্যকলাপ বা কোইন্সিডেন্সের (আকস্মিক যোগাযোগ বা ঘটনা) রহস্য লুকিয়ে আছে।

যারা আরো বিস্তারিত জানতে চান , তারা মাইকেল ট্যালবটের Spirituality and Science: The Holographic Universe পড়ে দেখতে পারেন।


Sunday, September 18, 2022

কে মুসলমান?

 নবী মুহাম্মাদের অনুসারীরাই শুধু  মুসলমান নয়! বরং কোরানের বাণী অনুযায়ী কিছু জ্বীন, ইব্রাহিম, ইয়াকুব, ইসরাঈলের গোত্র, ইউসুফ, ফেরাউনের জাদুকর, ঈসা, নূহ ও লূতের শিষ্য- তারাও প্রকৃত মুসলমান।

 আর যখন ফেরাউন সাগর বিদীর্ণ হতে দেখে সেও মুসলমান হয়ে গেল। ঐতিহাসিকভাবে বলতে গেলে, তাদের কেউই মুহাম্মাদকে অনুসরণ করতে পারেনি। পরিবর্তে, তারা অন্যান্য রসূলদের অনুসরণ করেছিল: উদাহরণ স্বরূপ, শিষ্যরা ঈসাকে অনুসরণ করেছিল এবং ফেরাউনের যাদুকররা মূসাকে অনুসরণ করেছিল। যদি আমরা অনুমান করতে থাকি যে , শাহাদা হল আল-ইসলামের প্রথম স্তম্ভ এবং মুসলমান হওয়ার চূড়ান্ত মাপকাঠি, তাহলে আমাদের এদের সকলকে মুসলমান বলে অস্বীকার করতে হবে। কারন শাহাদা দাবি করে যে , একজনকে অবশ্যই মুহাম্মাদকে আল্লাহর রসূল হিসাবে সাক্ষ্য দিয়ে তাকে অনুসরণ করতে হবে। শুধু যে ফেরাউন মূসাকে অনুসরণ করে আল-ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল তা নয় , বরং ঈসার শিষ্যরা নবী ঈসাকে অনুসরণ করে আল-ইসলামকে মেনে চলেছিল। আমরা তাদের আল-ইসলামের আনুগত্যকে অস্বীকার করব এই কারণে যে তারা মুহাম্মাদকে অনুসরণ করেনি , তা তো হতে পারে না। সকল প্রাক-ইসলামী নবী, তাদের পরিবার এবং গোত্র, এদের সকলের পক্ষে  মুহাম্মদকে চিনতে পারা সম্ভব ছিল না , কারন এরা সকলেই মুহাম্মদের জন্মের পূর্বেই এই পৃথিবীতে বাস করেছিল। এদের সকলের আল-ইসলামের প্রতি দৃঢ় আনুগত্য কোরানে প্রত্যয়িত। আমরা বলতে পারি না যে  তারা মুসলমান ছিল না , কারণ তারা কখনো রমজান মাসে রোজা রাখেনি এবং কখনো মক্কায় তীর্থযাত্রা করেনি। 


৭২:১৪ আমাদের (জ্বীন) কিছুসংখ্যক মুসলমান ( الْمُسْلِمُونَ )এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে।


৩:৫২ অতঃপর ঈসা যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেন, তখন বললেন, কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বললো, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলমান (مُسْلِمُونَ)।


৩:৬৭ ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, কিক্তু তিনি ছিলেন ‘হানীফ’  মুসলমান (مُّسْلِمًا), এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।


২:১৩২ এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান (مُّسْلِمُونَ ) না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।


১২:১০১ হে পালনকর্তা আপনি আমাকে (ইউসুফ) রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাৎপর্য সহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহী ইহকাল ও পরকালে। আমাকে মুসলমান (مُسْلِمًا ) হিসাবে মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে সৎকর্মীদের সাথে মিলিত করুন।


৭:১২৬ বস্তুতঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে (ফেরাউনের জাদুকররা) মুসলমান (مُسْلِمِينَ ) হিসাবে মৃত্যু দান কর।


১০:৯০ আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ) থেকে।


১০:৭২ তারপরও যদি বিমুখতা অবলম্বন কর, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন রকম বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় হল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি (নুহ) মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ )হই।


৫১:৩৬ (লুতের কওম) এবং সেখানে একটি গৃহ ব্যতীত কোন মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ )আমি পাইনি।

কোরানের বুঝ

 আল্লাহর কিতাব কোরান মানব ইতিহাসকে দুটি ঐতিহাসিক যুগে ভাগ করার শিক্ষা দেয়। প্রথম যুগ নবী এবং রাসুলদের সময়, যা রাসুলের (মুহাম্মদের) মিশনের সাথে শেষ হয়েছে। রাসুলের মৃত্যুর পর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় যুগ এবং সেই যুগে আমরা এখনও বেঁচে আছি। এই দ্বিতীয় যুগে মানবজাতির আর নবী ও রসূলের প্রয়োজন নেই কারণ মানুষ এমন পরিমাণে পরিপক্ক ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে যে, মহাবিশ্বের আইনের অন্বেষণ করতে পারে।  মানবাধিকারের সৃষ্টি, দাসত্বের বিলুপ্তি এবং নারীর মুক্তির কথা চিন্তা করুন, এগুলো এই  ইঙ্গিত দেয় যে মানব জাতি সভ্যতার একটি নতুন স্তরে পৌঁছেছে।


ঠিক যেইভাবে সপ্তম শতাব্দীর লোকেরা তাদের সমসাময়িক জ্ঞানের সাহায্যে  আল্লাহর বইটি বুঝেছিল , তেমনই  একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অবশ্যই  এখনকার জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর কিতাব কোরান  বুঝতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে পাঠকের পক্ষে একা একাই পাঠ্যটি পড়ার মাধ্যমে কোরানের  বক্তব্য জানা ও বোঝা সম্ভব। যাইহোক, ভাষার সীমাবদ্ধতা ও  (৩:৭) আয়াত অনুযায়ী কোনও পাঠক কোরানের পাঠ্যটি সম্পূর্ণরূপে বোঝার দাবি করতে পারেন না।  মানুষের ঐশীজ্ঞান আংশিক, সীমিত, এবং আপেক্ষিক। কারণ মানব পাঠক সর্বদা যে সময়ে সে বসবাস করে , সেই সময় এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়। শেষ ঘন্টার (কেয়ামত) আগমন না হওয়া পর্যন্ত কোরানের বুঝের পরিবর্তন হতেই থাকবে।

ইসলামে পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠান (ritual)


ইসলামে উপাসনার ধারণা অন্যান্য ধর্ম থেকে আলাদা। ইসলাম আমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মানতে এবং  নামাজ সহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও রোবটের মতো আচার-অনুষ্ঠান অনুশীলন করার পরিবর্তে অন্যের কল্যাণের জন্য নিয়মিতভাবে চেষ্টা করার আহ্বান জানায়। আমরা বিশ্বের প্রথম মুসলিম নই , সকল নবী এবং তাদের প্রকৃত অনুসারীরাও মুসলিম ছিলেন।


কুরআনের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে পার্শি ঈমামরা ইসলামে পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অনুগ্রহ করে কুরআনের নিম্নোক্ত ৫:২ আয়াতটি দেখুন , যেখানে আল্লাহ আমাদেরকে বাইত আল-হারামে (কাবা) আচার অনুষ্ঠান এবং পশু কোরবানি করা থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন কিন্তু একই আয়াত ৫:২ এর বিকৃত অনুবাদে আমাদের পণ্ডিতরা সমস্ত আচার এবং পশু কোরবানির অনুমতি দিয়েছেন।


{৫:২ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا ۚ

হে বিশ্বাসীগণ , হালাল কর না (لَا تُحِلُّوا )আল্লাহর জন্য আচার-অনুষ্ঠান (শায়ায়ের)  এবং নিষিদ্ধ কাল পাথর (শাহরা আল-হারাম) এবং উপহার/কুরবানির পশু (হাদিয়া)এবং  কালায়েদ এবং নিষিদ্ধ ঘরের (বাইত আল-হারাম) রক্ষক/তত্ত্বাবধায়ক হবেন না , তাদের রবের ফজিলত ও সন্তুষ্টির লাভের জন্য।}


‎لَا تُحِلُّوا মানে- হালাল কর না।  অর্থাৎ হারাম জিনিষকে হালাল কর না। 


কোনগুলো হারাম?


‎شَعَائِرَ اللَّهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাফেররা যে সকল আচার অনুষ্ঠান বা রিচুয়াল করত তাকে বলা হয় 'শায়ায়ের আল্লাহ'। সাফা মারওয়ার মাঝে হাজিরা যে দৌড়াদৌড়ি করে তা  এমনি এক শায়ায়ের। দেখুন ২:১৫৮-  إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّ নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহর শায়ায়ের থেকে। এই ধরনের শায়ায়েরকে হালাল করতে নিষেধ করা হয়েছে এই আয়াতে। 


‎الشَّهْرَ الْحَرَامَ কাফেররা যাকে আমরা কাল পাথর বা হাজরে আসওয়াদ বলে জানি তাকে শাহর বলত ও চুমু খেত , যেমনটি আমাদের হাজি সাহেবরা করে থাকেন। এই একই কালো পাথরটি  আয়াত ৭১:২৩ এ উল্লেখ করা হয়েছে , যা একটি কালো পাথর ছিল এবং নবী নূহের এর সময় উপাসনা করা হত। এটিকে সংস্কৃতে শিব বলা হয় এবং সেমেটিক ভাষাগুলোতে যেমন হিব্রু, আরামাইক, সিরিয়ায়িকে 'শাহর' বলা হয়। আরবি কুরআন মজীদে এই কালো পাথরকে  শাহর আল- হারাম বলা হয়েছে  , যাকে হালাল করতে নিষেধ করা হয়েছে এই আয়াতে। 


আল-হারাম মানে নিষিদ্ধ , যা হালালের বিপরিত। কিন্তু ঈমামরা হারামের মানে করেছে পবিত্র। এরই ধারাবাহিকতায় নিষিদ্ধ কাল পাথরকে বানিয়েছে পবিত্র কাল পাথর , আর আলবাইত আল-হারাম/ নিষিদ্ধ ঘরকে বানিয়েছে পবিত্র ঘর/কাবা। 


‎الْهَدْيَ আল হাদিয়া মানে উপহার। কাফেররা উপহার হিসাবে কাবায় বলী দেয়ার জন্য পশু নিয়ে যেত , যাকে হালাল না করতে বলা হয়েছে এই আয়াতে। কোরানে কুরবানি বলে কোন শব্দ না থাকলেও হাজিরা হাদিয়ার নামে কাবায় পশু কুরবানি দেয় পার্শি ঈমামদের নির্দেশে। 


‎الْقَلَائِدَ আল-কালায়েদ ও তাকলিদের মূলে একই আরবি শব্দ , যার মানে- এই আয়াতে কাফেরদের প্যগান রীতিনীতির /রিচুয়ালের অনুসরন না করতে বলা হয়েছে। আরবিয় ডিকশনারি অনুযায়ী কোন ব্যক্তির কথা বিনা প্রমাণে মানার নাম তাকলিদ। এই আয়াতে তাকলিদ করতে নিষেধ করা হয়েছে। 


কোরানে সকল ধরনের রিচুয়াল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের পার্শি ঈমামরা ৫:২ আয়াতের বিকৃত অনুবাদের মাধ্যমে রিচুয়ালকে শুধু হালালই করেননি , এই সকল রিচুয়ালকেই ধর্মের ভিত্তি বানিয়েছে। এগুলোকেই ইবাদত নাম দিয়ে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশ তথা কোরানে বর্নীত বিধানগুলো থেকে শুধু দুরে সরিয়েই নেয় নি , কোরান অজ্ঞ করে রেখেছে।