Monday, September 28, 2015

ইসলাম ধর্মে জবরদস্তি নেই



    কোরান থেকে--

    ২:২৫৬ দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। 

    ১০:৯৯ আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসত সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? 

    ৬:১০৭ যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা শেরক করত না। আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের কার্যনির্বাহী নন। 

    ৭:১৯৯ আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। 

    ১৭:৫৪ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন। তিনি যদি চান, তোমাদের প্রতি রহমত করবেন কিংবা যদি চান, তোমাদের আযাব দিবেন। আমি আপনাকে ওদের সবার তত্ত্বাবধায়ক রূপে প্রেরণ করিনি। 

    ৩৯:৪১ আমি আপনার প্রতি সত্য ধর্মসহ কিতাব নাযিল করেছি মানুষের কল্যাণকল্পে। অতঃপর যে সৎপথে আসে, সে নিজের কল্যাণের জন্যেই আসে, আর যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজেরই অনিষ্টের জন্যে পথভ্রষ্ট হয়। আপনি তাদের উকিল নন।

    ১০৯:৬ তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে। 


    ইসলামের নবী এসেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে , জোর জবরদস্তি করে কাউকে মুসলমান বানাতে নয় বা কেউ যদি নবীর বা কোরানের অবমাননা করে তার গর্দান কাটতে ও নয়। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যারা ইসলামের অনুসারী তাদের ও কাউকে জোর করে মুসলমান বানানো বা ধর্মের অবমাননার জন্য গর্দান কাটার অধিকার আল্লাহ দেন নি। এ ব্যাপারে কোরানের নির্দেশ খুবি পরিস্কার -

    ৪:১৪০ আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন। 

    স্বাধীন ইচ্ছা / Free Will

    বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে শুরু থেকে এই পৃথিবীতে ভাল মন্দ বিভৎস যা কিছু ঘটছে , ঘটেছে ও ঘটবে , তার সবকিছুই আল্লাহ ঘটিয়েছেন , ঘটাচ্ছেন ও ঘটাবেন। আমাদের নিজস্ব কোন ইচ্ছা নেই বা কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। বুদ্ধিমানরা একটু চিন্তা করলেই একথাগুলো যে কত সত্য তা বোধগম্য হওয়ার কথা। আমাদের নিজস্ব কোন ইচ্ছাই নেই। আমরা সকলেই আল্লাহর হাতের পুতুল। সুতরাং নিঃসন্দেহে এই উপসংহারে আসা যায় যে আস্তিক কর্তৃক নাস্তিকের চাপাতির আঘাতে মৃত্যু ও আল্লাহর ইচ্ছায়ই ঘটেছে।

    আবার ভেবে বসেন না এগুলো আমার বানানো কথা। নিচের সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পড়ুন--

    ৫৭:২২ পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

    ৩৭:৯৬ অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা নির্মাণ করছ সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।

    ৭৬:৩০ আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

    ৮১:২৯ তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।

    ২৮:৬৮ আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তোমাদের কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।


    স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু নেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয় , আমরাই বুঝি আমাদের ইচ্ছার মালিক । যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। না পারি না। এ সকলি মায়া। ইচ্ছা নির্ভর করে মানুষের জন্ম , বেড়ে ওঠা , শিক্ষা , পারিপার্শিকতা , কি ফলাফল বয়ে আনবে তার বিবেচনা ইত্যাদির উপরে। যার কোনটার উপরেই মানুষের হাত নেই। আমার দাদার সাথে আমার দাদির বিয়ে না হয়ে অন্য কোন মেয়ের বিয়ে হলে আমার জন্মই হোত না। এমনটি আপনি ও এই পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে একি পরিস্থীতিতে মানুষ বারংবার একি স্বীদ্ধান্ত নেবে। উপরে দেয়া ৭৬:৩০ ও ৮১:২৯ আয়াতদুটিতে স্পষ্ট বলা আছে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে আমাদের কোন ইচ্ছাই নেই।
    মুহাম্মাদ সাদাত
    "যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।"
    "যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।"
    "প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।" [যথাক্রমে ১৮:২৯, ২৫:৫৭, ৭৪:৩৮ আয়াতের প্রাসঙ্গিক অংশ]


    ইচ্ছা করলেই যদি সৎপথে আসা যেত বা কাফের হওয়া যেত , তাহলে ইচ্ছা করে দেখুনতো কাফের হতে পারেন কিনা? আর যাদের অন্তর আল্লাহ সীল করে দিয়েছেন তারা কিভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে? এমনটি হলে ফুলবানু ও আকাশ মালিক অনেক আগেই মুমিন হয়ে যেত!! আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আপনি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই ফুলবানু ও আকাশ মালিক আল্লাহর বিরোধিতা করে চলেছে। এ থেকে এদের বা কারোরই মুক্তি নেই। 

    এ পৃথিবির প্রতিটি ঘটনার স্রষ্টা আল্লাহ। মানুষের জন্ম , মৃত্যু ও মৃত্যুর স্থান ও নির্দিষ্ট করা আছে। একারনে আপনার দাদার সাথে আপনার দাদিরই বিয়ে হতে হবে অন্য কারো হলে হবে না। আপনার বাবার সাথে আপনার মারই বিয়ে হতে হবে। নইলে আপনার জন্মই হোত না। আপনার বদলে বা আমার বদলে অন্য কেউ এখন এই পৃথিবীতে বিচরন করত।

    গত বছর গাড়িতে আগুনে বোমায় পুড়ে যে লোকগুলো ও শিশুগুলি মারা গিয়েছিল , তাদের ঐ গাড়িতেই ঐ সময়েই চড়তে হবে। অন্য গাড়িতে বা অন্য সময়ে নয়। যে বোমা মেরেছিল , তার অন্য কোন ইচ্ছাই হবে না। তাকে ঐ সময়েই বোমা মারতে হবে , অন্য কোন কাজ বা নিজের বৌর সাথে একদন্ড বেশি খোশ গল্প করে দেরি করার অবকাশ নেই।


    ৮:১৭ সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত।

    আরোপিত হাদিস (ইসনাদ)

    আরবিতে হাদিস বলতে বুঝায় - যে কোন ধরনের কথাবার্তা ,গাল গল্প , বিবৃতি ইত্যাদি। আমরা মুসলমানরা হাদিস বলতে বুঝি আমাদের নবী মুহাম্মদের কথা , নির্দেশ , বিবৃতি এবং বিভিন্ন সাহাবী কর্তৃক বিবৃত নবীর জীবণে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার বিবরন , যাকে নবীর সুন্নাত বলা হয়ে থাকে। আজকের জমানায় লিখিত আকারে নবীর হাদিসের লিখিত যে বইগুলো পাওয়া যায় যেমন , বুখারি মুসলিমের সহীহ হাদিস গ্রন্থ , এগুলো সঙ্কলন ও লেখা হয়েছে নবীর মৃত্যুর ২০০/২৫০ বছর পরে। নবীর মৃত্যুর এত বছর পরে হাদীস লেখার পরে যখন এগুলোকে নবীর কথা ও কাজ বলে আরোপ করা হয় , তখন স্বভাবতই এগুলোর সত্যতা নিয়ে সকলের মনে সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক। এই সন্দেহ দুর করতেই ইসনাদের আগমন। ইসনাদ অর্থ ঠেকা দেয়া। , যেমন পড়ন্ত দেয়ালকে বাশ দিয়ে ঠেকা দেয়া , তেমনি হাদিসকে বাতিল হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ইসনাদ দিয়ে ঠেকা দেয়া হয়। ইসনাদ হলো , নবীর সময় থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে সকল লোক মুখে মুখে নবীর হাদিস মুখস্ত করে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে পৌছায়ে দিয়েছে তাদের নাম ধাম। একেক প্রজন্মের সময় কাল ৪০ বছর করে ধরলে নবীর সময় থেকে বুখারী মুসলিমের সময়কাল পর্যন্ত ৫-৬ প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে। এই ৫-৬ প্রজন্মের মাঝে কেউ বানিয়ে বানিয়ে কোন কথা ও কাজকে নবীর নামে চালিয়েছে কিনা বা নবীর কথার কোন পরিবর্তন করেছে কিনা তা বুখারি মুসলিমদের পক্ষে যতই গবেষনা করুক বা বাছ বিচার করুক না কেনো , জানা অসম্ভব। সুতরাং ইসনাদ দিয়ে কতটুকু হাদিসকে বাতিল হওয়া থেকে ঠেকা দেয়া গেছে তা জ্ঞানীদের গবেষনার বিষয়।

    ভূমিকা--

    ৮৩৩ সাল। আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের শাসনকাল। কবি আল-আত্তাবি বাগদাদের রাস্তায় মুড়ি খেতে খেতে হেটে প্রধান বাজার এলাকায় পৌছালেন। যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে খেতে খেতে হাটাকে খারাপ চোখে দেখা হোত বা বলা যায় মানীদের ইজ্জত চলে যেত। 

    কবির এক বন্ধু তার এই খেতে খেতে বাজারে আসা দেখে বল্লেন , কেমন তোমার আক্কেল ? তুমি খাচ্ছ আর লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এটা কি ভাল হলো?

    কবি তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দিল , এরা আবার লোকজন হলো কবে? এরা তো গরু।

    বন্ধু তার এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করলে কবি বল্লেন , দাড়াও ! তোমাকে এক্ষুনি প্রমাণ করে দেখাচ্ছি , এরা মানুষ নাকি গরু?

    কবি বাজারের মাঝে উচুমতো এক জায়গায় উঠে চেচাতে লাগলেন , এই সকলে এদিকে আসেন , আজ আমি আপনাদের আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) সম্পর্কে কিছু বলব। একথা শুনে বাজারের লোকজন দৌড়ে এসে তার চারপাশে ভিড় জমালো। তিনি বলতে লাগলেন , আমি এক লোককে জানি যে তার বাপের কাছ থেকে শুনেছে , তার বাপ শুনেছে দাদার মামাত ভাইর কাছে , দাদার মামাত ভাই শুনেছে এক হুজুরের কাছে, হুজুর আবু হুরায়রাকে বলতে শুনেছে নবীর এই হাদিস টি। এই ভাবে তিনি একের পর এক আবু হুরায়রা , আয়েশা , ইবনে আব্বাস , আল খুদরি বর্ণীত হাদিস ইসনাদ সহকারে বলতে থাকলেন। উপস্থিত জনতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথা শুনতে লাগল। তিনি সাইদি হুজুরের মতো এমনি মোহ বিস্তার করলেন যে ডান হাত উচু করলে উপস্থিত সকলের মাথা ডান দিকে ঘুরে আর বাম হাত উচু করলে বাম দিকে ঘুরে যায়। এ সময়ে তিনি অনেকের কাছ থেকে শোনা একটি মুতাওয়াতির হাদিস ইসনাদ সহকারে বর্ণনা করলেন - নবী বলেছেন , যে ব্যাক্তি তার জিহ্বার ডগা দিয়ে নিজের নাক চাটতে পারবে , সে নিশ্চিত বেহেস্তে যাবে। একথা শোনার সাথে সাথে সকলে জিহ্বা দিয়ে যার যার নাক চাটার চেষ্টা করতে লাগল। তখন তিনি পাশে দাড়ানো বন্ধুকে ফিসফিস করে বল্লেন , আমি তোমারে বলছিলাম না , এরা গরু। গরু যেমন জিহ্বা দিয়ে নিজের নাক চাটে, উপস্থিত এই জনতাকে ঠিক তেমনই গরুর মতো দেখাচ্ছে না!!


    কি এমন ঘটলো? এই লোকগুলোর বিচার বুদ্ধি কি কারনে লোপ পেলো যে তারা গরুর মতো জিহ্বা দিয়ে নাক চাটার চেষ্টা করতে লাগল? কারন টা আর কিছু না। ইসনাদ সহকারে হাদিস শুনলেই তাদের বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। তারা ভেবে ও দেখেনা , নবী এমন কথা বলতে পারেন কী না বা এমন কথা কোরানের তথা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী কী না