Friday, December 15, 2017

আমিন (আমেন)

আমিন' শব্দটির সাথে আজকের মুসলমানদের নুতন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই। আমার ব্লগে ও এই শব্দটি বহুল প্রচলিত। যে কোন দো'য়ার পরে "বলুন আমিন" শব্দটি বলা হয়ে থাকে , এমনকি অনেক সময় ব্যাঙ্গার্থেও। সাধারনত নামাজে ঈমামের সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত শেষ হওয়ার পরে নামাজীগণ সমস্বরে উচ্চকন্ঠে বা আস্তে আমিন বলে থাকেন এবং নামাজ শেষে বা ওয়াজ মহফিলে দোয়ার সময় উপস্থিৎ জনতা আমিন আমিন বলে আকাশ বাতাস কাপিয়ে দেন। আমীনের মানে ও এর প্রাগৈতিহাসিক উৎপত্তি নিয়েই এখানে আলোচনা করব।

মুসলমানরা আমিন বলে কেন?

'আমিন' শব্দটি যে অর্থে আজকের মুসলমানরা বলে থাকে , সেই অর্থে 'আমিন' শব্দটি কোরানের কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে , আল্লাহর শেষ কিতাব কোরানে 'আমিন' শব্দটি না থাকার পরেও আজকের মুসলমানরা 'আমিন' শব্দটিকে কেন এত গুরুত্ব দেয়? ঠিকি অনুমান করেছেন। এর উৎপত্তি হাদীস থেকে। 
 আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা) ইরশাদ করেন যে, ইমাম যখন আমীন বলবে তোমরাও তখন আমীন বলবে। কারণ ফেরেশতাগণের আমীন বলার সাথে যার আমীন বলা হবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইমাম তিরমিযী (রহ) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

এছাড়াও সহীহ বুখারি ভলুম-৬/চ্যাপ্টার-২ তে অনুরুপ হাদীস পাবেন।  

এই হাদীসগুলো যে মিথ্যা , তা কোরানের আলোকে সহজেই বলা যায়। কারন রসূল মুহম্মদ নিজের ভাল মন্দ বা ভবিষ্যত জানতেন না এবং কোরানের বাইরে নুতন কোন দিগনির্দেশনা দেয়ার অধিকার ও তার ছিল না। আল্লাহ যেহেতু কোরানের কোথাও এমন নির্দেশ দেন নি , সেখানে রসূলও এমন নির্দেশ যে দেন নি , তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।  রসূল আল্লাহভীরু ছিলেন , তার পক্ষে কোরানিক নির্দেশের বাইরে নির্দেশ দেয়া অসম্ভব। নিচের আয়াত দুটি পড়ুন-

৭:১৮৮- আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের (ভবিষ্যতের) কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।

৬৯:৪৩-৪৮- এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ।


আমিনের উৎস

মুসলমানরা বলে আমিন , আর খৃষ্টান ও ইহুদীরা বলে 'আমেন'। এই শব্দটির ব্যাবহার মুসলমানরা শুরু করে রসূলের মৃত্যুর ২০০-৩০০বছর পরে বুখারী মুসলিমরা যখন হাদীস সঙ্কলন করা শুরু করে , তখন থেকেই। খৃষ্টান ও ইহুদীরা ও 'আমেন' বলে থাকে দোয়ার পরে। 'আমেন' শব্দটি ইহুদীদের কাছ থেকে খৃষ্টানরা পেয়েছে , এমনটির উল্লেখ পাওয়া যায় Catholic Encyclopedia Vol. 1 1907 এ। মুসলিম সম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে বিজীত রাষ্ট্রগুলোর ইহুদী ও খৃষ্টানরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে এবং একি সাথে তাদের অনেক রীতি নীতি ও ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করে। কোরানের পরিবর্তন সম্ভবপর না হওয়ায় , লোকমুখে প্রচলিত হাদীসের নামেই এই কাজটি করতে তারা সমর্থ হয়। তৎকালীন মুসলিম খলিফারাও বিজীত রাজ্যের প্রজাদের তুষ্ট রাখা ও রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থেই এই সকল বানোয়াট হাদীসের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে প্রতীয়মান হয়।

আমেন হিব্রু শব্দ। এর অর্থ - 'so be it' 'এমনটাই হোক' ইহুদী ও খৃস্টানরা একে প্রার্থনা বা প্রভুর গুন গানের (hymn)পরেই বলে থাকে।

প্যাগানদের সাথে যোগসুত্র

Columbia Encyclopedia, 6th Edition 2001 অনুযায়ী 'আমেন' শব্দটি প্যাগান মূর্তিপূজার সাথে জড়িত। মিশরীয় দেবতার নাম ছিল 'আমন' বা 'আমেন'। সে ছিল থীবসের প্রধান দেবতা/god। আমন , তার স্ত্রী মুট এবং ওদের ছেলে খেন্সু স্বর্গের দেবতার তিন রুপ , অনেকটা খৃষ্টানদের ট্রিনিটি'র মতো। আমনকে অনেকে গ্রীক দেবতা জীউসের সাথে ও মিলিয়ে ফেলেন। আমনের মন্দির এখনো লিবিয়ার মরুভূমি সিওয়াতে বিদ্যমান। কেউ এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলে এই  লিঙ্কে যেতে পারেন।

No comments:

Post a Comment