Friday, May 9, 2014

নাস্তিকতা - কতটুকু যৌক্তিক?

আমরা এমন এক যুগে বাস করি যেখানে সব কিছুই যুক্তি নির্ভর হতে হয়। অযৌক্তিক কোন বিষয়কেই মেনে নেয়া হয় না, কেউ সেটা মানলে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যপার হতে পারে। যে কোন ধর্মের প্রথম শর্তই হলো অন্ধ বিশ্বাস, ইসলামেরও তাই।-সুরত আলী


নাস্তিকতার সাথে 'সর্বজনীন না' (universal negative) জড়িত যেটা যৌক্তিকভাবে ভুল/মিথ্যা বিশ্বাস (logical fallacy)  'আল্লাহ নেই' - নাস্তিকের এই ঘোষনার সাথে বিজ্ঞান বা বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই। এটা নাস্তিকের একটি ভুল বিশ্বাস। কোন যুক্তি তর্ক ও বৈজ্ঞানিক গবেষনার উপরে ভিত্তি করে নাস্তিক এই ঘোষনাটি দেয় না বরং এই ঘোষনাটি দেয় অন্ধ বিশ্বাস থেকে।

বাস্তবতার বহু ডাইমেনশন আছে। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ১০ টি ডাইমেনশনের খোজ পেয়েছেন বা বলা যায় কল্পনা করতে পেরেছেন। এর বাইরে যে ডাইমেনশন নেই বা আল্লাহর অস্তিত্ব নেই সেই দাবী করতে হলে নাস্তিককে বা বিজ্ঞানীকে বাস্তবতার সবকিছুই জানতে হবে , তারপরে ও সেকি যৌক্তিকভাবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে দাবী করতে পারে তার জানার বাইরে আর কোন অস্তিত্ব নেই?  না , পারে না। কারন জানার শেষ নেই। একারনেই 'সর্বজনীন না' (universal negative) একটি যৌক্তিক হেত্মাভাস (logical fallacy)।

কিছু নাস্তিক দৃঢ়তার সাথে বলে থাকে আল্লাহ নেই এবং বাকি নাস্তিকরা অন্ধ বিশ্বাসে তাদের অনুসরন করে।  আল্লাহ নেই , নিজস্ব জ্ঞান থেকে এই ঘোষনা কেউ দিতে চাইলে তাকে সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞানী এবং মহাবিশ্বের সকল জায়গায় একি সময়ে ও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হাজির হওয়া লাগবে। কেন সেটা বুঝতে চাইলে ঐ নাস্তিককে প্রশ্ন করা যেতে পারে , সে কখনো ওয়াশিংটনস্থ লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসে গিয়েছে কিনা? উল্লেখ্য এই লাইব্রেরিতে ৭ কোটির উপরে বই , জার্নাল , ম্যাগাজিন ইত্যাদি আছে এবং এগুলো জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা যেমন : বিজ্ঞান , সাহিত্য , দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানী রথী মহারথীরাই লিখেছেন। এরপরে তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় -  লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের সকল বই , জার্নাল , ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে লিখিত সম্মিলিত জ্ঞানের কত শতাংশ আপনার নিজস্ব জ্ঞান হবে? উত্তর হবে জানি না বা যদি সাহসী হয় তাহলে বলবে ১%এর ভগ্নাংশ হতে পারে। তখন স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায় - আপনার নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বাইরে যে ৯৯.৯৯% জ্ঞান বিদ্যমান তার ভিতরে আল্লাহর প্রমান নেই , সেটা কি যৌক্তিকভাবে বলা যায়? 

আল্লাহ নেই নাস্তিকের এই দাবী যৌক্তিকভাবে বা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ সম্ভব নয়। এটা একটা অন্ধ বিশ্বাস। কোন নাস্তিকেরই নাস্তিক হওয়ার মতো যথেষ্ঠ জ্ঞান নেই। যেমন ধরুন আমি যদি দাবী করি আপনার ঘরে কোন সরিষার দানা নেই , তাহলে এই দাবী করার আগে আমাকে আপনার ঘরের প্রতি বর্গমিলিমিটার জায়গা তন্ন তন্ন করে খুজতে হবে। যদি আপনার ঘর সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই না থাকে তাহলে এই দাবী কি ধোপে টিকবে? এই মহাবিশ্ব ও এর বাইরে যা আছে তার কতটুকু একজন নাস্তিক জানে যে সে দাবী করে আল্লাহ নেই?  কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই সে বিশ্বাস করে , এ মহাবিশ্ব নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে , এ জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই , মানে নেই , গন্তব্য নেই , নৈতিকতার কোন মাপকাঠি নেই।  এর থেকে বড় অন্ধ বিশ্বাস আর কি হতে পারে?

নাস্তিকের চিন্তা ও দাবী সেই জেলের মতো ,  যে দাবী করে সাগরে ১ ইঞ্চির ছোট কোন মাছ বা প্রাণী নেই। তার জালের ছিদ্র ১ ইঞ্চি এবং সেই জাল দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতার আলোকেই সে এই দাবী করে। কারন তার জালে কখনোই ১ ইঞ্চির ছোট কোন প্রাণী  ধরা পড়েনি। লোকজন স্বভাবতই তার কথা বিশ্বাস করেনি এবং বলেছে সাগরে হাজারো প্রাণী আছে যা ১ ইঞ্চির ছোট। কে শোনে কার কথা? জেলের এক কথা , আমার জালে যা ধরা পড়ে না , সেটা মাছ না। নাস্তিকের ও এক কথা -  যা আমি দেখি না বা আমার বুঝে আসে না , তার অস্তিত্ব নেই। তার প্রকৃতির উপর এমনি অন্ধ বিশ্বাস যে অতিপ্রাকৃতিক (supernatural), আধ্যাত্মিক , অলৌকিক কোন কিছুর অস্তিত্ব সে আগেই নাকচ করে বসে আছে। 

নির্দিষ্ট করে বললে প্রতিটি নাস্তিক হলো এক একজন প্রকৃতিবাদী। প্রকৃতির বাইরে কোন কিছুর অস্তিত্ব সে তর্কে নামার আগেই বাতিল করে বসে আছে। সকল কিছুর ব্যাখ্যা ও প্রমাণ সে বিজ্ঞানের মধ্যেই খোজে। সেটা কেমন তা এক প্রফেসর ও তার ছাত্রের মাঝের এই কাল্পনিক বাতচিতেই ফুটে উঠেছে-

প্রফেসর: মিরাকল বা অলৌকিক ঘটনা কখনো ঘটে না। তুমি কি জান না , বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে অলৌকিক ঘটনা অসম্ভব , প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তারপরেও তুমি কিভাবে বিশ্বাস করো আল্লাহ প্রার্থনার জবাব দেন , যীশু মৃত মানুষকে জীবিত করেন , ইত্যাদি--


ছাত্র: স্যার , জবাব দেয়ার আগে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে দেখি একমত হতে পারি কিনা। এটা কি ভুল হবে যদি বলি , মহাবিশ্বে আমাদের চারপাশে আমরা যা কিছু পর্যবেক্ষন করি  তার প্রকৃতি ও কার্যকারন জানার জন্য মানুষের চেষ্টা ও কর্মযজ্ঞই  হলো বিজ্ঞান।

প্রফেসর: খুবি সুন্দর বলেছ। এটাই বিজ্ঞান।

ছাত্র: আর মিরাকল হলো এমন কোন ঘটনা , যা প্রকৃতির বাইরের কেউ ঘটিয়ে থাকে।

প্রফেসর: হ্যা , মিরাকলের এমন সংজ্ঞা মেনে নেয়া যায়।

ছাত্র: কিন্তু , আপনি তো প্রকৃতির বাইরে কোন কিছুর অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেন না , যেকারনে আপনার কাছে মিরাকল অসম্ভব মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কী?

একজন সৎ নাস্তিক কখনো যৌক্তিকভাবে 'আল্লাহ নেই' এই দাবী করতে পারেনা। সে বরং বলতে পারে আল্লাহ আছে কি নেই আমি জানি না বা থাকলেও তিনি এই মহাবিশ্বের কোন কিছুতেই হস্তক্ষেপ করেন না। এদেরকে বলা হয় এগ্নস্টিক , যেমনটি আমার ব্লগের স্বঘোষিত আদিল মাহমুদ। এগ্নস্টিক ও কেন যৌক্তিকভাবে ভুল বিশ্বাস , তা নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা রইল।

No comments:

Post a Comment