{এগুলি আল্লাহর সীমা, সুতরাং তাদের কাছে যেও না এবং এগুলি আল্লাহর সীমা, সুতরাং তাদের লঙ্ঘন করো না।}
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে সূরা আল-তওবাহ , ১১২ নং আয়াতে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেছেন , যার মধ্যে আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী অন্যতম। "আল্লাহর সীমা" রক্ষাকারী বিশ্বাসীদের মধ্যে ধর্মপ্রচারকদের দল ও আছে এবং এই মুমিনদেরকে আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন।
(৯:১১২ তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযারী, ভ্রমনকারী/ধর্মপ্রচারক (السَّائِحُونَ), রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও মুমিনদেরকে।)
এবং যখন আমরা আল্লাহর সীমা রক্ষার অর্থ বোঝার চেষ্টা করি, তখন আমাদের অবশ্যই কোরানে বর্ণীত আল্লাহর সীমার দিকে নজর দিতে হবে। আমরা দেখতে পাই যে তারা দুটি ভাগে বিভক্ত:
প্রথম ভাগ: এগুলো আল্লাহর সীমা, সুতরাং তাদের কাছে যেও না... এবং দ্বিতীয় ভাগ: এগুলো আল্লাহর সীমা, কাজেই এগুলো লঙ্ঘন করো না।
প্রথম ভাগ: এগুলো আল্লাহর সীমা, তাই তাদের কাছে যেও না।
এই ভাগে আল্লাহ যে কাজগুলো নিষিদ্ধ (হারাম) করেছেন , তাদের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন।
যেমন রোযার সীমা সম্পর্কে সর্বশক্তিমান বলেছেন: {এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। ২:১৮৭}।
যেমন ব্যভিচারের সীমা সম্পর্কে তাঁর বাণী: {ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না, কারণ এটি অশ্লীলতা এবং মন্দ পথ। ১৭:৩২}।
কাছে যাওয়া- ق ر ب ক্বাফ, রা' এবং বা' একটি ধ্বনি সমষ্টি যা দূরত্বের পার্থক্য নির্দেশ করে। আল্লাহর বাণী: {প্রকৃতপক্ষে, তারা এটাকে দূরে(بَعِيدًا) দেখে এবং আমরা কাছে (قَرِيبًا )দেখতে পাই। ৭০:৬-৭}। এই মূল এবং এর থেকে উদ্ভুত শব্দগুলি পবিত্র কুরানে ৯৬ জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ কোরানের এই মূলকে নিম্নলিখিত অর্থের সাথে ব্যবহার করেছেন:
১)- দূরত্বের সাথে বৈপরীত্য, যেমন সর্বশক্তিমান বলেছেন:
{আর আমরা বললাম, হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের কাছে যেও না(وَلَا تَقْرَبَا)। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে। ২:৩৫}
এখন ভাবুন- আল্লাহর সীমা কত গুরুত্বপূর্ন। নামাজ নয় , রোজা নয় ,হজ্ব নয়, এটা এমন এক সীমা যা না মানার জন্য আদম জান্নাত হতে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে আমারা আজ এখানে , এই পৃথিবীতে।
২) এমন কিছু জানার জন্য যা মনে করি অনেক দূরে, যেমন সর্বশক্তিমান বলেছেন:
{কেয়ামত আসন্ন (اقْتَرَبَتِ), চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।৫৪:১}
{আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে(قَرِيبٌ)। ২:১৮৬}
{সত্য ওয়াদা নিকটবর্তী (وَاقْتَرَبَ )হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; ২১:৯৭}
৩) আনুমানিক অজানা কিছু যা এখনও ঘটেনি, যেমন সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন:
{আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবে না। নতুবা অতি সত্বর (قَرِيبٌ ) তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে।১১:৬৪}
{বলুনঃ আমি জানি না তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয় আসন্ন( أَقَرِيبٌ ) না আমার পালনকর্তা এর জন্যে কোন মেয়াদ স্থির করে রেখেছেন।৭২:২৫}
{অথবা এমন কোন বস্তু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন; তথাপি তারা বলবেঃ আমাদের কে পুর্নবার কে সৃষ্টি করবে। বলুনঃ যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃজন করেছেন। অতঃপর তারা আপনার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবেঃ এটা কবে হবে? বলুনঃ হবে, সম্ভবতঃ শ্রীঘ্রই(قَرِيبًا)।১৭:৫১}
৪) নিকট আত্মীয় এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক বোঝাতে, যেমন সর্বশক্তিমান বলেছেন:
{বলুন, আমি তোমাদের নিকট আত্মীয়তার (الْقُرْبَىٰ ) ভালবাসা ছাড়া এর জন্য কোন পারিশ্রমিক চাই না। ৪২:২৩}
{যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্নীয়ও (قُرْبَىٰ )হয়। ৬:১৫২}
৫) নাগালের বাইরে এমন কিছু করতে নিষেধ করা, যেমন সর্বশক্তিমান বলেন:
{আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না (وَلَا تَقْرَبُوا), একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া;১৭:৩৪}
{আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না (وَلَا تَقْرَبُوا)। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।১৭:৩২}
{হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা (لَا تَقْرَبُوا) , যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, ৪:৪৩}
উদাহরণের মাধ্যমে কোরানে নিষিদ্ধ জিনিসগুলি, তবে শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়: সর্বশক্তিমান বলেছেন:
{মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ৪৯:১২}
{যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।১৭:৩৬}
{পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।৫:২}
{হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। ২:২৬৪}
দ্বিতীয় ভাগ : এগুলো আল্লাহর সীমা, তাই এগুলো লঙ্ঘন করো না।
এগুলি সেই আদেশগুলি যার সীমা আল্লাহ নির্ধারন করে করার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু এগুলি লঙ্ঘন করা জায়েজ নয়, যেমন সর্বশক্তিমান বলেছেন:
উত্তরাধিকারের সীমা সম্পর্কিত: {এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।৪:১৩-১৪}
এবং তিনি বিবাহবিচ্ছেদের সীমা সম্পর্কে বলেছেন: {হে নবী, আপনি যদি নারীদেরকে তালাক দেন তাহলে তাদের ইদ্দতকালের জন্য তালাক দিন..... আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা।৬৫:১}
{তোমাদের মুখ থেকে সাধারনতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।১৬:১১৬}
সৌজন্যে - আহমেদ সুবহি মানসুর, প্রাক্তন অধ্যাপক আল আজহার বিশ্ববদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment