Friday, October 11, 2019

ইসলাম কী?

প্রিয় ইব্রাহিম ( https://faruk55kw.blogspot.com/2017/07/blog-post_15.html ) ভাই ও বোনেরা , আপনারা যারা নিজ আত্মাকে রোগমু্ক্ত করার প্রচন্ড তৃষ্ণা অনুভব করেন , তাদের স্বাদ আস্বাদনের জন্য নিম্নের এই আয়াত দিয়ে শুরু করছি-
১০:৫৭
‎يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী (ওয়াজ)এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময় (شِفَا)ও হেদায়েত ও রহমত মুমিনদের জন্য।


সম্ভবত আপনাদেরকে বলা হয়েছে ইসলাম মানে আত্মসমর্পন। সাথে সাথে এটাও বাখ্যা করা হয়েছে যে , ইসলাম মানে শান্তি। ইসলামকে কি সুন্দর মোড়কে আবৃত করা হয়েছে , তাই না? এখন আমরা ইসলাম শব্দের শব্দগত মানে পুনরায় আবিষ্কার করব। 
‎سلم: مقاييس اللغة
‎السين واللام والميم معظم بابه من الصحة والعافية; ويكون فيه ما يشذ, والشاذ عنه قليل, فالسلامة: ان يسلم الإنسان من العاهة والأذى
আত্মসমর্পন নয়, শান্তি ও নয়। ইসলামের মূলে যে শব্দ আছে سلم অর্থাৎ সুস্থ (রোগ মুক্ত)। শারীরিক ও মানসিক রোগের অনুপুস্থীতিই হলো সুস্থতা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ইসলাম মানে মানসিক বা অন্তরের রোগ মুক্তি। ভুল বিশ্বাস ও সকল প্রকার মূর্খতা , জড়তাই হলো অন্তরের রোগ। শারীরিক রোগ থেকে মুক্তির নিরাময় বা শেফা (شِفَاء) আধুনিক চিকিৎসা ব্যাবস্থা। আর অন্তরের রোগের নিরাময় বা শেফা (شِفَاء) পরোয়ারদেগারের উপদেশবাণী অর্থাৎ এই কোরান। 
মুসলিম (مفعل) সেই যে নিজের অন্তরকে সুস্থ করার আশায় এই চিকিৎসাবিদ্যা বা ইসলাম (إفعال) বাস্তবায়ন করে। মিথ্যা ও ছাইপাঁশে ভরপুর এপৃথিবীতে সম্ভবত এ এক অলীক , অবাস্তব আশা।

Tuesday, October 8, 2019

হিকমাহ

কোরানই হিকমত/জ্ঞ্যান/الْحِكْمَةَ
আল্লাহ বলেছেন , "তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত (وَالْحِكْمَةَ)। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। ৬২:২"
প্রচলিত বিশ্বাস এই যে আল্লাহ রসূলকে দুটি ভিন্ন জিনিষ দিয়েছেন। কিতাব তথা কোরান এবং হিকমাত তথা সহীহ হাদীস সমূহ। প্রমাণ হিসাবে তারা উপরের আয়াতে সংযোজক অব্যয় পদ وَ (ওয়াও) এর উল্লেখ করেন। কিন্তু কোরানে وَ শুধু ভিন্নতার জন্য নয় বরং একই জিনিষের ভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট করার জন্য ও ব্যবহৃত হয়। যেমন দেখুন - "আমি মূসা ও হারুণকে দান করেছিলাম মীমাংসাকারী গ্রন্থ ও আলো ও উপদেশ, আল্লাহ ভীরুদের জন্যে। ২১:৪৮" এই আয়াতে দেখুন আলো ও উপদেশের আগে সংযোজক পদ 'ওয়াও' আছে , কিন্তু এখানে ৩টি ভিন্ন জিনিষের কথা বলা হচ্ছে না। একটি গ্রন্থের কথাই বলা হচ্ছে। 
নিঃসন্দেহে কোরানই যে হিকমত , তা আমরা জানতে পারি ২:২৩১ আয়াত থেকে। "আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা (الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ) তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে যার দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়"। কিতাব ও হিকমত দুটি ভিন্ন জিনিস হলে , (এক বচন) 'যার' দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয় না বলে ,(বহুবচন) যাদের দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়" বলা হোত।
কোরানের আয়াতই হিকমত এবং ওহীকৃত হিকমত সম্পর্কে আল্লাহ জানিয়েছেন ১৭ নং সূরার ২২ আয়াত থেকে ৩৯ আয়াতের মাধ্যমে। শুরু হয়েছে নির্দেশের মাধ্যমে -
"স্থির করো না আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। ১৭:২২" 
শেষ হয়েছে - "এগুলো ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। ১৭:৩৯"
হিকমত পড়ে অর্জন করতে হয়। আল্লাহর দেয়া এ হিকমত আমাদের এই ঘুনে ধরা সমাজের আমূল পরিবর্তন করে সত্যিকারের ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। একারনে কোরানের হিকমতের বাণীগুলো এখানে দিলাম , যাতে ইচ্ছুকরা পড়তে পারে ও হিকমত অর্জন করতে পারে। 
"স্থির করো না আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল। আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন। দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ। আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত। আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ। যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। এ সবের মধ্যে যেগুলো মন্দকাজ, সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়। এগুলো ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। ১৭:২২-৩৯"