Monday, April 25, 2011

স্ত্রী প্রহার !!

আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম কোরানানুযায়ী জীবনযাপন করলে মুশ্কিল্টা কি তা জানার জন্য। কোরান স্কেপ্টিকরা কয়েকটি মুশ্কিলের কথা জানিয়েছেন , যার অন্যতম স্ত্রী প্রহার। আজ স্ত্রী প্রহার নিয়ে আলোকপাত করব। বাকিগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা থাকল।



মুসলিম দেশগুলোতে অতি সামান্য কারনে (রান্না কেন ভাল হয় নি , এইরকম তুচ্ছ কোন বিষয়) বউ পেটানোর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও বউ পেটায় , যার অহরহ নজীর আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখে থাকি কিন্তু সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। কারন মুসলমানরা বউ পেটায় ধর্মীয়ভাবে জায়েজ করে। আমাদের ধর্মগুরুরা গত হাজার বছর ধরে বউ পেটানোর সমর্থনে কোরানের ৪:৩৪ নং আয়াত নিয়ে খাড়া হয়ে যান। এখন আমি যদি বলি এই আয়াতটির ভুল মানে করা হচ্ছে গত হাজার বছর ধরে , তাহলে আস্তিক নাস্তিক ও কোরান স্কেপ্টিক সকলেই একবাক্যে প্রতিবাদ করে উঠবে , হাজার বছর ধরে কেউ কিছু বুঝলো না , তুমি কোথাকার দিগপাল এলে যে , তোমার চোখেই এই ভুল ধরা পড়লো!! দেখুন কপের্নিকাসের আগ পর্যন্ত আবহমানকাল ধরে মানুষ বিশ্বাস করতো , সূর্য পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে। তাই বলে কি এটা সত্য? গত হাজার বছর ধরে কোরানের আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করলে , ব্যাখ্যাটা সত্য হয়ে যায় না। তাই সকলের কাছে অনুরোধ খোলামন নিয়ে (অর্ধেক খালি নয় , অর্ধেক ভর্তি চিন্তা নিয়ে) পোস্টের বাকি অংশ পড়ুন তাহলেই কোরানের মহিমা বুঝতে পারবেন।



৪:৩৪ "পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে ('নুশুয' نُشُوزَ)অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং ('ইদরিবুহুন্না'وَاضْرِبُوهُنَّপ্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"

যদি আল্লাহ সত্যি সত্যিই অবাধ্যতার জন্য স্ত্রী প্রহার করতে বলে থাকেন , তাহলে মুসলমানদের জন্য বউ পেটানো অবশ্য করনীয়। মুসলমানরা আল্লাহর আদেশ মানতে বাধ্য। আসলেই কি আল্লাহ বউ পেটাতে বলেছেন ? চলুন দেখি কোরান থেকেই এর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কিনা।



কোরানের কোন শব্দের সঠিক মানে জানতে হলে , ঐ একি শব্দ দিয়ে কোরানের অন্য আয়াতে কি বোঝানো হয়েছে , সেটা জানা জরুরী। এই পদ্ধতিকে বলে 'তারতীল' , যার কথা বলা হয়েছে ৭৩:৪ নং আয়াতে।



বউ পেটানোর আয়াতটির সঠিক মানে জানতে হলে ২ টা শব্দের মানে জানা জরুরী , যা আমি আরবিতে দিয়েছি।


১) নুশুয (যার মানে করা হয়েছে অবাধ্যতা)

২) ইদরিবুহুন্না (মানে করা হয়েছে প্রহার কর)


'নুশুয'এর সঠিক মানে জানলে আয়াতটি কি নিয়ে তা জানা যাবে এবং সে কালের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষ শ্রেষ্ঠ , এই চিন্তা মাথায় রেখেই যে আমাদের আলিম ও ইমামরা ঐ রকম অনুবাদ করেছিলেন , তা পরিস্কার হবে।

'নুশুয' এর অর্থ - উঠে যাওয়া / `to rise / go above'

কোন স্থান থেকে উঠে যাওয়াই যে 'নুশুয'এর মানে , তা পরিস্কার হবে ৫৮:১১ নং আয়াত পড়লে।



"মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহর জন্যে তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয়ঃ ('এনশুযু'انشُزُو উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা কর।"

৪:৩৪ আয়াতে স্ত্রী কতৃক স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়া বা উপেক্ষার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে , অবাধ্যতার কথা বলা হয় নি। এখনো যদি এটা বিশ্বাস না হয় তাহলে ৪:১২৮ নং আয়াত দেখুন , যেখানে স্বামী কতৃক স্ত্রীকে উপেক্ষার কথা বলা হয়েছে ও একি শব্দ 'নুশুয' ব্যবহৃত হয়েছে।


"যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে (نُشُوزً)অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।"

একি কাজের জন্য তো আর দুই রকম নির্দেশ হতে পারে না। স্বামী উপেক্ষা করলে মিমাংসা আর স্ত্রী উপেক্ষা করলে প্রহার। এখন দেখি 'ইয়াদরিবুহুন্না' মানে কি?

'ইয়াদরিবুহুন্না' র মূল হলো 'দারাবা"। দারাবা অনেক আয়াতে আছে , এবং এর ভিন্ন ভিন্ন মানে করা হয়েছে। নিম্নের আয়াত থেকে দারাবার মানে আমরা নিতে পারি।

২:২৭৩ "খয়রাত ঐ সকল গরীব লোকের জন্যে যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র (ضَرْبًا) ঘোরাফেরা করতে (যেতে) সক্ষম নয়। "

এখান থেকে আমরা ইয়াদরিবুহুন্নার মানে নিতে পারি যেতে দেয়া। তাহলে ৪:৩৪ এর মানে দাড়ায় -

"পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে ('নুশুয' نُشُوزَ)চলে যাওয়ার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং ('ইদরিবুহুন্না'وَاضْرِبُوهُنَّযেতে দাও যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"

দেখুন তো আল্লাহর আইন কত সুন্দর। স্বামী , স্ত্রী উভয়ের সমাধিকার।


৩৯:১৮ যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।











Thursday, April 14, 2011

আমাদের এই মহাবিশ্ব কোথা থেকে এসেছে? (২)

পাখির বিষ্ঠা।




আজকের দুনিয়ায় বিগ ব্যাঙ থিওরী সর্বজন বিদিত ও বিজ্ঞানী মহলে সমাদৃত ও স্বীকৃত। তবে শুরুতে কেউই বিগ ব্যাঙ থিওরীকে পাত্তা দেয় নি , উড়িয়ে দিয়েছিল। যে কজন এই থিওরীকে সমর্থন করেছিল , তারা ভবিষ্যতবাণী করে যে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন এখনো অবশিষ্ট আছে।



১৯৬৫ সালে নিউ জার্সীতে বেল ল্যাবরেটরীর দুজন বিজ্ঞানী প্রায় হঠাৎ করেই একটা বড় রেডিও ডিশ-এন্টেনার মাধ্যমে এই তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের সন্ধান পেয়ে যান। পৃথিবীর সবচেয়ে সুক্ষ পরিবর্তন নির্ণয়ে সক্ষম রেডিও ডিশ-এন্টেনাকে টিউনিং করার সময় একটি ঝির ঝির শব্দ আর্নো পেন্জিয়াস ও রবার্ট উইলসনকে জ্বালাতন করছিল। কারন এন্টেনাকে আকাশের যেদিকেই ঘুরান না কেন , সকল দিক থেকেই ঝির ঝির শব্দটি আসছিল। তারা প্রথমে ভেবেছিলেন , এটা পাখির বিষ্ঠা (গু) । তাদের এন্টেনাটি এতই সুক্ষ ছিল যে , ডিশ-এন্টেনার উপরে পাখি বিষ্ঠা ত্যাগ করলে , সদ্য নির্গত সেই বিষ্ঠা গরম থাকার ফলে ওটার তাপ থেকে সৃষ্ট বিকিরনকে ও এই এন্টেনাটি ধরতে পারত। ডিশ-এন্টেনা থেকে সেই বিষ্ঠা পরিস্কার করার পরে ও দেখা গেল ঐ ঝির ঝির শব্দ আসা বন্ধ হচ্ছে না।



একবছর ধরে এই ঝির ঝির শব্দের ডাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে তারা এই স্বীদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই ঝির ঝির শব্দটিই হলো ১৩০০ কোটি বছর পূর্বে বিগ ব্যাঙের বিষ্ফোরনের ফলে তাপ থেকে সৃষ্ট মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের বিকিরন। তাকে বলা হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB)। সিএমবি আবিষ্কারকদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হল, যদিও এই বিকিরণের ভাবীকথন অনেক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা আগেই করেছিলেন এবং সেই সাথে বিগ ব্যাঙ নিয়ে বিজ্ঞানীদের সকল অবিশ্বাস ও সন্দেহ দুর হলো। (আপনার টেলিভিশন চ্যানেল পরিবর্তনের সময় যে চ্যানেলে কোন প্রোগ্রাম থাকে না , সেখানে যে ঝির ঝির শব্দ শোনা যায় , ওটাই সিএমবি (CMB))



এক সাক্ষাৎকারে আর্নো পেন্জিয়াসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল , বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই কেন এত বাধার সম্মুখীন হয়েছিল? কেন মূলধারার বিজ্ঞানীরা একে মেনে নেন নি?



জবাবে আর্নো পেন্জিয়াস বলেন - "বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা ছাড়াই এই মহাবিশ্বের বর্ণনা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এবং বিজ্ঞান যেহেতু কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় না , শুধু বর্ণনাই দেয় , সেহেতু মূলধারার বিজ্ঞানীদের বিগ ব্যাঙ থিওরী শুরুতেই মেনে না নেয়াটাই কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন। আমাদের এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব যদি চিরস্থায়ী হয়ে থাকে , তাহলে এর কোন ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না , নয় কী?"



"কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল , 'কোন এক কোম্পানির সকল সেক্রেটারিই মহিলা কেন'? আপনি উত্তরে বলতে পারেন , 'কোম্পানির শুরু থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে।' এটা ব্যাখ্যা না দিয়েই পার পাওয়ার একটি পন্থা। ঠিক এমনি ভাবে যে সকল থিওরীর কোন ব্যাখ্যা লাগে না সেগুলোকেই সাধারনত বিজ্ঞান গ্রহণ করে এবং এভাবেই বিজ্ঞান খুব সুন্দর ভাবে কাজ করে চলেছে।"



"মহাবিশ্ব চিরস্থায়ীর ধারনা বা পুরাতন থিওরীটা এতই কুৎসীত যে সেটাকে মানুষ পরিত্যাগ করেছে। এর বদলে নুতন ও সহজতম থিওরীটা হলো - শুন্য থেকে সৃষ্টি , এই মহাবিশ্বের শুন্য (সরিষার দানা?) থেকে মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ। সাধারন বাংলায় যাকে বলে - 'হাওয়া থেকে পাওয়া'।"



রবার্ট উইলসনকে সাংবাদিক ফ্রেড হীরেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন ," বিগ ব্যাঙ কোন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ইঙ্গিত করে কী না?"



উইলসন বললেন ," কিছু একটা তো অবশ্যই বারুদে ম্যাচের কাঠি ঠোকার কাজটা করেছিল। আর আপনি যদি ধার্মিক হোন , তাহলে এর থেকে ভাল কোন থিওরী তো আমার মাথায় আসে না।"



পরবর্তি পর্বে থাকবে - " বিগ ব্যাঙ কেন ইতিহাসের সুক্ষতম পরিকল্পিত ঘটনা?"