ভূমিকা...
কোরানিক শিক্ষার বিপরিতে অধিকাংশ মুহাম্মদীরা (সুন্নী , শিয়া , সুফি) বিশ্বাস করে যে হাশরের দিনে মুহাম্মদ (এবং ঈমাম , পীর, সুফি) নিজ নিজ উম্মত ও অনুসারীদের মাঝে যারা পাপী তাদের জন্য সুপারিশ করে বেহেস্ত পাইয়ে দেবেন| এভাবেই তারা কোরানে শেষ দিবসের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাকে বিকৃত করে মুহাম্মদ ,ঈমাম ও পীর সুফিদের এমন ভাবে বাজারজাত করে যেন আল্লাহ নন বরং পীর পয়গম্বররাই বিচার দিবসের নিয়ন্তা| সত্য হলো , এই বিশ্বাস শেষ বিচার দিবসে আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতাকে খর্ব করার সামিলই শুধু নয় , এই বিশ্বাস কোরানের বহু আয়াতকে অস্বীকার ও নিষ্কৃয় করে দেয়|
আজকের মুহাম্মদীদের নৈতিক অধঃপতনের মূলেও এই ভ্রান্ত বিশ্বাস| কেন তারা সৎ , ভাল নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবে , যখন তারা নিশ্চিত জানে মুসলমান হওয়ার সুবাদে বা সুন্নত পালন করার কারনে বা ঈমামের বা পীরের অনুসারী হওয়ার সুবাদে পরকালে তাদের কিছুই হবে না , পীর পয়গম্বররা সুপারিশ করে তাদের দোযখে যাওয়ার বদলে বেহেস্তে পাঠাবে| এদের অবস্থা সেই সকল ছাত্রের মতো , যারা সারা বছর পড়াশুনা না করে টুকে বা ঘুষ দিয়ে পাশ করতে চায়|
- ইসলামে শাফায়াতের সূচনা *
কোরানের আয়াত দৃঢ়রুপে ঘোষনা দেয় যে , ইহকাল ও পরকালের ভবিষ্যত সম্পর্কে আধ্যাত্মিক কোন জ্ঞান মুহাম্মদের ছিল না| এমনকি নিজের ভাল ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতাও তার ছিল না|
"আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের(ভবিষ্যতের) কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। ৭:১৮৮"
"আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় (ভবিষ্যত) অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ? ৬:৫০"
ফলে মুহাম্মদ যে শাফায়াত সম্পর্কে কখনো কিছু বলেন নি , তা নিশ্চিতরুপে বলা যায়| তাই মুহাম্মদের নামে প্রচলিত তথাকথিত হাদিসগ্রন্থগুলিতে শাফায়াত নিয়ে লিখিত কল্প কাহিনীগুলো যে সর্বৈব মিথ্যা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়| শাফায়াত নিয়ে কোরানে ও হাদিসে যে বর্ণনা পাই , তা পরষ্পর
বিরোধী এবং এদের ভিতরে সমন্বয় করা অসম্ভব|
কোরানিক আয়াত ১:৪ অনুসারে বিচার দিবসের একমাত্র মালিক আল্লাহ এবং মুহাম্মদ আর সকলের মতোই নশ্বর মনুষ্য আত্মা...:বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। ১৮:১১০"|
শেষ দিবস নিয়ে কোরানের এই আয়াত আর সকল আত্মার মতোই মুহাম্মদের জন্যেও প্রযোজ্য... "যেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।
৮২:১৯" |
একারনে আল্লাহ মুহাম্মদকে বলেছেন.."হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর। ৩:১২৮"|
বিচার দিবসের একমাত্র মালিক ও কর্তা যখন কোন রায় দেবেন ,তা যে রদ বদল হবেনা আমরা সেটা জানতে পারি নিম্মের আয়াত থেকে.."আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই। ৫০:২৯"|
যদি কেউ ধারনা করে থাকে যে শেষ বিচারে আল্লাহ কাউকে দোযখে পাঠানোর রায় দেন এবং মুহাম্মদ বা অন্য কেউ সুপারিশ করে সে রায় পরিবর্তন করে তাকে বাচিয়ে দেবেন , তাহলে সে কোরান অস্বীকার করার পাঁপে পাঁপী হবে| যার জন্য দোযখের রায় হয়ে গেছে , তার জন্য সুপারিশ করে কেউ তাকে বাচাতে পারবে না| কারন আল্লাহ বলেছেন...
"যার জন্যে শাস্তির হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে আপনি কি সে জাহান্নামীকে মুক্ত করতে পারবেন? ৩৯:১৯"
শাফায়াতের হাদীসে বিশ্বাসের অর্থই হলো কোরানের আয়াতকে অস্বীকার করে মুহাম্মদ বা অন্যদেরকে দেবতার আসনে বসানোর সমতুল্য| কারন এদের ধারনা এই দেবতারা আল্লাহর থেকেও দয়ালু এবং এই দেবতারা তাদের ইচ্ছাকে আল্লাহর উপরে চাপিয়ে দিয়ে তার রায় পরিবর্তন করতে সক্ষম|
কোরানে কখনোই শেষ বিচার দিবসে মুহাম্মদের বিশেষ কোন ভূমিকার কথা বলা হয় নি , বরং অন্য আর সকলের মতোই মুহাম্মদকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এবং নিম্নের এই আয়াত মুহাম্মদ ও অন্য আর সকল রসূল পয়গম্বরদের জন্য ও প্রযোজ্য...
"সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। ৮০:৩৪-৩৭"
সুতরাং সেদিন মুহাম্মদ বা অন্য কারো শাফায়াত দুরে থাক , অন্য কারোর জন্য চিন্তা করার সময় ও সুযোগ কোনটাই থাকবেনা| আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন..
"হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। ৩১:৩৩"
মুহাম্মদ সেদিন তার উম্মত দুরে থাক, নিজের কন্যা ফাতেমার ও কোন উপকারে আসবেন না| এটা ভাবা অযৌক্তিক যে মুহাম্মদ অন্যের বিচারে হস্তক্ষেপ করবেন , যখন তিনি নিজে আর সকল রসূলদের মতোই বিচারের সম্মুখীন হবেন , জিজ্ঞাসিত হবেন|
"অতএব, আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব যাদের কাছে রসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রসূলগণকে। ৭:৬"
মুহাম্মদকে ও বিচারের আওতা থেকে বাদ দেয়া হবে না|
"এটা (কোরান) আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্যে স্মরনিকা এবং শীঘ্রই আপনারা জিজ্ঞাসিত হবেন| ৪৩:৪৪"
বর্তমানের মুসলমানরা যাদের সাথে মুহাম্মদের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তাদের কথা বাদই দিলাম , যারা তার সমসাময়িক সেই মুসলমানদেরও তিনি কোন কাজে আসবেন না...
"আর তাদেরকে বিতাড়িত করবেন না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালকর্তার এবাদত করে, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাব বিন্দুমাত্রও তাদের দায়িত্বে নয় যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন। নতুবা আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন। ৬:৫২"
আল্লাহ ন্যায় বিচারক ও সর্বজ্ঞ| সুপারিশের মাধ্যমে বিচারের রায় পরিবর্তন করা গেলে , সে বিচার ন্যায় বিচার নয়|
"আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। ২১:৪৭"
কোরানে যে সকল আয়াতে শাফায়াত (شَفَٰعَ) শব্দটি আছে , সেই আয়াতগুলো দুই রকমের : সুস্পষ্ট ও রুপক| সুস্পষ্ট আয়াতগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কোন শাফায়াত নেই| মুহাম্মদীরা রুপক আয়াতগুলোকে ত্যনা পেচিয়ে প্রমাণ করতে চায় শাফায়াত আছে| এ ব্যাপারে কোরানে বলা হয়েছে...
"তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। ৩:৭"
চলুন সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পড়া যাক....
"আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। ২:৪৮"
"হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। ২:২৫৪"
"তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না। ২:১২৩"
"আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। ৩৬:২৩"
"বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই , আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ৩৯:৪৪"
নবী মুহাম্মদ কারো জন্য সাফায়েত করবেন না, প্রমাণিত।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete