Tuesday, March 19, 2019

ইসলাম ও শাফায়াত Cont....


কোরানের শাফায়াত সংক্রান্ত রুপক আয়াতগুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে চলুন উত্তর খোঁজা যাক গত পোস্টে হামিদুল ইসলাম নামে এক ভাইয়ের করা মন্তব্যের "সূরা মারইয়াম:19/87 - যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না"| এর উত্তর জানলে রুপক আয়াতগুলো বুঝতে সুবিধা হবে|

কে বা কারা শেষ বিচার দিবসে সুপারিশের অধিকারী হবে? কোরানের সুস্পষ্ট আয়াত অনুযায়ী এরা হলেন - ফেরেশতারা|

"আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন। ৫৩:২৬

কেন শুধু ফেরেশতারাই সুপারিশের অধিকারী হবেন সেটা জানার আগে চলুন জানা যাক কেন নবী রসূল সহ কোন মানুষ সুপারিশের অধিকারী হবেন না বা সুপারিশ করার যোগ্যতা রাখেন না বা নিজেকে ছাড়া অন্যকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় সুযোগ কোনটাই নেই|

শেষ বিচার দিবসে মানুষের না থাকবে কোন সাহায্যকারী , না থাকবে কোন সুপারিশকারী| তারা একাই বিচারের সম্মুখীন হবে| সেদিন আল্লাহ বলবেন...

"তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, যেমন আমি প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে এসেছ। আমি তো তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে তোমাদের দাবী ছিল যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের দাবী উধাও হয়ে গেছে। :৯৪"

এর অর্থ দাড়ায় সামাজিক প্রতিপত্তি , ধণ সম্পদ , সন্তান সন্ততি , আত্মীয় স্বজন , সুপারিশকারী কেউই সেদিন সঙ্গে থাকবে না| শুধু তাই নয় নিজের চিন্তায় এমনই ব্যতিব্যাস্ত থাকবে যে এদের থেকে পালিয়ে যাবে...

"সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭"

 নবী রসূলদের পিতা মাতা পত্নী সন্তান সন্ততী ছিল| তারা অন্যান্য মানুষের মতোই পালাবে| তারাও অন্যান্য মানুষের মতোই আল্লাহর দাস , তারাও একাকি উত্থিত হবে....

"নভোমন্ডল ভূ-মন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না। তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন। কেয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে। ১৯:৯৩-৯৫"


সেদিন প্রতিটি মানব আত্মা নিজের ওকালতি নিজেই করবে....

"যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্ন-সমর্থনে সওয়াল জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না। ১৬:১১১"


প্রত্যেক ব্যাক্তির সঙ্গে কে থাকবে সুপারিশ করবে বা সেই সুপারিশের ফল কী?

সুস্পষ্ট কোরানের আয়াতগুলো থেকে জানলাম - শেষ বিচারের দিনে সকল মানুষ একাকি নিঃসঙ্গভাবে উদভ্রান্তের মতো পালিয়ে বেড়াবে এবং শুধুমাত্র নিজের ভবিষ্যত চিন্তায় ব্যাতিব্যাস্ত থাকবে| এরপরেও যারা এখনো ভাবছেন আল্লাহ মুহাম্মদকে তাদের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন তাদের জন্য..

এই আয়াতগুলোর শুরুতেই মুহাম্মদকে আল্লাহ তিরস্কার করছেন তার যুদ্ধের সঙ্গী নিকটস্ত কিছু সাহাবির পক্ষে বিতর্ক করার জন্য|

"নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। যারা মনে বিশ্বাস ঘাতকতা পোষণ করে তাদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না। আল্লাহ পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাস ঘাতক পাপী। :১০৫-১০৭"

এর পরের আয়াতে এই বিশ্বাস ঘাতক পাপীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ জানিয়ে তিনি মুহাম্মদকে আবার তিরস্কার করে বলছেন....

"শুনছ? তুমি তাদের পক্ষ থেকে পার্থিব জীবনে বিতর্ক করছ, অতঃপর কেয়ামতের দিনে তাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর সাথে কে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? :১০৯"

ভাবুন একবার..নিকট সাহাবিদের জন্যেও মুহাম্মদের ওকালতি করার অনুমতি নেই , না ইহ জীবনে না পরকালে , সেখানে অন্যান্য মুসলমানেরা কিভাবে মুহাম্মদের শাফায়াতের আশা করতে পারে!!



1 comment:

  1. "যারা মনে বিশ্বাসঘাতকতা পোষণ করে তাদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না।"
    যারা মনে বিশ্বাসঘাতকতা পোষণ করে, এইটা বলার মানে কি? যদি কারো জন্যেই শাফায়াত না থাকে, তাহলে সরাসরি নিষেধ করতেই পারতেন কিনা? কিন্তু একটি শর্ত দিয়ে নিষেধ করলেন।
    চিন্তার জায়গা আছে আশা করি।

    ReplyDelete