Monday, September 30, 2013

কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ)


খুব সম্ভবত ইসলামের নবীর সাথে মক্কার কোন সম্পর্ক নেই। কারন কোরান পড়ে মনে হয় নবী কোন দিন মক্কায় যান নি বা মক্কায় তার জন্ম হয়েছে এমন কথা ও কোরানে লেখা নেই। এ আলোচনা অন্যদিন। আজ পর্যালোচনা করব কালো পাথরের চারিদিকে ৭ পাকে ঘোরা ও পাথরে চুমু খাওয়ার মতো প্যাগান প্রথা কিভাবে ইসলাম ধর্মে ঢুকে পড়ল তা নিয়ে।

ঠিক কি ঘটেছিল সেটা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে কোরানে বর্ণীত আমাদের জীবন সম্পর্কে দেয়া বিভিন্ন উদাহরন। সাধারনত যেটা ঘটে থাকে , যূগে যূগে বিভিন্ন  নবী রসূল একেশ্বরবাদ প্রচার করে গত হওয়ার পরে পরেই মানুষ আবারো দেব দেবী পাথর পুজা শুরু করে বা বলা যায় প্যাগান ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে। কোরান থেকে জানতে পারি নবীর সময়ের আরবের লোকেরা 'আল্লাত' 'আলউজ্জা' এবং 'মানাত' নামের দেব দেবীর পুজা করত (৫৩:১৯-২০) এবং প্রত্নতাত্বিক খননের ফলে এদের কিছু মূর্তিও পাওয়া গেছে। ইসলাম আরব থেকে এই সকল দেব দেবীর পুজা সম্পুর্ন রুপে বন্ধ করতে পেরেছিল এমন কোন তথ্য কোরানে নেই। বরং অমুসলিম সুত্র থেকে জানা যায়  নবী পরবর্তি উমাইয়া আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে প্যাগান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নুতন উদ্যমে বিস্তার লাভ করতে থাকে।

প্যাগান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের কথা মাথায় রেখেই চলুন দেখা যাক বর্তমানের মক্কায় কি ঘটছে। আপনি যদি মক্কায় যান তাহলে দেখতে পাবেন , নিশি দিন মানুষ কিউব আকৃতির একটি পাথুরে ঘরের (ক্বাবা) চারিদিকে ৭ বার পাক দিচ্ছে। এই ঘরটি একটি কালো কাপড়ে (কিসওয়াহ) আচ্ছাদিত। এই ঘরের পূর্ব-দক্ষিন কোনে শীত কালীন সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কালো পাথর গাঁথা আছে , যাকে সকলে 'হাজরে আসওয়াদ' নামে জানে। 'হাজরে আসওয়াদের' মানে হলো- কালো পাথর। দেখতে পাবেন এই কালো পাথরে চুমু দেয়ার জন্য হাজিরা ঠেলাঠেলি করছেন বা অত্যাধিক ভিড়ের কারনে দুর থেকে হাত উচু করে ছালাম দিচ্ছেন। আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞসা করেন কেন পাথরে  চুমু খাচ্ছেন , তাহলে উত্তর পাবেন -  চুমু দিলে সকল গোনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।

শীত কালীন সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে কালো পাথরটি যে নির্ভুল ভাবে বসানো আছে , সেটা  কাকতালীয়  নয়। নবীর সময়ে আরবের লোকেরা 'আল্লাত' নামের যে দেবীর পুজা করত , সেই দেবী হলেন উর্বরতার দেবী (fertility goddess)। এই দেবীর আচার অনুষ্ঠান সূর্য কেন্দ্রিক। প্যাগানদের বিশ্বাস শীত কালীন সূর্যোদয় সূর্যের পুনর্জন্মের জায়গাকেই নির্দেশ করে। কালো পাথরটিকে নিকট থেকে পর্যবেক্ষন করলে একে দেখায় প্রসবকালীন স্ত্রীজননেন্দ্রীয়ের মতো  , যার ভিতরে বাচ্চার মাথা দেখা যাচ্ছে। 

আরো একটু কাছে থেকে দেখুন। দেখবেন মানুষজন  জন্ম নিচ্ছে এই বাচ্চা দেবতার মাথায় চুমু খাচ্ছে। মাথায় চুমু খেয়ে মাফ চাওয়া আরবদের এক প্রাচীন প্রথা। আরব প্যগানরা নবজাতক শিশুর মতো সকল পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য এই কালো পাথরের নবজাতক শিশুর মাথায় চুমু খেত।

কালো পাথরের চারিদিকে ৭ পাক ঘোরার এই প্রথাও অনেক প্রাচীন। কোরানপূর্ব  চতুর্থ শতাব্দিতে এপিফ্যনিয়াসের (Epiphanius) লেখা পান্ডুলিপিতে সূর্যের শীতকালীন দক্ষিনায়নের সময় (winter solstice) নাবাতিয়ান আরবের দেবী আল্লাত ও ধুশারার জন্মোৎসবের অংশ হিসাবে ৭ পাক ঘোরার বর্ণনা পাওয়া যায়।  আজো আরবের অনেক লোকে 'ছুবু' নামে এক উৎসব পালন করে, যেখানে এপিফ্যনিয়াসের বর্ণনা মতোই বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে নবজাতককে কোলে নিয়ে বাড়ির চারিদিকে ৭ পাক ঘোরে।

উর্বরতার দেবী আল্লাত প্রাচীন কালে  সারা বিশ্বে ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পুজিত হতো। গ্রীসে- আফ্রোদিত, রোমে- ভেনাস, মেসোপটেমিয়ায়- ইশতার, ভারতে- মা কালী, আনাতোলিয়ায় - সিবেল এবং নর্স রুপকথায়- ফ্রিগা। এই দেবীর সাথে কালো পাথরের যোগ আছে। আজো সাইপ্রাসের পাফোসের নিকটে আফ্রোদিতের মন্দিরে একটি পবিত্র কালো পাথর সযতনে রাখা আছে।

মজার ব্যাপার হলো গ্রীক রুপকথা অনুযায়ী আফ্রোদিতের সৌন্দর্য এক কালো কিউবে রাখা আছে। কোরান পরবর্তি অষ্টম শতাব্দির রোমান খৃষ্টান সুত্র থেকে জানা যায় উমাইয়া খলিফাদের শাসন আমলে ও আরব প্যাগানরা আল্লাত তথা আফ্রোদিতের পুজা করত।

এই সাইপ্রাসে 'হালা সুলতান টেক্কে' নামে মুসলমানদের একটি পবিত্র তীর্থ স্থান আছে। এটি একটি মসজিদ মাজার কমপ্লেক্স এবং এটি এক নারীর সাথে জড়িত। কথিত আছে এই নারীর নাম উম্ম হারাম , যিনি ছিলেন নবী মুহম্মদের দুধ মা ও উবাদা বিন আল-সামিতের স্ত্রী। এখানে ও একটি পবিত্র কালো পাথর আছে এবং ভক্তরা একে মসজিদে নববির পরে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান মনে করে।

উর্বরতার দেবীর সাথে শুক্রবার বা ফ্রাইডের যোগসুত্র আছে। উর্বরতার দেবী ফ্রিগার নামানুসারে এই দিনের নাম রাখা হয় ফ্রিগডে>ফ্রাইডে। কে জানে হয়তো বা শুক্রবার একারনেই মুসলমানদের জন্য এক পবিত্র দিন।

১২:১০৬- অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।


শয়তান বোকাও নয় বা চুপচাপ বসেও নেই। নিষ্পাপ হওয়ার ভালই টোপ ফেলেছে। সময় এসেছে ভাবার- শয়তানের টোপ গিলে হজ্বের নামে মক্কায় যেয়ে নিষ্পাপ হওয়ার লোভে আমরা পাথর পুজায় লিপ্ত হয়ে শিরক করছি কি না?




Hala Sultan Tekke

No comments:

Post a Comment