Saturday, March 1, 2014

হাজার বছরের পূর্বপুরুষ ও স্কলারদের বোঁঝা

মানুষের সহজাত ধর্ম হলো বাপদাদার ধর্মকে আকড়ে থাকা এবং তাদের ধর্মীয় স্কলারদের মতামতকে অন্ধভাবে অনুসরন করে নিজের ধর্মকেই সর্বশ্রেষ্ঠ গন্য করা। আজকের মুসলমানরাও এর ব্যাতিক্রম নয় , তারা ও শয়তানের ঐ একি ফাঁদে পড়েছে। তাদের দাবী গত হাজার বছর ধরে তাদের ঈমাম ও স্কলারদের কাছ থেকে তারা যা কিছু উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছে , তার সবই ইসলাম। হাজার হাজার খন্ড বই লেখা হয়েছে অতীতের এইসকল ঈমাম ও স্কলারদের ধার্মিকতা , ভক্তি ও ধর্মের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মহিমা বর্ননা করে। এই লোকগুলো ধার্মিক ও চিন্তায় সৎ ছিলেন কিনা তা আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন , তবে আজকের মুসলমানদের দাবী যেহেতু তারা ধার্মিক ও অধিকাংশ মুসলমানের কাছে গ্রহনযোগ্য ছিলেন , তাই তারা যে ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা দিয়েছেন তাই সত্য এবং এর কোন নড়চড় করা যাবে না। এই যুক্তির দুর্বলতা হলো একটি মানুষ ধার্মিক ও সৎ উদ্দেশ্যে কোন ব্যাখ্যা বা নির্দেশ দিলে সেই ব্যাখ্যা বা নির্দেশ যে সঠিক হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই , কারন তার চিন্তা বা বিশ্লেষনে ভুল থাকতে পারে। তাই যদি না হবে তাহলে তো সকল ধর্মই সঠিক , কারন প্রতিটি ধর্মের স্কলার ও নেতারা বাহ্যিক ভাবে ধার্মিক ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই যার যার ধর্মের প্রচার ও প্রসার করে চলেছেন।

কোরানে আল্লাহ এই ভুল যুক্তির একটি সহজ উত্তর দিয়েছেন -
“সে সম্প্রদায় অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদের জন্যে এবং তোমরা যা করছ, তা তোমাদের জন্যে। তাদের কর্ম সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে না।” (২:১৪১)

মজার বিষয় হলো , আজকের মুসলমানরা বহুধা বিভক্ত হলেও , প্রতিটি গোষ্ঠিই কোরানকে ঐশীগ্রন্থ হিসাবে মানে। কোরান নিয়ে তাদের কোন মতভেদ নেই , মতভেদ হলো স্ব স্ব ঈমাম ও স্কলারদের নির্দেশিত পথ ও ব্যাখ্যা নিয়ে। এইসকল স্কলার ও ঈমামদের মতের উপর ভিত্তি করে একজন আরেকজনকে কাফের , যিন্দিক আখ্যা দিতে তাদের বিন্দুমাত্র বুক কাপে না। আল্লাহ্‌র বানী তাদের কাছে মুখ্য নয় , তাদের পূর্বপুরুষ ও স্কলারদের দেখানো পথই মূখ্য। তাই যখনই কোরানের আয়াত দিয়ে তাদেরকে কোন ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানের ভুল দেখানো হয় , তখন তাদের জবাব হলো – গত হাজার বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষ ও স্কলাররা যা করে চলেছেন তা ভুল হতে পারে না। এর অর্থ দাড়ায় কোরানের বানীর থেকে তাদের ঈমাম ও স্কলারদের ধারনাই বেশি সত্য।

পূর্বপুরুষ ও স্কলাররাই সঠিক , এই ধারনাই যূগে যূগে আল্লাহ্‌র বানীকে গ্রহন করতে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা বিবেচিত হয়েছে। যখনি আল্লাহ কোন নবী বা রসূল কোন সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছেন , তারা , “পূর্বপুরুষ ও স্কলাররাই সঠিক”, এই যুক্তিতেই ঐ নবী বা রসূলকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন।

“আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না। আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব, যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।“(২”১৭০)

যখন নূহ নবী তাদেরকে আল্লাহ্‌র পথে ডাকলেন , তাদের জবাব -
“….আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি।” ২৩:২৪

যখন হূদ নবী আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহ্‌র সাথে আর কাউকে পূজা করতে নিষেধ করলেন-
“তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছ যে আমরা এক আল্লাহর এবাদত করি এবং আমাদের বাপ-দাদা যাদের পূজা করত, তাদেরকে ছেড়ে দেই?” ৭:৭০

একি উত্তর নবী সালেহ ও নবী শোয়েবকে দেয়া হয়েছিল।
“…আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ কর?..” (১১:৬২)
“তারা বলল-হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনার নামায কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা যাদের উপাসনা করত?…” (১১:৮৭)


ইব্রাহিম নবী যখন চাঁদ সূর্যের উপমা দিয়ে যুক্তির মাধ্যমে এক আল্লাহ্‌র পথে ডাকলেন , তাদের একটাই উত্তর -
“তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করত।” (২৬:৭৪)

যখনি মানুষ আল্লাহ্‌র বানীর মাধ্যমে নুতন কিছু শোনে , তখনি আশ্চর্য হয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে , কারন তারা এমন কথা তাদের স্কলারদের কাছ থেকে কখনো শোনেনি। নবী মুহাম্মদ ও যখন কোরানের বানী প্রচার শুরু করেন , তখনো একি জবাব-
“যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা বলে, তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে চায়। তারা আরও বলে, এটা মনগড়া মিথ্যা বৈ নয়।” (৩৪:৪৩)

আল্লাহ্‌র এই যে বিধান (সুন্নাতাল্লাহ) এর কোন পরিবর্তন নেই। এটা সর্বযূগে একি ছিল , আছে ও থাকবে।
“পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে (সুন্নাতাল্লাহلِسُنَّتِ اللَّهِ ) পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে (সুন্নাতাল্লাহلِسُنَّتِ اللَّهِ ) কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না।” (৩৫:৪৩)

আজ তাফসীর ও হাদীসের হাজার হাজার বইয়ের ধুলার নিচে কোরান চাপা পড়ে গেছে। এর থেকে কোরানকে মুক্ত করা এত সোজা নয়।

No comments:

Post a Comment