Thursday, November 24, 2022

একটি নুতন বিবর্তনবাদ – ভিন্ন চিন্তা

 ফেব্রুয়ারী 15, 2011


কেমন হয় , যদি বলি বিবর্তনবাদ সত্য , তবে ডারউইন যেটা বলেছিলেন , তার থেকে কিছুটা ভিন্ন?

কেমন হয় , যদি বিবর্তনের এমন একটা নুতন মডেল থাকত , যেটায় জীবাশ্ম ( fossils ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জীবের প্রায় কোনই পরিবর্তন না ঘটার ….. অতঃপর হটাৎ ঘটে যাওয়া ক্যাম্ব্রিয়ান বিষ্ফোরনের (Cambrian Explosion) ব্যাখ্যা থাকত? ক্যাম্ব্রিয়ান বিষ্ফোরন: প্রায় রাতারাতিই হাজার হাজার নুতন জীবের প্রেক্ষাপটে আগমন।

কেমন হয় , যদি “বিবর্তনবাদ বনাম সৃষ্টিতত্ত্ববাদ” , হয় এটা নয় ওটা এই অবস্থান না নিয়ে “দুটৈ+আরো কিছু” অবস্থান নিতে পারি?

কেমন হয় , যদি জীবাশ্ম নিয়ে অন্তহীন বিতর্ক না করে , আমরা ‘1’ ও ‘0’ র মতৈ নির্ভুলভাবে বিবর্তনের ইতিহাস জানতে পারতাম?

কেমন হয় , বিজ্ঞান ও বিশ্বাস যদি অনন্তর পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত না থাকে?

এ সকল কিছুই শুধু সম্ভব-ই নয় , বরং বর্তমানের বাস্তবতা। আমি জানি এটা একটা অসম্ভব দাবী , তবে সকলের কাছে অনুরোধ , একটু ধৈর্য ধরে আমার কথাগুলো পড়ে দেখুন নির্বোধের মতো কিছু বলছি কি না।

সত্যি সত্যিই আমার কাছে বিবর্তনের একটি নুতন থিওরী আছে। শুধু তাই নয় , এই নুতন থিওরীর সাহায্যে আগামি ৩-২০ বছরে নুতন কি আবিষ্কৃত হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হবে।

ডারউইন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে , জীবাশ্মের সাহায্যে দেখানো সম্ভব হবে , কিভাবে সরল এককোষী জীব নিয়মিত গতিতে ক্রমে ক্রমে বহুকোষী ও জটিল জীবে বিবর্তিত হয়েছে। এখন এটা সর্বজন বিদিত যে , নিয়মিত গতিতে বিবর্তন না ঘটে লাফ দিয়ে দিয়ে বিবর্তন ঘটেছে , অর্থাৎ লম্বা সময় স্থিতীশীল থেকে হটাৎ হটাৎ সামনে ঝাপ দিয়েছে।

স্টিফেন জে গৌল্ড এর নাম দিয়েছেন ‘বিরাম ভারসাম্য’ (punctuated equilibrium)। ঐ সময়ে এটা কিভাবে ঘটেছিল , তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আজ আমাদের হাতে অনেক যোগসুত্র ( clues ) আছে , যার সাহায্যে এর উত্তর পাওয়া সম্ভব।

ডারউইন বলেছিলেন বিবর্তনের চালিকাশক্তি হলো বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের যোগফল।

ডারউইনের এই মতবাদ আধা সঠিক এবং আধা ভুল। ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ব্যাপারে অবশ্যই সঠিক ছিলেন।

পক্ষপাতহীন ভাবে বল্তে গেলে প্রাকৃতিক নির্বাচন যে সঠিক , এটা জানতে রকেট সায়েন্স জানা লাগে না। দুর্বলের মৃত্যু ঘটে আর সবলেরা বেচে থাকে। আমার মনে হয় আমাদের গুহা মানবেরা ও এর সাথে পরিচিত ছিল।

(রহিম করিমের মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করল এবং মেরে ফেলল। অতঃপর দুজনেই ক্ষুধার্ত বাঘের পেটে গেল। Survival of the fittest…. এটাই স্বাভাবিক।)

প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোন সৃজনশক্তি নেই , যেটা করে তা হলো প্রসবকৃত শাবকগুলোর ক্ষুদ্রতমটিকে বা বামন গাছটিকে মেরে ফেলা।

বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তির রহস্য বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির (random mutation) মাঝেই নিহিত হতে হবে।

ডারউইন , তার সময়ে, বিশ্বাস করতেন বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির বা ভিন্নতার ( variation ) মধ্য দিয়েই সকল প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। তিনি বলেছিলেন : বেশিরভাগ সময় এটা ক্ষতিকারক , কিন্তু কখনো কখনো এটা সকল ধরনের সুন্দর ও নুতন আকার দিতে সাহায্য করে , মনে হয় যেন নকশা করা।

বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি কি? সকল জীববিজ্ঞানের বইয়ে বলা হয়েছে- এটা দুর্ঘটনাজনিত ‘ডিএনএ’র ভুল নকল বা প্রতিলিপি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী , এটা আসলে অবিশুদ্ধ ডাটা ( corrupted data ), যা মাঝে মাঝে ক্ষতি না করে , উপকার করে।

এখানেই ডারউইন ও জীববিজ্ঞানের বইগুলো ভুল করছে।

একজন প্রকৌশলীর দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এটা ১০০% ভুল। প্রকৌশলের এমন কোন বিভাগ নেই , যেখানে দেখানো সম্ভব অবিশুদ্ধ ডাটা ক্ষতির বদলে উপকার করে। এটা সব সময় ক্ষতিকারক। ভুল নকল বা ভুল ডাটা প্রেরন (data transmission) কখনোই সঙ্কেতকে (signal) কে সাহায্য করে না। তারা শুধু ক্ষতিই করে।

অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না। আমি বলছিনা যে বিবর্তন ঘটে নি বা ঘটবে না। এটাই বলতে চাচ্ছি যে , ডারউইন যেভাবে বলেছিলেন , ঠিক সেভাবে ঘটেনি। ভিন্নভাবে বিবর্তন ঘটেছে।

কিভাবে বিবর্তন ঘটেছে তা বিস্তারিতভাবে বলার আগে , বিক্ষিপ্ততা (randomness ) কিভাবে তথ্যকে জঞ্জাল (garbage) বানিয়ে ফেলে তার ব্যাখ্যা করা দরকার।

আমরা নিচের বাক্য দিয়ে শুরু করতে পারি।

“The quick brown fox jumped over the lazy dog”

এখন যদি আমরা বিক্ষিপ্ত বা এলোপাতাড়িভাবে এই বাক্যের বর্ণগুলো পরিবর্তন বা মিউটেট করি , তাহলে নিম্নের বাক্যগুলোর মতো দেখা যাবে।

The 6uHck brown fox jukped over the lazyHdog
Tze quick bro0n foL juXped over the lazy doF
Tae quick browY fox jumped oGer tgePlazy dog
The iuick brown fox jumped lver the lazy dog
The quiikQbKowSwfox .umped oveh the lazy dog

আপনি দুনিয়ার সকল প্রাকৃতিক নির্বাচন এর পরে প্রয়োগ করার পরেও একটি সুন্দর বাক্যকে ধ্বংশ ছাড়া কোন বোধগম্য বাক্য তৈরী করতে পারবেন না। www.RandomMutation.com এই ওয়েবসাইটে যেয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

এটা কেন কাজ করে না? কারন হলো , একেকবারে একটি বর্ণ পরিবর্তন করে একটি বাক্য তৈরি করা কখনৈ সম্ভব নয় , ইচ্ছাকৃত ভাবে চেষ্টা যদি করেন তবু ও।

প্রযুক্তিগতভাবে , এটা হয় কারন সকল বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) হলো গোলমেলে বা অতিরিক্ত শব্দ (noise) , যা সঙ্কেতকে (signal) ধ্বংশ করে। ক্লড শ্যানন এটাকে বলেছেন – তথ্য এন্ট্রপি। এন্ট্রপি কখনো বিপরিতমুখী হয় না। অতিরিক্ত শব্দ কখনৈ সঙ্কেতের উন্নতি করে না , বরং সঙ্কেতকে গোবর বানিয়ে ফেলে।

বিবর্তন সফল হওয়ার একটাই রাস্তা , আর তা হলো যদি বিবর্তন ভাষার নিয়ম অনুসরন করে।

সুতরাং.. সফল বিবর্তন ঘটলে বাক্যটি এমনটাই দেখাবে

The fast brown fox jumped over the slothful dog.
The dark brown fox jumped over the light brown dog.
The big brown fox leaped over the lazy dog.
The quick black fox sped past the sleeping dog.
The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man.

ইংরেজিতে সফল বিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বিশেষ্য ও ক্রিয়া পদের নির্ভুল প্রতিস্থাপন এবং ভাষার নিয়ম অনুসরন করা।

‘ডিএনএ’ ও এর ব্যাতিক্রম নয়। কারন ‘ডিএনএ’র নিজস্ব ভাষা আছে। ফ্যাক্ট হলো , হাজার হাজার ভাষাবিদ মানব জেনোম প্রজেক্টে জীনের ডিকোড বা অর্থোদ্ধারে সাহায্য করেছেন। ডজন ডজন ভাষার বইতে বর্ননা করা হয়েছে ‘ডিএনএ’ ও মানুষের মুখের ভাষার মধ্যেকার রহস্যজনক সাদৃশ্য নিয়ে।

পরের পর্বে নুতন বিবর্তনবাদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হবে।

Newsweek Magazine: “Was Darwin Wrong About Evolution?”
http://www.newsweek.com/id/180103

“Darwin: Brilliantly Half Right, Tragically Half Wrong”
http://www.cosmicfingerprints.com/blog/darwin-half-right/

“A 3rd Way” – James Shapiro’s 21st century view of evolution
http://shapiro.bsd.uchicago.edu/Shapiro.1997.BostonReview1997.ThirdWay.pdf


নুতন বিবর্তনবাদ –
“পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জীবের ডিএনএ’তে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) নয় বরং পরিকল্পিত বদল বা প্রতিকল্পন ঘটে থাকে।”
(There is a mutation algorithm in DNA that makes *intelligent*
substitutions when species need to adapt to their environment.)

গত পোস্টে একটি উদাহরন দিয়েছিলাম যেখানে –
“The quick brown fox jumped over the lazy dog”
সফল বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছিল নিম্নের বাক্যে-
“The hot blonde fox sauntered past the sunbathing man.”

এই সফল বাক্যটি পাওয়া গিয়েছিল পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ্য ও ক্রিয়া বদলের মাধ্যমে , যা বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণ বদলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়।

ডিএনএ’তে ও পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে , একই ভাবে ব্যাকরণের নিয়ম মেনেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কোন একটি নিওক্লেইক এসিডের পরিবর্তে পুরো একটি ডিএনএ অনুক্রমের (Transposon) পরিকল্পিত বদল ঘটে থাকে।

এটা নুতন কোন তথ্য ও নয় বা থিওরী ও নয়। এটাই ঘটনা ,ফ্যাক্ট।

এটা আসলে ৬০ বছরের ও বেশি পুরনো। যারা আগে শোনেন নি , তাদের কাছেই শুধু এটা নুতন ঘটনা।

জীববিজ্ঞানী বারবারা ম্যাকক্লিনটক ১৯৪৪ সালে এটা আবিস্কার করেন এবং এই আবিস্কারের জন্য ১৯৮৩ সালে নোবেল প্রাইজ পান। তার ছবি আমেরিকার ডাক টিকেটে ছাপা হয়েছে এবং তিনি ইতিহাসের এক অন্যতম জীববিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত।

তার এই আবিস্কার এতটাই র‌্যডিকেল ও ডারউইনের থিওরীর পরিপন্থী ছিল যে , বারবারা ম্যাকক্লিনটক তার এই আবিস্কার প্রচার না করে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তখনকার বৈজ্ঞানিক সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়েই তিনি এমনটি করেছিলেন।

কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন – জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না কেন?

ভাল প্রশ্ন।

শুধু এটুকুই বলা যায় – জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এগুলো পড়ানো হয় না , এর কারন এটা নয় যে এটার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় বা এমন ও নয় যে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে। আসলে বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির মডেল (random mutation) কাজ করে না। এখনো এমন কোন সত্যিকারের গবেষনা বা পরীক্ষার কথা কেউ বল্তে পারবে না , যার মাধ্যমে দেখানো সম্ভব বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি বিবর্তনকে চালনা করে।(কারো এমন কোন গবেষনার কথা জানা থাকলে , জানালে উপকৃত হব।) দুঃখের সাথে বল্তে হয় , বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তির থিওরী একটি শহুরে লৌকিক উপাখ্যান (যার সত্যতা নিরূপন দুরূহ) ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার কিছু তথ্য – 

পরিকল্পিত বিবর্তন যে উপায়ে ঘটে , ঠিক সেই উপায়েই আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) সম্পুর্ণ নুতন জীবাণুর (যার সাথে আগে কখনো মোলাকাত হয় নি) সাথে যুদ্ধের অস্ত্র (এন্টিবডি) তৈরির জ্ঞান অর্জন করে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন সংযুক্তির (combination) মাধ্যমে চেষ্টা করে আক্রমনকারী জীবাণুর কোড ভাঙ্গতে। যখনই এই কোড ভাঙ্গা সম্ভব হয় , তখন পরবর্তি প্রজন্মের কোষে (daughter cells.) ডিএনএ’র নুতন পুনর্বিন্যাসের তথ্য সরবরাহ করা হয়।

আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি ক্ষুদ্রাকার প্রতিরূপ বা মডেল।

চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জেমস্‌ শাপিরোর একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ আবিস্কারের কথা উল্লেখ না করলেই নয় –
“প্রোটোজোয়া পরিবেশের চাপে পড়লে নিজের ডিএনএ’কে কেটে প্রায় ১লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো করে ফেলে। অতঃপর পরিবেশের শত শত পরিবর্তনীয়কে (variables) ধর্তব্যে এনে ডিএনএ’কে এমনভাবে পুনঃসংযোজন করে , যাতে একটি নুতন আরো ভাল ও সক্ষম প্রোটোজোয়ায় বিবর্তিত বা বিকশিত হয়।”

ভাল করে আর একবার পড়ে এর গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করুন। প্রটোজোয়া নিজের ডিএনএ’কে নিজেই রিপ্রোগ্রাম করে বিবর্তিত হয়। গত পোস্টে অভিজিতের সাথে আমার বিতর্কের কথা মনে আছে? এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ও একি প্রকৃয়ায় ঘটে থাকে। আমাদেরকে ব্যাক্টেরিয়ার জনপুন্জে সুদুর ভবিষ্যত পর্যন্ত যত এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হবে , তার প্রত্যেকটির একটি/কয়েকটি করে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থীতি আগে থেকেই বিদ্যমান , এমন উদ্ভট দাবীতে আর বিশ্বাস না রাখলেও চলবে।

ভুল জানা?

 এপ্রিল 17, 2011

এতদিন জেনে এসেছি বিজ্ঞান সকল কিছুর বিজ্ঞাসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করে , এখানে বিশ্বাসের কোন স্থান নেই। কিন্তু…..

কয়েকদিন আগে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB) আবিষ্কারক দুজনের একজন , নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আর্নো পেন্জিয়াসের সাক্ষাৎকার পড়ে দ্বীধায় পড়ে গেলাম। তিনি বলেছেন-

“বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী ব্যাখ্যা ছাড়াই এই মহাবিশ্বের বর্ণনা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এবং বিজ্ঞান কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় না , শুধু বর্ণনাই দেয়।

এটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন – “কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল , ‘কোন এক কোম্পানির সকল সেক্রেটারিই মহিলা কেন’? আপনি উত্তরে বলতে পারেন , ‘কোম্পানির শুরু থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে।’ এটা ব্যাখ্যা না দিয়েই পার পাওয়ার একটি পন্থা।”

এটা পড়ে চিন্তা জাগল , আসলেই কি তাই? বিজ্ঞান কি কোনই ব্যাখ্যা দেয় না? মনে পড়ল নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার সেই বিখ্যাত গল্পটির কথা। যার ফলশ্রুতিতে আমরা থিওরী অফ গ্রাভিটি বা মহাকর্ষ সুত্রটি জানতে পেরেছি। এই সুত্র কি আপেল মাথায় কেন পড়ল বা মাথায় না পড়ে কেন আকাশে উড়ে গেল না , তার ব্যাখ্যা নয় কি? যতই চিন্তা করি ততই মাথা গুলিয়ে যায়। দুটি মহাজাগতিক বস্তু পরস্পরকে আকর্শন করে , এটা তো বর্ণনা। নিউটনের আগেও আপেল মাথায় পড়ত এবং এখনো পড়ে। সকলেই দৈনন্দিন জীবণে এটা দেখছে।

কেন আপেল মাথায় পড়ে? কেন দুটি মহাজাগতিক বস্তু পরস্পরকে আকর্শন করে বা আকর্ষন না করে কেন পরস্পরকে বিকর্শন করে না? এর জবাব কি নিউটন বা অন্য কোন বিজ্ঞানী দিয়েছেন? নিউটনের সুত্র থেকে জানতে পারি আকর্শনের পরিমানটা নির্ভুলভাবে। ব্যাখ্যাটা কি জানতে পারি?

ভাবনা

 জুন 1, 2011


কি নিয়ে এত ভাবছেন? এত পেরেশানি , এত চিন্তা – সবি বৃথা। জানেন না , কুয়ান্টাম ফিজিক্স আপনার অস্তিত্বকেই নাই করে দিয়েছে। আপনার কোন চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার জন্য আপনার কোন শরীর বা মন বা জীবণ নেই। সকলি মায়া। চিন্তা নেই , কারন চিন্তা করার মানুষ নেই। যদি ভেবে থাকেন পাগলের প্রলাপ বকছি , তাহলে এই শতাব্দির অনেক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক , দার্শনিক ও কিছু ধার্মিক আপনাকেই পাগল ভাববে। মানুষের কোন অস্তিত্বই নেই , আধুনিক বিজ্ঞান ও গণিত এমনটিই প্রস্তাব করছে বা সম্ভাবনার কথা বলছে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান ও কুয়ান্টাম মেকানিক্সের যত অগ্রগতি হচ্ছে , ততই এটা পরিস্কার হয়ে উঠছে যে মানুষ হিসাবে আমাদের অস্তিত্ব একপ্রকার মায়া ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা ভেবে থাকি আমরা মানুষ , আমাদের শরীর আছে , ব্রেণ আছে যা দিয়ে চিন্তা করি। ভুল , এই ভাবনাটাই ভুল। আমরা কেউ নই। আমরা একেকজন বহুসংখ্যক মৌলিক পদার্থের অনু, পরমানু ও অন্যান্য আন্তঃআনবিক কণিকার সমষ্টি। আমাদের কল্পনাতেই শুধুমাত্র শরীর ব্রেণ ও মনের অবস্থান।

মায়া – এর সবটুকুই মায়া। এই শতাব্দির বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অথার এডিংটন কুয়ান্টাম থিওরি সম্পর্কে বলেছেন : পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে …. আমার কনুইয়ের ছায়া একটি টেবিলের ছায়ার উপরে সেভাবেই ঠেক দিয়ে থাকে , যেভাবে কাগজের ছায়ার উপরে কালির ছায়া গড়িয়ে যায়….. বাস্তবতা হলো , পদার্থবিজ্ঞান যতই উন্নতি করছে , ততই ছায়ার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ছায়া বলতে অথার এডিংটন মায়া বা illusionকেই বুঝিয়েছেন। বিজ্ঞানের অনেক শাখা থাকলেও কণিকা বিজ্ঞান বা পার্টিকেল ফিজিক্স বাস্তবতার মৌলিক ধারনায় আঘাত করেছে এবং যত বেশি সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যাচ্ছে , ততই ‘বাস্তবতা বলে কিছু নেই’ এমনটাই মনে হচ্ছে। গত ৩০০ বছর ধরে বিজ্ঞান এমনটাই ধারনা করে এসেছে যে , সকল বস্তু ‘পরমানূ’ বা ‘এটম’ দ্বারা গঠিত। স্যার আইজাক নিউটন এই ধারনাকে আরো মজবুত করেছেন পরমানূকে বিলিয়ার্ড বলের সাথে তুলনা করে। যথেষ্ঠ সংখ্যক এই বল একটার পরে একটা রেখে একজায়গায় জড়ো করুন এবং তারপরে গুতো দিয়ে বলগুলোকে গড়িয়ে দিন। আপনি পাবেন পাথর , গাছপালা , জীবজন্তু ও মানুষ। তবে ১৯০০ সালে আইন্সটাইনের হিরো , প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক শক্তির রেডিয়েশন নিয়ে গবেষনা করার সময় কিছু অস্বস্তিকর আবিস্কার করে বসেন। সংক্ষেপে- মৌলিক লেভেলে বস্তু কঠিন/শক্ত (solid) নয় বা লাগাতার (continuous) ও নয়। কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিলিয়ার্ড বল ও নয়। একটি পরমানূকে ভাঙলে আপনি পাবেন এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন , প্রটন এবং হয়তো বা নিউট্রন। এখন আমরা জানি এখানেই শেষ নয় , এগুলোকে ভেঙ্গে আপনি পেতে পারেন বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ , যেগুলো এই আছে তো এই নেই। চোখের পলকে এগুলো আবির্ভুত হচ্ছে আবার অদৃশ্য ও হচ্ছে।

এই ছায়া কণিকা যখন অদৃশ্য হয় , তখন কোথায় যায়? কোথাও যায় না , এদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। আবার পরক্ষনেই এরা আবির্ভূত হয়। তাতে কী? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। তাতে কিছু না , তবে কিনা আমাদের মানুষের শরীর এই সকল মৌলিক ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। তাই একটু চিন্তা হয় বৈ কি। আমাদের বেশিরভাগই পানি , আর রক্তে আছে কিছু লোহা , হাড়ে ক্যালসিয়াম ও কম বেশি অন্যান্য মৌলিক উপাদান। এই সকল উপাদানের প্রত্যেকটিই পরমানূ দিয়ে তৈরি। পরমানূগুলো আবার ভুতুড়ে ছায়া কণিকা দিয়ে তৈরি। এই আছে তো এই নেই। একমুহুর্তে বাস্তব তো পরমুহুর্তে অবাস্তব। বিজ্ঞানীরা বাস্তব ও অবাস্তবের মধ্যকার মুহুর্মুহ এই অবস্থানের পরিবর্তনকে নাম দিয়েছেন – “quantum fluctuation”. ছায়া কণিকাগুলোর দোদুল্যমানতার সাথে সাথে আপনার শরীর দোদুল্যমান হয় , সেই সাথে আপনি। আপনার ব্রেণ ও ব্রেনের ভিতরের রাসায়নিক কণিকাগুলো ও ফ্লাকচুয়েট করে। ফ্যাক্ট হলো হয়তো বা এই মুহুর্তে আপনি ‘কিছুই না'(nothingness) , তো পরক্ষনেই ‘কিছু’ একটা(somethingness)। 

এমনকি সবচেয়ে কঠিন শক্ত পদার্থের পরমানূ ও কঠিন নয়। পরমানূর ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগই হলো শুন্য স্পেস। আমরা যদি একটি পরমানূর নিউক্লিয়াসকে পিং পং বলের সমান কল্পনা করি এবং এটাকে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের কেন্দ্রে তথা মাঝখানে রাখি , তাহলে যে ইলেক্ট্রনটি এই নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘোরে , সেটার অবস্থান স্টেডিয়ামের বাইরের দেয়াল বরাবর। নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রনের মাঝে কী আছে? কিছুই না , শুন্য স্পেস। এই নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রন কী দিয়ে তৈরী? এগুলো আরো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা বোসন , কুয়ার্ক , টাখিওন এবং আরো বহু ‘ছায়া কণিকা’ দ্বারা গঠিত। এগুলো কঠিন , তরল নাকি বায়বীয়? সেটা জানা না গেলেও ধারনা করা হয় এগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি , যেটাকে স্ট্রীং বা তারের ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সির ধ্বণির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। তাহলে বুঝলাম একটি সোনার বার বা আপনার বাড়ি বা আপনি নিজে আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি/ধ্বণির সমষ্টি এবং ৯৯.৯৯৯৯৯ ভাগ শুন্য স্পেস ছাড়া আর কিছুই না। 

বুঝলাম সবি মায়া , শুন্য। এখন আমি যদি আপনাকে একটা কষে চড় মারি , তাহলে আপনি তো ব্যাথা পাবেন , নাকি এটাও মায়া? 

এটার উত্তর জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে মায়া কিভাবে কাজ করে। মায়া কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে গোডেলের অসম্পুর্ন থিওরেম( Incompleteness Theorm) , হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সুত্র (Heisenbreg Uncertainty principle) জানা লাগবে। এছাড়াও জানা লাগবে মানুষের ভাষা ও বিতর্ক কিভাবে মায়ার অংশ হয়ে আমাদেরকে মায়ার আরো গভিরে ঠেলে দিয়েছে। পাঠক আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে লিখতেও পারি।

সুত্র- অপরিচিত এক কলাম লেখকের লেখা অবলম্বনে।

বিস্ময়কর এই মহাবিশ্ব হলোগ্রাম/ছায়া/মায়া ছাড়া আর কিছু নয়

 জানুয়ারী 28, 2011


১৯৮২ সালে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল পদার্থবিদ এলেন এসপেক্টের নেতৃত্বে এক পরীক্ষা চালান , যা বিংশ শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ গবেষনাগুলোর একটি বলে ধারনা করা যেতে পারে। বাস্তবে যারা সচরাচর বৈজ্ঞানিক জার্নাল পড়েন না , তাদের এলেন এসপেক্টের নাম জানার কথা নয়। কিছু লোকের ধারনা , এলেন এসপেক্টের আবিস্কার , মহাবিশ্ব সম্পর্কে এপর্যন্ত বিজ্ঞানীদের অর্জিত সকল জ্ঞানকে আমূল পাল্টে দেবে।

এসপেক্ট ও তার দলের আবিস্কারটা হলো – নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে সাব-এটমিক পার্টিকেল , যেমন ইলেক্ট্রন একে অন্যের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করে/রাখে , তা একে অন্যের থেকে যত দুরে বা নিকটে থাকুক না কেন। দুরত্ব এখানে কোন সমস্যা নয় , তা একে অন্যের থেকে ১০ ফুট দুরেই থাকুক বা ১০ হাজার কোটি মাইল দুরেই থাকুক।

কোন না কোনভাবে প্রতিটি পার্টিকেল বা কণিকা জানে অন্যগুলো কি করছে। একটাই সমস্যা , এসপেক্ট ও তার দলের আবিস্কারটা , কোন যোগাযোগ আলোর গতির বেশি হতে পারেনা , আইনস্টাইনের এই মতবাদ/বিশ্বাস্বের পরিপন্থি। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য , প্রচলিত ধারনা বহির্ভূত কিছু মৌলিক ব্যাখ্যা এসেছে। এমনি এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ডেভিড বোহম। বোহমের মতে এস্পেক্টের আবিস্কার এটাই ইঙ্গিত করে যে , বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার (objective reality) কোন অস্তিত্ব নেই। আমাদের এই মহাবিশ্ব এক ছায়া/মায়া মাত্র , এক অতিকায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজানো চমৎকার ত্রিমাতৃক (3-D) ছবি বা হলোগ্রাম।

বোহম কি বলতে চাচ্ছেন , তা বুঝতে হলে , আমাদের হলোগ্রাম সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনা থাকা দরকার। হলোগ্রাম হলো লেজার রশ্মির সাহায্যে তোলা ত্রিমাতৃক ছবি। যে বস্তুর ছবি তোলা হবে , তার উপরে একটি লেজার রশ্মি ফেলে প্রতিফলিত করা হয়। ঐ প্রতিফলিত রশ্মির উপরে দ্বিতীয় একটি লেজার রশ্মি ফেলা হয়। এই দুই রশ্মির মিলিত প্যাটার্নকে (the area where the two laser beams commingle) একটি ফিল্মে ধারন করা হয়। তারপরে ঐ ফিল্মকে ডেভেলপ করা হয়। ডেভেলপ করা ঐ ফিল্মের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠালেই কেবল ত্রিমাতৃক ছবি দেখা যায়। ত্রিমাতৃকতাই কেবল হলোগ্রামের বৈশিষ্ঠ নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ হলো , হলোগ্রামের প্রতিটি বিন্দুই সম্পুর্ন বস্তুর ছবি ধারন করে। যদি গোলাপ ফুলের একটি হলোগ্রামকে কেটে দুভাগ করা হয় এবং যে কোন একাংশের ভিতর দিয়ে লেজার রশ্মি পাঠানো হয় , তাহলে অর্ধেক ফুল নয় , পুরো গোলাপ ফুলটার ত্রিমাতৃক ছবি দেখা যাবে , যা আয়তনে অর্ধেক। যত খুশি হলোগ্রামকে কেটে ছোট করুন না কেন , প্রতিটি অংশই আয়তনে ছোট কিন্তু পুরো ফুলটির ছবি দেখাবে।

‘প্রতিটি অংশে সম্পুর্ন’ (“whole in every part) হলোগ্রামের এই প্রকৃতি , আমাদের সামনে চিন্তার এক নুতন দুয়ার খুলে দিয়েছে। পশ্চিমা বিজ্ঞান আমাদের এতদিন এই শিক্ষা দিয়েছে যে , কোন জিনিষকে , তা একটি ব্যাঙ হোক বা অনুই হোক , ভালভাবে জানতে বা বুঝতে হলে , তাকে কেটে ছোট করে প্রতিটি অংশের গুনাবলি বিশ্লেষন করাই সর্বোত্তম পন্থা। হলোগ্রাম আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে , এই মহাবিশ্বে এমন ও কিছু আছে , যাকে কেটে ছোট করে বিশ্লেষন করা সম্ভব নয়। যদি কোনকিছু হলোগ্রামের মতো করে তৈরি হয়ে থাকে , তবে আমরা কখনৈ জানব না এটা কি দিয়ে তৈরি। কারন আমরা একে যতই ভাগ করি না কেন , আমরা পাব আয়তনে ছোট কিন্তু পুরাটাই (smaller wholes)।

হলোগ্রামের এই বৈশিষ্ঠই বোহমকে সাহায্য করেছে এস্পেক্টের আবিস্কারের নুতন ব্যাখ্যা দিতে। বোহমের মতে , সাব-এটমিক কণিকাগুলো একে অন্যের সাথে কোন রহস্যজনক তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে না , বরং তাদের মধ্যেকার দুরত্বটা এক মায়া। এই
সাব-এটমিক কণিকাগুলোর আলাদা আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই , এরা সকলেই মৌলিক কোন একটি জিনিষের সম্প্রসারন বা সংযোজিত অংশ।

বোহম ঠিক কি বলতে চেয়েছেন , সেটা বোঝানোর জন্য নিম্নের উপমা বর্ননা করেছেন-

একটি মাছ ভর্তি এক্যুয়ারিয়াম কল্পনা করুন , যেটা আপনি সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন না। মাছ ও এক্যুয়ারিয়ামটির ছবি দুটি ভিডিও ক্যামেরা , যার একটি এক্যুয়ারিয়ামের সামনে থেকে ও আরেকটি একপাশ থেকে তুলে টেলিভিশনের পর্দায় পাঠাচ্ছে। আপনি একটি টেলিভিশনের পর্দায় সামনে থেকে তোলা ও আরেকটিতে একপাশ থেকে তোলা ছবি যুগপথ দেখছেন। যেহেতু ভিন্ন কোন(angle) থেকে ছবি তোলা হচ্ছে , সেকারনে আপনার কাছে মনে হবে দুই পর্দায় দেখতে পাওয়া মাছটি একি মাছ নয় , দুটি ভিন্ন মাছ। আপনি যতই মাছ দুটি দেখতে থাকবেন , ততই আপনার কাছে প্রতীয়মান হবে যে মাছ দুটির মাঝে নিশ্চিত একটি সম্পর্ক আছে। কারন যখন একটি মাছ ঘুরবে বা পাশ ফিরবে , তখন অন্যটি ও নিশ্চিতভাবেই কিছুটা ভিন্নভাবে হলেও ঘুরবে বা পাশ ফিরবে। একটিতে যদি মাছটি আপনার দিকে মুখ করে থাকে , অন্যটাতে আপনার দিকে পাশ ফিরে থাকবে। আপনার যদি এই পুরা সেটআপ সম্মন্ধে জানা না থাকে , তাহলে আপনার মনে হবে , মাছ দুটি একে অন্যের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছে , যা আদৌ সত্য নয়। কারন এখানে দুটি নয় , একটিই মাছ আপনি দেখছেন।

বোহম বলছেন , ঠিক এভাবেই এস্পেক্টের গবেষনায় পাওয়া সাব-এটমিক পার্টিকেলগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে , দুরত্ব যেখানে কোন বাধায় নয়। বোহমের মতে আপাতদৃষ্টে আলোর চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন সাব-এটমিক কণিকাগুলোর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এটাই ইঙ্গিত করে যে , বাস্তবতার আরো গভিরতর লেভেলে অনেক জটিল মাত্রা (dimension) আছে , যা আমাদের পঞ্চেন্দ্রীয় দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন , আমরা সাব-এটমিক কণিকাগুলোকে একে অন্যের থেকে পৃথক ভাবি , কারন আমরা তাদের বাস্তবতার একটি অংশই কেবল দেখতে পাই।

বোহমের মতে এই কনিকাগুলোর স্বতন্ত্র কোন অস্তিত্ব নেই , এরা বৃহৎ কোন এককের এক একটি অংশ , হলোগ্রাফিক গোলাপের মতোই অবিভাজ্য। যেহেতু আমাদের এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই এই জাদুর কণিকা দিয়ে তৈরি , সেকারনে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি , এই মহাবিশ্ব হলোগ্রাম/ছায়া/মায়া ছাড়া আর কিছু নয়।

মহাবিশ্বের এই ছায়াপ্রকৃতি আরো অনেক অভূতপূর্ব বৈশিষ্ঠের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কণিকাগুলোর এই আপাতদৃষ্টে ভিন্ন অবস্থান যদি মায়া হয় , এর অর্থ দাড়ায় বাস্তবতার আরো গভিরতর লেভেলে কণিকাগুলো একে অন্যের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত। মানুষের ব্রেনের একটি কার্বন অনুর ইলেক্ট্রন , সাতরে বেড়ানো সকল সালমান মাছের ব্রেনের বা সকল জীবিত প্রাণীর বা আকাশে যত তারা আছে , তাদের প্রত্যেকের সাব-এটমিক কণিকার সাথে যোগাযোগ রক্ষার মধ্য দিয়ে জড়িত। এই মহাবিশ্বের সকলকিছুই একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত , এরা একটি তারবিহীন জালের অংশ। এদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ঠ খোজা অর্থহীন।

এই হলোগ্রাম বা ছায়া বিশ্বে সময় ও স্থান বা স্পেস বলে কিছু নেই। কারন মহাবিশ্বের কোনকিছুই যখন কোনকিছুর থেকে পৃথক নয় , তখন অবস্থানের ধারনাই বাতিল হয়ে যায়। একারনেই মনে হয় স্পেসকে মহাশুন্য বলে।

গভিরতর লেভেলে বাস্তবতা হলো একটি সুপার হলোগ্রাম , যেখানে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত একসাথে অবস্থান করে। ধারনা করতে দোষ নেই , ভবিষ্যতে সঠিক প্রযুক্তির উদ্ভব হলে , সুপার হলোগ্রাম লেভেলের বাস্তবতায় যেয়ে সুদুর অতীতের ভুলে যাওয়া কোন দৃশ্য তুলে এনে সকলের সামনে দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে। তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব এই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল , মানুষ কিভাবে ধাপে ধাপে জীবের বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল , কোন বিতর্ক বা অবিশ্বাসের অবকাশ আর থাকবে না।

বোহম-ই একমাত্র গবেষক নন যিনি ‘আমাদের এই মহাবিশ্ব যে একটা হলোগ্রাম’ তার স্বপক্ষে যুক্তি প্রমান হাজির করার চেষ্টা করেছেন। ব্রেন নিয়ে গবেষনা করতে যেয়ে স্টানফোর্ড নেউরোফিজিওলোজিস্ট কার্ল পিরিব্রাম স্বাধীনভাবে এই হলোগ্রাম লেভেলের বাস্তবতার মুখোমুখি হন। ব্রেনের ঠিক কোন অংশে স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে , এটার গবেষনা করতে যেয়ে গবেষকগণ আশ্চর্য হয়ে দেখেন ব্রেনের কোন একটি বিশেষ অংশে স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে না , বরং সম্পুর্ণ ব্রেনটাতেই স্মৃতি ছড়িয়ে থাকে। ১৯২০ সালে ব্রেন বিজ্ঞানী কার্ল ল্যাশলী দেখেন যে , ইদুরের ব্রেনের যে কোন অংশই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন না কেন , ইদুরটি অস্ত্রোপচারের পূর্বে শেখানো জটিল কিছু কাজের অভ্যাস ভুলছে না। সমস্যা দেখা দিল ব্রেনের ‘প্রতিটি অংশে সম্পুর্ন’ স্মৃতি সংরক্ষনের এই বিষয়টি ব্যাখ্যা সে সময়ে কারো জানা ছিল না।

১৯৬০ সালে কার্ল পিরিব্রাম হলোগ্রামের ধারনার সাথে পরিচিত হয়ে উপলব্ধি করলেন, ব্রেন বিজ্ঞানীরা এতদিন যে সমস্যার জবাব খুজে পাচ্ছিলেন না , তার জবাব লুকিয়ে আছে হলোগ্রামের ভিতরে , অর্থাৎ পুরো ব্রেনটাই একটা হলোগ্রাম। পুরো ব্রেন কিভাবে স্মৃতি সংরক্ষন করে তা লিখে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়ে এটুকু বলা যায় যে , আমাদের পঞ্চেন্দ্রীয় বাহ্যিক বাস্তবতার যে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল পাঠায় , তা আমাদের ব্রেন যাচাই বাছাই করে একটি প্যাটার্ন হিসাবে সমগ্র ব্রেনে সংরক্ষিত রাখে , গোলাপফুলের যে হলোগ্রামের কথা লিখেছিলাম গত পর্বে , সেটার মতো। আমরা সহ আমাদের চারিপাশের এই মহাবিশ্বের বাস্তবতা আমাদের ব্রেনে ধারনকৃত ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল ছাড়া আর কিছু নয় এবং এরা সকলেই একে অন্যের সাথে সবসময় কোন না কোন ভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে। এর ভিতরেই হয়তোবা প্যারানর্মাল কার্যকলাপ বা কোইন্সিডেন্সের (আকস্মিক যোগাযোগ বা ঘটনা) রহস্য লুকিয়ে আছে।

যারা আরো বিস্তারিত জানতে চান , তারা মাইকেল ট্যালবটের Spirituality and Science: The Holographic Universe পড়ে দেখতে পারেন।


Sunday, September 18, 2022

কে মুসলমান?

 নবী মুহাম্মাদের অনুসারীরাই শুধু  মুসলমান নয়! বরং কোরানের বাণী অনুযায়ী কিছু জ্বীন, ইব্রাহিম, ইয়াকুব, ইসরাঈলের গোত্র, ইউসুফ, ফেরাউনের জাদুকর, ঈসা, নূহ ও লূতের শিষ্য- তারাও প্রকৃত মুসলমান।

 আর যখন ফেরাউন সাগর বিদীর্ণ হতে দেখে সেও মুসলমান হয়ে গেল। ঐতিহাসিকভাবে বলতে গেলে, তাদের কেউই মুহাম্মাদকে অনুসরণ করতে পারেনি। পরিবর্তে, তারা অন্যান্য রসূলদের অনুসরণ করেছিল: উদাহরণ স্বরূপ, শিষ্যরা ঈসাকে অনুসরণ করেছিল এবং ফেরাউনের যাদুকররা মূসাকে অনুসরণ করেছিল। যদি আমরা অনুমান করতে থাকি যে , শাহাদা হল আল-ইসলামের প্রথম স্তম্ভ এবং মুসলমান হওয়ার চূড়ান্ত মাপকাঠি, তাহলে আমাদের এদের সকলকে মুসলমান বলে অস্বীকার করতে হবে। কারন শাহাদা দাবি করে যে , একজনকে অবশ্যই মুহাম্মাদকে আল্লাহর রসূল হিসাবে সাক্ষ্য দিয়ে তাকে অনুসরণ করতে হবে। শুধু যে ফেরাউন মূসাকে অনুসরণ করে আল-ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল তা নয় , বরং ঈসার শিষ্যরা নবী ঈসাকে অনুসরণ করে আল-ইসলামকে মেনে চলেছিল। আমরা তাদের আল-ইসলামের আনুগত্যকে অস্বীকার করব এই কারণে যে তারা মুহাম্মাদকে অনুসরণ করেনি , তা তো হতে পারে না। সকল প্রাক-ইসলামী নবী, তাদের পরিবার এবং গোত্র, এদের সকলের পক্ষে  মুহাম্মদকে চিনতে পারা সম্ভব ছিল না , কারন এরা সকলেই মুহাম্মদের জন্মের পূর্বেই এই পৃথিবীতে বাস করেছিল। এদের সকলের আল-ইসলামের প্রতি দৃঢ় আনুগত্য কোরানে প্রত্যয়িত। আমরা বলতে পারি না যে  তারা মুসলমান ছিল না , কারণ তারা কখনো রমজান মাসে রোজা রাখেনি এবং কখনো মক্কায় তীর্থযাত্রা করেনি। 


৭২:১৪ আমাদের (জ্বীন) কিছুসংখ্যক মুসলমান ( الْمُسْلِمُونَ )এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে।


৩:৫২ অতঃপর ঈসা যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেন, তখন বললেন, কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বললো, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলমান (مُسْلِمُونَ)।


৩:৬৭ ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, কিক্তু তিনি ছিলেন ‘হানীফ’  মুসলমান (مُّسْلِمًا), এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।


২:১৩২ এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান (مُّسْلِمُونَ ) না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।


১২:১০১ হে পালনকর্তা আপনি আমাকে (ইউসুফ) রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাৎপর্য সহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহী ইহকাল ও পরকালে। আমাকে মুসলমান (مُسْلِمًا ) হিসাবে মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে সৎকর্মীদের সাথে মিলিত করুন।


৭:১২৬ বস্তুতঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে (ফেরাউনের জাদুকররা) মুসলমান (مُسْلِمِينَ ) হিসাবে মৃত্যু দান কর।


১০:৯০ আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ) থেকে।


১০:৭২ তারপরও যদি বিমুখতা অবলম্বন কর, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন রকম বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় হল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি (নুহ) মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ )হই।


৫১:৩৬ (লুতের কওম) এবং সেখানে একটি গৃহ ব্যতীত কোন মুসলমান (الْمُسْلِمِينَ )আমি পাইনি।

কোরানের বুঝ

 আল্লাহর কিতাব কোরান মানব ইতিহাসকে দুটি ঐতিহাসিক যুগে ভাগ করার শিক্ষা দেয়। প্রথম যুগ নবী এবং রাসুলদের সময়, যা রাসুলের (মুহাম্মদের) মিশনের সাথে শেষ হয়েছে। রাসুলের মৃত্যুর পর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় যুগ এবং সেই যুগে আমরা এখনও বেঁচে আছি। এই দ্বিতীয় যুগে মানবজাতির আর নবী ও রসূলের প্রয়োজন নেই কারণ মানুষ এমন পরিমাণে পরিপক্ক ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে যে, মহাবিশ্বের আইনের অন্বেষণ করতে পারে।  মানবাধিকারের সৃষ্টি, দাসত্বের বিলুপ্তি এবং নারীর মুক্তির কথা চিন্তা করুন, এগুলো এই  ইঙ্গিত দেয় যে মানব জাতি সভ্যতার একটি নতুন স্তরে পৌঁছেছে।


ঠিক যেইভাবে সপ্তম শতাব্দীর লোকেরা তাদের সমসাময়িক জ্ঞানের সাহায্যে  আল্লাহর বইটি বুঝেছিল , তেমনই  একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অবশ্যই  এখনকার জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর কিতাব কোরান  বুঝতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে পাঠকের পক্ষে একা একাই পাঠ্যটি পড়ার মাধ্যমে কোরানের  বক্তব্য জানা ও বোঝা সম্ভব। যাইহোক, ভাষার সীমাবদ্ধতা ও  (৩:৭) আয়াত অনুযায়ী কোনও পাঠক কোরানের পাঠ্যটি সম্পূর্ণরূপে বোঝার দাবি করতে পারেন না।  মানুষের ঐশীজ্ঞান আংশিক, সীমিত, এবং আপেক্ষিক। কারণ মানব পাঠক সর্বদা যে সময়ে সে বসবাস করে , সেই সময় এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়। শেষ ঘন্টার (কেয়ামত) আগমন না হওয়া পর্যন্ত কোরানের বুঝের পরিবর্তন হতেই থাকবে।

ইসলামে পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠান (ritual)


ইসলামে উপাসনার ধারণা অন্যান্য ধর্ম থেকে আলাদা। ইসলাম আমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মানতে এবং  নামাজ সহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও রোবটের মতো আচার-অনুষ্ঠান অনুশীলন করার পরিবর্তে অন্যের কল্যাণের জন্য নিয়মিতভাবে চেষ্টা করার আহ্বান জানায়। আমরা বিশ্বের প্রথম মুসলিম নই , সকল নবী এবং তাদের প্রকৃত অনুসারীরাও মুসলিম ছিলেন।


কুরআনের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে পার্শি ঈমামরা ইসলামে পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অনুগ্রহ করে কুরআনের নিম্নোক্ত ৫:২ আয়াতটি দেখুন , যেখানে আল্লাহ আমাদেরকে বাইত আল-হারামে (কাবা) আচার অনুষ্ঠান এবং পশু কোরবানি করা থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন কিন্তু একই আয়াত ৫:২ এর বিকৃত অনুবাদে আমাদের পণ্ডিতরা সমস্ত আচার এবং পশু কোরবানির অনুমতি দিয়েছেন।


{৫:২ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا ۚ

হে বিশ্বাসীগণ , হালাল কর না (لَا تُحِلُّوا )আল্লাহর জন্য আচার-অনুষ্ঠান (শায়ায়ের)  এবং নিষিদ্ধ কাল পাথর (শাহরা আল-হারাম) এবং উপহার/কুরবানির পশু (হাদিয়া)এবং  কালায়েদ এবং নিষিদ্ধ ঘরের (বাইত আল-হারাম) রক্ষক/তত্ত্বাবধায়ক হবেন না , তাদের রবের ফজিলত ও সন্তুষ্টির লাভের জন্য।}


‎لَا تُحِلُّوا মানে- হালাল কর না।  অর্থাৎ হারাম জিনিষকে হালাল কর না। 


কোনগুলো হারাম?


‎شَعَائِرَ اللَّهِ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাফেররা যে সকল আচার অনুষ্ঠান বা রিচুয়াল করত তাকে বলা হয় 'শায়ায়ের আল্লাহ'। সাফা মারওয়ার মাঝে হাজিরা যে দৌড়াদৌড়ি করে তা  এমনি এক শায়ায়ের। দেখুন ২:১৫৮-  إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّ নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহর শায়ায়ের থেকে। এই ধরনের শায়ায়েরকে হালাল করতে নিষেধ করা হয়েছে এই আয়াতে। 


‎الشَّهْرَ الْحَرَامَ কাফেররা যাকে আমরা কাল পাথর বা হাজরে আসওয়াদ বলে জানি তাকে শাহর বলত ও চুমু খেত , যেমনটি আমাদের হাজি সাহেবরা করে থাকেন। এই একই কালো পাথরটি  আয়াত ৭১:২৩ এ উল্লেখ করা হয়েছে , যা একটি কালো পাথর ছিল এবং নবী নূহের এর সময় উপাসনা করা হত। এটিকে সংস্কৃতে শিব বলা হয় এবং সেমেটিক ভাষাগুলোতে যেমন হিব্রু, আরামাইক, সিরিয়ায়িকে 'শাহর' বলা হয়। আরবি কুরআন মজীদে এই কালো পাথরকে  শাহর আল- হারাম বলা হয়েছে  , যাকে হালাল করতে নিষেধ করা হয়েছে এই আয়াতে। 


আল-হারাম মানে নিষিদ্ধ , যা হালালের বিপরিত। কিন্তু ঈমামরা হারামের মানে করেছে পবিত্র। এরই ধারাবাহিকতায় নিষিদ্ধ কাল পাথরকে বানিয়েছে পবিত্র কাল পাথর , আর আলবাইত আল-হারাম/ নিষিদ্ধ ঘরকে বানিয়েছে পবিত্র ঘর/কাবা। 


‎الْهَدْيَ আল হাদিয়া মানে উপহার। কাফেররা উপহার হিসাবে কাবায় বলী দেয়ার জন্য পশু নিয়ে যেত , যাকে হালাল না করতে বলা হয়েছে এই আয়াতে। কোরানে কুরবানি বলে কোন শব্দ না থাকলেও হাজিরা হাদিয়ার নামে কাবায় পশু কুরবানি দেয় পার্শি ঈমামদের নির্দেশে। 


‎الْقَلَائِدَ আল-কালায়েদ ও তাকলিদের মূলে একই আরবি শব্দ , যার মানে- এই আয়াতে কাফেরদের প্যগান রীতিনীতির /রিচুয়ালের অনুসরন না করতে বলা হয়েছে। আরবিয় ডিকশনারি অনুযায়ী কোন ব্যক্তির কথা বিনা প্রমাণে মানার নাম তাকলিদ। এই আয়াতে তাকলিদ করতে নিষেধ করা হয়েছে। 


কোরানে সকল ধরনের রিচুয়াল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের পার্শি ঈমামরা ৫:২ আয়াতের বিকৃত অনুবাদের মাধ্যমে রিচুয়ালকে শুধু হালালই করেননি , এই সকল রিচুয়ালকেই ধর্মের ভিত্তি বানিয়েছে। এগুলোকেই ইবাদত নাম দিয়ে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশ তথা কোরানে বর্নীত বিধানগুলো থেকে শুধু দুরে সরিয়েই নেয় নি , কোরান অজ্ঞ করে রেখেছে।

NO ritual , no shirk.

 ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নেই তো শির্ক নেই। 

সৌজন্যে - আফজাল সাইয়েদ। 


বর্তমানের মুসলমান দাবীদাররা যে সকল আচার অনুষ্ঠান ধর্মের নামে পালন করে , যথা কালেমা , নামাজ , রোজা , হজ্জ , যাকাত , খাতনা , মিলাদ ইত্যাদি , সবই শির্ক। এগুলো পৌত্তলিক ধর্মের বিভিন্ন  আচার অনুষ্ঠানের সংশোধিত ভিন্ন রূপ। 


কোরানে বর্নীত ইসলামের ভিত্তি হল এক আল্লাহতে বিশ্বাস , পরকালে বিশ্বাস ও সৎ কাজ। ধর্মীয় রিচুয়াল সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বা এগুলোর কোন বর্ননা কোরানে নেই।

Wednesday, May 25, 2022

চিন্তার খোরাক


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


প্রথমে, আমি আপনাদের  নজরে আনতে চাই কোরানের আয়াতের বাংলা অনুবাদের নিম্নলিখিত স্পষ্ট অসঙ্গতি:


৫:৯০ হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা (আনসাব الْأَنصَابُ ) এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, তাঁর (শয়তানের) থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।


আরবি শব্দ "আনসাব" أنصاب এর অনুবাদ হিসেবে "প্রতিমা" শব্দটি বেছে নেওয়া হয়েছে। এই শব্দটি আসলে "নাসাব نصب"  এর বহুবচন, যার সহজ অর্থ হল: এমন কিছু যা নির্মিত  ও খাড়া করে স্থাপন করা হয়েছে (যেমন একটি স্মৃতিস্তম্ভ/সৌধ/পূজার বা বলীর বেদি)। অবশ্যই "পবিত্র" অংশটি বোধগম্য, কারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের কাঠামোকে "পবিত্র" করার প্রবণতা রয়েছে যা তারা নিজের হাতে তৈরি করে।


আরেকটি আয়াত যেখানে এই নাসাব শব্দটি থেকে উদ্ভুত 'নুসিবাত' দেখা যাচ্ছে তা হল:


৮৮:১৭-১৯ তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন (নুসিবাত نُصِبَتْ)   করা হয়েছে?


"স্থাপন" শব্দটি আরবি "নুসিবাত" نصبت এর অনুবাদ করা হয়েছে যা একই মূল

‎ "ن ص ب" থেকে স্পষ্টত উদ্ভুত। এই আয়াতটির আরও সঠিক অনুবাদ , যা এটিকে ৫:৯০ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে, এইরকম হবে: {এবং পাহাড়ের দিকে, কীভাবে তাদের খাড়া করা হয়েছিল} এটি দেখায় যে কীভাবে আল্লাহ একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নিজেই পাহাড়গুলিকে খাড়া করেছিলেন। 


অন্যত্র, কোরান মুহাম্মাদকে সম্বোধন করে এবং তার কাছে কেয়ামতের সময়ের একটি দৃশ্য বর্ণনা করে, যখন লোকেরা কবর থেকে বের হয়ে তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে ছুটে আসবে, যেন তারা সবাই একটি "নাসব" এর চারপাশে জড়ো হবে। এখন দেখা যাক কিভাবে এই একই শব্দটিকে বাংলা অনুবাদ করেছে:


৭০:৪২-৪৪ অতএব, আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন, তারা বাকবিতন্ডা ও ক্রীড়া-কৌতুক করুক সেই দিবসের সম্মুখীন হওয়া পর্যন্ত, যে দিবসের ওয়াদা তাদের সাথে করা হচ্ছে। সে দিন তারা কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হবে, যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের (নুসুবে نُصُبٍ) দিকে ছুটে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত; তারা হবে হীনতাগ্রস্ত। এটাই সেইদিন, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হত।


আমরা উপরের আয়াতে দেখতে পাচ্ছি যে একই শব্দ  نصب  অনুবাদ করা হয়েছে "লক্ষ্যস্থল" হিসাবে। আরও সঠিক বোঝাপড়া হবে এরকম: {যখন তারা কবর থেকে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসবে, যেন তারা একটি খাড়া করে স্থাপন করা স্তম্ভের দিকে দৌড়াচ্ছে}। 


‎("ن ص ب ) এর অর্থ। আসলে এক এবং একই: নির্মিত এমন কিছু , যা খাড়া বা  সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।  


চিন্তার খোরাক (২)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


যাকে "কা'বা" বলে তা ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন, যে কিউব কাঠামোটিকে মুসলমানেরা পবিত্র বলে তৈরি করেছে। এটা কি একটা স্তম্ভ নয় যেটা মানুষ নিজের হাতে তৈরি করেছে? এটা কি জেরুজালেমের "হাহাকার প্রাচীর Wailing Wall " থেকে আলাদা, যা ইহুদিরা সলোমনের মন্দিরের অবশিষ্টাংশ বলে বিশ্বাস করে? (ইহুদিরা স্পষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণকে অস্বীকার করে চলেছে যা প্রমাণ করে যে "প্রাচীর" আসলে বাইজেন্টাইন রোমের একটি ধ্বংসাবশেষ, এবং ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে তৈরি নয়)। তারপরে আছে মুসলমানরা , যারা আরও বেশি বিপথগামী একারনে যে , এরা এই "প্রাচীর" এর প্রতি তাদের নিজস্ব দাবি কায়েম করেছে এবং এটিকে "বুরাকের প্রাচীর" (সেই প্রাচীর যেখানে বুরাক - ডানাওয়ালা ঘোড়া - অবতরণ করেছিল যখন এটি মুহাম্মাদকে মক্কা থেকে  প্যালেস্টাইন নিয়ে গিয়েছিল , তাদের রুপকথার "নাইট জার্নি" অর্থাৎ মিরাজের রাতে) নাম দিয়েছে। 


তথাকথিত বড়, মেঝ ও ছোট "শয়তান-স্তম্ভ" সম্পর্কে কি বলবেন , যখন হাজিরা তাদের নির্বোধ "হজ" অনুষ্ঠানের সময় এই স্তম্ভের দিকে পাথর ছুঁড়ে? এটাও কি নাসব ن ص ب  নয়? এই সমস্ত কাঠামো কি বুদ্ধ বা কৃষ্ণের মূর্তির চেয়ে আলাদা? এগুলো কি সবই মানুষের হাতে তৈরি নয়?


এই ধরনের পবিত্র স্তম্ভ বা কাঠামো সম্পর্কে কুরআন আমাদের কী বলে? আবারো আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে?

{৫:৯০ হে ঈমানদারগণ, নেশা, জুয়া এবং পবিত্র স্থাপনা, এবং ভাগ্য শয়তানের দ্বারা ব্যবহৃত একটি যন্ত্রণা। তোমরা তাকে এড়িয়ে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।}


আল্লাহর ঘর (বায়তাল্লাহ)  কিভাবে মানুষের হাত দ্বারা নির্মিত একটি স্তম্ভ হতে পারে, যখন আল্লাহ বলেছেন যে এই ধরনের কাজ শয়তানের?


এটি প্রমাণ করে যে ৯৯.৯৯% মুসলমান তাদের মগজ হারিয়েছে। তাদের মন এবং বুদ্ধি হুজুরদের কাছে  জমা দিয়ে ১৪ শ বছরের ও বেশি সময় ধরে একটি গুহায় ঘুমিয়ে গেছে।


কোরানের কা'বাহ كعبة কোনো স্থাপন করা স্তম্ভ নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ভৌগলিক স্থান। ব্যক্তিগতভাবে, আমি কল্পনা করি এটি একটি বড় - সম্ভবত একটি সমতল-শীর্ষ পাহাড় - যা চারদিকে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি উপত্যকার মাঝ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটি বেশ একটি বিস্তৃত উপত্যকা এবং হাজিরা আজ মক্কায় যে জায়গায় ছুটে আসে তার মতো কিছুই নয়।


কেন?


চিন্তার খোরাক (৩)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


 কোরানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে "আল-কাবা الكعبه" এবং "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام"-এর মধ্যে একটি সংযোগ আছে। 


৫:৯৭ جَعَلَ اللَّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْيَ وَالْقَلَائِدَ ۚ ذَٰلِكَ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

আল্লাহ বানিয়েছেন  (জা'য়ালা جَعَلَ) আল-কা'বাহ আল-বায়েত আল-হারাম (নিষিদ্ধ ঘর)মানুষের দাঁড়ানোর জন্য এবং নিষিদ্ধ মাস এবং উপহার এবং মালা [যা দ্বারা গবাদি পশু চিহ্নিত করা হয়]। এটা যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে যমীনে এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।


এই আয়াত থেকে আমি দুটি বোঝার বিকল্প দেখেছি:

1. আল্লাহ "আল-কা'বা الكعبه" কে "আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" বানিয়েছেন "জা'য়ালা جعل/"।

2. "আল-কা'বা الكعبه আল-বায়েত আল-হারাম البيت الحرام" পুরোটা একটাই  কিছুর নাম। 


ক্রিয়াপদ "জা'য়ালা جعل/বানানো" যখন এটি ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হল একটি বিদ্যমান সত্ত্বা বা বস্তুর অন্য কিছু হতে রূপান্তর বা নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহার  নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা আগে ছিল না। এর সাথে ক্রিয়াপদ "খালাকা خلق/সৃষ্টি" পার্থক্য হল কাঁচামালকে (অনু পরমানু , মাটি, বায়ু ইত্যাদি) নুতন কোন সত্বা বা বস্তুতে পরিণত করা। 


আমরা দেখতে পাচ্ছি কোরান স্পষ্টভাবে এই দুটি ক্রিয়াপদের মধ্যে পার্থক্য করেছে। 

** "জা'য়ালা جعل/ বানানো" এর উদাহরণ:


৫:২০ وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ

যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর বানিয়েছেন (জা'য়ালা), তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি বানিয়েছেন(জা'য়ালা) এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি।


মূসা সম্প্রদায়ের এই লোকগুলো আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ তাদের নবী ও রাজা  "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন" , অর্থাৎ নুতন কোন সৃষ্টি (খালাকা) নয় বরং নুতন দায়িত্ব দিয়েছেন বা বলা যায়- একটি বিদ্যমান সত্ত্বাকে রূপান্তর করা হয়েছে নুতন কোনো উদ্দেশ্য বা ব্যবহারের জন্য যা আগে ছিল না। 


৬:৯৭ وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ বানিয়েছেন (জা'য়ালা) যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।


নক্ষত্র আগে থেকেই ছিল এবং যখন লোকেরা ভ্রমণ করতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাদেরকে স্থল ও সমুদ্রে পথপ্রদর্শনের নিদর্শন "জা'য়ালা جعل/ বানিয়েছেন"।


১৬:৮১ وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃষ্ট (খালাকা) বস্তু দ্বারা ছায়া বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন গোপনের জায়গা বানিয়েছেন (জা'য়ালা) এবং তোমাদের জন্যে পোশাক বানিয়েছেন (জা'য়ালা), যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।


এই আয়াতে এবং অন্যান্য অনেক আয়াতে "জা'য়ালা جعل/বানানো" ক্রিয়াটি দেখায় যে , এটি ব্যবহার করা হয়েছে যখন আমরা বিদ্যমান কোন  জিনিসের জন্য নুতন কোন  ব্যবহার বা অন্য ভূমিকা বা অন্য কাজ করার জন্য কিছু পরিবর্তন বা রূপান্তর করার বিষয়ে কথা বলতে চাই।


আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে,  "আদম পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ছিলেন না" , বিদ্যমান মানুষের মধ্য থেকে আদমকে বেছে নেয়া হয়েছে , খলিফার নুতন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে , যেকারনে ফেরেশতারা আগে থেকেই মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অবগত ছিল। 

২:৩০

‎وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি (জা'য়েলু)), তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে বানাবে (তাজ'য়ালু) যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।


চিন্তার খোরাক (৪)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


সুতরাং ৫:৯৭ আয়াত থকে আমরা জানলাম যে ,  "আল-কা'বা الكعبه" আগে থেকেই সেখানে ছিল এবং আল্লাহ "জা'য়ালাহা جعلها/ এটিকে "আল-বায়েত আল-হারাম ‎البيت الحرام" হওয়ার জন্য বানিয়েছেন বা বিদ্যমান আল কা'বা আলহারাম স্থানকে মানুষের দাড়ানোর স্থান বানিয়েছেন। 


ইব্রাহিম কা'বা তৈরি করেননি। আল-বাইতের সাথে সম্পর্কিত কোনো ধরনের কাঠামোর উল্লেখ কোরানে নেই। "কাওয়াইদ " শব্দের অর্থ সেই প্রসঙ্গে "ভিত্তি" নয়। এবং আব্রাহাম কিছুই সেই ভিত্তির উপরে নির্মান করেননি। 


এই ভুল ধারণা আমাদের মাথা থেকে পরিষ্কার করা দরকার যদি আমরা বুঝতে চাই কি ঘটছে। প্রচলিত অনুবাদ-


২:১২৭ وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি (কাওয়াইদ) স্থাপন করছিল (ইয়ারফা')। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।


আলবাইতের অনুবাদ করা হয়েছে কা'বাগৃহ , যদিও কা'বা বলে কোন শব্দ এই আয়াতে নেই। আলবাইত মানে - ঘর , গৃহ , আশ্রয়স্থল, অভায়ারন্য ইত্যাদি। 


এই আয়াতের আরবি টেক্সট- ইয়ারফা'উ ইব্রাহিমু আলকাওয়াইদা মিনাল বাইতি ওয়াইসমাইলু। 


ইয়ারফাউর মূলে আছে ر ف ع মানে তুলে ধরা বা তুলে ফেলা। কোরানের 27টি আয়াতে 

‎ر ف ع ব্যাবহার হয়েছে , সব জায়গায় এর মানে তুলে ধরা বা ফেলা। কোথাও স্থাপন করা নয় , কারন স্থাপন করা মানে করলে কোন মানেই হয় না। যেমন- 

২:৬৩ وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

আর আমি যখন তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তুর পর্বতকে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছিলাম (রাফায়ানা وَرَفَعْنَا) এই বলে যে, তোমাদিগকে যে কিতাব দেয়া হয়েছে তাকে ধর সুদৃঢ়ভাবে এবং এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে তোমরা ভয় কর।


ইব্রাহিম ও ইসমাইল কি তুলেছিলেন? আলকাওয়াইদা  الْقَوَاعِدَ যার মানে হতে পারে: "এমন কিছু যা দীর্ঘকাল ধরে বসে আছে, বা স্থবির, বা তার জায়গায় স্থির"। এটা প্রতিমা হতে পারে বা পাথর খন্ড বা গাছপালাও হতে পারে। 


কোথা থেকে তুললেন? মিনাল বাইতি  মানে আল্লাহর ঘর বা আশ্রয়স্থল বা অভায়ারন্য থেকে। 


তাহলে আয়াতটি কিসের কথা বলছে?


এই ধাঁধার উত্তর কুরআনের অন্যত্র পাওয়া যায়। এই দিকে মনোযোগ দিন:


{....এবং আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ/চুক্তি করেছিলাম (আহেদনা): "আপনি আমার পবিত্র স্থানকে যারা সফর করেন, এবং যারা নিবেদিতপ্রাণ, এবং নতজানু, সেজদা করেন তাদের জন্য পরিস্কার  করবেন।"}...[২:১২৫]


তারা পবিত্র স্থান পরিস্কার করেছেন। প্রতিমা তুলে ফেলে দিয়েছেন। তারা কিছুই নির্মাণ করেননি। অভয়ারণ্য আগে থেকেই ছিল।


চলবে... চিন্তার খোরাক (৫)


[কোরানে উল্লেখিত প্রকৃত "কা'বা"  আর মক্কার সেই কিউবিক কাঠামো (কিবলা) যে দিকে ফিরে বিশ্বের সকল মুসলমান নামায পড়ে এক নয়।]


আল্লাহই ইব্রাহিমকে এই পবিত্র স্থান (বাইত) এর অবস্থান দেখিয়েছিলেন এবং তারপর তাকে "এটি পরিষ্কার" করার নির্দেশ দিয়েছিলেন:


২২:২৬  وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

যখন আমি ইব্রাহীমকে আলবাইতের  স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পরিস্কার রাখ তায়েফিনের (তায়েফিন মানে দল - ধর্মীয় আলোচনা/বিতর্ককরতে আসা মানুষের দল হতে পারে , যাদেরকে হাজি বলে) জন্যে, দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।


আল্লাহ ইব্রাহিমকে আলবাইতের দিকে নিয়ে যান (তাকে এর অবস্থান খুঁজে পেতে সাহায্য করেন)।


আল্লাহর পবিত্র স্থান একটি প্রাকৃতিক স্থান। এটা কোনো ধরনের কাঠামো নয়। আজকে আমরা মক্কায় যে CUBE দেখতে পাচ্ছি, যেটি বহুবার ধ্বংস হয়েছে, তা ইব্রাহিমের দ্বারা নির্মিত হয়নি। এটি একটি পৌত্তলিক কাঠামো যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।


আব্রাহাম পবিত্র স্থানে অনাদিকাল থেকে গেঁড়ে থাকা প্রতিমাগুলি/মূর্তিগুলি (আল্কাওয়াইদ) তুলে ফেলে দিয়ে (রাফা'য়া) পরিস্কার/পবিত্র করলেন। তিনি কিছুই তৈরি করেননি। আল্লাহর পবিত্র স্থানটি (বাইত) আদমের সময় থেকেই ছিল।


তাহলে এটি যদি একটি মানুষের তৈরি কাঠামো না হয়, তাহলে এটি কি?


আবারো কোরানে এর উত্তর পাওয়া যায়:


১৪:৩৭ رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ  হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন (غَيْرِ ذِي زَرْعٍ )উপত্যকায় ( بِوَادٍ )আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। 


বাইত যে উপত্যকায় অবস্থিত তাকে কোরানে  "একটি উপত্যকা যা অনাবাদি/চাষাবাদহীন" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আরবি পরিভাষা 'জারা'য়া'এর স্পষ্ট অর্থ "রোপন" যার সাথে মানুষের শ্রম (বপন এবং কাটা) জড়িত। জায়গাটা যে শুষ্ক মরুভূমি ছিল তা বলে না! এটি এমন একটি উপত্তকা যেখানে আগে কেউ কখনও বসতি স্থাপন করেনি। প্রাকৃতিক উদ্ভিদকে "নাবাত" বলা হয়, "জারা'য়া" নয়।


উপসংহার: বাইত (অভয়ারণ্য) আরবের  কোথাও একটি নির্জন উপত্যকা , সম্ভবত ইয়েমেন ও সৌদি আরবের মাঝের আছির উপত্যকা । ইব্রাহিম এটিতে স্থাপন করা মূর্তিগুলি সরিয়ে এটি পরিষ্কার করেছিলেন। ("ইয়ারফা3উ'  কাওয়াইদ মিন আল বায়তি)। এই উপত্যকাটি আদিকাল থেকেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে পবিত্র ছিল।


আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে , কাবা হল একটি প্রকৃত প্রাকৃতিক স্থান, একটি বিমূর্ত ধারণা বা আইনের সেট নয়।  পৃথিবীর যেকোন জায়গায় অসংখ্য অন্যান্য বাইত থাকতে পারে, এবং হজের জন্য অন্যান্য স্থান থাকতে পারে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। কারন প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। যদি এটি একটি প্রাকৃতিক অবস্থান না হয়, তাহলে আমি জানি না কি। লোকেরা কি ইব্রাহিমের কাছে প্রতিটি গভীর এলাকা থেকে তাদের দান, গরীবদের খাওয়ানো, বাণিজ্য, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য ছুটে আসেনি... তাকে কি মানুষের জন্য ইমাম করা হয়নি? আব্রাহাম কি একটি উপত্যকায় তার বংশধরদের বসতি স্থাপন করেন নি?


প্রকৃতপক্ষে কোরান আমাদের বলছে যে এই ধরনের প্রথম স্থানটি ছিল বাক্কায়। এর অর্থ দাড়ায় পৃথিবীতে আরো আল্লাহর ঘর আছে। এমন একটি ঘর দক্ষিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলার  টেপুই পর্বত। 


টেপুই একটি সমতল চূড়া সহ একটি অদ্ভুত-সুদর্শন পর্বত, যাকে "টেবিল-টপ" বলা হয় (কারণ এটি একটি টেবিলের মতো সমতল)। এই অনন্য ভূতাত্ত্বিক গঠনগুলি বেশিরভাগ দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার গায়ানা হাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।


"টেপুই" শব্দটি এসেছে পেমন ইন্ডিয়ানদের ভাষা থেকে। এর অর্থ 'দেবতার ঘর' 'house of the gods' আপনি এটি দেখতে যেতে পারেন, এবং নিজের জন্য দেখতে পারেন। বা গুগল ম্যাপে দেখতে পারেন। 


আরেকটি দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউনের table মাউন্টেন যার সাথে 'devil's peak' শয়তানের শৃঙ্গ আছে।


. https://www.amusingplanet.com/2013/05/tabletop-mountains-or-tepuis-of.html



Sunday, May 22, 2022

আহা আমি যদি নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তার সাথে থাকতাম!


বহু নবী প্রেমী আছে যাদেরকে বলতে শোনা যায় : আমি নবী মুহাম্মদকে এতটাই ভালবাসি যে আমি যদি তার যুগে, তার সাথে আরবে, তাকে রক্ষা করতে এবং সমর্থন করতে পারতাম!   আহা , তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম। 


 হয়তো সে সময় তুমি বেঁচে থাকলে , তার চিরশত্রু হতে ! কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী এই ধরনের নবী প্রেমীদের মুহাম্মদের চির শত্রু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা ছিল তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু  , যারা তার সততা, করুণা এবং সত্যবাদিতার জন্য তাকে একজন বিশ্বস্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে জানত । উনি ছিলেন তাদের ভালবাসার যোগ্য , তবুও যখন তিনি একজন নবী হিসাবে তাদের আহ্বান করেছিলেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ,  তারা তার চিরশত্রু হয়ে গেল এবং ব্যক্তি হিসাবে তার গুণাবলী ভুলে গেল।


কোরানে  আল্লাহ মুহাম্মদকে কাফেরদের সাহাবা/সঙ্গী/বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর মানে তিনি তাদের সমসাময়িক এবং তারা তার সমসাময়িক। এই সঙ্গের কারনে তারা  তার  উচ্চ নৈতিকতা সম্পর্কে জানত এবং এটাও জানত যে তিনি কখনও মিথ্যা বলেননি। তাই, তাদের তাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল যখন তিনি তাদের বলেছিলেন যে , তিনি আল্লাহর একজন বার্তাবাহক/নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তাদের অধিকাংশই তাকে বিশ্বাস করেনি, এবং তারা তাকে একজন বিপথগামী পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল। আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গী অবিশ্বাসীদেরকে সম্বোধনের মাধ্যমে এই আয়াতগুলিতে তাদের মতামত খণ্ডন করেছেন:


{তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।(৫৩:২-৪)}


অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ইঙ্গিত দেয় যে মুহাম্মদ এবং তার সমসাময়িকরা একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরে খুব ভালভাবে চিনতেন এবং এটি অদ্ভুত যে তারা তাকে বিপথগামী বলে অভিযুক্ত করেছিল ,  যখন তিনি তাদের কাছে কোরানের বাণী শুনিয়েছিলেন। আল্লাহ  মুহাম্মাদকে একই অভিব্যক্তি (আপনার সঙ্গী/সাহাবা...) ব্যবহার করে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন:


{বলুন, আমি তোমাদেরকে একটি উপদেশ দিচ্ছিঃ তোমরা আল্লাহর নামে এক একজন করে ও দু, দু জন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা-ভাবনা কর-তোমাদের সঙ্গীর মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই। তিনি তো আসন্ন কাঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করেন মাত্র।(৩৩:৪৬)}


মুহাম্মদ শুধু চেয়েছিলেন যে তারা আল্লাহকে নিয়ে পরিষ্কারভাবে এবং ভক্তিমূলকভাবে চিন্তা করুক। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে (আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই) আহবান করেছিলেন এবং পরকালে চিরস্থায়ী শাস্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন , তখন তারা তাদের বন্ধু মুহাম্মদকে সন্দেহ করেছিল এবং  তারা তাকে পাগল বলে অভিযুক্ত করেছিল । তারা তাকে একটি শিশু, তারপর একটি যুবক এবং তারপর চল্লিশের একজন পুরুষ হিসাবে দেখেছিল। তারা তাকে ভালবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। তথাপি, তিনি  আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার  সাথে সাথেই তারা তার সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তাকে ঘৃণা করা শুরু করে।


মুহাম্মদের আত্মীয় ,সঙ্গী , সমসাময়িকরা তো আল্লাহর উপাসনা করত , তবুও এক আল্লাহর পথে ডাকার জন্য তাকে ও তার গুটিকয়েক অনুসারীকে ঘৃনা করা করা শুরু করল কেন , শারীরিক নির্যাতন করত কেন , দেশত্যাগে বাধ্য করল কেন?  কারন- শুধুমাত্র এক আল্লাহর পুজা করলে তো লাত , মানাত , উজ্জার সাহায্য কামনা করা যাবে না। তারা বিশ্বাস করত লাত , মানাত , উজ্জা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে , তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। আজকের জমানায় মুহাম্মদে বিশ্বাসের সাথে কোন মিল কি পাওয়া যায়? মুহাম্মদ সুপারিশ করবে , আল্লাহর নিকটে হাউজে কাউসারে স্থান করে দেবে , ইত্যাদি। মুহাম্মদে বিশ্বাস না করার কথা বললে আজকের নবী প্রেমীদের প্রতিক্রিয়া কি চোখে পড়ে?


{আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(৩৯:২-৩)}


নবী প্রেমীঃ  মক্কার কোরাইশদের সাথে আমার ও আমার ইচ্ছার কি সম্পর্ক?


উত্তরঃ আপনি চান যে আপনি মুহাম্মদের যুগে জীবিত থাকতেন এবং মক্কার কোরাইশ গোত্রের মধ্যে জীবিত থাকতেন , যারা মুহাম্মদের আত্মীয় ছিলেন। তাহলে আপনি হয়তো তার চিরশত্রুদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই)। 


নবী প্রেমীঃ আপনি কিভাবে নিশ্চিত হয়ে এমন একটি জিনিস অনুমান করছেন?! আমি হয়তো নবী মুহাম্মদের সবচেয়ে আন্তরিক ও সৎ অনুসারী হতাম। আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে কিছু মক্কাবাসী এবং কোরাইশ উপজাতিরা ইসলাম গ্রহণকারী প্রাথমিক বিশ্বাসীদের মধ্যে তার নিকটতম সমর্থক ছিল। আমি নিশ্চিত তাদের একজন হতাম। আমার এই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই  বা এত প্রতিবাদ করছেন কেন?!


উত্তরঃ কোনো কিছুর প্রতিবাদ করছি না , আপনাকে উভয় সম্ভাবনাই দিচ্ছি: আপনি বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী , যে কোন একটি দলের মধ্যেই থাকতেন।


নবী প্রেমীঃ আপনার কথা ঠিক না; আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে হতাম যারা নবী মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে।


উত্তরঃ আপনার এই বক্তব্যই দেখায় যে আপনি তার চিরশত্রুদের একজন!


নবী প্রেমীঃ  আপনি আমাকে অপমান করছেন! আমি তাকে বিশ্বাস করতে গিয়ে কিভাবে তার চিরশত্রু হয়ে গেলাম?!


উত্তরঃ কারণ ইসলামে বিশ্বাস ব্যক্তি মুহাম্মদের মধ্যে নয়; তাঁর প্রতি এই বিশ্বাস  ব্যক্তি মুহাম্মদকে দেবতার আসনে বসানো। এটি ইসলামের মৌলিক সত্যের (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) বিরোধী। সুতরাং, প্রকৃত বিশ্বাস মুহাম্মদের মধ্যে নয় বরং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে: কোরান যা  আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।


নবী প্রেমীঃ সেটা কেমনে?!


উত্তরঃ আল্লাহ কোরানের ৪৭ সূরা মুহাম্মদ শিরোনামে বলেছেন: "যারা অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে - তিনি তাদের কাজকে বাতিল করে দেন।" (৪৭:১)। প্রথম আয়াতে কাফেরদের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দ্বিতীয় আয়াতে বিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে: "যদিও যারা বিশ্বাস স্থাপন করে , ভালো কাজ করে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে - এবং এটি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য - তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করেন। এবং তাদের উদ্বেগ দূর করে দেবেন।" (৪৭:২)। 


লক্ষ্য করুন যে , "বিশ্বাস" ক্রিয়াটি ৪৭:২ আয়াতে দুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এক বার ভাল কাজ করার সাথে এবং অন্য বার বিশ্বাসের অর্থের সাথে মিলিয়ে :  মুহাম্মদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করা অর্থাৎ কুরআন নিজেই। বর্ণনা করা হয়েছে আমাদের প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে এই সত্যে তথা কোরানে বিশ্বাসীদের তাদের পাপের জন্য ক্ষমা করা হবে ।অবিশ্বাসীদের ও বিশ্বাসীদের সাথে পরকালে কি করা হবে তার  তুলনা করা হয়েছে আয়াত দুটিতে। 


এই বৈপরীত্যের কারণটি পরের আয়াতে এসেছে: "এর কারণ হল যারা অবিশ্বাস করে তারা মিথ্যার অনুসরণ করে, আর যারা বিশ্বাস করে তারা তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যকে অনুসরণ করে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের উদাহরণ তুলে ধরেন।" (৪৭:৩)। এখানেই পার্থক্য নশ্বর মানুষ/রাসুলে বিশ্বাস এবং কোরানের সত্যে বিশ্বাসের মধ্যে ।  বিপথগামীরা মিথ্যার অনুসরণ করে যা তাদেরকে নশ্বর মানুষ/রাসুলকে ও বস্তুকে দেবতা ও পবিত্র করার দিকে নিয়ে যায়।


নবী প্রেমীঃ কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি যে আমি মুহাম্মদের কাছে নাযিল করা কোরানে বিশ্বাস করি এবং আমি মুহাম্মদকেও খুব ভালোবাসি; এটা কি আমাকে মুশরিক করে?!


উত্তরঃ আমরাও মুহাম্মদকে ভালোবাসি, কিন্তু আমরা তাকে দেবতা বা পবিত্র মনে করি না। পবিত্র এবং দেবতা একজনই , তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আমরা মুহাম্মাদকে ভালোবাসি , যিনি কোরানের সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং তার এই প্রচেষ্টার জন্য কষ্ট ভোগ করেছেন। এ কারণেই আমরা তথাকথিত জীবনী এবং হাদিস/আখ্যানগুলিতে তাঁর বিকৃত চিত্রকে প্রত্যাখ্যান করি এবং প্রত্যাখ্যান করি যা তাঁর খ্যাতিকে কলঙ্কিত করে এবং কেবলমাত্র কোরানে পাওয়া তাঁর আসল এবং একমাত্র গল্পের বিরোধিতা করে।


নবী প্রেমীঃ আমার ইচ্ছাতে  ফিরে যাই - আমি চাই যে আমি নবী মুহাম্মদের সমসাময়িকদের একজন হতাম, অর্থাৎ আমি বলতে চাই যে আদি বিশ্বাসীদের একজন হতে চাই।  মক্কার কোরাইশ বা অন্যান্যদের মতো কাফের নয়। এখানে পার্থক্য আছে কি?


উত্তরঃ একমাত্র কোরানকে আল্লাহর বাণী হিসাবে বিশ্বাস করা বা না করার মধ্যে এই পার্থক্য নিহিত। 


মুহাম্মদের সমসাময়িকদের মধ্যে অনেকেই যারা তাঁর চমৎকার গুণাবলীর জন্য তাঁকে ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন , তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করেছিলেন যখন তিনি তাঁর নবুওয়াত ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদের কাছে কোরান  পাঠ করে তাদেরকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) আহ্বান করেছিলেন। এইভাবে যারা তাকে ঘৃণা করত ,  তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিগত কারণে এই ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেনি বরং  তাদেরকে আল্লাহর নামে তিনি যে কুরআনের বার্তা দিয়েছিলেন , তা তারা ঘৃণা করেছিল। তারা তার উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য তার চারপাশে জড়ো হতে পছন্দ করত, কিন্তু যখন তিনি কোরান প্রচার শুরু করেছিলেন , তখন থেকে তার প্রতি তাদের ভালবাসা গভীর ঘৃণা এবং শত্রুতায় পরিণত হয়েছিল।


নবী প্রেমীঃ এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!


উত্তরঃ এটা আমরা বুঝতে পারি এই আয়াতগুলো থেকে: “আর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না তারা বলে, এটি ব্যতীত অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো অথবা পরিবর্তন কর।” বলুন, “আমার নিজের ইচ্ছায় এটা পরিবর্তন করা আমার কাজ নয়। আমি কেবল আমার কাছে যা অহী করা হয় তার অনুসরণ করি। যদি আমি আমার পালনকর্তার অবাধ্য হই , তবে আমি ভয় করি এক ভয়াবহ দিনের আযাবের ।" বলুন, "যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমি এটি তোমাদের সামনে পড়তাম না, আর নাইবা তিনি তোমাদেরেকে অবহিত করতেন এ সম্পর্কে। কারণ আমি তোমাদের মাঝে ইতিপূর্বেও একটা বয়স অতিবাহিত করেছি। তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না?" (১০:১৫-১৬)। এইভাবে, মুহাম্মদ তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করেছিলেন, কিন্তু একজন ব্যক্তি হিসাবে তার প্রতি তাদের পূর্বের ভালবাসা থাকা সত্বেও অনেকেই কোরান বিদ্বেষের কারনে তাকে এই কোরান পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন করতে বলেছিল , যাতে তাদের ঐতিহ্যগত, পূর্বপুরুষের ধারণাগুলিকে বাচিয়ে রাখা যায়।  আল্লাহ  তাকে এই আয়াত দুটিতে বলেছেন কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। মুহাম্মদই প্রথম যিনি কোরানে বিশ্বাস করেন এবং তিনি প্রভু আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার সাহস পাননি। কোরাইশদের অবিশ্বাসী লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিমা এবং পূর্বপুরুষদের রীতিকে শ্রদ্ধা করার সাথে সাথে তাদের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলে যায় এমন একটি ঐশী বার্তা কামনা করেছিল।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, আপনি আমাকে বলতে চাচ্ছেন যে , তারা মুহাম্মদের ব্যক্তিত্বকে ভালবাসত কিন্তু কোরানের বাণী এবং (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এর একেশ্বরবাদকে ঘৃণা করত, তাই তো?


উত্তরঃ ঠিক তাই ; যখন তিনি তাদের কাছে কোরান তেলাওয়াত করতেন , তখন তারা তার প্রতি তাদের ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করত: "যারা অবিশ্বাসী তারা বার্তাটি শুনে আপনাকে প্রায় তাদের দৃষ্টি দিয়ে ছুরিকাঘাত করে এবং বলে, "সে পাগল!" 

অথচ এই বার্তা তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।" (৬৮:৫১-৫২)।


নবী প্রেমীঃ তাহলে, এই শত্রুতা ছিল কোরানের প্রতিই, নবী মুহাম্মদ বা অন্য কেউ যদি আবৃত্তি করে তাদের প্রতি না , তাই না?


উত্তরঃ  ঠিক; মক্কার কাফেররা প্রাথমিক মক্কার বিশ্বাসীদের ব্যক্তি হিসাবে ঘৃণা করত না, বরং তাদের কোরানে বিশ্বাসের কারনে এবং  তাদের জনসমক্ষে কোরান পাঠ করার কারনে : "যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে উঠে। ....(২২:৭২)


নবী প্রেমীঃ কিন্তু তৎকালীন আরবের আরবরা স্রষ্টা আল্লাহকে বিশ্বাস করত; তারা কুরআনকে এতটা ঘৃণা করলো কেন?!


উত্তরঃ কারণ কোরান অনুসারে, ইসলামে একেশ্বরবাদের সারমর্ম কেবলমাত্র এক আল্লাহতে  বিশ্বাস নয় , সেই সাথে অবশ্যই মানুষের কল্পিত অন্যান্য সমস্ত অনুমানকৃত পবিত্র  মানুষ/জ্বীন দেবতা ও বস্তুতে ( জমজমের পানি , হাজরে আসোয়াদ বা কাল পাথর , কাবা শরিফ ইত্যাদি) অবিশ্বাস করতে হবে। এই কারণেই ইসলামের সাক্ষ্য "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ/বিধানদাতা নেই)। মানুষের উদ্ভাবিত সমস্ত উপাস্য/দেবতার প্রতি অবিশ্বাসের সাথে শুরু হয় প্রথম ধাপ , এরপর  দ্বিতীয়টি হল একমাত্র সত্য ইলাহে বিশ্বাস করা: আল্লাহ। "ধর্মের ক্ষেত্রে কোন জবরদস্তি থাকবে না; সঠিক পথটি ভুল পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। যে তাগুতকে ত্যাগ করে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করে , সে সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাতলটি আঁকড়ে ধরেছে; যা ভাঙবে না। আল্লাহ শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ।" (২:২৫৬)। কোরাইশের মক্কাবাসীরা মানুষ ও বস্তুর দেবীকরণকে মেনে চলার কারণে, তারা কোরানের বাণীকে ঘৃণা ও উপহাস করেছিল: "এবং যখন তাদের কাছে আমাদের আয়াতগুলি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "আমরা শুনেছি। আমরা চাইলে এরকম বলতে পারতাম; এগুলি পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।" এবং তারা বলেছিল, "হে আমাদের আল্লাহ, যদি এটি আপনার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আকাশ থেকে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ করুন বা আমাদেরকে বেদনাদায়ক কষ্ট দিন।" (৮:৩১-৩২)।


নবী প্রেমীঃ সুতরাং, তারা কোরানের স্পষ্ট আয়াতগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তারা কোরানের বাণী শুনে বিরক্ত হয়েছিল, তাই না?


উত্তরঃ নিশ্চিতভাবে , তারা কোরানের আয়াত স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল এবং তাদের উপলব্ধি কোরানের প্রতি তাদের ঘৃণা বাড়াতে এবং মুহাম্মদ ও প্রাথমিক বিশ্বাসীদের উপর তাদের ক্রোধ প্রকাশ করতে পরিচালিত করেছিল।  একই সাথে তারা কোরানকেও ঠাট্টা করেছিল। "আর যখন তাদের কাছে আমাদের আলোকিত আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, "তোমাদের বাপ-দাদারা যার এবাদত করত এ লোকটি যে তা থেকে তোমাদেরকে বিচ্যুত করতে চায়।" এবং তারা বলে, "এটি একটি বানোয়াট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।" যখন সত্য তাদের কাছে আসে, তখন কাফেররা সত্য সম্পর্কে বলে, "এটা তো প্রকাশ্য জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।" (৩৪:৪৩)।


নবী প্রেমীঃ যা বলছেন তা আমি বুঝতে পেরেছি।  আমি স্বীকার করি যে আমি জানি না যে সেই সময় যদি বেঁচে থাকতাম , তাহলে আমি বিশ্বাসী না কোরান অস্বীকারকারীদের মধ্যে হতাম। কিন্তু আমাদের আধুনিক যুগে, ২১ শতকের খ্রিস্টাব্দের কী হবে? আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ভালবাসি, কিন্তু সপ্তম শতাব্দীতে বসবাসকারী নশ্বর হিসাবে তাকে দেবতা না করে এই ভালবাসা কিভাবে প্রকাশ করব?


উত্তরঃ মুহাম্মদের সাথে নিজেকে যুক্ত করার বা তাকে ভালবাসার অর্থ তাকে সম্বোধন করা প্রশংসা বাক্য উচ্চারণ করা নয়, কারণ এই অভ্যাস তাকে এমনভাবে উপাস্য করে যেন তিনি একজন অমর দেবতা। ধার্মিকদের এবং মুহাম্মদের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র হল কোরান পড়া, চিন্তা করা, প্রয়োগ করা এবং মেনে চলা। এই বইটিই মুহাম্মদ পড়েছেন এবং প্রয়োগ করেছেন। অন্য কোন বই নয়। আমাদের সকলকে অবশ্যই মুহাম্মদের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে কারণ তিনি কেবল কোরান অনুসরণ করেছিলেন। মুহাম্মাদ তার জীবদ্দশায় যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলেন তার একমাত্র উৎস হল কোরান: (তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে... বলুন: "...") অথবা (বলুন: "...")। সুতরাং, একজন নবী, একজন রসূল, একজন স্বামী, একজন বন্ধু এবং একজন নেতা হিসেবে মুহাম্মদের প্রকৃত ইতিহাসের একমাত্র উৎস কোরান। এটিই আমাদের এবং তার মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র।


নবী প্রেমীঃ আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলে গেছেন!


কোরানে বিশ্বাসীঃ সেটা কি?


নবী প্রেমীঃ মুহাম্মদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার অর্থ এই যে , আমাকেও  তাঁর মতো কোরানের অন্তর্দৃষ্টি/আয়াতগুলি প্রচার ও ধর্মান্তর করতে হবে: "বলুন, "এটি আমার পথ; আমি সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিচ্ছি - আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে। মহত্ব স্রস্টার জন্য; এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।" (১২:১০৮); "আপনার প্রভুর কাছ থেকে আপনার কাছে অন্তর্দৃষ্টি এসেছে। যে কেউ দেখে, তার আত্মার উপকার হয়; আর যে অন্ধ থাকে, তার ক্ষতি হয়..." (৬:১০৪); "...এগুলি আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি, এবং হেদায়েত এবং রহমত, বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।" (৭:২০৩)।


কোরানে বিশ্বাসীঃ আপনি যদি শুধুমাত্র কোরান ব্যবহার করে লোকদেরকে বস্তু ও নশ্বরকে দেবতা ও পবিত্র মনে করে উপাসনা বন্ধ করতে বলেন, তাহলে আপনি নির্যাতিত হবেন এবং শারীরিকভাবে আক্রান্ত হবেন। মুহাম্মাদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: "তবুও যখন আল্লাহর ভক্ত তাকে ডাকতে দাঁড়ায়, তখন তারা তার চারপাশে ঘন ভিড় করে। বলুন, "আমি কেবল আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি এবং আমি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।" (৭২:১৯-২০)।


নবী প্রেমীঃ এখানে একটি বড় ঝুঁকি আছে, তাই না?!


কোরানে বিশ্বাসীঃ অনেক অপমান সম্বলিত ঘৃণামূলক চিঠি এবং ঘৃণামূলক ইমেলের জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং গালি , নির্যাতন  ও কারারুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা এগুলি করবে যাতে  আপনি কোরানের সত্য দ্বারা ধর্মান্তরন করা বন্ধ করেন। আপনার নির্যাতকরা আপনাকে ঘৃণা করবে না কিন্তু আল্লাহর কোরানকে ঘৃণা করবে। কোরানের বাণী প্রচার বন্ধ করুন , দেখবেন তারা আর আপনাকে ঘৃণা করছে না , গালি দিচ্ছে না। "তারা চায় যদি আপনি আপস করেন, তবে তারাও আপস করবে।" (৬৮:৯)।


 নবী প্রেমীঃ এটা আরো বড় ঝুঁকি!


কোরানে বিশ্বাসীঃ আল্লাহর নবীদের সীলমোহর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর প্রতি আপনার ভালবাসা প্রমাণ করা আপনার লক্ষ্য এবং কাজ। প্রেম নিছক খালি কথা নয়: তার মৃত্যুর পর তাকে যে মিথ্যা (হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী) দিয়ে তার চরিত্রকে খ্যাতিমান ও কলঙ্কিত করা হয়েছে , তা খণ্ডন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই স্পষ্টভাষী এবং সোচ্চার হতে হবে। তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে লিখিত হাদীস, বর্ণনা এবং জীবনীতে যা বর্ণিত হয়েছে তা তিনি কখনও উচ্চারণ করেননি। একমাত্র কোরানেই তার ইতিহাস পাওয়া যায়। হাদিস, বর্ণনা এবং জীবনী হল সুফি, শিয়া এবং সুন্নী মুহাম্মাদিদের পার্থিব, মনুষ্যসৃষ্ট ধর্মের ভিত্তি। তাদের মিথ্যা ও বিকৃত ধারণাগুলি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। যা তাদের লালিত পার্থিব ধর্মকে ক্ষুন্ন করে, সেই কোরানের আয়াত নিয়ে মুহাম্মাদিদের  মুখোমুখি হওয়া খুবই কঠিন এক মিশন। কিন্তু আপনি যদি তা করেন ,  তবে আপনি প্রমাণ করবেন যে আপনি সত্যিই  আল্লাহ , কোরান এবং মুহাম্মদকে ভালবাসেন।

বিশ্বাস মুহাম্মাদের উপর নয় বরং মুহাম্মদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে: যারা মুহাম্মাদকে বিশ্বাস করে তারা মুশরিক।


প্রথমত: ইসলামি/ একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের অর্থ হল কোরানে বিশ্বাস করা এবং মুহাম্মদ নামের নশ্বর মানবের প্রতি নয়:


প্রেক্ষাপট: মূসার সাথে আল্লাহর কথোপকথন। তাওরাতের অনুসারীদের জন্য মুহাম্মদ বিধর্মীদের নবী। 


১) এটি প্রভু আল্লাহর রহমত সম্পর্কে: "...আমার করুণা (রহমত) সমস্ত কিছুকে পরিবেষ্টন করে। আমি এটি তাদের জন্য নির্দিষ্ট করব যারা সৎ কাজ করে এবং পরিশুদ্ধ হয় এবং যারা আমাদের আয়াতগুলিতে বিশ্বাস করে।" যারা রাসুলকে অনুসরণ করে, বিধর্মীদের নবী..." (৭:১৫৬-১৫৭)। বিধর্মীদের নবীকে অনুসরণ করার অর্থ তাকে বিশ্বাস করা , তাকে দেবতা করা নয়। বরং তাকে প্রভু আল্লাহর প্রেরিত একজন নশ্বর নবী/বার্তাবাহক হিসাবে বিশ্বাস করা অর্থাৎ রসূলের প্রতি ঐশী বাণী বা পবিত্র কোরান তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করা। সুতরাং, আমরা নশ্বর নবী মুহাম্মদকে দেবতা করতে চাই না। আমাদের তাকে দেওয়া আলো অনুসরণ করতে হবে; অর্থাৎ কোরানকে। সুতরাং, মুহাম্মদকে অনুসরণ করা মানে তাকে একজন ব্যক্তি হিসাবে উপাস্য করা নয় বরং তিনি যে কুরআনের বাণী দিয়েছেন তাকে অনুসরণ করা।

২) এ আয়াতটি প্রকৃত একেশ্বরবাদীদের সম্পর্কে যারা প্রভু আল্লাহর করুণার যোগ্য: "...যারা তাকে বিশ্বাস করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সমর্থন করে এবং তার সাথে নেমে আসা আলোকে অনুসরণ করে - তারাই সফল।" (৭:১৫৭)। এর অর্থ নশ্বর নবী মুহাম্মাদকে দেবতা হিসাবে বিশ্বাস করা নয় বরং কোরানের আয়াতে বিশ্বাস করা, যা তিনি পড়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন। আমাদের এই সত্যে বিশ্বাস করতে হবে যে প্রভু আল্লাহ মুহাম্মাদকে নবী/রাসূল হিসেবে একটি মহাকাশীয় গ্রন্থ দিয়ে পাঠিয়েছেন:  কোরান। আমাদেরকে কোরানের আলোকে অনুসরণ করতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। আমরা মুহাম্মাদকে বিশ্বাস করি না অর্থাৎ আমরা মুহাম্মাদকে দেবতা করতে চাই না। 

৩) "... সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল অইহুদীদের (উম্মি) নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।" (৭:১৫৮)। এখানে ঐশ্বরিক আদেশ মুহাম্মদকে বিশ্বাস করা বা তাকে দেবতা করার বিষয়ে নয়; এখানে রাসুল শব্দটি শুধুমাত্র কোরানকেই বোঝায়। একেশ্বরবাদীদের কোরানের সত্যে বিশ্বাস করা উচিত যে , মুহাম্মদ একজন নশ্বর বার্তাবাহক/নবী এবং তাদের মধ্যে শেষ একজন , যিনি কোরানকে মানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র লক্ষ্যে প্রভু আল্লাহর দ্বারা প্রেরিত। আমাদের নবী হিসাবে তাঁর নবুওয়াত বা তাঁর বার্তাবাহনে বিশ্বাস করতে হবে। এটি একটি কুরআনিক সত্য যে তিনি অইহুদীদের নবী। এর মানে হল যে ৭:১৫৬-১৫৮-এর স্থানীয় প্রেক্ষাপটে তাঁর নবুওয়াত এবং কোরানে তিনবার বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা মানুষ হিসাবে বিশ্বাস করতে হবে , দেবতা হিসাবে নয়। মুহাম্মদকে মানবীয় গুনের উর্ধে অন্য কিছু ভাবার অর্থই বহুঈশ্বরবাদীতে বিশ্বাসী , যা কোরানের একেশ্বরবাদী শিক্ষার পরিপন্থী। 

৪) অবশ্যই, কোরানের সম্পূর্ণ পাঠ্যের বিষয়গত প্রেক্ষাপট বোধগম্য হওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে এবং বহু আয়াতে আল্লাহ আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে বলেছেন।  আমরা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করব যে "অনুসরণ" এর কোরানের ধারণার অর্থ মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা দেবতা হিসাবে অনুসরণ করা নয় বরং তিনি যে ঐশ্বরিক বাণী দিয়েছেন তা একচেটিয়াভাবে অনুসরণ করা। কোরানের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত এই সত্যটি নির্দেশ করে যে , মুহাম্মদ একজন নশ্বর মানুষ হিসাবে ভুল করেছিলেন। তিনি নির্দোষ ছিলেন না , প্রভু আল্লাহ কিছু কোরানের আয়াতে তাকে তিরস্কার ও করেছেন। সুতরাং, ইসলামে "অনুসরণ" মানে শুধুমাত্র কোরানকে অনুসরণ করা এবং এটিই একমাত্র বিষয় যা মুহাম্মদ আমাদেরকে জানিয়েছিলেন। নীচের পয়েন্টগুলিতে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

ক) মুহাম্মদ একজন নশ্বর নবী ছিলেন এবং তাকে শুধুমাত্র কোরানের বার্তা অনুসরণ করার জন্য কোরানে আদেশ করা হয়েছে। প্রভু  আল্লাহ তাকে নিম্নলিখিত ঘোষণা করার আদেশ দিয়েছেন:

{আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি ভবিষ্যত অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ?(৬:৫০)}

{আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।(৭:২০৩)}

{আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।(১০:১৫)}

প্রভু আল্লাহ এখানে মুহাম্মাদকে আদেশ করেছেন যে তিনি তার কোরান অনুসরণের ঘোষণা দেবেন , যা তার সমসাময়িকদের অধিকাংশই প্রত্যাখ্যান করেছে। কোরান অস্বীকারকারীরা এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলবে এমন আরেকটি কোরানের পাঠ দাবি করেছিল। একইভাবে, বর্তমানের মুহম্মদিরা তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে শয়তানী বর্ণনা/হাদিস অনুসরণ করার জন্য কোরানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ধরনের হাদিস একটি কাল্পনিক অমর দেবতার নামে মেনে চলেছে ,  যা তারা নিজেরা তৈরি করেছে এবং সেই দেবতার নাম দিয়েছে মুহাম্মদ।

খ) কিতাব (অর্থাৎ কোরান নিজেই) অনুসরণ করার জন্য কোরানের আদেশটি সমস্ত একেশ্বরবাদীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। প্রভু আল্লাহ কোরানে নিম্নলিখিত বলেছেন:

{এবং নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা ধার্মিক (মুত্তাকিন-যারা পাঁপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে) হও।(৬:১৫৩)}

{এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।(৬:১৫৫)}

{এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ। তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (৭:২-৩)}

গ) কোরানকে অনুসরণ করার অর্থ হল ঐশী গ্রন্থ, রাসূল এবং অন্তর্দৃষ্টিকে অনুসরণ করা; প্রভু আল্লাহ মুহাম্মদকে নিম্নলিখিত ঘোষণা করার জন্য আদেশ দিয়েছেন:

{বলে দিনঃ এই আমার পথ। আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই , আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।(১২:১০৮)}

উল্লেক্ষ্য এই আয়াতে মুহাম্মাদ এবং মুমিনদের মধ্যে সমতা লক্ষ্য করা যায় , যারা কোরান নিজেই অনুসরণ করে এবং এটি ছাড়া অন্য কিছু নয়।


দ্বিতীয়ত ৭:১৫৭ আয়াতে বর্নীত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি করা হয়েছে কোরান সম্পর্কে , মুহাম্মদকে একজন ব্যক্তি বা দেবতা হিসাবে নয়। সেই বিষয়ে তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কথা বলব। 


প্রথম বৈশিষ্ট্য: আরবের আহলে কিতাবরা (ইহুদি , নাসারা) জানত যে কোরান প্রভু আল্লাহ প্রদত্ত সত্য:


১)....যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই  সত্য তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। .... যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চেনে, যেমন করে চেনে নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে। বাস্তব সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্দিহান হয়ো না। (২:১৪৪-১৪৭)


২) যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চিনে, যেমন তাদের সন্তানদেরকে চিনে। যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।(৬:২০)


৩) এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন, সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাঈলের আলেমগণ এটা অবগত আছে?(২৬:১৯২-১৯৭)


দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: আরবের আহলে কিতাবদের মধ্যে একেশ্বরবাদীরা কোরানে বিশ্বাস করত, ব্যক্তি হিসেবে মুহাম্মদকে নয়। অর্থাৎ তারা তাকে মোটেও দেবতার আসনে বসায় নি। তিনি তাদের কাছে তাঁর পূর্ববর্তীদের মতো একজন নশ্বর নবী ছিলেন। 


১) আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা ও ভয়প্রদর্শক করেই প্রেরণ করেছি। আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি। বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। এবং বলেঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়।(১৭:১০৫-১০৯)


২) আর তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতি পালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন। আমাদের কি ওযর থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে, তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং এ আশা করবো না যে, আমদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎ লোকদের সাথে প্রবিষ্ট করবেন? অতঃপর তাদেরকে আল্লাহ এ উক্তির প্রতিদান স্বরূপ এমন উদ্যান দিবেন যার তলদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তারা তন্মধ্যে চিরকাল অবস্থান করবে। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান।(৫:৮৩-৮৫)


তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: কোরানে আল্লাহ কিতাবধারীদেরকে কোরানে বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন, মুহাম্মদের প্রতি নয়।


১) আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।(২:৪১)


২) হে আসমানী গ্রন্থের অধিকারীবৃন্দ! যা কিছু আমি অবতীর্ণ করেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, যা সে গ্রন্থের সত্যায়ন করে এবং যা তোমাদের নিকট রয়েছে পূর্ব থেকে। (বিশ্বাস স্থাপন কর) এমন হওয়ার আগেই যে, আমি মুছে দেব অনেক চেহারাকে এবং অতঃপর সেগুলোকে ঘুরিয়ে দেব পশ্চাৎ দিকে কিংবা অভিসম্পাত করব তাদের প্রতি যেমন করে অভিসম্পাত করেছি আছহাবে-সাবতের উপর। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর হবে।(৪:৪৭)

তৃতীয়ত: কুরআনের বাণী সম্পর্কে - "বলুন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সকলের কাছে আল্লাহর রসূল , নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। "... (৭:১৫৮):


১) এ আয়াতটি পবিত্র কোরআনের সর্বজনীনতা সম্পর্কে। প্রভু আল্লাহর কাছ থেকে পৃথিবীতে মুহাম্মদের যুগ থেকে কেয়ামতের আগমন পর্যন্ত সমস্ত মানবজাতি এবং জিনদের জন্য ইসলাম/একেশ্বরবাদের শেষ বার্তা। কোরান পূর্ববর্তী সমস্ত ঐশ্বরিক, স্বর্গীয় ধর্মগ্রন্থকে সমর্থন করে এবং এটি এমনকি ইস্রায়েলীয়দের ধর্মীয় বিরোধের বিষয়ে একটি মাপকাঠি প্রদান করে: "এই কোরআন বণী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে বর্ণনা করে।" (২৭:৭৬)।


২) একজন নশ্বর নবী হিসাবে এবং একজন ব্যক্তি এবং একজন মানুষ হিসাবে, মুহাম্মদ তার যুগ এবং অঞ্চল দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিলেন। তিনি ৭ম শতাব্দীতে নির্দিষ্ট সংখ্যক বছর আরবে বেঁচে ছিলেন এবং মারা যান। তার জীবদ্দশায় প্রভু আল্লাহ তাকে এখানে সরাসরি সম্বোধন করে বলেছেন যে ,  তিনি মারা যাবেন এবং তার শত্রুরাও মারা যাবে : "নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা সবাই তোমাদের পালনকর্তার সামনে কথা কাটাকাটি করবে।"  (৩৯:৩০-৩১)। 


এর মানে হল মুহাম্মদ একজন নশ্বর নবী এবং তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল যেমনটি সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে হয়: "আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। (৩:১৪৪)


"আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।(২১:৩৪-৩৫)


আয়াতগুলি মুহাম্মাদিদের বহু-ঈশ্বরবাদী দাবীকে খণ্ডন করে , যারা বিশ্বাস করে যে মুহাম্মদ তাদের পায়ের নিচে মদিনায় একটি সমাধিতে জীবিত আছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়  ও স্থানে সীমিত ছিল মুহাম্মদের জীবন। তিনি অন্য জাতির সম্পর্কে জানতেন না , যেমন : চীন, জাপান এবং দুই আমেরিকা।


তৃতীয়ত: কুরআনের বাণী সম্পর্কে - "বলুন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সকলের কাছে আল্লাহর রসূল , নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। "... (৭:১৫৮):


৩) কোরানে  মুহাম্মদ নয় , কোরানের নিজের সম্পর্কে  নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে:


ক) "এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে।" (২১:১০৬)

খ) এটি বিশ্বের জন্যও একটি সতর্কবার্তা: "পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ (ফোরকান) অবর্তীণ করেছেন, যাতে (ফোরকান) বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়।"(২৫:১)


৪) অধিকন্তু, কোরান জিনদের জন্যও তাদেরকে সম্বোধন করা ঐশী বাণী। কিছু জ্বিনকে  আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন মুহাম্মদ কর্তৃক পড়া কোরান শোনার জন্য , একজন ব্যক্তি মুহাম্মদের সম্পর্কে তাঁর সংবাদ শোনার জন্য নয়। মুহাম্মদ অন্যান্য মানুষের মতো জ্বিনকে কখনই দেখতে পারেননি কারণ তারা ইথারিয়াল প্রাণী। জ্বীনদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তারা কোরান ব্যবহার করে অন্য জিনদের সতর্ক করেছিল।


ক) "বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি; যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।" (৭২:১-২) :আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না।"(৭২:১৩)

খ) যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল,। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল। তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়, আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবর্তীণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের প্রত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে।(৪৬:২৯-৩০)


পরিশেষে-


মুহাম্মাদকে বা তাঁর সাথে বিশ্বাস করার অর্থ হল এই সত্যে বিশ্বাস করা যে , তিনি যে কোরান দিয়েছেন তা আল্লাহর বাণী। আমি অবশ্যই মুহাম্মাদ বা কোন নশ্বরকে দেবতা মনে করি না। একারনেই বাধ্যতামূলক ভাবে তার নামের শেষে (সা:) লেখা বা নামের আগে (সালামুন আলা) লাগানোকে বা তাকে অত্যাধিক  প্রশংসা বা তার শানে হামদ ও নাথ গাওয়াকে  বা নবীর সুন্নত পালনের নামে তাকে অনুকরন করাকে , তাকে দেবতার আসনে বসানোর শামিল মনে করি।